১.
বাঙ্গালী জাতি মহান জাতি। প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কখনোই পিছপা হয়না। স্যালুট বাংলাদেশ ও তার জনগণকে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ও গোষ্ঠী ছাড়া আমাদের চাওয়া-পাওয়া খুবই সামান্য। পেট ভরে দু’বেলা দু’টো ডাল-ভাত খেয়ে আর গল্প-গুজব করে শান্তিতে ঘুমোনোই ছিলো আমাদের চিরন্তন এবং আদি অভ্যাস। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে এজাতি উন্নতির শিখরে উঠতে চাই। যতবার তারা তা চেয়েছে, ততবারই তা বাধা হয়ে ফিরে এসেছে। ১৯৭০ ও ২০০৮ তারই প্রমান। এসময়গুলোতে জনগণ রায় দিয়েছে গণতন্ত্রের পক্ষে সঠিক নেতৃত্ব দানের জন্যে। কিন্তু পূর্বের সরকারগুলো অনুধাবন করতে পারেনি জনগণের চাহিদা, আশা ও আকাঙ্খার কথা। তাই পরবর্তীতে তাদেরকে আবার যুদ্ধ ও আন্দোলন করতে হয়েছে তা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে।
২.
২০০৮ নির্বাচনের ফলাফল প্রকৃতঅর্থে জনগণের বিজয়। এ বিজয় লাগামহীন দূর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিজয়। এদেশে মানুষ আর যুদ্ধ-অপরাধীদের নড়ন-চড়ন দেখতে চায়না। পরোক্ষভাবে এটা আওয়ামী বিজয় হলেও মূলত জনগণ আওয়ামী লীগকে রায় দিয়েছে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনার। তাই এতে অতিমাত্রায় উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। আসলে জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। তাই তাদের আওয়ামী জোটকে ভোট না দিয়েও কোন উপায় ছিলোনা। তাই বি.এন.পি এর উল্টো দিকে যেকোন Potent দলেরই জেতা সম্ভব ছিলো। কিন্তু এখনো সেরকম বিশ্বাসযোগ্য কোন দল না থাকায় এমনটি হয়েছে। এই দুই সিন্ডিকেটেড জোটের যেকোন একটি ছাড়া তাদের আর কোন পছন্দ ছিলোনা। আর তাতেই ফলাফল এমনটি হয়েছে। দেখা গেছে, এটা কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ঘটেনি। পুরো দেশজুড়ে একই অবস্থা। জনগণ বি.এন.পি কে সরাসরি প্রত্যাখান করেছে। প্রত্যাখান করেছে তাদের গোষ্ঠীগত চরম স্বার্থপরতা, শাসনতন্ত্রের ব্যর্থতা আর যুদ্ধাপরাধীদের সংশ্লিষ্টতা। এই অবিশ্বাস্য ফলাফল, যা আওয়ামী লীগ কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। তাই অভূতপূর্ব জনগণের এই রায় আওয়ামী লীগের প্রতি। এর থেকে বড় পাওয়া আর সম্মান কি হতে পারে তাদের জন্যে।
৩.
অতীতে দু’দলেরই শাসনন্ত্রের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। দু’দুলই পুনরায় আবদার করেছে জনগণের কাছে। কিন্তু তারা বি.এন.পি-কে আর বিশ্বাস করতে পারেনি। তাই শাসনতন্ত্রের মুকুটটি আপাততঃ দিয়েছে আওয়ামী লীগ কে। তাই আওয়ামী লীগের কখনোই ভাবা উচিৎ হবেনা এটা চিরন্তন। এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বরং অনেক বেশী বেড়ে গেল। তাদেরকে হতে হবে অত্যাধিক সহনশীল। নিয়ন্ত্রণ করতে শৃংঙ্খলাবিহীন পাতিনেতাদের। কেন্দ্র থেকে বার বার বলা হলেও এখনি তারা কোন কথা শুনছেনা। অসংখ্য জায়গায় চলছে মারামারি ও হানাহানি। অনেক বি.এন.পি নেতা ঘর-বাড়ী ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এমনটি কেউ আশা করেনি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে সবকিছু সেই আগের মতই চলবে। যারা এই সাতটি বছর চুপচাপ বসেছিল বা আওয়ামীদের পিছনে কিছুটা বিনিয়োগ করেছে তারা এখন সমস্ত অনৈতিক সুযোগ পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠবে। সবকিছু আবার আগের মত অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। তাই এখন সংসদকে পূর্ণ কার্যকর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পূর্বের সমস্ত আচরন ভুলে বিরোধীদলকে আপন করে নিতে হবে। নির্বাচনী ইশতেহারের অসংখ্য আশ্বাসকে স্বপ্নে পুরনের ব্যবস্থা না করে বাস্তবে তা পালন করে দেখাতে হবে। আর তা হতে হবে অন্ততঃ ৭০-৮০ ভাগ। নতুন বছরের নতুন দিনগুলিতে তাদের পথচলা সহজ হোক।