আমার বাবা একজন জ্ঞানী লোক। জ্ঞান বিস্তার করে অন্যদেরও জ্ঞানী করে তোলা তাঁর ধ্যানজ্ঞান। আমাকে গড়েপিটে মানুষ করতে বহুবছর ধরে তাঁর চেষ্টার বিরাম নেই।
বিদ্যা পাঠে তিনিই আমার গুরু। তাঁর অবিশ্রান্ত তত্ত্বাবধানে আমি তাঁর অতি প্রিয় গ্রন্থ "আল কোরান" এতোবার পড়েছি যে এখন আমি সূরাগুলো সবই উলটো দিক দিয়েও একটানা মুখস্থ বলতে পারি। তবু যদি আমি এখন অন্য কোন বই নিয়ে বসি, তাহলে আমার গুরু সমধিক গুরুগম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করেন, 'আল কোরান কি তুমি সম্পূর্ণই পরিপাক করে ফেলেছ? প্রতিটি আয়াতের অর্থ, গুঢ়ার্থ ও বিষয়বিন্যাস, পদবিন্যাস, ছন্দোবিন্যাস, আঙ্গিক প্রকরণ ও ব্যকরণ - সবকিছুতেই কি তুমি দিজ্ঞজ হয়ে গেছো? তোমার কি ধারণা যে তুমি এখন যা পড়ছ তা কোরানে উল্লেখিত ২৫ জন নবীর জীবনের চেয়ে বেশি শিক্ষনীয়? তুমি কি মনে করো আল কোরান সেকেলে হয়ে গেছে?'
বাবা আমাকে গান শেখান। যেটাকে আসলে বলে গজল। বাবার অতি প্রিয় গজল হলো "তাওহীদেরই মুর্শিদ আমার।" আমি গজল বাদে অন্য কোন গান গাইতে চাইলে বাবা বিরক্তির স্বরে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, 'তুমি কি ভাবছ "তাওহীদেরই মুর্শিদ আমার" এখন তুমি অনবদ্যভাবে গাইতে পারো? তোমার কি স্থিরবিশ্বাস যে গজলের পরীক্ষা হলে তুমি এই গজল গেয়ে একশোর মধ্যে একশো দশ পেয়ে যাবে?'
আমার ইচ্ছে ছিলো ব্যায়াম শেখার। কিন্তু বাবা আমাকে ধইর্য্য ধরে বোঝানোর চেষ্টায় প্রশ্ন করেন, 'নামাজের ব্যায়ামটাকে কি এখন তোমার বাহুল্য বলে মনে হচ্ছে? আরও নিখুঁতভাবে নামাজের জন্য নফল নামাজের চর্চা করা কি তুমি আর জরুরী মনে করো না? তুমি কি মনে করো তুমি যেটুকু নামাজ পড় তা তোমার মতো ১৮০ সেন্টিমিটার লম্বা তরুণের জন্য যথেষ্ট?'
বাবা রোজ আমাকে সিদ্ধ ডিম খাওয়ান, আমি কখনও ভাজা ডিম অথবা ডিম ভুনা খাওয়ার প্রস্তাব করলে বাবা তিক্তস্বরে জিজ্ঞেস করেন, 'সিদ্ধ ডিম এখন আর তোমার মুখে রোচে না? যে সিদ্ধ ডিম এতোদিন তোমাকে কতো কতো ক্যালরি, কতো কতো ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ইত্যাদি ইত্যাদি যুগিয়েছে সেই সিদ্ধ ডিমকে তুমি আজ অবলীলাক্রমে বিদায় করে দিতে চাচ্ছ?'
বাবার শিক্ষা পেয়ে পেয়ে আমি আজ পর্যন্ত একমাত্র যে বইটি পড়েছি তা হলো "আল কোরান", একমাত্র যে গানটি শিখেছি তা হলো "তাওহীদেরই মুর্শিদ আমার", একমাত্র যে ব্যায়ামটা করতে পারি তা হলো নামাজ আর ডিমের একমাত্র যে স্বাদ পেয়েছি তা হলো সিদ্ধ ডিমের স্বাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৯