
প্যারিসে আমার বাসায় প্রচুর ছারপোকা। রাতে বাসায় এসে অনলাইনে আসলেই শুরু হয় ছারোপকার অত্যাচার। এই পর্যন্ত তিনবার ঔষধ দিয়েও কূল কিনারা না পেয়ে আমি হতাশ। এরই মাঝে ফেসবুকে এবং ব্লগে নোটিফিকেশন চেক করি। একদিন কোন এক মেয়ে ফ্যান ইনবক্স পাঠালো,”ভাইয়া কি করেন?”
আমি লিখলাম, “ছারপোকা মারি।“
কিছুক্ষন পরে মেয়ের আরেকটা ইনবক্স,”আমি হয়ত আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম, আসলে ডিস্টার্ব করা আমার উচিৎ হয়নি। দুঃখিত। আর কখনো আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না।“
সেদিন বুঝতে পারলাম লেখকদের ছারপোকা মারা নিষেধ। যদি ভুলে কখনো ছারপোকা মারার সময়ে কেউ প্রশ্ন করে “ভাইয়া কি করেন?” তবে লিখতে হবে “মেঘের সাথে বৃষ্টির গোপন প্রেম নিয়ে ভাবছিলাম।“
আমার গল্পগুলোতে একটা কমন ব্যাপার থাকে। নায়কের নাম রিক। ইমরান (ক্ষণিকের আগন্তক) ওর পেইজ “ভালোবাসা এবং কিছু আবেগের গল্পে” নিয়মিত আমার গল্প প্রকাশ করে। পেইজে গল্প দেয়ার তিনদিন পর্যন্ত এর রেশ থাকে মানে তিন দিন পর্যন্ত অনবরত ফ্রেন্ড রেকু আসতে থাকে। আমি সাধারনত ইনবক্স করে যারা পরিচয় দেয় তাদের কথার ধরন দেখি এবং এড করে নেই। আমার কাছে মাঝে মাঝে এমন কিছু ইনবক্স আসে যাতে লেখা, “ভাইয়া, আমি রিকের প্রেমে পড়ে গেছি।”
শত হলেও আমি পুরুষ মানুষ, ইন্টারেস্টের সাথে রিপ্লাই করি, “আমার নাম রিক

মেয়েদের পরের রিপ্লাইটা দেখে আমি হাসি। তারা রিপ্লাই করে, “আরে ভাইয়া আমি তো গল্পের রিকের প্রেমে পড়েছি।“
এই তো বললাম মেয়েদের কথা, ছেলেদের কাছেও আমি ব্যাপক প্রিয় এটা ভাবতেই ভালো লাগে। পাঠক ব্যাপারটা ঘোলা করবেন না, ছেলে ফ্যানরাও আমাকে অনেক ভালোবাসে, অনেক সম্মান করে। তো এমনি একজনের কথা না বললেই নয়, তখন আমাদের কফিশপ গল্পটা চলছিল। ছেলেটা আমাকে ইনবক্সে লিখলো,”ভাইয়া আমার গার্লফ্রেন্ডকে একটা পারফিউম কিনে দেব। কোন ব্রান্ডের পারফিউম দেয়া যায়?”
একবার এক ছেলে খুব জোড় করে ধরলো তাকে একটা গল্প লিখে দিতে হবে। তার বিশ্বাস গল্পে তার কথা লিখে দিলেই নাকি মেয়েটি তাকে ভালোবাসবে। আমি তাকে হতাশ করলাম না, তবে একটা শর্তে গল্পটা লিখে দিয়েছিলাম। শর্তটা ছিল, সে গল্পটা মেয়ের হাতে দেয়ার পরে পিছু ফিরে তাকাতে পারবে না, সোজা চলে আসতে হবে। মেয়েটা যদি তাকে ভালোবাসে তবে আসবে নয়ত দুঃখ করতে পারবে না। আর ভালোবাসার কিংবা চয়েজের ব্যাপারে মেয়েকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। ছেলেটা এই কঠিন শর্ত মেনে নিলো। আমি মনে মনে বলি হায়রে প্রেম! হায়রে প্রতিভার বিনাশ!
ভার্চুয়াল জগতে আমার গল্পের পাঠকেরা আমাকে এতটা ভালোবাসে যে মাঝে মাঝে মনে হয় আমি পৃথিবীর সুখী মানুষদের একজন, আর কি চাই? ছেলে এবং মেয়েরা আমাকে এতটাই বিশ্বাস করে যে তারা তাদের প্রেম ও অন্যান্য পার্সোনাল প্রব অকপটে আমার সাথে শেয়ার করে ফেলে। তাদের বিশ্বাস আমিই পারি তাদের প্রবগুলার সঠিক সমাধান দিতে। আমিও যথাসম্ভব চেষ্টা করি তাদের এমন পরামর্শ দিতে যাতে তারা বেরিয়ে আসতে পারে সমস্যা থেকে। ছেলেদের ধারণা ছেলেরাই সত্যিকারে প্রেমে পড়ে, মেয়েরা ধোঁকা দেয়, আসলে কথাটি ঠিক না। আমি অনেক মেয়ে দেখেছি যারা সত্যিই ছেলেদের ভালোবাসে, ভালবেসেছে।
একদিন এক ছেলে ইনবক্সে লিখে পাঠালো, “রিক ভাই আমারে প্রেম করায়া দেও।“
ইনবক্স পড়ে আমি হতাশ! এইটা কেমন কথা! আমি কিভাবে প্রেম করিয়ে দেব! আমি তাকে রিপ্লাই করলাম, “আসলে প্রেম ব্যাপারটা কেউ কাউকে করিয়ে দিতে পারে না, এটা নিজে থেকেই তোমার মাঝে আসবে। আর তোমার কোন মেয়েকে পছন্দ থাকলে তার সম্পর্কে বলতে পারো। কি করতে হবে আমি বলে দেব।“
সে রিপ্লাই পাঠাল, “ভাইয়া, আমি যে মেয়ে দেখি তারেই আমার ভালো লাগে। আপনার তো অনেক মেয়ে ফ্যান, আমাদের জন্যে কিছু করেন।“
ইনবক্স দেখে আমি টাশকিত! এ কেমন অবৈধ আবদার!
প্রায় সময়ে আমার গল্পে মন্তব্য আসে ,”ভাই বাস্তবে প্রেম এমন হয় না। প্রেম এত সহজ না।“
আমি নিজেও জানি বাস্তবে এমন হয় না। কিন্তু পাঠককেও মানতে হবে বাস্তবতা লেখা সাংবাদিকের কাজ, আর কল্পনা থেকে গল্প লেখা গল্পকারের। আমি সাংবাদিক নই।
আমার কাছে সব থেকে মর্মস্পর্শী একটা ইনবক্স এসেছিল। এক মেয়ে লিখলো, “ভাইয়া, আমি একটা ছেলেকে একবছর যাবত ভালোবাসি। ছেলেটাও আমাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু এখন সে বলছে তার ফ্যামিলি মেনে নিবে না। সে আমার সাথে রিলেশন রাখতে চায় না।“
আমি প্রেমটেম বিশ্বাস করিনা, আমি মেয়েকে বললাম সে রাখতে চায়না ভালো, তুমিও ভুলে যাও। মেয়ের পরের রিপ্লাইটার পরে আমার কিছু বলার ছিল না। মেয়ে লিখল, “ভাইয়া আমি প্রেগন্যান্ট।“
একসময়ে ফেসবুকে একটা মেয়ে আইডি থেকে আমার ওয়ালে আই লাভ ইউ, তোমাকে ছারা কিছু ভাবতে পারিনা ইত্যাদি ওয়াল পোষ্ট আসতে শুরু করলো। লেখক হওয়ার কারনে শুধু ধন্যবাদ লিখে শেষ করতাম। আমার বন্ধুমহলে মেয়ে ভাল্লুক নামে পরিচিত হয়ে গেলো। মেয়ের জ্বালায় অতিস্ট পর্যায়ে যাওয়ার পরে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, “আসলে আপনি কি চান?”
মেয়ে রিপ্লাই দিলো, “তোমাকে চাই, শুধু তোমাকে।“
কি মুশকিল, মেয়েরে অনেক্ষন বুঝাইলাম এভাবে প্রেম ভালোবাসা হয় না, আর আমি এসব বিশ্বাস করি না। শেষে মেয়ে এক শর্তে রাজি হলো, আমার সাথে ফোনে কথা বলবে, তারপর থেকে আর ডিস্টার্ব করবে না। মেয়ে তার ফোন নাম্বারো দিলো।
আমি কাজে থাকি খুব ব্যাস্ত। বন্ধু শশী হিমু কে বললাম, দোস্ত আমারে উদ্ধার কর। ঐ মেয়েরে ফোন করে কথা বল আমার নামে। শশী রাজি হইল। পরের দিন আমি শশিরে জিজ্ঞাসা করলাম কি রে কথা বলছিলি? শশী উত্তর দিল, “ফোন দিছিলাম, আমি কথা বলার সুযোগ পাই না, যখন বলছি আমি রিক, মেয়ে তিন মিনিটে তের বার আই লাভ ইউ বলছে।“
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:৩৬