somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি তুমি খাঁটি হিন্দু হও, আর আমি যদি ইসলামের চিতাশালে পুঁড়ি তাহলে তোমাকেও আমার সাথে সতীদাহ হওয়া উচিত

০৫ ই মে, ২০১২ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৌধুরী আর. কে. আদেল সাহেবের
একটি সাক্ষাৎকার

আমি শুধু এই কথাই বলবো যে, দীন যেহেতু আমানত, যেমনটি ‘আপ কি আমানত আপকি ছিওয়া মে’ নামক বইটিতে মাওলানা সহেব লিখেছেন। এই বইয়ের কথাগুলো সারা জগতে পৌঁছানো উচিত। বর্তমান যুগে ইসলাম পৌঁছানো অনেক সহজ। দীন যেহেতু আমানত এবং মালিকের সামনে হিসাব দিতে হবে, তাই এ কথারও হিসাব দিতে হবে যে, সকল অমুসলিমদের পর্যন্ত দাওয়াত পৌঁছলো কি না? দীনকে অন্যের পর্যন্ত পৌঁছানো শুধু অন্যের উপকারের জন্যই নয় বরং মৃত্যুর পর প্রশ্নের জবাব থেকে বাঁচার জন্য স্বয়ং মুসলমানদের জন্যও জরুরী।

আহমদ আওওয়াহ. আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারা কাতুহু।
চৌধুরী আর. কে. আদেল. ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারা কাতুহু।
প্রশ্ন. চৌধুরী সাহেব! আপনার আগমনে আমি খুবই আনন্দিত। আব্বু আপনার কথা আলোচনা করেছিলেন। আমি যেন দিল্লী গিয়ে আপনার সাথে সাক্ষাত করি এবং ফুলাত থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা আরমুগানের জন্য আপনার সাক্ষাতকার গ্রহণ করি। আল্লাহর শুকরিয়া যে, আপনি নিজেই চলে এসেছেন।
উত্তর. মাওলানা সাহেবের (কালীম সিদ্দিকী) সাথে আমার কিছু জরুরী পরামর্শ ছিল। কয়েকদিন যাবত ফোন করছিলাম। আজ জানতে পারলাম, তিনি ফুলাতে আছেন। সব কাজ-কর্ম ফেলে চলে এলাম। মালিকের কৃতজ্ঞতায় সাক্ষাতও হয়ে গেলো। আত্মতৃপ্তিও পেলাম।
প্রশ্ন. প্রথমে আপনার পরিচয় দিন!
উত্তর. আমারূ পুরনো নাম রাম কৃষ্ণ লাকড়া। আমি দিল্লী নাজাফগড় অঞ্চলের হিন্দু জাট সম্প্রদায়ের লোক। আমার আব্বু গ্রামের মেম্বার এবং একজন জমিদার। আমাদের গ্রাম এক সময় রূহতাক জেলার হারীয়ানার অন্তর্ভূক্ত ছিলো। বর্তমানে তা দিল্লীর একটি মহল্লা। ছোটকালেই আমার পিতা মারা যান। ইদানিং আমি দিল্লিতে প্রোপার্টি ডিলাক্র এর কাজ করি। এমনিতে তো আমি এই জগত-সংসারে ১৯৫৯ খৃস্টাব্দের ২৭ শে সেপ্টম্বর এসেছিলাম। তবে আমার দ্বিতীয় জন্ম ঠিক ৪৫ বছর পর এই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আজ থেকে ১৫ দিন পূর্বে হয়েছে।
প্রশ্ন.এ কথার অর্থ কী?
উত্তর. আমার পার্শ্ববর্তী মসজিদের মাওলানা সাহেবকে ও বলেছিলাম। আশ্চর্যজনক বিষয় যে, আমার প্রথম জন্মের ঠিক ৪৫ বছর পর নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করি এবং পূণর্জন্মের বিশ্বাস নিয়ে তওবা করি। ২৭ শে সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় ফুলাতে মাওলানা (কালীম সিদ্দিকী) সাহেবের বাসার উপর তলায় তার তাতে কালেমা পড়ে ইসলামের নতুন জিন্দেগী শুরু করি। এ হিসেবে আমার সত্যিকার বয়স আজ ১৫ দিন। (এই সাক্ষাৎকারটি ১২ অক্টেবর ২০০৪ সনে নেয়া হয়। )
প্রশ্ন.মা-শা-আল্লাহ! খুব মজার বিষয়। আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কিছু বলুন। ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা কীভাবে হলো?
উত্তর. তাহলে তো দীর্ঘ আলোচানা শুনতে হবে। ১৯৭৬ খৃস্টাব্দে হাইস্কুল পাস করি। এরপর সবাইকে জানিয়ে দিলাম, পড়ালেখা আর করবো না। দুই বছর ইটের ভাটায় কাজ করি। আমার জেঠা এবং ফুফা সেনাবাহিনীর কর্ণেল ছিলেন। তারা বাড়িতে এসে আমাকে অনেক শাসিয়ে বললেন, যদি তুই পড়তে না যাস তাহলে তোকে সেনাবহিনীতে ভর্তি করিয়ে দেবো। তখন তোকে সৈন্য দলে যেতে হবে। ১৯৭১ এর যুদ্ধ কিছুদিন পূর্বেই হয়েছিল । ভয়ে আমি ইন্টারমিডিয়েট শেষ করি। এরপরও পড়া-লেখায় মন বসে না। আমার মা বাবাকে বলে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। মাকে খুশি করার জন্য প্রাইভেট পড়ে বি,এ শেষ করি। বিয়ের দুই বছর পর ফুফা এক জরুরী কাজের বাহানায় ধোঁকা দিয়ে বেরেলীতে ডাকলেন। সেনাবহিনী ব্যারাকে নিয়ে চুল কটিয়ে মেডিকেল টেস্ট করালেন। সমস্ত কাগজ-পত্র প্রস্তুত করে সেনাবহিনীতে ভর্তি করে দিলেন। আমাকে বললেন, তোমার ভর্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন পালিয়ে গেলে সেনাবাহিনীর লোকেরা ধরে এনে পলাতক সাব্যস্ত করে গুলি করবে। অথবা সেনাবহিনী কারাগারে পাঠিয়ে দিবে। ভয়ে ট্রেনিং-এ যেতে হলো কিন্তু মন বসতো না। বাড়ির কথা মনে পড়তো। বাড়ি থেকে বেশী স্ত্রীর কথা মনে পড়তো। বেচারী অনেক মুহাব্বত করতো। ভদ্র মেয়ে। ট্রেনিংয়ের সাথীদের সাথে পরামর্শ করলাম এখান থেকে মুক্তির কী উপায় হতে পারে? একজন বললো, যদি অফিসার আনফিট সাব্যস্ত করে দেয় তাহলে, অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভাবলাম এটা তো অনেক সহজ কাজ। আমি পাগলের বেশ ধরলাম। মাতলামী করে কথা বলতাম। কখনো হাসতাম তো হাসতেই থাকতাম। চিৎকার করলে চিৎকারই করতাম। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে মেডিকেল চেকআপ করানো হলো। ডাক্তার বললো, এটা বাহানা। অফিসার আমাকে খুব শাসালেন, ধমকালেন, শাস্তি দিলেন। নিরূপায় হয়ে আবারও ট্রেনিংয়ে যেতে হলো। একদিন সকালে প্যারেডে দাঁড়িয়ে অফিসার আসার সাথে সাথে রাইফেল দাঁড় করালাম। তামাকের পুরিয়া ডান হাতের তালুতে নিয়ে চুন মিশানো শুরু করলাম। অফিসার আমার সামনে এলে আমি বাম হাতে স্যাল্যুট দিয়ে ‘জি হিন্দ’ বললাম। আমার হাতে তামাক দেখে জিজ্ঞাসা করলো এটা কি? আমি বাম হাত সামনে বড়িয়ে বললাম স্যার এটা তামাক। আপনিও একটু নিন। সে ধমক দিয়ে বললো, না লায়েক! তোর বেল্ট নম্বর কত? আমি নম্বর বলে দিলাম। দ্বিপ্রহরের পর দফতরে আমাকে ডেকে নিয়ে বললো, যুদ্ধে যখন দুশমন সামনে থাকবে তখন তামাক খাবি নাকি গুলি চালাবি?এবং ভীষণ রাগ হয়ে ফাইল বের করে লাল কলম দিয়ে আনফিট লিখে দিলো। আমি ‘জী হিন্দ’ বলে খুশিতে সালাম করি। রাতেই গাড়িতে চড়ে দিল্লী চলে আসি। ফুফা এ সংবাদ শুনে বাড়িতে ফোন করে বললেন,পলাতক গাদ্দার, ফৌঁজ থেকে জান বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী আমার সাথে কথা বলে না। সে বলে তুমি গাদ্দার, পলাতক। আমি তাকে বুঝালাম, পলাতককে যদি যুদ্ধে পাঠাতো, তাহলে তুমি বিধবা হয়ে যেতে। এখন আনন্দ-ফূর্তি ও বিনোদনের সাথে থাকবো। বহু কষ্টে তার বুঝে আসলো, সে সন্তুষ্ট হলো। মাকেও অনেক বুঝালাম। কিছুদিন বন্ধুদের সাথে চলা-ফেরা করে বাবার ভয়ে প্রোপার্টি ডিলাক্সে কাজ শুরু করি। বাবা আমাকে একটি খেতের প্লট কাটতে দিলেন। ধীরে ধীরে বাবার সাথে আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক হলো। কিছু খারাপ লোকের সাথে বন্ধুত্ব হলো। ঝগড়া-বিবাদের জমিন ক্রয় করি, মারা-মারি করে দাপট দেখিয়ে দখলে নেই। আবার বিক্রি করে দেই। কত লোককে কষ্ট দিয়েছি। কত লোকের মাল লুটেছি, এর কোন হিসাব নেই। মারা-মারি ও প্রোপার্র্টির ১৯টি মামলা আমার নামে জমা হলো। জেলে গেলাম। কোনো উপায়ে জমিন হলো। জেলকে আগে থেকেই ভয় পেতাম। আড়াই মাস জেলে থেকে ভীতি আরও বেড়ে গেলো।
মুসলমানদের সাথে দু’টি বিষয়ে পূর্ব থেকেই আমার মিল ছিলো। এক. বিবেক-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে কোনদিন কোন মূর্তির পূজা করি নি। দ্বিতীয়. নাজাফগড়ের কিছু সামনে শূকরের গোশতের দোকান ছিল। যৌবন কালে মুরগী ইত্যাদি খাওয়া সত্তেও (শূকরের প্রতি ঘৃণার কারণে) ঐ রাস্তাগুলোতে চলা আমার জন্য মুশকিল হয়ে পড়তো। কোন কারণে সেই রাস্তা দিয়ে যাবার প্রয়োজন হলে অবনত দৃষ্টিতে ও শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় অতিক্রম করতাম। শূকরের গোশত দেখলেই বমি করতাম। আমার মা অনেক ধার্মিক ছিলেন। জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর মা আমাকে বললেন, তুই তো নাস্তিক। দেবতা-প্রতিমা মানিস না। বেয়াদবী করিস। এজন্য তোর এই বিপদ এসেছে। আমাকে তিনি একটি হনুমানের মূর্তি ও হনুমানের নামে ৪০ দানার জপমালা (তাসবিহ) দিলেন জপার জন্য। মায়ের একঘেঁয়েমি ও ভয়ে কয়েকদিন ভেতরের কক্ষে হনুমানের নামে (তসবিহ) জপি। হনুমান মূর্তির সামনে অনেক প্রার্থনা করি। অন্তরে এই বিশ্বাস ছিল যে, নিষ্প্রাণ মূর্তির আর কী শক্তি আছে? তবুও নড়বড়ে বিশ্বাসের সাথে সম্ভাবনার আশায় দীর্ঘসময় জপি এবং প্রার্থনা করি যাতে স্বাক্ষী গ্রহণ না হয়। আদালতে ঐ মহিলা এমন দাপটের সাথে স্বাক্ষ্য দিলো যে, জর্জ তার কথা সত্য ধরে নিলেন। আমার খুব রাগ হলো। আদালতে দাঁড়িয়ে আছি এ কথা ভুলে গিয়ে মহিলাকে বললাম,তুমি কি বাইরে যাবে না? জর্জ এ কথা শুনে জামিন বাতিল করে জেলে পাঠানোর হুকুম দিলেন। আবারো দুই মাস জেল খাটলাম। বাবা হাইকোর্ট থেকে আবারো জামিন নিলেন। জেল থেকে ঘরে ফিরে প্রথমেই কামরা বন্ধ কবে জুতা দিয়ে হনুমানের মূর্তিকে পেটালাম। জুতা গলায় ঝুলিয়ে দিলাম। হনুমান জপার তাসবিহটি আগুনে পুড়ালাম। অনেক গালমন্দ করলাম। মা জুতার আওয়াজ শুনে স্ত্রীকে মারছি মনে করে অনেক চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। পরে যখন জানতে পারলেন, সে বাহিরে আছে, তখন তার আত্মায় প্রাণ ফিরে পেল। মামলার প্রতিটি তারিখে কী পরিমাণ পেরেশান হতাম তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমাদের এলাকায় একজন মোল্লাজী ফলের ফেরি করতেন। আমি তাকে বললাম, কোন কবিরাজের ঠিকানা দিন। খুব পেরেশানীতে আছি। তিনি বললেন,কোন কবিরাজের ব্যাপারে আমার জানা নেই। এর উপর আমার বিশ্বাসও নেই। তবে তোমাকে একটি কথা বলি, তুমি প্রতিদিন একহাজার বার ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পড়তে থাকো। বললাম, ঠিক আছে। খুব ভাল কথা, যেহেতু আমি অনেক পেরেশানীতে ছিলাম তাই সকাল-সন্ধ্যা পাঁচশত বার করে পড়তে থাকলাম। আমার উপর মালিকের দয়া হলো। প্রথম তারিখেই মামলা থেকে মুক্তি পেলাম। এক বৎসরে এগারটি মামলার ফায়সালা হলো। মোল্লাজীর নিকট আসা-যাওয়া করতে লাগলাম। তাকে বললাম, আমাকে আরো কিছু বলে দিন, যেন সকল মামলা থেকে আমার রেহাই হয়। তিনি মুখে কিছু না বলে, ‘মরণে কে বাদ কিয়া হোগা? (মৃত্যুর পর কি হবে?)’নামক একটি হিন্দী বই দিলেন। বইটি খুব মনোযোগের সাথে পড়লাম। দোযখের শাস্তির কথা পড়ে আমার অন্তরে খুব ভয় হলো। রাতে ভয়ঙ্কর স্বপ্নও দেখলাম। আমার চিন্তা হতে লাগলো যে, আমি কত লোকের জমি অন্যায় ভাবে দখল করেছি। কত লোককে প্রহার করেছি। এখন আমার কী হবে? এই বই আমাকে অস্থির করে তুললো। রাত-দিন সারাক্ষণ মামলা মোকদ্দমার চেয়ে বেশী মৃত্যু- ভীতি পেয়ে বসলো। আমার চিন্তা হতো যে, এই জগত-সংসারের আদালতে ১৯টি মামলা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবো। মোল্লাজীর সাথে পরামর্শ করলাম। তিনি আমাকে মুসলমান হওয়ার পরামর্শ দিলেন। ইসলাম সম্পর্কে জানার মতো কিতাব চাইলাম। ‘ইসলাম কিয়া হায় (ইসলাম কী?)’ নামক বইটি এনে দিলেন। বইটি পড়ে ইসলাম সম্পর্কে বুঝে এলো। সেই সাথে একথাও বুঝে এলো, সেনাবহিনীতে আমার কেন মন বসলো না? যদি সেনাবাহিনীতে থাকতাম তাহলে এই জুলুম নির্যাতন ও মারামারি করা হতো না। মৃত্যুর চিন্তাও আসতো না। আমার মালিক আমার হেদায়াতের জন্য সেনাবহিনী থেকে বরখাস্ত করিয়েছেন, এবং উল্টা-পাল্টা কাজ করিয়েছেন।
ইসলাম গ্রহণের জন্য দিল্লী জামে মসজিদে ইমাম আব্দুল্লাহ বুখারী সাহেবের নিকট গেলাম। প্রথমত; তাঁর পর্যন্ত পৌঁছা খুবই কঠিন। কোন উপায়ে আমি তার কাছে পৌঁছলাম। ইসলাম গ্রহণের কথা বললাম। তিনি বললেন, আপনার এলাকা থেকে আপনাকে চেনে এমন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিয়ে আসেন। দু’চারদিন খোঁজাখুঁজি করে অনেক কষ্টে দু’জন লোক রাজি করে নিয়ে উপস্থিত হলাম। এবার তিনি আইডিকার্ড চাইলেন। আমি বললাম, ঐ সময় একসাথে কেন বললেন না? বারবার কেন পেরেশান করছেন। তিনি রাগ হয়ে বললেন, কথা বলায় কোন ভদ্রতা নেই। আমি বললাম, ভদ্রতা আপনার মাঝে নেই। আমার তো ঠিকই আছে। এরপর সেখান থেকে ফিরে এলাম।
প্রশ্ন.তারপর কী হলো?
উত্তর.তারপর একজন ব্যক্তি আমাকে ফাতেহপুর মসজিদে যাওয়ার পরামর্শ দিল। সেখানে গিয়ে ইমাম সাহেবকে ইসলাম গ্রহণের কথা বললাম। তিনি বললেন, মুসলমান হওয়ার পর তোমার বিবাহ ভেঙে যাবে। স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে হবে। বললাম, ২৫ বছর যাবত সে আমার সাথে থাকছে। সে এমন উত্তম মহিলা যে, আজ পর্যন্ত তার ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই।
তাকে কীভাবে ত্যাগ করবো? তিনি বললেন,তাহলে তোমাকে কালেমা পড়ানো যাবে না। আর তুমি মুসলমানও হতে পারবে না। সেখান থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরলাম। তবু সত্যের সন্ধান চালিয়ে গেলাম।
এক ব্যক্তি আমাকে মাজারে পাঠালো। সেখানে একজন মিঁয়াজীকে পেলাম। লম্বা লম্বা চুল। গলায় ফুলের বড় একটি মালা। সবুজ রঙের লম্বা জামা পরিহিত। মাথায় অনেক উঁচু একটি টুপি। পরিচিত এক লোককে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। মিঁয়াজী বললেন,তোমাকে কালেমা পরাবো। আমার কাছে বসো। হাটুর সাথে হাটু মিলিয়ে আদবের সাথে বসিয়ে তার ডান হাতে আমার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও বাম হাতে ডান হতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে বললো, মুরীদ হওয়ার নিয়ত করো। পায়ের উপর আদবের সাথে দৃষ্টি রাখো। ঐ মুহূর্তে ছোট বেলার একটি খেলার কথা মনে পড়ে গেলো যে, আমরা একে অপরকে কিভাবে মাথার উপর উঠিয়ে ঘুরাতাম। আমার হাসি পেলো। সে রাগ হয়ে বললো, হাসছো কেন? আমি বললাম,আমার ছোট বেলার একটি খেলার কথা মনে পড়লো। যদি আমি বাচ্চাদের মত আপনাকেও মাথার উপর উঠিয়ে ছুঁড়ে মারি তাহলে কেমন হবে? সে আবারো ধমকালো। এরপর আমাকে কত কিছু বললো, ক্বাদরিয়া,গাওছিয়া ইত্যাদি। বললো, আমার পায়ে মাথা রাখো। আমি অসম্মতি জানালে সে ধমকিয়ে বললো, মুরীদ হয়ে কথা শুননা! আমি মাথা ঠেঁকিয়ে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে ফেলি। সে আবারো বলল,আদবের সাথে মাথা রাখো। আর এ কথা ধ্যান করো,আমার মাঝে খোদার নূর আছে। যেভাবে খোদাকে সেজদা করো সেভাবে, আমাকেও সেজদা করো। এবার আমার ভীষণ রাগ হলো। ইসলামের অনেক বিষয় ইতোপূর্বে আমি পড়েছি। ঐ নালায়েককে আমি বললাম,যদি আমি তোমাকে উঠিয়ে আঁছাড় দেই তাহলে তো আমিই খোদা ! কেননা যে শক্তিশালী হয়, সেই তো খোদা হয় তাই না !! অত:পর দু-চারটি গালি দিয়ে ফিরে এলাম।
আমার মাঝে মুসলমান হওয়ার অস্থিরতা ছিলো। মৃত্যুর ভয়ও কাজ করছিলো। একজন মোল্লাজীর সাথে আলোচনা করলাম। তিনি একজন কাজী সাহেবের নিকট আমাকে নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন,মুসলামন তো তোমাকে বানাবো। তবে ২০০০ টাকা ফি লাগবে। আমি বললাম, আমি মুসলমানদের ইসলাম গ্রহণ করতে চাই না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলাম গ্রহণ করতে চাই। যদি তিনি কাউকে মুসলমান বানিয়ে টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে আপনিও নিবেন। তিনি তো কখনো টাকা পয়সা নেননি তাহলে আপনি কেন টাকা চাইছেন? ২০০০ টাকা খুব বড় কোন বিষয় ছিল না। কিন্তু তার উপর আমার আস্থা বা বিশ্বাস হলো না। সেখান থেকেও ফিরে এলাম।
পরদিন একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিহিত একজন মাওলানা সাহেবকে মসজিদের দিকে যেতে দেখলাম। তার পরিচয় জানলাম।
তার নাম মাওলানা আব্দুশ শামী কাসেমী। আমি তাকে বললাম, আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। প্রথমে তিনি বিস্মিত হলেন। পরে তিনি স্বাভাবিক হলে, আমি বললাম, ইসলাম সম্পর্কে ৫০টিরও বেশি কিতাব পড়েছি। বিদায় হজ্জে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সোয়া লাখ সাহাবী ছিলেন। তিনি সবাইকে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের সবার পর্যন্ত ইসলাম পৌঁছিয়েছি? সকলে বলেছিলেন হ্যাঁ! পরিপূর্ণভাবে পৌঁছিয়েছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বললেন, এখানে যারা উপস্থিত তারা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে ইসলাম পৌঁছিয়ে দিবে। এর দ্বারা বোঝা গেল, যে মুসলমানের নিকট ইসলাম পৌঁছেছে সে আরেকজনের কাছে পৌঁছাবে। কাসেমী সাহেব বললেন, অবশ্যই অপরের নিকট পৌঁছানো জরুরী। আমি বললাম, আপনি আমাকে দু’চারজন লোক দেখান যারা দীনকে অন্যের নিকট পৌঁছায়। তিনি বললেন, এমন লোকও আছে। আমি বললাম,এ কাজ তো সকল মুসলমানের করা উচিত। কিন্তু আমি একজন মুসলমানও পেলাম না। আমি নিজেই ইসলাম গ্রহণ করতে চাচ্ছি। কিন্তু চারজন মৌলভী আমাকে ধোঁকা দিয়েছেন। কাসেমী সাহেব বললেন, আপনাকে একজন ব্যক্তির ঠিকানা বলে দিচ্ছি। আপনি ফুলাত চলে যান। তার ঠিকানা ও ফোন নম্বর চাইলাম। তিনি বললেন, এখুনি সংগ্রহ করে দিচ্ছি। তিনি নাংলোর এক মাওলানা সাহেবকে ফোন করে মাওলানা কালীম সিদ্দিকী সাহেবের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিলেন। মাওলানা দিল্লী থেকে ফুলাত যাচ্ছিলেন, কাসেমী সাহেব বললেন, আমাদের একজন চৌধুরী সাহেব ইসলাম কবুল করতে চান। মাওলানা বললেন, আজ সন্ধ্যায় ফুলাত পাঠিয়ে দিন। আমি বললাম, আমি ফোনে কথা বলবো। কথা বললাম। মাওলানা বললেন, আপনি যখনই আসবেন তখনই আমাদের মেহমান, বরং অতি সম্মানিত মেহমান হবেন। আপনার খেদমতের জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। আমি বললাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি খুবই আশ্চর্য হলাম, শ’-দেড়শ’ কিলোমিটার দূর থেকে একজন লোক প্রথমবারেই এমন অভিনন্দন জানাচ্ছে!
আমার প্রতিটি মিনিট কষ্টে কাটছিল। তাই ঐ দিনই (২৭ শে সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পূর্বে ফুলাত পৌঁছলাম। মাওলানা সাহেব নামায পড়তে গিয়েছিলেন। আমি বৈঠকখানায় চেয়ারে বসলাম। মাওলানা নামায পড়ে আসলেন। আমি সম্মান করলাম। মাওলানা খুব আনন্দের সাথে সাক্ষাত করলেন। সেখানে বাহির থেকে কয়েকজন মেহমান এসেছিলেন। যারা বাড়ির ভেতর উপর তলায় ছিলেন। কিছুক্ষণ পর মাওলানা সাহেব আমাকেও সেখানে ডাকলেন। আন্তরিকতা ও দরদমাখা ভালোবাসা নিয়ে জানতে চাইলেন, আমার জন্য কী করণীয় বলুন? আমি বললাম, মুসলমান হতে চাই। মাওলানা বললেন,বরকতপূর্ণ হোক। যে নিঃশ্বাস ভেতরে চলে গেছে তা আর বাহিরে আসার নিশ্চয়তা নেই। যে নিঃশ্বাস বাহিরে বের হয়েছে তা ভেতরে যাওয়ার ভরসা নেই। মূলত অন্তরের বিশ্বাসের নামই ঈমান। আপনি ইচ্ছা পোষণ করেছেন আর অন্তরে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন যে, আমার মুসলমান হতে হবে, এটাই যথেষ্ট। কিন্তু এ জগত সংসারে আমরা অন্তরের অবস্থা জানতে পারি না। তাই মুখেও কালিমা পড়তে হয়। আপনি তাড়াতাড়ি দুই লাইন কালেমা পড়ে নিন। আমি বললাম, প্রথমে আমাকে একটি বিষয়ে বলুন! আমি মুসলমান হলে কি আমার স্ত্রীকে ছাড়তে হবে? তিনি বললেন আরে জনাব! আপনি কেমন মুসলমান হবেন যে, আপনার জীবন সঙ্গীকে ছেড়ে দিবেন? আপনি তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলছেন কেন?
আপনি যদি সত্যিকারার্থে অন্তর থেকে মুসলমান হন, তাহলে স্ত্রীকে স¦র্গেও সাথে নিয়ে যাবেন। বরং এ সমগ্র জগত সংসারকে নরক(জাহান্নাম) থেকে বাঁচিয়ে স্বর্গে (জান্নাত) নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ কথাগুলো খুব ভালো লাগলো। একজন ভালো মানুষ পেয়ে গেলাম। মাওলানা সাহেব আমাকে কালেমা পড়ালেন। হিন্দিতে অর্থও বলে দিলেন। আর বললেন তিনটি কথা স্মরণ রাখতে হবে।
এক. ঈমান ঐ মালিকের জন্য কবুল করেছি, যিনি অন্তরের সকল রহস্য জানেন। মাওলানা সাহেব বললেন, আমি মুসলমান। না জানি মানুষ কত কিছু বলে। কিন্তু আমার মালিক জানেন আমি মুসলমান হয়েছি কি না। ইসলাম হলো ঐ জিনিসের নাম যা অন্তরের ভেদ ও রহস্য জ্ঞাপক সত্ত্বাকে কবুল করে।
দুই. এই দুনিয়াতেও ঈমানের প্রয়োজন আছে। যে ব্যক্তি এক মালিক ব্যতিত অন্যের সামনে মস্তক অবনত করে, সে কুকুর থেকেও তুচ্ছ। কুকুর ক্ষুধা পিঁপাসায় এক মালিকের দরজায় পড়ে থাকে। কিন্তু ঐ মানুষ কুকুর থেকেও নিকৃষ্ট যে, বিভিন্ন দরজায় ঝুঁকে পড়ে। মূলত; মৃত্যুর পরেই ঈমানের প্রয়োজন হবে যেখানে অনন্তকাল থাকতে হবে। তাই মৃত্যু পর্যন্ত ঈমান বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিন. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঈমান আমাদের ও আপনাদের মালিকানাধীন নয়। বরং ইহা আমাদের নিকট প্রত্যেক ঐ সকল মানুষের আমানত, যাদের পর্যন্ত আমরা পৌঁছতে পারি। এখন যদি মালিক আমাদেরকে তাদের পর্যন্ত পৌঁছার তৌফিক দেন, তাহলে আমাদের সমস্ত আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের নিকট এ সত্যকে পৌঁছানোর দায়িত্ব আদায় করতে হবে। আমি বললাম, মাওলানা সাহেব! আপনি সত্য বলছেন। আমি মূলত (জাহান্নামের)ভয় ও (জান্নাতের)লোভে মুসলমান হচ্ছি। মৃত্যুর পর কী হবে? দোযখ কা খটকা, জান্নাত কি কুঞ্জি, এ জাতীয় বইগুলো পড়ার পর ফিল্মের মত আমার চোখের সামনে ভাসছিল। আমার নিজের ব্যাপারে চিন্তা হচ্ছিল যে, এত জুলুম-অত্যাচার করেছি, মৃত্যুর পর না জানি কী হবে? আমি আজ আপনার সামনে ওয়াদা করছি, মালিক ইসলামে যে সকল কাজ নিষেধ করেছেন সর্বস্ব বিলীন করে হলেও তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করব। তাহলে হয়তো বা আমার মালিকের সামনে এ মুখ দেখাতে পারব। আমি মাওলানা সাহেবকে আরো বললাম, ইসলাম সম্বন্ধে পড়ে মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মুসলমানদের দেখে নয়। বর্তমানে মুসলমানদের দেখে কে মুসলমান হতে চায়! আমার চারপাশে অনেক মুসলমান ছিলো। হায়দার নামে আমাদের একজন ভাড়াটিয়া ছেলে ছিলো। সে নামাজ পড়তো না। একবার তাকে বললাম, তুমি প্রতি মাসে আমার মা-বাবাকে ভাড়ার টাকা দাও। সেই সাথে তুমি যদি তাদের মুসলমান হওয়ার দাওয়াত দিতে তবে কতইনা ভালো হতো। তারা যদি মুসলমান হয়ে যেতো তাহলে আমাদের বংশের সকলেই মুসলমান হয়ে যেতো। সে বললো, তোমার বাবা এলাকার মেম্বার। আমি যদি এ কথা বলি তাহলে, আমার বেঁচে থাকা দায় হয়ে যাবে। আমি বললাম, তুমি আল্লাহকে বেশী ভয় কর, না আমার বাবাকে বেশী ভয় কর। আজ থেকে এই কা’বার ছবি সরিয়ে আমার বাবার ছবি টানাও। প্রতিদিন তার নাম জপে করে সেজদা করো। বাবা যদি কোনদিন দেখতে পান তবে হয়তোবা তোমার ভাড়া মাফ করে দিবেন। যা তোমার খুশির কারণ হবে। তাকে আরো বললাম, তুমি নিজেকে ‘সাইয়্যেদ’ বলো। আল্লাহর সামনে তো তোমাকেও যেতে হবে। সেদিন আমি মালিকের সামনেই বিচার দায়ের করবো যে, এই সাইয়্যেদরা একদিনও আমাদের ঈমান আনার কথা বলেনি।
প্রশ্ন. তার পর কী হলো?
উত্তর. আমি মাওলানা সাহেবকে এ পর্যন্ত আসার বিবরণ শোনালাম এবং চারজন বড় মাওলানা থেকে ফেরত আসার কথা শোনালাম। মাওলানা আমাকে খুব মহাব্বতের সাথে বুঝালেন যে, তাদের এমন করা উচিত ছিলো ।
প্রশ্ন. আপনার সন্তানাদি কতজন?
উত্তর. দুই ছেলে,দুই মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আমাদের সমাজ পাঠানদের সাথে খুব সাদৃশ্য। তাদের লজ্জা-শরম অনেক বেশি। পুরুষরা বাহিরের ঘরে আর মহিলারা ভেতরের ঘরে থাকে। আমার মায়ের সামনে স্ত্রীর সাথে আজও কথা বলতে পারি না। মা বসা থাকলে তাঁকেই কাজের কথা বলি। মা কখনও বলতেন, তোর স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তাকে কিছু বলিস না কেন? আমি বলতাম, মা যখন মরে যাবে তখন অন্যকে বলবো। আমাদের সমাজে মেয়েদের লেখা পড়ার প্রচলন নেই। আমাদের বংশে বিদ্রোহ করে আমি বড় মেয়েকে পড়িয়েছিলাম। হাইস্কুল পাশ করে সে একদিন আমাকে বলল আব্বু! আমার দুই হাজার টাকা লাগবে। আমি বললাম বেটি ২০০০ টাকা দিয়ে কী করবে? সে বলল এক হাজার দিয়ে মোবাইল পাওয়া যায়। বললাম মোবাইল দিয়ে কী হবে? বললো, কথা বলবো? জিজ্ঞাসা করলাম, আর এক হাজার দিয়ে? বললো,জিন্সের কাপড়-কিনবো। আমি বললাম দুই হাজারের জায়গায় পাঁচ হাজার দিবো। কিন্তু ১৫ দিন পর। যেখানে আত্মীয়তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাদের বললাম, আট দিনের মধ্যেই যা করার করো। তা না হলে আমার মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবো। তারা প্রস্তুত হয়ে গেলো। বাবাকে বলে পণ্ডিত ডেকে শাদী পরিয়ে দিলাম। আমি মেয়েকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে বললাম অর্ধেক এখন নাও। বাকি অর্ধেক উঠিয়ে দেওয়ার দিন দেবো। আজ হাইস্কুল পড়েই মোবাইল ও জিন্সের কাপড় চাচ্ছো! যদি ইন্টারমেডিয়েট পর্যন্ত পড়তে তাহলে তো কোন একটি মেথর ছেলেকে ধরে এনে বলতে আব্বু! এ তোমাদের জামাই। আমি অঙ্গীকার করেছি যে, মেয়েদের ৫ম শ্রেণীর বেশি কখনো পড়াবো না। একথা মাওলানা সাহেবকেও বলেছি। তিনি বললেন, আপনার এই চিন্তা সঠিক নয়। এখন আপনি মুসলমান। ইসলামের প্রতিটি কথা মানা উচিত। ইসলাম জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করেছে। ছেলেমেয়ে সবাইকে পড়ানো উচিত। কিন্তু শর্ত হলো ইসলামী পরিবেশ ও শিক্ষা-দীক্ষা থাকতে হবে। আমি পাক্কা নিয়ত করেছি। বাকী তিন বাচ্চাকে আমি ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াবো। বাকী মালিকের হাতে। এখন আমি স¤পূর্ণ ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে জীবন-যাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি প্রচুর মদ্যপানে অভ্যস্থ ছিলাম। হিন্দু থাকাবস্থায় হিম্মত করে দুই-তিন মাস পর্যন্ত কয়েকবার মদপান ছেড়েছি। বন্ধুদের নিজ হাতে পান করিয়েছি। তবুও আমি নিজে পান করিনি। এখন যেহেতু কালেমা পড়েছি তাই এখন থেকে সারাজীবন নিজে পান না করা, অন্যকে পান না করানো ও পান কারীদের কাছে না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১৫ দিন হয়ে গেল এর কথা চিন্তায়ও আসেনি। মালিকের অনুগ্রহ যে, কোন বন্ধুও আমার সামনে পান করেনি। অথচ কারো জানা নেই যে, আমি তা ছেড়ে দিয়েছি ও ইসলাম কবুল করেছি।
প্রশ্ন. ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি কি আপনার স্ত্রীকে বলেছেন?
উত্তর.আমার স্ত্রী আমার মায়ের মত অনেক ধার্মিক ও কট্টর হিন্দু। মাওলানা সাহেব যখন বলছিলেন তাকে নিজের সাথে জান্নাতে নিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম, সে তো অনেক কট্টর হিন্দু। যেদিন আমি গোশত খেয়ে আসতাম সেদিন আমার ঘরে প্রবেশ করা কষ্টকর হয়ে যেত। জানি না কীভাবে সে ঘ্রাণ পেয়ে যেতো। মাওলানা সাহেব বললেন, কট্টর হিন্দুই পাক্কা মুসলমান হয়। মানুষ স্বীয় মালিককে সন্তুষ্ট করার জন্যই ধর্মের অনুগত্য করে। আপনি যদি তাকে বুঝাতে পারেন যে, এই রাস্তা ভুল তাহলে সঠিক রাস্তা ইসলামের উপরও সে অনেক মজবুতির সাথে আমল করবে। তারপর মাওলানা সাহেবের ভাগিনার মোবাইল দিয়ে ফোন করে তাকে বলে দিয়েছি যে, আমি মুসলমান হয়ে গিয়েছি। সে অসন্তুষ্ট হলো ‘আমি অন্যের মোবাইল দিয়ে ফোন দিয়েছি’ এই কথা বলে মোবাইল রেখে দিই।
প্রশ্ন. তারপর কী হলো?
উত্তর.পরদিন সকালে মামলার তারিখ ছিলো। সকালেই উকিল সাহেবের সাথে সাক্ষাত করার কথা ছিলো। তাই রাতে মাওলানা সহেব তার গাড়ি দিয়ে খাতুল্লী পৌঁছিয়ে দিলেন। রাত ১২:৪৫ মিনিটে বাসায় পৌঁছি। মহারাণী রাগে তো অগ্নিশর্মা। বারবার গালি দিচ্ছিলো। পঁচিশ বছরের সমস্ত আদব শিষ্টাচার ভুলে গেছে। সে বলছিল তুমি ধর্মকে লাঞ্চিত অপমানিত করেছো। তুমি আমার কি হও। দূর হও এখান থেকে। আরো কত কি যে বলছে। সকাল পর্যন্ত ঝগড়া চলছিলো। মাওলানা সহেব বিবিকে দাওয়াত দেয়ার জন্য সর্বশেষ একটি পয়েন্ট বলে দিয়েছিলেন। সকাল হয়ে যাচ্ছে। দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে সে সবাইকে বলে দিবে, এই ভয়ে সর্বশেষ তীর হিসেবে তা ব্যবহার করলাম। তাকে বললাম,তুমি খাঁটি হিন্দু না নকল হিন্দু? সে বলল, খাঁটি একেবারে খাঁটি। বললাম, যদি তুমি খাঁটি হিন্দু হও, আর আমি যদি ইসলামের চিতাশালে পুঁড়ি তাহলে তোমাকেও আমার সাথে সতীদাহ হওয়া উচিত। এখন তুমি আমাকে ছেড়ে বা চোট দিয়ে বাজারজাত পণ্য হবে অথবা অন্যের কাছে বিয়ে বসবে। ভগবান তোমাকে আমার সাথে বেঁধে দিয়েছে। তুমি যদি খাঁটি হও তাহলে আমার সাথে সতীদাহ হওয়া উচিত। যথাস্থানে তীর লেগে যায়। সে চুপসে গেলো। দীর্র্ঘক্ষণ পর্যন্ত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো। আমি কাছে গিয়ে তাকে আদর স্নেহ করলাম এবং সুখ দুঃখে, জীবন মরণে একসাথে থাকার ওয়াদার দোহাই দিয়ে মুসলমান হওয়ার কথা বললাম। সে প্রস্তুত হয়ে গেল। ভাঙা ভাঙাভাবে কালেমা পড়ালাম। সকালে ফজরের নামায দু’জন এক সাথে পড়লাম। আমার ইসলাম গ্রহণের তুলনায় আমার বিবির ইসলাম গ্রহণ আমাকে বেশি আনন্দিত করেছে। মাওলানা সহেবের প্রতিটি কথা সত্য হতে লাগলো। তিনিই বলেছিলেন যে, স্ত্রীকে ছাড়ার অর্থ কী? তাকে জান্নাত পর্যন্ত সাথে নিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন. এখন আপনার ইচ্ছা কী? ইসলাম শিখার জন্য আপনি কী চিন্তা করছেন?
উত্তর. আমাদের এলাকায় একজন মাওলানা সাহেব, যিনি মসজিদের ইমাম, প্রতি রাতে তার কাছে যাচ্ছি। তাবলিগ জামাতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মামলার তারিখের কারণে এখন আমি অপারগ। আমার বড় মেয়ে ও জামাতা কে ‘মৃত্যুর পর কি হবে’ ও ‘আপনার আমানত’ বই দুটি পড়তে দিয়েছি।
প্রশ্ন. আরমুগানের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে কি কিছু বলবেন?
উত্তর. আমি শুধু এই কথাই বলবো যে, দীন যেহেতু আমানত, ‘আপ কি আমানত আপকি ছিওয়া মে’ নামক বইটিতে মাওলানা সহেব যেমনটি লিখেছেন। এই বইয়ের কথাগুলো সারা জগতে পৌঁছানো উচিত। বর্তমান যুগে ইসলাম পৌঁছানো অনেক সহজ। আমি জাট সম্প্রদায়ের লাকড়া জাট সম্প্রদায়ের মানসিকতা ভালভাবে জানি। তারা অনেক লোভী হয়। লোভ থেকে বেশী ভীত হয়। বিশেষ করে জেল ও শাস্তিকে তারা যেই পরিমাণ ভয় পায়;সম্ভবত অন্য কেউ এত ভয় পায় না। আহমদ ভাই! আমি আপনাকে সত্য কথা বলছি যে, যদি ‘মরণে কে বাদ কিয়া হোগা’ এবং ‘দোযখ কা খটকা’নামক বইগুলো হিন্দী-ভাষায় অনুবাদ করে জাট সম্প্রদায় পর্যন্ত পৌঁছানো যায় এবং কুরআনে বর্ণীত জান্নাত ও জাহান্নামের যেই আলোচনা আছে তা যদি তাদের শুনানো হয়, তাহলে তারা সকলে অবশ্যই মুসলমান হয়ে যাবে। তা থেকেও জরুরী কথা হলো যে, দীন যেহেতু আমানত এবং মালিকের সামনে হিসাব দিতে হবে। তাই এ কথার ও হিসাব দিতে হবে যে, তাদের পর্যন্ত দাওয়াত পৌঁছলো কি-না ? দীনকে অন্যের পর্যন্ত পৌঁছানো শুধু অন্যের জন্যই নয় বরং মৃত্যুর পর প্রশ্নের জবাব থেকে বাঁচার জন্য স¦য়ং মুসলমানদের জন্যও আবশ্যক।
প্রশ্ন. আপনার কথা এত চিত্তাকর্ষক ও মজার যে, মন চাচ্ছে দীর্ঘ সময় কথা চলুক। কিন্তু আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। অন্য সময় আলোচনা করা যাবে। ইনশাআল্লাহ। অনেক অনেক ধন্যবাদ আস্সালামু আলাইকুম। ফী আমানিল্লাহ।
উত্তর. আপনাকেও ধন্যবাদ। ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে
মাওলানা আহমদ আওয়াহ নদভী
মাসিক আরমুগান নভেম্বর ২০০৪ ইং
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×