somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরান ঢাকার গলি-ঘুপচিতে অর্ধদিন: হেঁটে ঘোরা এক ইতিহাসের শহর

০৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকা শহরের প্রাণ ঠিক কোথায় – সেটা নিয়ে অনেক তর্ক চলতে পারে, কিন্তু যাঁরা একবার পুরান ঢাকা ঘুরে এসেছেন, তাঁদের কাছে উত্তরটা খুব স্পষ্ট। ইতিহাস, স্থাপত্য, ধর্মীয় সহাবস্থান আর খাবারের ঘ্রাণে মোড়ানো পুরান ঢাকা যেন এক জীবন্ত জাদুঘর।

এই ব্লগে আপনাকে নিয়ে যাবো হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখার এক অর্ধদিবসের ভ্রমণে। আপনি চাইলে Google Maps-এ এই রুটটি সেভ করে নিতে পারেন, কিংবা পুরোনো ঢাকার গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতে পারেন!

রুট সংক্ষেপ:
বাহাদুর শাহ পার্ক → আর্মেনিয়ান চার্চ → ফরাশগঞ্জ → আহসান মঞ্জিল → সদরঘাট ও বুড়িগঙ্গা তীর → খাবার ও লাচ্ছি বিরতি → চকবাজার বা বেগম বাজারে সমাপ্তি।

সকাল ৮টা – শুরু বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে
পুরান ঢাকার ওয়াকিং ট্যুর শুরু করুন বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে। ১৯ শতকে নির্মিত এই পার্কটি একদিকে যেমন ঐতিহাসিক, অন্যদিকে স্থানীয় জীবনের স্পন্দনও এতে খুঁজে পাবেন। এখানে দাঁড়িয়ে আপনি পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে পাবেন ঢাকার প্রাচীন সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাপ।


সকাল ৮:৩০ – আর্মেনিয়ান চার্চ
পার্ক থেকে ৫-৭ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছাবেন আর্মেনিয়ান চার্চ অফ দ্য হোলি রিজারেকশন-এ। চারপাশের ব্যস্ততা থেকে হঠাৎ করে যেন নীরব এক আশ্রয়ে প্রবেশ করবেন। ১৭৮১ সালে নির্মিত এই গির্জাটি ঢাকার বহুজাতিক বাণিজ্য ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক।

সকাল ৯টা – ফরাশগঞ্জ ও পুরনো ভবন
এরপর হাঁটা ধরুন ফরাশগঞ্জের দিকে। এখানে দেখতে পাবেন ঔপনিবেশিক আমলের কিছু অনিন্দ্যসুন্দর ভবন – যেমন রূপলাল হাউস (যদিও বর্তমানে অরক্ষিত)। ফরাশগঞ্জের সরু রাস্তায় হাঁটলে আপনি বুঝতে পারবেন, কীভাবে একসময় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা ঢাকাকে কেন্দ্র বানিয়েছিল।

সকাল ৯:৪৫ – আহসান মঞ্জিল
এরপর হাঁটুন ঢাকার আইকনিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিল-এর দিকে। এটি নবাব পরিবারের বাসভবন ছিল, বর্তমানে জাদুঘর। ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে ৩০-৪০ মিনিট সময় ধরে দেখতে পারেন প্রাসাদের গ্যালারিগুলো। প্রবেশমূল্য সামান্য হলেও অভিজ্ঞতা অসাধারণ।

সকাল ১০:৩০ – সদরঘাট ও বুড়িগঙ্গা তীর
একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে যান সদরঘাটে। এখান থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ছোট্ট এক নৌকা ভ্রমণ করে নিতে পারেন – ২০-৩০ মিনিটের জন্য। নদী থেকে পুরান ঢাকার রূপটাই যেন ভিন্ন। এখানেই আপনি দেখতে পাবেন হাজার হাজার মানুষ, লঞ্চ, এবং শহরের নিত্যচঞ্চলতা।

সকাল ১১:১৫ – খাবার ও লাচ্ছির বিরতি
এতক্ষণ হাঁটার পর পেট চেপে ধরবেই। আশপাশে পাবেন ঢাকার সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু খাবারের দোকান:

বিউটি লাচ্ছি (নয়াবাজার)
হাজির বিরিয়ানি (নিমতলি/নয়াবাজার)
কোপ্তা-কাবাবের দোকান (চকবাজার)

যেকোনো একটি পছন্দমতো বেছে নিন, কিন্তু বেশি খেয়ে ফেলবেন না – হাঁটা এখনও বাকি!

দুপুর ১২টা – বেগম বাজার বা চকবাজারে ভ্রমণ সমাপ্তি
শেষ গন্তব্য হতে পারে বেগম বাজার, যেখানে এখনো পুরোনো ঢাকার বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু টিকে আছে। অথবা আপনি চাইলে চকবাজারের মোঘল আমলের মসজিদগুলো দেখতে পারেন। এখান থেকে রিকশা বা হাঁটা পথে সহজেই আপনি শহরের অন্য প্রান্তে ফিরে যেতে পারবেন।

টিপস:
হালকা ব্যাগ রাখুন, পানি সঙ্গে নিন
গুগল ম্যাপে পয়েন্টগুলো সেভ করে নিন
ভিড় বা যানজটের জন্য সকাল বেলাই ঘোরার জন্য উত্তম
পোশাক হালকা আর আরামদায়ক রাখুন

পুরান ঢাকা কেবল পুরোনো বিল্ডিংয়ের সমষ্টি নয় – এটি ইতিহাস, খাদ্য, ধর্ম, বাণিজ্য ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত ক্যানভাস। যদি অল্প সময়ে ঢাকার ইতিহাসে ডুব দিতে চান, তবে এই এক বেলা পুরান ঢাকা হেঁটে হেঁটে ঘোরার অভিজ্ঞতা আপনাকে এক স্মরনীয় দিন উপহার দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×