somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পঞ্চাশের অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের হেদায়াতের মাধ্যম কেবল এক প্রতিশ্রতি

১৬ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালমা আনজুম (মধু গোয়েল )এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার

আমাদের জীবন ইসলামি শিক্ষাধারার বাস্তব নমুনা হওয়া উচিত। ইসলামের প্রতিটি শিক্ষার মধ্যে আকর্ষণ রয়েছে। দেখুন! পঞ্চাশের অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের হেদায়াতের মাধ্যম কেবল আব্দুর রহমান ভাইÑ এর এক প্রতিশ্র“তি। একটি হাট-খাজনা আদায়ের বাস্তব আমল। সত্যি বলতে কি! আমাদের মাধ্যমে যতো লোক মুসলমান হয়েছে এবং হবে সকলেরই মাধ্যম তার ঐ ইসলামি আমল বা আদর্শ।

আসমা যাতুল ফাওযাইন. আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
সালমা আঞ্জুম. ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
প্রশ্ন. আরমুগান পত্রিকার পাঠকদের জন্যে কিছু জরুরী কথা জানতে এসেছি।
উত্তর. আমার উপযোগী কোনো খেদমত থাকলে তা নিজের জন্য সৌভাগ্যের কারণ বলে মনে করি।
প্রশ্ন. অনুগ্রহপূর্বক আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন?
উত্তর. আলহামদুলিল্লাহ! আমার নাম এখন সালমা আঞ্জুম। পূর্বের নাম ছিলো মধুগোয়েল। গাজিয়াবাদের এক ধার্মিক হিন্দু গোয়েল পরিবারে আমার জন্ম। আমার পিতা লালা সিঙ্গল সেন গোয়েল। তিনি একজন সাধারণ সবজী ব্যবসায়ী ছিলেন। আমার শৈশবেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আমার লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন আমার মাতা কৈলাশ বতী এবং আমার বড় ভাই বাবু জগদ্বীশ গোয়েল। গাজিয়াবাদের নিকটবর্তী গুলধর গ্রামে বসবাস করতাম। আমার শ্রদ্ধেয়া আম্মু যার ইসলামি নাম উম্মে নাসিম এবং আমার বড় ভাই বাবু জগদ্বীশ তার ইসলামি নাম কালিম গাজী, দ্বিতীয় ভাই হীম কুমার তিনি আলহামদুলিল্লাহ! এখন মাওলানা নাসিম গাজী। আমার ছোট বোন এখন যার নাম আসমা। আলহামদুলিল্লাহ! পুরো পরিবার এখন মুসলমান। আমার বড় তিন বোন যারা মুসলমান হয়নি তাদের মধ্যে একজন লিজা, তিনি জীবিত আছেন। আর দু‘জন রাজেশ্বরী ও লাইলা দেবী মারা গেছেন।
প্রশ্ন. আপনার পরিবারের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কিছু বলুন?
উত্তর. আমার বড় ভাই জগদ্বীশ তিনি খুবই ধার্মিক হিন্দু ছিলেন। হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখতেন। ইসলাম ও মুসলমানের সম্পর্কে তার বিরাট ঘৃণা ছিল। মুসলমানের দোকান থেকে শাক-সবাজিও ক্রয় করা তিনি পছন্দ করতেন না। যদি কখনও ক্রয় করে ফেলতেন তাহলে সেটাকে ভালোভাবে ধুয়ে পবিত্র করাতেন। তিনি গাজিয়াবাদ নগর পল্লিকায় ট্যাক্স ইন্সúেক্টর ছিলেন। তিনি হিন্দুধর্মকে নিজ মালিককে খুশী করার ও তাঁর পযর্ন্ত পৌঁছবার মাধ্যম মনে করতেন। তিনি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার সম্পর্ক রাখতেন। একদিন তিনি বাজার পরিদর্শনে বের হন। দুপুরের সময় ছিল। গাজিয়াবাদের ভাট্টির একজন মুসলমান জনাব আব্দুর রহমান সহেব। তিনি চুরি-ফিতার ব্যবসা করতেন। কোন সাপ্তাহিক ‘হাট বারের’ দিন দোকান নিয়ে এলেন। কিন্তু তার কাছে খাজনার টাকা ছিল না। তিনি খাজনা আদায়ের ঘরে এসে আবেদন করলেন যে, আমি বিকালে ফিরার পথে খাজনার টাকা জমা দিয়ে যাব। আমাকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সুুযোগ দেওয়া হোক। ভাই বাবুজী বললেন, ফেরার পথে কি কেউ খাজনার টাকা জমা দিয়ে যায়? তিনি উত্তর দিলেন, বাবুজী! মুসলমান দিয়ে যায়। বাবুজীর অন্তরে এই কথাটি দাগ কাটলো এবং প্রয়োজন থাকা সত্ত্বে ও কোথাও না গিয়ে সন্ধা পর্যন্ত সেখানেই বসে রইলেন যে, দেখবো কিভাবে মুসলমান খাজনা আদায় করে!
জনাব আব্দুর রহমান সাহেব গ্রাহকদের ভীড় থকা সত্ত্বেও প্রতিশ্র“ত সময়ের পূর্বেই দোকান বন্ধ করে বিকাল পাঁচটা বাজার ১৫ মিনিট আগে খাজনা আদায়ের ঘরে এসে খাজনার টাকা জমা দেন। বাবুজী তার এই প্রতিশ্র“তি পূরণে খুবই প্রভাবিত হন এবং তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। মূলত; ওয়াদা পূরণের এই ইসলামি নীতি -পদ্ধতিই আমাদের পরিবারের হেদায়াত লাভের উসিলায় পরিণত হয়। বাবুজী ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি বাসায় ফিরে খুব ধীর মস্তিষ্ক চিন্তাশীল মুসলমান জনাব কাজী জামিল সাহেবকে পেলেন। তিনি বাবুজীকে ইসলামি লিট্রেচারের ব্যবস্থা করে দেন। সেই সাথে ছোট ভাই নাসিম গাজীকেও কাছে টানেন। বাবুজী ইসলামি বই পুস্তক পড়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। অতঃপর বন্ধু-বান্ধব ও আপনজনদের সাথে কথা বলার সময় ইসলামের প্রশংসা করতে থাকেন এবং ইসলাম গ্রহণের আকাঙক্ষা ব্যক্ত করেন। বন্ধুরা এ থেকে ফিরে আনতে খুবই চেষ্টা চালায়।
এ সময় ছোট ভাই (হীমকুমার) মাওলানা নাসিম গাজী ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেন। এমন সময় এলাকার মানুষ চাপ সৃষ্টি করে ও ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য মিথ্যে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। মামলা শুরু হলো। সে সময় গাজিয়াবাদে সাদিক নামে এক মাস্তান বাস করতো। সে এ জানাতে পারে যে, আজ মামলার তারিখ আর কিছু লোক মিথ্যা স্বাক্ষী প্রদান করতে আসছে। সে আদালতের সমানে ছুরি-চাকু ইত্যাদি জাতীয় অস্ত্র নিয়ে বসে যায় এবং হুমকি দেয় যে, যারা মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে আসবে তারা এর পরিণতি দেখতে পাবে। এই ভয়ে সে দিন আর কেউ স্বাক্ষী দিতে আসেনি। মামলায় বাবুজী নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পান। সাদেক সাহেবের এই সহানুভূতিপূর্ণ আচরণে বাবুজী আরও প্রভাবিত হন। বাসায় এলে ভাবী ও বাচ্চাদের সাথে পরামর্শ করেন এবং স্ব-পরিবারে মুসলমান হন। পাঁচজন ছেলে চারজন মেয়েসহ তারা সকলেই মুসলমান হয়ে যায়। এদের মধ্যে তিনজনই বলরিয়াগঞ্জ মাদরাসা থেকে আলেম হন।
মাওলানা নাসিম ভাই যখন বলরিয়াগঞ্জে মাদরাসাতুল ফালাহ এ পড়াশোনা করতেন তখন পরিবারের লোকেরা যেন মুসলমান হয়ে যায় সে জন্য অনেক কাজ করতেন। তারই প্রচেষ্টায় আমার ছোট বোন আসমা মুসলমান হয় এবং আজমগড়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বড় পোস্টে চাকুরি করেন। তারপর নাসিম ভাই মা ও আমার উপর মেহনত করতে থাকে।
তিনি খুব দরদমাখা ভাষায় আমাদের চিঠি লিখতেন। তার দরদ ভরা একটি চিঠি, মায়ের কাছে ‘নওমুসলিম পুত্রের’ চিঠি! শিরোনামে প্রকাশিতও হয়েছে। কয়েক বছরের চেষ্টা ফিকিরের পর আমার মা মুসলমান হয়েছেন।
প্রশ্ন. আপনার ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে কিছু বলুন?
উত্তর. হ্যাঁ, আমার ব্যাপারে বলতে যাচ্ছি। শৈশবকাল থেকেই ইসলামের প্রতি আমার বিরক্তি ছিল। এর মূলকারণ ছিলো, আমাদের এলাকায় এবং গাজিয়াবাদে অধিকাংশ এলাকায় মুসলমানদেরকে খুবই অপরিচ্ছন্ন থাকতে দেখতাম এবং তাদের বাড়ি ঘর ও খুব অগোছালো ও নোংরা থাকতো। নাসিম ভাই যখনই গাজিয়াবাদে আসতেন আমাকে ঘণ্টা খানেক বুঝাতেন।এটা আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর লাগতো। কখনও কখনও কানে আঙুল দিয়ে রাখতাম। কখনও আবার কানে তুলা দিয়ে রাখতাম। মুখ ফিরিয়ে দেওয়ালে দিকে ফিরে শুয়ে যেতাম। কিন্তু তিনি বলতেই থাকতেন । একবার তিনি আমাকে আজমগড়ে নিয়ে যান, সেখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এক পরিবারের সাথে দেখা হয়।
গাজিয়াবাদে ইব্রাহীম খান সাহেবের বাড়িতে আমাকে নিয়ে গেলেন । তার বাড়ির মহিলাদের দেখে আমি খুবই প্রভাবিত হলাম। নাসিম ভাই দশবছর পর্যন্ত আমাকে বুঝাচ্ছিলেন। কখনো কখনো তিনি কেঁদে ফেলতেন। আমার ইসলামের কথা বুঝে আসতো কিন্তু আমি অপরিচ্ছন্ন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইতাম না। আমার ভয় হতো, না জানি ঐ সকল মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ করে আব্দুর রহমান সাহেবের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। তাই আমি মুসলমান হতে ভয় পেতাম। একবার আমি অজমগড় গিয়েছিলাম; নাসিম ভাই আমাকে স্বাগতম জানালেন। একদিন তার অশ্র“ ভারাক্রান্ত নয়নের দৃষ্টে মনে আঘাত লাগলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভাইয়া! তুমি কী চাও বল তো? তিনি বললেন বোন মধু! ইসলামের কালেমা পড়ে চিরস্থায়ী আগুন থেকে বেঁচে যাও। আমি বললাম, আচ্ছা পড়াও। তখন আমি কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। নাসিম ভাইয়ের আনন্দের সীমা ছিল না। খুশীতে তিনি আমাকে গলায় জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। কেননা দীর্ঘ দশ বছরের অব্যাহত চেষ্টা-সাধনা, যতেœর সাথে লেগে থাকা আর ক্রমাগত দাওয়াতী প্রচেষ্টার পর আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরকে ইসলামের জন্যে খুলে দেন। এটা প্রায় আঠারো বছরের পুরনো কথা।
প্রশ্ন. আপনার বিয়ে হলো কীভাবে?
উত্তর. বিয়ের ব্যাপারে আরো কিছু শর্ত ছিল, দীর্ঘদিন পর্যন্ত কট্টর হিন্দু থাকার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে সব কিছু মন-মানসিকতা তৈরী হয়নি। তাই আমার প্রথম শর্ত ছিল, আমি কোন দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তিকে বিবাহ করবো না। ছেলেকে পৃথক থাকতে হবে। ভাই বোন বেশী থাকতে পারেবে না অর্থাৎ বড় পরিবার হতে পারবে না। ইত্যাদি। সে সময় আমার ইসলাম গ্রহণ করার বয়স কেবল একবছর হয়েছিলো। হাকিম আলীমুিদ্দন সাম্ভলী সাহেব আমার স্বামী মাহমুদ সাহেবের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তিনি সে সময় রুজগারের জন্য খাতুল্লি থেকে ফুলাত এসে অবস্থান করছিলেন। তিনি তার মায়ের সাথে পরামর্শ সেরে খাতুল্লি গিয়ে ভাইদের সাথে পরামর্শ করলেন। সেখানে আপনার দাদা হাজী আমীন সাহেব তাঁর বংশের মুরুব্বি ছিলেন; তিনিও সমর্থন করলেন। গাজী আবেদ সাহেব সম্পর্ক পাকা-পাকি করার জন্য গাজিয়াবাদ এলেন। ইঙ্গিতে আপনার আব্বু (মাওলানা কালীম সিদ্দিকী সাহেব) কে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলেন। আতœীয়তায় আগ্রহী দেখে সবাই পরামর্শ করেন যে, তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া যাক। মূলত: আমার ব্যাপারে তাদের বিশ্বাস ছিল না। যাক, একপর্যায়ে সাদা-মাটাভাবে বিয়ে হয়ে যায়। আতœীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের মঝে আপনার পিতা (কালীম ভাই) উপস্থিত ছিলেন। দু‘মাস পর আমার মা ও ভাই আমার স্বামীর কাছে এমনভাবে উঠিয়ে দিলেন যেন কয়েক বছরের পুরনো বিবাহিত মেয়েকে উঠিয়ে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন. মাহমুদ চাচা তো কত সুন্দর দাঁড়ি রেখেছেন, আপনি এ বিষয়টি কেমন অনুভব করছেন?
উত্তর. আমার কাছে খুব ভালোই লাগে। আমার স্বামী মাহমুদ সাহেব একজন খুবই ভালো স্বামী এবং আর্দশ মুসলমান। তার সাথে বিয়ে হওয়ায় আমি গর্বিত। এজন্য আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদার করি। তার দাঁড়ি আমার খুব ভালো লাগে বরং এখন আমার কছে ইসলামের প্রতিটি জিনিসই ভালো লাগে। আমার পরিবারের অধিকাংশ লোকেরই দাঁড়ি আছে।
মরহুম বড় ভাই বাবুজী বড় বাহাদুর মুসলমান ছিলেন। হিন্দু মহল্লায় থাকতেন। বাবরি মসজিদের সমস্যা ও এর পূর্বে গাজিয়াবাদে বিভিন্ন দাঙ্গা হয়েছিল। তখন মুসলমান বন্ধুদের ফোন আসতো যে, আমরা আপনাকে নিতে আসছি। এই অবস্থায় ঐ মহল্লায় আপনার অবস্থান ঠিক হবে না। বাবুজি খুবই স্থিরতার সাথে উত্তর দিতেন আপনি যদি আমাকে আশ্বস্ত করতে পারেন যে, মুসলমানদের মহল্লায় মালাকুল মাউত (আজরাইল) আসতে পারবে না। আর হিন্দু মহল্লায় সময়ের পূর্বেই চলে আসবে।তাহলে আমি যেতে প্রস্তুত। উল্টো সুন্নতী লেবাসে রাস্তায় পত্রিকা পড়তে বসে যেতেন। তার ঈমান খুবই মজবুত ছিলো।
ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের বংশের লোকেরা অনেক হুমকি দিয়েছে এবং লোভ ও দেখিয়েছে। রাম গোপাল কালওয়ালা বারবার বাবুজীর সাথে সাক্ষাত করতে আসে এবং কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়। বলে,যে কোন শর্তে আপনি ইসলাম থেকে ফিরে আসুন। কিন্তু তিনি সত্যের মুকাবেলায় লোভ-লালসা ও ভয়-ভীতিকে প্রত্যাখান করেছেন। সারাজীবন তিনি শুধু পাক্কা মুসলমানই ছিলেন না বরং তার উসিলায় বহু মানুষকে আল্লাহ তা’আলা হেদায়াত দান করেছেন। আমার ছোট ভাই মাওলানা নাসিম গাজীও, যিনি এ দেশের একজন প্রসিদ্ধ দা’য়ী (ধর্মপ্রচারক), মানবীয় সর্ম্পকে ভাইদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাঁনোর জন্য রাজনৈতিক কোন লোভ-লালসা ছাড়াই একমাত্র আল্লাহর জন্যই দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। আলহামদুললিল্লাহ! তার থেকে জামায়াতে ইসলামির লোকেরা ও উপকৃত হতো। বহু লোক তার দাওয়াতে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন. আল্লাহ না করুন যদি আপনি হেদায়ত না পেতেন তাহলে কী হতো?
উত্তর. আল্লাহ না করুন যদি আমি হেদায়াত না পেতাম তাহলে, এর অবস্থা কল্পনা করলেও আমার শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়ে যায়। আমার পশমগুলি শিঁউরে উঠে। দেখুন না আমার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আমার দুই বোন দুনিয়া থেকে চলে গেছে। তারা ইসলামের খুব কাছে এসেছিলো। কিন্তু তাদের ভাগ্যে হেদায়াত ছিল না। আমার পিতাও ইসলাম থেকে মাহরূম হয়ে দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন।
যখন আমি চিন্তা করি আমার ঘুম হারাম হয়ে যায়। কখনও মুসলমানদের উপর আমার খুবই জিদ উঠে। ১০ বছর পযর্ন্ত আমি এ জন্যই মুসলমান হইনি যে, আমি যে সকল মুসলমানদেরকে দেখছি, তারা অধিকাংশই অপরিচছন্ন থাকতো। তাদের উঠা-বসা, চলা-ফেরার পরিবেশ ছিলো চুরি-চামারী ও জুয়া-তাস ইত্যাদি। তবে মূর্খতাই বেশি ছিলো। যা আমার জন্য প্রতিবন্ধক হিসাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। যদি মুসলমানরা আসল ইসলামের ওপর আমল করতো। তাহলে আমার দুই বোন ও পিতা ঈমানের নেয়ামত হতে বঞ্চিত হতো না।
প্রশ. চাচীজান! আপনি গোস্ত না খেলেও এত মজা করে গোস্ত-মুুুুুরগী পাক করেন কিভাবে?
উত্তর. আমার স্বামী মাহমুদ সাহেব একজন ভালো ‘মুসলমান স্বামী’। আমি নামাজ যিকির ইত্যাদিতে বেশী সময় দিতে পারি না। তবে তাঁর খেদমতকে ইবাদত মনে করি। আমি একজন সৎ মুসলমানের স্ত্রী। আমি নিজেকে স্বামীর জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছি। তার গোস্ত খাওয়ার খুব শখ। তাই গোশত পাকাতে আমার ভালো লাগে। আমি গোস্ত খাওয়ার হুকুম আল্লাহর নেয়ামত মনে করি। আমি আমার বাচ্চাদের গোস্ত খেতে উৎসাহী করি। আমি অনেক চেষ্টার পরও খেতে পারি না। এটা আমার দুর্বলতা ও মাহরুমী মনে করি।
প্রশ্ন. মা-শা-আল্লাহ আপনার বাচ্চাদের খুব ভাল প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আয়েশা আপু,সুফিয়া আপু ও সালমান ভাই আপনার তিন সন্তান খুবই সৌভাগ্যবান এবং নেক মুসলমান। আপনি তাদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন?
উত্তর. বাচ্চাদের তারবিয়াতের ক্ষেত্রে আমার থেকে তাদের পিতার ভূমিকা বেশি। তিনি খুবই সৎ ও সাচ্চা মুসলমান। অধিকাংশ সময় অমুসলিম এলাকায় কাটিয়েছেন। তিনি প্রতিবেশীদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। যখন কোন মহল্লা ছেড়ে চলে আসতেন; তখন হিন্দুরা কেঁদে কেঁদে বিদায় দিতেন। আমরা দীর্ঘদিন একটি ছোট্ট কুঁঠিতে থেকেছি। বাসার মালিক রাম কিশোর খুবই গোঁড়া হিন্দু ছিলেন। তিনি দু‘টো বিষয়ে ডিগ্রিধারী। কিন্তু তিনি আমার স্বামীর ভালোবাসা ও আখলাক চরিত্রে খুবই প্রভাবিত হয়ে ছিলেন এবং ইসলামের প্রতি ঝুঁঁকে গিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন মাহমুদ সাহেব! দেবতাদের পূজা করতে করতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। চিন্তা করি এই মিথ্যা ভগবানদের ছেড়ে দেই এবং আপনার মত এক সত্য মালিককে ধরি। তার ভাগ্যে হেদায়াত ছিল না। বেচারা ঈমান থেকে মাহরুম হয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। আমার বাচ্চাদের সাচ্চা মুসলমান বানাতে ফিকির করছি এবং ছোট থেকে নামাযের সময় সতর্ক করে দিয়েছি। অনৈসলামিক অভ্যাস থেকে বেঁচে থাকতে বলছি। আমার মুসলমান হওয়ার পর এখন অমুসলিমদের খারাপ লাগে, যেমন পূর্বে মুসলমানদের খারাপ লাগতো। এখন আমি অমুসলিম মহল্লায় বসবাস কালীন বাচ্চাদের জন্য অমুসলিম ছেলেদের সাথে খেলা-ধুলা করতেও পছন্দ করি না।

প্রশ্ন. হিন্দু আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আপনার সর্র্ম্পক কেমন?
উত্তর. ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। আমরা দরিদ্র জীবন যাপন করতাম। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার পর আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সব কিছুই দান করেছেন। আমরা ভাই-ভাগ্নে হিন্দু আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করি। তারাও আমাদের সাথে মেলামেশা করে, সুখ-দুঃখে অংশগ্রহণ করে। আমাদের সাথে সর্ম্পক রাখা তাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। নাসিম ভাই তাদের ভেতর দাওয়াতী কাজ করছেন।
প্রশ্ন. ‘আরমুগানের’ মাধ্যমে মুসলমানদেরকে কোন পয়গাম দিবেন?
উত্তর. আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই যে, মুসলমানরা নোংরা না থাকে। এ কারণটি অনেক মানুষের ইসলাম গ্রহণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের তো এই দুনিয়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিখানো দরকার। আমাদের জীবন যেন ইসলামী শিক্ষাধারার বাস্তব নমুনা হয়। ইসলামের প্রতিটি শিক্ষার মধ্যে আকর্ষণ রয়েছে। দেখুন! পঞ্চাশের অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের হেদায়াতের মাধ্যম কেবল আব্দুর রহমান ভাইÑ এর এক প্রতিশ্র“তি। একটি হাট-খাজনা আদায়ের বাস্তব আমল। বলতে গেলে আমাদের মাধ্যমে যারা মুসলমান হয়েছে সকলের মাধ্যম হলো একটি ইসলামী আমল। আফসোস, আমরা নিজেরা অপরিচ্ছন্ন থাকি। তাই অপরিচ্ছন্নতাকে হিন্দুস্থানে মুসলমানের পরিচয় জ্ঞাপক চিহ্ন মনে করা হয়। আমাদের এই খারাবিকে দূর করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন. অনেক অনেক শুকরিয়া চাচিজান! আপনি আমাদের জন্য দু’আ করবেন।
উত্তর. অবশ্যই, তুমিও আমার জন্য দ’ুআ করবে। তুমি তো আল্লাহর নেকবাদী, আল্লাহ হাফেজ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে
আসমা যাতুল ফাওযাইন
মাসিক আরমুগান-ফেব্র“য়ারি ২০০৪ ইং
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×