somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপনগরের রূপকথা

১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রূপনগরের রূপকথা

“এখন আমাকে জ্বালাচ্ছিস, শ্বশুড়বাড়ী গেলে বুঝবি।“
মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কানের ঝুমকা নিয়ে খেলতে খেলতে বিভা আনমনে বললো, “আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না মা, সাদা ঘোড়ায় চড়ে রাজপুত্র এলেও না।“
মা হাসতে হাসতে বল্লেন, “যাবিরে মা যাবি, সবাই যায়, তুইও যাবি।“
“আমি যাব না, না না না”
“আচ্ছা দেখা যাবে, সময় হোক।”
--------------

বিভা আড়চোখে দেয়াল ঘড়িটার তাকিয়েই অস্থির হয়ে গেল। পাঁচটা বাজে প্রায়। সামনে হুজুর চোখ বন্ধ করে তেলোয়াত করেই যাচ্ছেন। কত অনুনয় বিনয় করে ঊনাকে বার বার বলি ৪টায় আসার জন্য। তাইলে পাঁচটায় পড়া শেষ। না, উনি ঠিক সাড়ে চারটার সময়ই আসবেন।
“কি হল আম্মা, তুমি কি ভাবতেছো। এইভাবে পড়লে তো কোরাণ খতম হবে না। নাহ, মনঃসংযোগ বাড়াইতে হবে আম্মা।“
মনে মনে গজ গজ করতে করতে পড়া শুরু করলাম। মনঃসংযোগ না, ছাই। দীপ্র ঠিক পাঁচটায় বাসার সামনে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাবে। অযথা বেল বাজাবে, টিং টিং টিং। বারান্দায় দৌড়ে গিয়ে ওর ছুটন্ত সাইকেলের গলির বাঁকে মিলিয়ে যাওয়া দেখা হবে না। ধুর। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
পড়া শেষ করে ছাদে গিয়ে দেখি রীনা ফুপ্পি হন হন করে এ মাথা ও মাথা হাটছে। এ বাতিক নুতন শুরু হয়েছে। ওর ক্লাসের কোন ছেলে নাকি ও কে বলেছে, দিন দিন গোল আলু হয়ে যাচ্ছে। গত দুই দিন ধরে রাতে ভাত খাচ্ছে না। তার উপর দুমাস পরে ওর ইন্টার পরীক্ষা শুরু। ইংরেজী সেকেন্ড পেপারে ফেল করার সম্ভাবনা নাকি ৮৯%। রমাকান্ত স্যার সপ্তাহে তিনদিন করে পড়াচ্ছেন। তাতে নাকি ওর অবস্থা আরো সঙ্গীন। টেনশনে, ভয়ে মাথাটা প্রায় গেছে, ননস্টপ কথা বলার মাত্রাও বেড়ে গেছে।
“কি রে চেহারাটা লম্বা বানিয়ে রেখেছিস ক্যান? হুজুর বকা দিছে? বকাতো দেয়াই উচিত। ক্লাস সেভেনে উঠে গেলি, কোরাণ খতম দিতে পারলি না। তুই যেমন ফাঁকিবাজ, তোর হুজুরটাও ডিসকো মার্কা। গত পরশু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “রীনা আম্মা, তুমি কি জান ছায়ছন্দ কয়টায় দেখায়? ব্যাটা হুজুর মানুষ ছায়াছন্দের খোঁজ দিয়ে কাজ কি! আবার ফুপি ভাতিজি দুইজনকেই আম্মা ডাকে, দেখ কান্ড। পুরাই দুই নাম্বার!”
“না ফুপ্পি, হুজুরের মেয়ে দেখে। উনি না”
“তোরে বলছে। আম্মা আম্মা করে বলে বেশী ভাল মনে করিস না। ব্যাটাছেলেই মানেই বদ। সবগুলার আলুর দোষ আছে।“
“আলুর দোষ মানে কি?”
রীনা ফুপ্পি কে বললো কে জানে। রাস্তা দিয়ে টিং টিং টিং সাইকেলের ঘন্টির শব্দ। বিভা দৌড়ে গিয়ে দেখে দীপ্র উপর দিকে একবার তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। সাইকেলটা গলির মাথায় মিলিয়ে যেতেই, কাঁধে হ্যাচকা টান।
“কি হল এটা?”
“মানে? কি আবার হবে?”
“ওইটা দীপ্র না? আমি দেখছি এই ছেলেটা পুরা এসেমব্লি তোর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। তোকে কিছু বলছে?”
“আরে না। আমাকে কি বলবে। তুমি কি দেখতে কি দেখছ। আমার দিকে কেন তাকাবেন? দীপ্র ভাইয়ের সাথে সুমি আপুর প্রেম। অনেক দিনের। তুমি জানো না।“
“হুম, কার সাথে কার প্রেম তা জানি না। তবে তোর চেহারার যেই অবস্থা, আমার বুঝার বাকি নাই। তুমি একফোটা মেয়ে। অনেক পস্তানি আছে কপালে। আর ওই ছেলের না মেট্রিক সামনে, সারাদিন সাইকেল নিয়ে টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পড়ে কোন সময়। দাদা জানলে তোর হাড্ডি গুড্ডী গুড়া গুড়া করে ফেলবে। রিমার কি হাল করেছেন তাতো জানিস।“
“ফুপ্পি, কি বকছো হাবি জাবি। আমি কোনদিন দীপ্র ভাইয়ের সাথে কথাও বলিনি। প্লিজ মাকে কিছু বলোনা। মা সাথে সাথে বাবাকে বলে দিবেন। শুধু শুধু বাবা বকবেন আমাকে। প্লিজ ফুপ্পি!”

“আচ্ছা যা। নেহাত ছেলেটা ভারী মিষ্টি দেখতে, আর খুব ভদ্র, তাই ভাবীকে কিছু বলছি না। তবে সাবধান। ক্লাস সেভেনের মেয়ে, তুই প্রেমের বুঝিস কি। প্রেম ফ্রেম সব ফালতু। ছেলেগুলা বোকাসোকা মেয়েগুলাকে ভুলিয়ে খালি চুমু খায় আর গায়ে হাত দেয়। বেয়াদপের ঝাড় সব।“
কি যে বলে না ফুপ্পি, ছি ছি, কোন লাগাম নেই। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন। দীপ্র ভাই আমার সাদা ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজপুত্র। ও এমন কোন কিচ্ছু কোনদিন করবে না। কখনো না।

বিকেলের আলো মিলিয়ে গেছে প্রায়। এখনি আজান দেবে। রিনা ফুপ্পি একদম চুপ হয়ে গেল। হয়তো রিমা ফুপ্পির কথা মনে পড়েছে। দাদু মারা যাবার পর আমার দুই ফুপ্পি আমাদের সাথে থাকতে এল। একই ঘরে থাকতাম আমরা। ওরা দুইবোন ডাবল বেডে, আর আমি পাশে একটা ছোট্ট চকিতে, সারা রাত গুন গুন করে আড্ডা হত। আমরা যাতে পড়ার সময় গল্প না করতে পারি, তাই বাবা আমাদের পড়ার টেবিল ঘরের তিন কোনায় দিয়ে দিলেন। তাতে খুব লাভ হয়নি। আমার কোন ভাই বোন নেই। ওরা আসায় আমার সেই আক্ষেপ আর রইল না। মাঝে মাঝে ওরা নিজেরা নিজেরা ফিস ফিস করে কথা বলতো। আমি কাছে গেলেই বলত, ভাগ বড়দের কথার মধ্যে থাকতে নেই, তখন রাগ হত খুব। আমার সব গোপন কথা ওরা জানত, কিন্তু ওদের কথা আমাকে সব বলতো না। আমার যখন পিরিয়ড হয়, কি কান্নাই না কেদেঁছিলাম, রিমা ফুপ্পি আমাকে শিখিয়েছিল, কিভাবে আম্মার শাড়ির টুকরা তিন ভাজ করে ব্যবহার করতে হয়। হুজুরকে কি মিথ্যা বলতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ এই ঘটনায় আমাকে সামলে রেখেছিল ওরা দুইজন। আমার খুব ভাল মানুষ রিনা ফুপ্পি পেট ব্যথার সময় গরম শেক দিত, আমাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকত! আমার পরীক্ষা ভাল হলে, চুড়ি কিনে দিত। কাঠালের মুচি, তেঁতুল আর বড়ই ভর্তা বানিয়ে ছাদে বসে কাড়াকাড়ি করে খেতাম। পহেলা বৈশাখে কে কোন শাড়ি পরব, তা নিয়ে কত্ত গবেষনা। কি যে সব সুন্দর দিন ছিল। আমাদের বাসাটা হৈ চৈ আর হাসির শব্দে ভরে থাকত।

দুবছর আগে সব বদলে গেল, তছনছ হয়ে গেল সব হাসিখুশি, এক হঠাৎ আসা দমকা ঝড়ের তান্ডবে। রিমা ফুপ্পি কলেজে পড়ার সময় শাকিল নামে একটা ছেলের সাথে প্রেম করতো। শাকিল কাকু খুব পলিটিক্স করতো। “গনতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচারী এরশাদ নিপাত যাক” এই মন্ত্রে মিছিলে সবাইকে উজ্জীবিত করতো। খুব হা হা করে হাসত। আমি বৃত্তি পেয়েছি শুনে আমাকে সুকুমার সমগ্র গিফট করে ছিল। মলাট খুলতেই দেখি, “আমি প্রধান মন্ত্রী হলে, তোকে শিক্ষামন্ত্রী বানিয়ে দেব। তাই মন দিয়ে সরস্বতীকে ডাকাডাকি করে যা।” কি এক গন্ডগোলের পর ওনাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের রূপনগর এত্ত ছোট জায়গা, এখানে সবাই সব জেনে যায়। বাবা জানার পর ভীষন রেগে গেছিলেন। এত রাগতে কোনদিন দেখিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে রিমা ফুপ্পির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দিনটা কি যে থমথমে একটা দিন ছিল। রিমা ফুপ্পি পুরা পাথর, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কি ক্লান্ত শ্রান্ত চেহারা, শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। মা ওকে সাজাচ্ছিলেন আর কাদঁছিলেন। বার বার বলছিলেন, “মেয়ে হয়ে জন্মেছিস কষ্টতো সহ্য করতেই হবে রে। দেখবি বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।“
আমাকে রিনা ফুপ্পির শাড়ি পড়িয়ে দেবার কথা। ওকে খুঁজতে খুঁজতে পেলাম ছাদের সিড়ি ঘরে। মাথা নিচু করে বসে কাদঁছে। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদেঁ উঠলো। “তুই আমার ছোট্ট মা, কিন্তু তোর কিবা করার আছে। আজকে আম্মা থাকলে দাদা রিমাকে এইভাবে বিয়ে দিতে পারতো না। ও বাঁচবে না। ফ্যামিলির মানসন্মানের জন্য ওর জীবনটা শেষ। একজনকে ভালবেসে আরেক জনের সাথে ঘর করার কষ্ট রিমা কিভাবে সহ্য করবে।“ আমি চুপ করে ওকে ধরে রইলাম। ক্লাস ফাইভে পড়া আমি ভালবাসা কি জিনিষ হয়তো বুঝিনি, এখনো যে বুঝি তাও না। গতবছর স্কুলের স্পোর্টসে যেমন খুশী সাজো কন্টেস্টে আমি চাকমা মেয়ে সেজেছিলাম। ভলান্টিয়ার দীপ্র ভাই, পলকহীন আমাকে দেখছিলো, আমি ওর চোখে চোখ মেলাতে পারিনি। কিন্তু বুঝেছিলাম আমার কোথাও খুব তোলপাড় হচ্ছে। হয়তো সেটাই ভালবাসা। কিম্বা ওর সাইকেলে চড়ে আমার বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার পথ চেয়ে থাকাই ভালবাসা, স্কুলের এসেম্বলিতে সবার অলক্ষ্যে চোখাচোখি হলে, ওর মুচকি হাসি দেখে মনযে কেমন করে সেটাই ভালবাসা, কে জানে।

বিয়ের পর রিমা ফুপ্পি আর আসেনি আমাদের বাসায়। আমরা যাই মাঝে মাঝে। ওর একটা ছেলে হয়েছে। খুব মলিন হয়ে গেছে ও। কেমন ছাড়া ছাড়া মনমরা। আব্বু আর আম্মু কত করে বলেছে আসতে, ও আসেনি। শাকিল কাকু ওর বিয়ের সপ্তাহ খানেক পর এসে বসার ঘরে চুপ করে কিছুক্ষন বসে ছিল। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আসি বলে চলে গেল, আর দেখিনি উনাকে। আমি সেদিন দেখেছি ওর চোখ খটখটে শুকনো কিন্তু বুকটা দুমরানো, মুখটা মলিন, ঠিক রিমা ফুপ্পির মত। কি গভীর বিষাদ- যেন তলাহীন শূন্যতা—নিকষ কালো।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল সব মনে পড়ে। সুর্যাস্তের সময় তাই ছাদে থাকতে নেই। খুব মন খারাপ হয়, বুকের মধ্যে কেমন হু হু করে। রিনা ফুপ্পি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, “চল নীচে যাই। ভাবিস না, আমি কাউকে কিছু বলবো না। তবে ভালবেসে ফেলিস না। ভালবাসা বড় অভিশপ্ত।“

---------

আজকে তুমি আমাকে দেখা করতে বলেছ। স্কুলের মাঠে বিকালে পাঁচটায়। গতকাল থেকে এ কথা শোনার পর থেকে এমন অস্থির লাগছে। আমি কি করব? যাব, না যাব না। খেতেও পারছি না। এক জায়গায় বসতেও পারছি না। ইসলাম স্যারের কাছে অঙ্ক পড়তে যাবার কথা, যাইনি। আম্মুকে বুঝালাম শরীর ভাল লাগছে না। তিন মাস বাদে মেট্রিক পরীক্ষা। এখন একি পরীক্ষায় ফেললে আমাকে? তুমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে শুনেছিলাম। কতদিন দেখিনি তোমাকে। কি বলবে তুমি আমাকে আজ?
ঘুম থেকে উঠার পর থেকে আয়নায় নিজেকে দেখে অসহ্য লাগছে। আমার নাকটা এত থ্যাবরা, গলার হাড্ডি বের হয়ে আছে, আমি এত হাড় জিরজিরে কেন। আল্লাহ আমাকে আম্মুর মত বানাতে পারলেন না? আলমারি ঘেটে একটাও জামাও পছন্দ হল না। আম্মু কোন ফ্যাশন ট্যাশন করা পছন্দও করে না। আমার সব কিছু আমার মতই দীনহীন, খুবই প্লেইন। কিছুই ভাল লাগছে না। বেলা যত গড়াচ্ছে, অস্থিরতা বাড়ছেই। রিনা ফুপ্পিটার কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়ে গেছে। ইন্টারে থার্ড ডিভিশন পাবার পর ও ঘোষনা দিল, আর পড়বে না। আতিক ফুপার সাথে ও খুব ভাল আছে। কি সুন্দর দেখতে উনি। আর ফুপ্পিকে এত যত্ন করেন। রিনা থাকলে ভাল হত। আমার থেকে বেশী অস্থির হয়ে ঘুরতো, কি কথা হবে, কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভেবে ভেবে, বক বক করে করে পাগল হয়ে যেত, আর ওকে দেখে আমার সব টেনশন চলে যেত। আমাকে কাজল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিত। গাল দুটো জোড়ে টিপে দিয়ে বলতো, “এই তো ন্যাচারাল রুজ। আমার ছোট্ট আম্মিকে রাজ কন্যার মত লাগছে!” আমি নিজে সাজতেও পারি না। কিছুই পারি না।
যত সময় যাচ্ছে অস্থিরতা বেড়েই যাচ্ছে। কী বলবে তুমি? তুমি যাইই বল না কেন, আমার তাতেই সায়, কিন্তু তার দায়ভার নিতে পারব? বাবা জানতে পারলে কী কুরুক্ষেত্র বাধাঁবেন কে জানে। আমাদের এই প্রাণহীন বাড়িটা আরো নিস্তেজ হয়ে যাবে। আমি পারব না এদের সামনা সামনি হতে। আমি বড় ভীতু, বড় বোকা একটা মেয়ে। কোন ভাবেই তোমার তূল্য নই। তুমি ক্ষমা কোরো। ক্ষমা কোরো। গেলাম না আমি। ঘড়ির কাটা ঘুরেই চলল। মানুষের চোখে এত পানি কোথায় জমে থাকে কে জানে? মা, গান শুনছেন টিভিতে, আমার জন্যই লেখা? এখনি সেটা বাজবে, এর মানে কি?

“মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে সেদিন ভরা সাঁঝে
যেতে যেতে দুয়ার হতে, কি ভেবে ফিরালে মুখখানি
কি কথা ছিল যে মনে মনে।

তুমি সেকি হেসে গেলে, আঁখি কোণে
আমি বসে বসে ভাবি, নিয়ে কম্পিত হৃকদয়খানি
তুমি আছ দূর ভুবনে।

আকাশে উড়িছে বকপাতি
বেদনা আমার তারি সাথি
বারেক তোমায় সুধাবারে চাই, বিদায় কালে কি বল নাই
সেকি রয়ে গেল গো সিক্ত যুথির গন্ধ বেদনে।“

----------

“আম্মু, তোমার ফেইসবুকে একটু দেখো না। ছোটকা আমার আর রামিসার ছবি দিয়েছে।“
বিভা তার ছ’বছরের মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসল। কি পাকনা হয়েছে এরা। এখনি ফেসবুক, ছবি আপলোড নিয়ে কাসিনদের সাথে আড্ডা দেয়।
“যা, সেলটা নিয়ে আয়।“
ফেইসবুকে ঢুকতেই চোখ গেল মেসেজ আইকনের উপরে। বুকের ভিতর ধুকপুকুনি! গতকাল যে মেসেজ এসেছিল, তার উত্তরের প্রত্যুত্তর এল নাকি! ঘাড়ের উপর মেয়ে ঝুলছে। তার ছবি তাকে দেখিয়ে রক্ষা। ইনবক্স খুলতেও কেমন ছেলেমানুষী উত্তেজনা। কি লিখেছে দীপ্র, সেই কবে হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্র আমার?
গতকাল, অযুতকোটি কাল পরে, হঠাৎ টেক্সটে ও লিখেছিল, “ তুমি কি রূপনগরের বিভা? আমি দীপ্র, চিনতে পারছ তো? যদি বিভা না হন, আমাকে ক্ষমা করবেন। (তবে প্রোফাইলপিক বলে, তুমি বিভাই, একটুও বদলাও নি, তোমাকে চিনতে ভুল আমার হতেই পারে না।“
উত্তরে, আমি লিখেছিলাম, “আমি বিভা। কেমন আছেন দীপ্র ভাই? আপনিও খুব একটা বদলাননি। আপনি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছেন? সেই অনেক অনেক দিন আগে, আপনি আমাকে কেন ডেকেছিলেন? কি বলতে চেয়েছিলেন?”

কিছুতেই হাত সরছে না। কি লিখবেন উনি। যদি আমার কল্পনার জগৎটা ভেঙে যায়! কত রাত জেগে ভেবেছি, যদি সেদিন যেতাম আমি, কি হত? কি বলতে তুমি আমায়? কত গল্প বুনেছি। আমার এই ধূসর জীবনে, ওই একটু খানি রোমাঞ্চ, ওই একমাত্র মরুদ্যান। মেসেজটা পড়লে যদি সব পালটে যায়। যদি সব মায়া হয়ে যায় মরিচীকা? থাক না এই রহস্য। থাক। আমার রাজপুত্র, সাদা ঘোড়ায় না হোক, কালো সাইকেলে না হোক, ইথারে ভেসে তো আসতেই পারে, পারে না? বাস্তবের বিবর্ণতা যার সর্বত্র, রূপকথার এটুকু রঙ্গীন আভা যদি তার মনে লাগে এও বা কম কি? থাক না আমার কল্পনার জগতটা রূপকথা হয়ে। সেদিন তুমি প্রতীক্ষা করেছিলে কিনা জানি না, এই মেসেজের উত্তরের প্রতীক্ষা করবে কিনা জানি না, আমি আজো পারলাম না। পারব না। আমাকে ক্ষমা কোরো। ক্ষমা কোরো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২২
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×