দেশ স্বাধিন হলো , চারদিকে খুশীর আমেজ , বড় বড় মিছিল যাচ্ছে শহরের দিকে ।
মাহফুজের বৃদ্ধা মা মাটির ঘরের উঠোনে বসে সে উল্লাস দেখে আর অঝোর অশ্রু তার দুচোখে । আজ পুরো দেশ টা যখন স্বাধীনতার আনন্দে মাতোয়ারা , সে তখন পুত্র শোকে কাতর । আদরের ধণ একমাত্র পুত্র আর বিবাহযোগ্যা এক কন্যা রেখে স্বামী পৃথিবী ছেড়েছে ১০ বছর হতে চললো । আজ সে পুত্রটাও হারালো যুদ্ধে ।
মাহফুজ বলতো ," মা দেখো আমরা স্বাধীন হলে আমার চাকুরী হবে , খুকির বিয়ে দেবো ভালো ঘরে ।"
স্বাধীন হলো দেশ , ভাগ্য পরিবর্তন হলো অনেকের । মাহফুজের সহযোদ্ধারা অনেক বড় নেতা , অঢেল সম্পত্তির মালিক হলো যুদ্ধপরবর্তীকালে । শুধু ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না জেলার প্রথম শহীদ মাহফুজের মায়ের । এক মাত্র বিবাহযোগ্যা মেয়ে নিয়ে সে পড়ে অথই সাগরে । মাহফুজই যে ছিলো তার একমাত্র অবলম্বন । আর তাই মেয়ের বিয়ে দেয়ার মতো আর্থিক সংগতি তার কখনো হয় না , অতৃপ্ত আত্মা নিয়েই বিদায় জানায় স্বাধীন দেশকে , অবিবাহিতা মেয়েকে দু:খের সাগরে ভাসিয়ে ।
আজ যখন স্বাধীন দেশ ৪৫ বছর পার করে , দেশের জন্য আত্মাহুতী দানকারী মাহফুজের বোন তখন দিন গুনে মৃত্যুর । সমাজের কেউ এগিয়ে আসেনি তার বিবাহ দেয়া কিংবা কোন দায়িত্ব নিতে ।
অবচেতন মনে সে যদি ভাবে , "ইস সেদিন ভাই যুদ্ধে না গেলে এ দু:খ সইতে হতো না তার ।" খুব কি পাপ হবে তার ??
আমরা বিজয় মেলা করি , মোমবাতি জ্বালাই , বিজয়ের গান গাই , শহীদ মাহফুজের পরিবারে বিজয় আসে না কখনো ।
পুনশ্চ : সত্য ঘটনা অবলম্বনে (মানিকগন্জের প্রথম শহীদ মাহফুজ )
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫