somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ বছর পর মদ্যপ স্বামীর ইসলাম গ্রহণ এবং সংসরে ফিরে আসা ..

১২ ই মে, ২০১২ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতে এক দরিদ্র মেধাবী পরিশ্রমী সাহসী নারীর ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস।
বোন জামিলা (পুষ্প)-র সঙ্গে
একটি সাক্ষাৎকার

আমার পয়গাম, আমরা একে অন্যের কল্যাণ কামনা করি। হিন্দুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকি, সুসম্পর্ক রক্ষা করি, বিভেদ ও দূরত্বের সীমারেখা ধ্বসিয়ে দিই। হিন্দু সম্প্রদায় মুসলিম ধর্ম সম্পর্কে জানতে অধীর আগ্রহী। কাছাকাছি হই। লোকে দলে দলে ইসলামে চলে আসবে।

বোন শাহনাযের আন্তরিক ইচ্ছা ও চেষ্টায় নওমুসলিম বোন জামিলাকে গরীবখানায় আসার দাওয়াত জানিয়েছিলাম। মাওলানা যুলফিকার আলীর শ্যালিকা আফসানা সাহেবার সাথে বোন জামিলা এসেছেন। সালাম ও দো'আ বিনিময়ের পর চা পান কালেই বোন শাহনায কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান। আমি তখন বললাম, “আরমুগান ও আল্লাহ কী পুকার” পত্রিকায় যে সমস্ত ভাই-বোন নিজের মূলের দিকে অর্থাৎ ঈমানের দিকে ফিরে এসেছেন তো মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করার জন্য তাদের সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। আর এর সীমাহীন ফলাফল সামনে আসছে এবং এটা খুব জনপ্রিয়ও বটে। বোন শাহনায বলেন যে, কেবল ভারতবর্ষেই নয়, সৌদিআরব, ব্রিটেন, আফ্রিকায়ও এসব সাক্ষাৎকার সীমাহীন জনপ্রিয় এবং মানুষ এর থেকে উপকৃত হচ্ছে। মানুষ নিজ ব্যয়ে এগুলোর কপি করে বণ্টন করে থাকে। তখন বোন জামিলা তৈরি হলেন, অন্যথায় তার দৃষ্টিভঙ্গি হল, আমি যা কিছুই হই আল্লাহর জন্য হয়েছি এবং এর জন্য আল্লাহর দরবারে পুরস্কারের প্রত্যাশী। দুনিয়ার নাম-ধাম ও খ্যাতিও আমার কাম্য ও কা´িখত নয়।
নিয়মমাফিক আমাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল :
প্রশ্ন : আপনার পূর্বের নাম কী ছিল?
উত্তর : আমার পূর্বের নাম ছিল পুষ্প।
প্রশ্ন : আপনার পিতার নাম?
উত্তর : আমার পিতার নাম শিবরাম ভগত, মা'র নাম সুমী বাঈ।
প্রশ্ন : কোন পরিবারের সঙ্গে আপনি সম্পর্কিত এবং সেটি কোথায়?
উত্তর : আমার সম্পর্ক পাঞ্জাবের রাজপূরা জেলার পাতিয়ালার ভগত খান্দানের সঙ্গে। আমরা তিন বোন।
প্রশ্ন : আপনি ইসলাম গ্রহণ করলেন কেন? আপনার পুরনো ধর্ম কিভাবে ছাড়লেন?
উত্তর : এর সোজা-সাপ্টা জওয়াব হল এই যে, আমার আল্লাহ আমাকে ভালবাসতেন। আমার প্রভু, প্রতিপালক আমাকে দয়া প্রদর্শন করলেন, আমাকে ঈমানের সম্পদদানে ধন্য করলেন, কুফরকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। বাহ্যিকভাবে “মুসলিম মহিলাদের সতর ঢাকা” আমার ইসলাম গ্রহণের উপলক্ষ্যে পরিণত হয়। বোনটি আমার! আমার কাহিনী বড়ই দীর্ঘ!
বোন শাহনায, বোন আফসানা ও আমি তিনজই সমস্বরে বলে উঠলাম : হ্যাঁ
উত্তর : (জীবনের পাতাগুলো একের পর এক উল্টাতে শুরু করলেন।)
আমাদের পরিবার ছিল দরিদ্র পরিবার। আমার খালার বিয়ে হয়েছিল এক বড় পরিবারে। আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ২০ বছর। আমার খালা ভাবলেন যে আমার বোন-ঝিও যদি বড় পরিবারে এসে যায়। সেজন্য তিনি আপন দেবরের ছেলের সঙ্গে, আমার বিয়ে দেন যিনি সিবিআই অফিসার ছিলেন । আমার মা ধনী-গরিবের ভয়ে ভীত হবার কারণে এ বিয়েতে খুব একটা রাজী ছিলেন না। এক ধরনের জোর-যবরদস্তি করেই এ বিয়ে হয়। বিয়ের পর জানতে পারি যার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে সে অত্যন্ত বেপরোয়া স্বভাবের ও মদ্যপ। শ্বশুড়বাড়িতে আমার অবস্থা ছিল চাকর-বাকরের চেয়েও খারাপ। কাঠের পুতুলের মত আমাকে শ্বশুড় বাড়িতে ঘুরানো হত। ১৯৮০ সালে আমার বিয়ে হয় এবং ১৯৮৩ সালে আমার প্রথম পুত্র জন্ম্রগহণ করে। সেসময় আমি অত্যন্ত করুণ দশায় হাসপাতালে ছিলাম। আমার মা'ও আমার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বেচারী আর কী-ইবা করতে পারতেন। অবস্থা এমনটাই ছিল, আমি লোকের থালা-বাসন ধুয়েছি, ঘর-দোর ঝাড়– পর্যন্ত দিয়েছে। এমতবস্থায় আল্লাহ আমাকে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা হবার তৌফিক দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা আমাকে তীক্ষè মেধা দান করেছিলেন। ১৯৮০ সালে ২৫০ টাকা মাসিক বেতনে আমি এক সেলাই কারখানায় কাজ শুরু করি। সেখান থেকেই আমার ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। কারখানা ছিল জনৈক হিন্দুর কিন্তু এর কর্মচারী ও শ্রমিক ছিল মুসলমান এবং বেরেলভী মুসলমান। আমি শাড়ি পরে কারখানায় যেতাম। হাতাবিহীন ব্লাউজ পরতাম। একদিন এক শ্রমিক আমাকে বলল, “বোনজী! আপনি আমাদের ঈমান খারাপ করছেন।”
আমি বললাম, “ঈমান কী?”
সে বলল, “আমরা মুসলমান! আমাদের এখানে মুসলিম মহিলারা পর্দা-পুশিদা মেনে ও শরীর ঢেকে চলে। এজন্য পুরুষদের ঈমানও নিরাপদ থাকে, মহিলাদের ঈমানও নিরাপদ থাকে।”
আমি বললাম, “ঈমান কী?”
সে বলল, “এক কলেমার নাম যা পড়ান হয়।”
আমি বললাম, “ওরা তো মুসলিম মহিলা। তারা তাদের ধর্মের কারণে এরূপ চলে।”
মুসলমান শ্রমিকটি খুব দরদভরা কণ্ঠে বলল, “বোনজি! আপনি যেই হন ও যাই হন, আমার দিল চায় যে আপনিও আমাদের মা-বোনদের মত কাপড় পরুন।”
আমার মনে তার ঈমান ও পর্দা-পুশিদার কথা ধরল। আমি ভাবতে থাকি যে, কেমন সুন্দর ঈমান তার আর তাদের ওখানে মেয়েদের কতটা সম্মান করা হয়। আমার দিল অস্থির হয়ে উঠল। ঐ শ্রমিকটির ঈমানের ভেতর আসার জন্য। পরদিন আমি সেই শ্রমিকটিকে বললাম, “ভাই! আমি তোমার ঈমানের ভেতর আসতে চাই। আমাকে কী করতে হবে?”
সে বলল, “একটি কালেমা আছে যা পড়তে হবে।”
আমি বললাম, “আমাতে তাড়াতাড়ি পড়াও।”
বলল, “আমি তো পড়াতে পারি না। আমাদের বাবা পড়াবেন। তিনি অমুক দিন আসেন।”
এখন আমাকে সেই অমুক দিনের অপেক্ষা করতে হল অধীরভাবে। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সেই দিন এসে গেল। এক লম্বা চোগা এবং গলায় বিভিন্ন ধরনের রকমারী মালা ও টুপি পরিহিত বাবা কারখানায় এলেন। তিনি রুমাল ধরিয়ে আমাকে বলতে বললেন, “সাল্লী আলী কা ইয়া মুহাম্মদ, ইয়া আল্লাহ! ইয়া মুহাম্মদ! ইয়া আলী। আল মদদ কর মদদ। (বোন জামীলা যখন এই কলেমা শোনালে আমার তখন হাসি পাচ্ছিল এবং আশ্চর্যও হচ্ছিলাম।) মাঝখানে আমরা বললাম, “এটা কালেমা নয়।”
তিনি বললেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটা ছিল আমার সেই যমানার ঈমান, ভাই যেমনটি বলেছেন। তিনি যা বললেন, আমিও তা বললাম এবং বহুদিন পর্যন্ত এটাই আমি আওড়াতাম। এরপর আমাকে কবরস্থানে যেতে বলা হল। আমি সেই বাবার মুরীদ হলাম। অতঃপর আমি হিন্দুস্থানের বড় বড় মাযারগুলোতে হাজিরা দিয়েছি এবং সেখানে যা কিছু হয় আমি তা দেখতাম ও করতাম।”
“এদিকে আমি শাড়ির পরিবর্তে স্যুট পরা শুরু করি এবং নিজেই কাপড় ডিজাইন করতে শুরু করি। আমার ডিজাইনকৃত ড্রেস ছিল খুব দামী। আমি পৃথকভাবে মেশিন কিনি এবং নিজেই ডিজাইন করে ড্রেস তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। আমার কারবার বেশ জমে উঠল। ১৯৮২ সালে উখলা, ফিস-এ আমি আমার কারখানার ভিত্তি স্থাপন করি এবং আলাদাভাবে মুসলমান শ্রমিক ও কর্মচারী রাখি। আমার পয়সা কামানো হয়ে উঠল একমাত্র নেশা আর আল্লাহই আমাকে এই পরিমাণ যোগ্যতা দিয়েছিলেন যে, আমি নেহরু নগরে তিনতলা একটা গোটা ক্যাম্পাস কিনে ফেলি। হ্যাঁ, আরও একটা কথা মনে পড়ল, আমি যখন কারখানায় কাজ করতাম তখন বাবার খানকাহর দরবার ছিল। আমার মা আমার নামে একটা দোকান করে দিয়েছিলেন। আর এটাই ছিল তার সর্বসাকুল্যে স্থাবর সম্পত্তি। বাবার খানকাহর জন্য জমির প্রয়োজন ছিল। সুলতানপুর গওছাবাদে আমি আমার মাকে বললাম দোকানের কাগজপত্র আমাকে দিন। আমাকে একটা বাড়ি কিনতে হবে। আমি আমার মাকে মিথ্যে বলি। নইলে আমার মা আমাকে কখনেই কাগজ দিতেন না। আমি কাগজপত্র নিয়ে সেই দোকান সেই সময় ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করে ১১ হাজার টাকা বাবাকে খানকাহর জন্য দিয়ে দিই আর ১ হাজার টাকা আমি নিজে রাখি। সে সময় আমি চাকুরি করতাম ২৫০ টাকা মাসিক বেতন। তিনটি বাচ্চা এবং নিজে ভাড়া বাসা। এক হাজার টাকা জমা করলাম এবং দিল্লী কোর্টপাতিয়ালা হাউসে গিয়ে ইসলাম কবুলের এফিডেভিটের কাজ সম্পন্ন করি। ব্যস, এরপর আল্লাহর নামে খরচ করার নেশা আমাকে পেয়ে বসে। আমি চাইতাম যে, দু'হাতে টাকা কামাই করব এবং আল্লাহর নামে খরচ করব। টাকা উপার্জনের নেশা আমাকে পেয়ে বসে। নেহরুনগরে আল্লাহ আমাকে সম্পত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানে যেসব শ্রমিক কাজ করত, তারা নামায পড়ত। তারা নামায পড়তে যেত এবং বাইরে গিয়ে নামাযের বাহানায় ছবি দেখতে চলে যেত। আমি যেসব লোক নামাযী তাদের কাজ দিতাম। কিন্তু তারা চালাকি করত। আমি ভাবলাম, আমাকে এমন জায়গায় কারখানা তালাশ করা দরকার যেখানে মসজিদ কারখানার পাশে হবে। অতএব আমি গফরনগরে হাজী কলোনীতে জমি খরিদ করি এবং কারখানা এদিকে সিফট করি। কিন্তু এদিকে আমি যেহেতু একাকী কাজ করতাম এবং মুসলিম এরিয়ায় মসজিদের দরুন শিফট হয়েছিলাম যাতে শ্রমিক-কর্মচারীরা অবশ্যই নামায পড়ে এবং বেশিক্ষণ বাইরে না থাকে। আর কাজেরও যেন ক্ষতি না হয়। কিন্তু এদিককার মুসলমানরা আমাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছিল যে, কেমন মুসলমান হয়েছে যে, ছেলেদের দিয়ে কাজ করাই। এ জাতীয় আরও অনেক কথায় আমি পেরেশান হয়ে পড়ি।
এর জের পরে কারখানার ওপর। আমার কারখানার লাল বাতি জ্বলার উপক্রম। আমি আমার ছেলেদের কাছে নেহরুনগরে চলে যাই। কাজ বন্ধ করে দিই, এ কারণে যে, ইসলামে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো জায়েয নেই। আর আমি দরিদ্রদশায় পতিত হই ও অনাহার-অর্ধাহারের সম্মুখীন হই। আমি টুকরা কাগজ বিক্রি করতে শুরু করি। ফলে কিছুটা আশ্রয় জোটে। এদিকে কিছু ভাল মুসলমান বোনের সঙ্গে দেখা হয়। একজন আমাকে বলেন যে, আপনাকে বুল বোঝানো হয়েছে। আপনি আপনার কারবার শুরু করুন। এতো মনগড়া কথা। বোনটির স্বামী মওলভী যুলফিকার আমাকে এ ব্যাপারে পথ দেখান। তিনি আমকে আপন মায়ের মতই আমার প্রতি লক্ষ্য রাখেন। আমি হাজী কলোনীতে পুনরায় কারখানা শুরু করি এবং নাইটি, টপ ও পাতিয়ালা সালোয়ার ডিজাইন করে মার্কেটে বিক্রি শুরু করি। এখানেও আমি বিল্ডিং নির্মাণ করি এবং নিজেও এ দিকেই চলে আসি। এরপরই আমি জানতে পাই যে আমি যে ইসলামের ওপর চলছি, কবর পূজা ইত্যাদি ঠিক নয়। এখানে এসেই সহীহ-শুদ্ধভাবে কলেমাপড়ি। এখানে এসেই নামায শিখি। কুরআন করীম পড়ি। তবালীগ জামা'আতে যাই। মুসলিম বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আমি যখন নামায শিখি এবং তা আদায় করি তখন বুঝলাম যে হাদীসে যে বলা হয়েছে, “নামায মু'মিনের জন্য মে'রাজ” আসলেই তা মি'রাজ। এ কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্না ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। আমরা তার এই অবস্থাদৃষ্টে ঈর্ষানি¦ত হই, আমরা বলি যে, “আপনি তো আল্লাহর ওলি এবং অনেক উঁচু দরজার মানুষ।”
বোন জামিলা বলেন যে, “আমি ওসব কিছু নই। এরপর অত্যন্ত ঝটপট বলেন, কোনভাবে যদি সেই নামাযের অবস্থা ফিরে আসে।”
তিনি আমাকে বলতে থাকলেন, “কোনো আমল বলুন যাতে করে আমার নামাযের মধ্যে প্রথম দিককার অবস্থা ফিরে আসে।”
আমরা বললাম, “আল্লাহ অসীম দাতা ও দয়ালু। তাঁর দরবারে বিনীতভাবে কাতরকণ্ঠে যা-ই কিছু চাইবেন পাবেন ।”
বোন জামিলা তাৎক্ষণিকভাবে বললেন, “আমার সাথে তো এ ব্যাপার ঘটেছে। যখনই আমি চেয়েছি সবকিছু পেয়েছি। বান্দাহ বড়ই অকৃতজ্ঞ, অবিশ্বস্ত। সে চাইতেই জানে না, চায় না।”
প্রশ্ন. “আপনার বিশেষ কোন মুহূর্তের কথা বলুন।”
উত্তর. “পবিত্র রমযান মাস। আমি বরাবর রোযা রাখি। নামায ও আদায় করি। কিন্তু দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারতাম না। ডায়বেটিসের দরুণ আমার হাঁটু অকর্ম হয়ে পড়ে। আমি যেখানে থাকি সেখানে আমার এমন --- আছে যেখানে আমি খুব সহজে ভাড়াটিয়াও রাখি। লায়লাতুল কদর এসে গেল। সবাই দাঁড়িয়ে নফল পড়ছিলেন। সে রাতে আমিও জেগেছিলাম। পায়ের ব্যথার কারণে আমি উঠতে পারছিলাম না। কোন মুসলমান বোনও আমাকে এ রাত সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলেনি। আমার অন্তর ফেটে যাচ্ছিল যে, কেউ এসে আমাকে সান্ত্বনা দিক। এ রাতের মর্যাদা ও মহাÍ্য সম্পর্কে বলুক। এমতাবস্থায় আমি কিভাবে ইবাদত করব। আমাকে সাহায্য করুক। এরপর আমার অসহায় অবস্থা ফুটে উঠল। আমি বসে বসে সিজদায় পড়ে গেলাম। এবং এভাবে আমার মালিকের সামনে অস্ফূঠ আর্তনাদ সহকারে কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠি। আমার তখন হুঁশ ছিল না, ব্যস, ছিলাম আমি আর আমার আল্লাহ। অসহায় অবস্থা এমন যে ইবাদতও নামাযও দাঁড়িয়ে পড়তে পারব না। এর অনুভূতি ফিরে আসতেই হঠাৎ করেই আমার মনে হল আমি দাঁড়াতে পারি। আর মনে হতেই আমি সোজা দাঁড়িয়ে গেলাম এবং সে রাতে দাঁড়িয়ে খুব নামায আদায় করি ও চলাফেরায় সক্ষম হই। আমি চলাফেরা করতে শুরু করি এবং কয়েক বছর পর্যন্ত এমন থাকল যে, আমার যেন কোন অসুখ-বিসুখই ছিল না। ডায়বেটিসে চিনির মাত্রাও শেষ হয়ে যায়।” এরপর বললেন, “বাস, বোন! আমরা খুবই অকর্মণ্য। কোন কাজের নই। আমরা দুনিয়াদারির মধ্যে ফেঁসে গেছি। এরপর সেই একই রোগ।”
“আমি যাযাইলে আ'মাল পড়তে শুরু করি। আমি যখন পড়লাম যে, যার ছেলে কুরআনের হাফেজ হবে পরকালে সেই ছেলের মাকে জান্নাতে নূরের টুপি পরানো হবে। আমি অস্থির হয়ে উঠলাম যে, আল্লাহ! এখন আমি কী করব? আমার দুই ছেলে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েও হয়ে গেছে। কেননা সে সময় তো বাস সাল্লী আলী কা ইয়া মুহাম্মদ, আল-মদদ কর মদদ এবং কবরস্থানে যাওয়াটাকেই ইসলাম মনে করতাম। ব্যাস, কেবল নিজেই মুসলমান হয়েছি। আমি খান্দানী অবস্থার ওপর থেকেছি। তাদের বিয়েও আমি হিন্দু মেয়েদের সাথে দিয়েছি। আর বাচ্চাদের অতঃপর এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত রেখে দুঃখী করেছি। আমি তুমুল কেঁদেছি, যে সব হাফেজের মায়েদেরকে টুপি পরানো হবে কিন্তু আমার জন্য কোন টুপি থাকবে না। আমার কোন ছেলে তো হাফেজ নয়। আমার এক দীনদার প্রতিবেশিনী ছিলেন, আমাকে সব সময় কাঁদতে দেখে তিনি বললেন, তুমি আমার ছেলেকে পড়াও, হাফেজ বানাও। অন্যরা বললেন, কোন গরিব ছেলেকে পড়াও। আমি গরিব বাচ্চা সন্ধান করতে লাগলাম। এহতেশাম নামের এক ছেলেকে পড়াবার জন্য সাহারনপুর মাদরাসার সুকড়ীতে রেখে আসি। আলহামদুলিল্লাহ! সে হেফ্জ করছে। এরপর লোকে আমাকে বলল, এভাবে টুপি পরানো হবে না। বাপ-মা নেই এমন শিশু তালাশ কর, তাকে হেফ্জ করাও। এখন আমি আরও কাঁদতে থাকি। লাগাতার যে কাঁদতে কাঁদতে জান বেরিয়ে যাবে। হায়! আমি বঞ্চিত থেকে যাব সেদিন। আমাকে টুপি পরানো হবে না। এবার আমি কোন গরিব হিন্দু বাচ্চা ঝুপড়িতে তালাশ শুরু করি। আল্লাহ একটা বাচ্চা মিলিয়ে দিলেন, যে এতিম। তার নাম রাখলাম আবদুল্লাহ। তাকে রায়পুর সাহারনপুরের দিকে নিয়ে যাই। তাকে পড়াচ্ছি। মাশা'আল্লাহ সে ১২ পারা পড়ছে। রায়পুরে পড়ছে। দুই বাচ্চার কাপড়-চোপর সব ব্যয়ভার বহন করি। আমার পৌত্র আমার কাছে থাকে। ১৩ বছর বয়স। তাকে হাওযওয়ালী মসজিদে পাঠিয়েছি। তার নাম আমান। দো'আ করুন সেও যেন হাফেজ হয়। আমীন।”
এসব শুনছিলাম আর বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছিলাম যে, আল্লাহ! ফাযায়েলে আ'মালের হাদীছ পড়েছে আর কিভাবে আমল করছে? অথচ আমাদের অবস্থা কি! আমরা জন্মসূত্রে মুসলমান হয়েও হেফ্জ তো দূরের কথা কুরআন কারীম দেখে পড়তেও পারি না। অনেকে একে মর্যাদার পরিপন্থী ভাবি। বাচ্চার জন্য সর্বপ্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খুঁজি। আল্লাহর ভয়ে শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল, যে আমাদের এই আচরণের দরুণ আল্লাহ আমাদের সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করবেন।” আমি বললাম, “বোন জামিলা! আপনি মুবারকবাদ পাবার যোগ্য। দো'আ করুন আল্লাহ যেন আমাদেরকেও আপনার মত হবার তৌফীক দেন। আমীন! ছুম্মা আমীন।
আমরা ইতোমধ্যেই বেশ সময় নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু মন চাচ্ছিল যে, নিজের রোয়েদাদ শোনান হোক আর আমরা শুনতে থাকি। আমরা বললাম, “আরও বিশেষ কিছু বলুন।”
ফাযায়েলে আ'মালে পড়েছি যে, সুদখোরের সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করা হবে যে, তার পেটে সাপ-বিচ্ছু থাকবে।”
“আমাদের এখানে প্রতি সপ্তাহে এজতেমা হয় আর আমি পাঞ্জাব প্রভৃতি জায়গায়ও যাই। সেখানে হিন্দু বোনেরাও আমার ওয়াজ শোনে। জলন্ধরে আমি যখন এই সুদ সম্পর্কতি হাদীছ শুনালাম তখন সবাই বিশ্বাস করে সেখানে সুদ লেনদেন করা ছেড়ে দেয়। হিন্দু হয়ে আর তারা অস্থির থাকত। তারা বলত যে, আপনাদের ধর্মের আরও কথা বলুন।”
তখন আমি বললাম, “আপনারা প্রোগ্রাম তৈরি করুন, ইনশাআল্লাহ আমরা যাব। দাওয়াতের ওপর কথা বলব।”
তিনি আরও বললেন, “লোকে পিপাসার্ত। আমি তো বেশি কিছু জানি না। ফাযায়েলে আ'মাল ও হিন্দীতে অনূদিত কুরআন শরীফ পড়েছি। আপনার যদি সামনে আসেন তাহলে দেখতে পাবেন লোকে পিপাসার্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু ইশারা করতে দেরি, ইসলামের আঁচলতলে এসে যাবে। আমরা তখন নিজেদের ব্যাপারে আরও লজ্জিত হলাম এবং নিজদের সহ সকল মুসলমানকে অভিযুক্ত করলাম যে, আসলেই আমরা আমাদের সীমারেখার মধ্যে থাকি। খাওয়াদ-দাওয়া, নিজেদের বাচ্চাদের খাওয়ানো ও পান করানো, সেই সাথে তাদেরকে ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার প্রভৃতি বানানোর আকাক্সক্ষা পোষণকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছি। আল্লাহর দরবারে আমরা তওবাহ করছি এবং কিছু করার সংকল্প করলাম।
প্রশ্ন. বোন শাহনায বলছিলেন যে, “২৫ বছর পর আপনি আপনার স্বামীর সঙ্গে একত্রিত হয়েছেন। আপনার স্বামী মুসলমান হয়েছেন এবং আপনাদের পুনরায় বিয়ে হয়েছে। ব্যাপারটা কি বলুন তো?”
উত্তর. আমার স্বামী ২৫ বছর থেকে আমার এবং আমার বাচ্চাদের কোন খোরপোষ দেননি। তিনি কিছুদিন হয় চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছেন এবং তিনি অবসরগ্রহণকালে প্রাপ্ত টাকা-পয়সা দিয়ে একটি ফ্লাট কিনেছেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, তাকে সেই ফ্লাট বন্ধক রাখতে হয়। বাধ্য হয়ে তাকে নেহরুনগরে অবস্থিত আমার ফ্লাটে যেখানে আমার দুই ছেলে তাদের বউ ছেলেমেয়ে থাকে, উঠতে হয়। আমি বরাবর সকল আÍীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করি। কিছুদিন যখন বাপ ছেলে ও ছেলের বউয়ের কাছে থাকল তখন বড় বৌ তাকে বের করে দেয়। এরপর অপর ছেলের ঘরে গিয়ে ওঠে। একদিন দেখি কি আমার বড় বৌ তাকে খাবার দিচ্ছে যেভাবে কেউ দেয় কুকুরকে। আমি বৌমাকে বললাম, তুমি এভাবে খাবার দিচ্ছ? এভাবে তো কেউ কুকুরকেও খাবার দেয় না। যাই হোক, আমি নিয়মমাফিক খরচের টাকা দেবার জন্য রায়পুর হাফেজ ছেলেটির কাছে যাই। সেখানে দিল্লীর জামেআ মিল্লিয়ার এক বাচ্চা চাকরি ছেড়ে দিয়ে গিয়েছে। এখন হেফ্জ করছে। রায়পুরে থাকে। আল্লাহ তা'আলা তাকে দীনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। সে বলল, “আম্মাজী! আপনাকে আমি একটা কথা বলতে চাই। কারণ আমার নওমুসলিম ছেলেটির মাধ্যমে সে আমার হাল-অবস্থা জানতে পারে। সে বলল, আপনার স্বামী হিন্দু। আপনার ওপর ফরয আপনি আপনার স্বামীকে দীনের দাওয়াত দেওয়া। তার আচরণের কারণে তার সাথে কোনরূপ সর্ম্পক আছে বলে অনুভূত হতো না। আমি বললাম, “বেটা! সে তো বড় রকমের মদ্যপ। মদ ছাড়া সে থাকতেই পারে না।”
ছেলেটি বলল, “আম্মা! আপনাকে যদি গ্লাস ভর্তি মদ হাতে তুলে দিয়েও তাকে দীনের দাওয়াত দিতে হয় তাহলেও আপনি তাকে দাওয়াত দিন। এই দাওয়াত প্রদান এতটা জরুরী, আমার আশা, ইনশাআল্লাহ তিনি অবশ্যই ঈমান আনবেন। আপনি এতটা উৎসাহী ও আবেগদীপ্ত। আপনি সকল অবস্থায় এ কাজ করুন।”
আমি আমার ঘরে আসি। ফোন তুলে ধরি। ওদিক থেকে তিনি ফোন উঠান। কিন্তু তাকে কিছু বলার হিম্মত হলো না আমার। আশ্চর্য রকমের শরম বোধ হল আমার। কিন্তু মনে মনে আল্লাহর কাছে কাঁদলাম, “হে আল্লাহ! তাকে যেন ঈমানের দাওয়াত দিতে পারি এমন হিম্মত আমাকে দাও। আমার বোন হিন্দু, কিন্তু সব কালেমা ও দরূদ জানে। সেও তার ভগ্নিপতির এই দুর্গতিদৃষ্টে ব্যথিত ছিল। সে দৈনিক তাকে বলে, তুমি মুসলমান হয়ে যাও। তোমার জীবন বনবে। দেখ, আমার বোন মুসলমান হওয়ায় তার জীবন গড়েছে। সে দৈনিক বলত। একদিন দেখি কি, আমার স্বামীকে সে জোর করে আমার ঘরে ধরে এনেছে। আমি নারাজ হয়ে বলি, “তুই এই মদ্যপ-মাতালটাকে এখানে কেন এনেছিস?”
সে বলল, “এ মুসলমান হবার জন্য তৈরি। গাফফার মনযিলের মসজিদে বেলা ১০টার সময় জনৈক মাওলানার বয়ান চলছিল। তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে কালেমা পড়ানো হয়। সেখানে মাওলানা সাহেব আমাদের বিয়ে পড়ান। তাঁরই বয়ান ছিল। তিনি কালেমা পড়িয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আমি ছিলাম ক্ষিপ্ত ও কুপিত। আমার ছেলে যুলফিকার মাওলানা সাহেবকে বললেন, “আমার মা জামীলাকে বোঝান। তিনি পর্দা করে বসে আছেন। পর্দা ছাড়–ন এবং সব রাগ ঝেড়ে ফেলুন। মাওলানা সাহেব আমাকে বোঝালেন। আমি বুঝলাম। কিন্তু ২৫ বছর যাবত পৃথক বসবাস করে আসছি। আশ্চর্য রকমের আড়াল কাজ করে। সংকোচ ও জড়তা ঘিরে ধরে। এর ভেতর দিয়ে যতটা পারি তার খেদমত করছি। আজ ২২ দিন হল মদ স্পর্শও করেনি।
প্রশ্ন. আপনি তার নামায প্রভৃতি সম্পর্ক এবং ইসলামের অন্যান্য রোকন সম্পর্কে কী ভাবছেন?
উত্তর. মাশাআল্লাহ! পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে যাচ্ছে। কেউ তাকে বলেছে যে, ফুলাতে একজন বড় হযরতজী আছেন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। তিন দিনের জন্য ফুলাত গিয়েছেন। কিন্তু হযরতজীকে পাননি। আমরা বললাম, তাকে আপনি দিল্লী বাটালা হাউস ও দারে আকরামে পাঠিয়ে দিন। সেখানে তার উপকার হবে এবং হযরতজীর সঙ্গেও দেখা হয়ে যাবে। বোন জামিলা বলতে লাগলেন, আপনার বড়ই মেহেরবানী হবে আপনি যদি তার তরবিয়ত (ধর্মীয় প্রশিক্ষণ)-এর ব্যবস্থা করে দেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, হায়! যদি জায়গায় জায়গায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র কায়েম হয়ে যেত! আর আল্লাহর কাছে মনে মনেই দো'আ করলাম, “রাব্বুল আলামীন! আমাকে এর যোগ্য বানিয়ে দিন, যাতে করে নও মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করতে পারি এবং প্রশিক্ষণের জন্য দীন-দরদী ও মুখলিস (নিষ্ঠাবান) পণ্ডিতদের একত্র করতে পারি যাতে করে তারা (নওমুসলিমগণ) ভাবতে পারে, “আমরা ইসলামে এসে শান্তির মাঝে এসে গেছি। জান্নাতে এসে গেছি। ভালবাসা ও øেহ-মমতার ছায়ায় এসে গেছি।”
সে যাই হোক অনেক দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তখনও বাকী। আমি তাঁর ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি।
প্রশ্ন. বোন জামীলা! আপনি যখন প্রথম থেকেই আলাদা এবং আপন শক্তিতে দাঁড়িয়ে নিজের বাচ্চাদের সাথে আছেন। তারপরও আপনার বাচ্চাদের আপনি হিন্দু থাকতে দিলেন কিভাবে?
উত্তর. “(তিনি বললেন) কোন মুসলমান আমাকে কিছু বলেনি। সত্য বলতে কি, হাজী কলোনীতে আসার পর আমি নিজে প্রকৃত মুসলমান হয়েছি। তেমনি আমার দুই ছেলে বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ সব পড়ে। বড় বৌ খুব কট্টর, কিন্তু ছোট বৌ খুব নরম দিলের মানুষ। ছোট ছেলে আমার সঙ্গে কাজ করে বরং বলতে কি ফ্যাক্টরী, দোকান সব কিছু এখন সে-ই সামলায়। ব্যস! বউকে ভয় পায়।”
আমরা বললাম, “আমরা আপনার পুত্রবধূদের খানা খাওয়ার দাওয়াত দিই। আমরা কিছুটা চেষ্টা করে দেখি।”
তিনি খুব খুশি হলেন এতে। বললেন, “না, বরং আমি আপনাদের দাওয়াত দেব। সেখানে আমার পুত্রবধূদের ডেকে আনব। সকাল সকাল ডেকে পাঠাব। আপনারা তাদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং এরপর আপনাদের বাসায় খাবার দাওয়াত দেবেন।”
আমরা বললাম, “ঠিক আছে। কিন্তু নেককাজে দেরি করা ঠিক নয়।”
এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করল এবং সবাই মাথা নিচু করে বসে রইল। মনে হচ্ছিল আমরা অন্য কোন জগতের কথা শুনছি।
আমি বললাম, “আফসানা, আপনি খুব ভাগ্যবতী এবং মুবারকবাদ পাবার যোগ্যও।”
এরই মাঝে বোন জামীলা বলে উঠলেন, “আমার এই পুত্র হিসেবে কথিত যুলফিকার ও পুত্রবধূ আফসানা তুলনাবিহীন বউ-বেটা। আমি তাদের সাথে হজ্বও করেছি।”
তিনি তাদের সম্পর্কে অজস্রভাবে প্রশংসা করতে থাকলেন। দো'আর স্রোত বইয়ে দিলেন। আর আমি ভাবছিলাম, “বোন শাহনাযের কারণে ও জাবিদ আশরাফ সাহেবের কারণে আল্লাহপাক কত ভাল ভাল মানুষ, যাদের তুলনা নেই এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে। বোন জামিলা যেভাবে ঐসব পুত্র, পুত্রবধূর ত্যাগ, আÍ্যােৎসর্গ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও øেহ-ভালবাসার আলোচনা করলেন, যদি লিখতে শুরু করি তাহলে সাক্ষাৎকার আরও দীর্ঘ হয়ে যাবে। আর ভয় করছে, তা অমুদ্রিত না থেকে যায়। আমি তো বোন শাহনায, আফসানা ও জামিলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেছি। এবং নিজের অবস্থার ওপর লজ্জিত যে, আল্লাহ! দুনিয়াতে এখনও নবীযুগের অনুসরণ-অনুকরণকারী লোক বর্তমান রয়েছে। আমাদের কী হবে যে, আমরা আমাদের নিয়ে মত্ত। সত্যি লিখছি, আমার শরীরের প্রতিটি পশম আল্লাহর ভয়ে কাঁপছিল ও কাঁপছে। আপনাদের সকলের কাছে দো'আর দরখাস্ত যেন আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে দীনের খেদমতের জন্য নির্বাচিত করেন। আমীন! ছুম্মা আমীন!”
আরেকটি প্রশ্ন আমার মনের ভেতর ওলট-পালট করছিল যে, আমি এমন ইবাদতগুযার খোশ আখলাক মিশুক প্রকৃতির দানশীলা ও তাবলীগের জন্য সব সময় চলাচলকারীর আল্লাহর সঙ্গে একান্তে সংলাপও আশ্চর্য ধরনের হয়। অথচ এটা জরুরী নয়। নেকীর শর্ত কিন্তু অনুমান এমন স্বাভাবিক হয়।
প্রশ্ন. আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কোন কথা বলুন।
উত্তর. আমি একবার এক স্বপ্ন দেখলাম যে, আমার একটি কামরা যা অত্যন্ত সুন্দর, আশ্চর্য ধরনের রঙের বাহার, যার সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। সেখানে আমি এবং আরেকজন মসজিদে পড়ে আছি। অপরিসীম সুন্দরী, বর্ণনাতীত সৌন্দর্যের অধিকারী মহিলা, হীরা-জওয়াহেরাত, যমরুদ ও মোতির থালা হাতে নিয়ে বসে আছে।
দ্বিতীয় স্বপ্ন এই যে, আমি সীমাহীন উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছি। অত্যন্ত শ্বেত-শুভ্র পোশাক পরিহিত আর আমার চতুর্দিকে স্বচ্ছ ও নির্মল পানি। আমার ঘুম ভেঙে গেল। এর ব্যাখা কি-তা আল্লাহই জানেন। কিন্তু আমি অত্যন্ত প্রশান্তি অনুভব করেছি। একবার দেখি কি, সমতল ভূমি। আমি আর আমার পৌত্র আমান সাথে। এমন সময় ভীষণ ভূমিকম্প হল। ভয়াবহ রকমের ভূমিকম্প। আমি আলহামদু শরীফ পড়তে লাগলাম। সাথে সাথে ভূমিকম্প থেমে গেল।
আর নয়, অনেক দেরি হয়েগেছে। তার ঘরে ফেরার তাকীদ ছিল। তার স্বামী কৈলাশ বর্তমানে জামীল আহমদ এর বাসায় একা। আমরা তার শুকরিয়া আদায় করলাম।
শেষ প্রশ্ন. আরমুগান পাঠকের জন্য কোন পয়গাম?
উত্তর. আমার পয়গাম হল, একে অন্যের কল্যাণ কামনা করি। হিন্দুদের সাথে মিলেজুলে থাকি। বিভেদের দেয়াল ভেঙে ফেলি। হিন্দু সম্প্রদায় মুসলমান দর্শন সম্পর্কে জানতে আগ্রহে অস্থির। কাছাকাছি আসি। লোকে দলে দলে ইসলামে আকৃষ্ট হয়ে চলে আসবে। সালাম, দো'আ ও ভবিষ্যতে স্থায়ী সাক্ষাতের প্রতিশ্র“তি দিয়ে তারা আমাদের ঘর থেকে বিদায় নেবে। এখন আমি ভাবছি, যখন কেবল একজন অজ্ঞ-অশিক্ষিত শ্রমিকের শরীর ঢাকার কথায় এক বোন ঈমান গ্রহণ করল, ঈমান নসীব হল এবং তার মাধ্যমে হাফেজ হল, তার খান্দান ইসলামে এল, মুসলিম ও অমুসলিমের ভেতর তাবলীগ হল, খানকাহ নির্মিত হল, মসজিদ-মাদরাসায় নিজের আপনজন পাঠাল, অন্যের সন্তান পাঠাল, আরও না জানি কত কল্যাণকর কাজ হল সেখানে যারা আলেম-উলামা তারা যদি আমাদের হিন্দুস্থানে ও হিন্দুস্থানের বাইরে উঠে দাঁড়ান এবং একটি ভাল ও কল্যাণমূলক কথাই কোন হিন্দু ভাই-বোনকে বলেন তাহলে বিশ কোটি মুসলমান হিন্দুস্থানে আছে আর বাইরের দুনিয়াতে আরও কত আছেন, দুনিয়াটা শান্তির আবাসগৃহে পরিণত হবে। হায়! মুসলমান যদি আপন পদমর্যাদা চিনত। যদি কিছু করতে পারেন তাহলে আমার আশা, আপনি এতটুকু তো অবশ্যই করুন, আপনি আপনার রক্তের সম্পর্কে ভাই-বোনদের জন্য রাতের নির্জনতায় চোখের দু'ফোঁটা পানি ফেলুন যেন আল্লাহ তাদের ভাগ্যে হেদায়াত লিখে দেন। আমীন! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে
সফূরা ইয়াসমীন
মাসিক আরমুগান, জুলাই ২০০৮


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×