পুলিশ হইতে সাবধান !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
গতকাল বিকেলে গিয়েছিলাম নদীর ধারে ঘুরতে । নদী ঠিক নদী না ,এখন দূষিত খাল, আমি নাম দিছি “কোঁকাকোলা খাল” কারন এটার পানি এতোটাই কালো যে কিছু দিন আগে নৌকা থেকে এক লোকের ব্যাগ পড়ে গেছিল সে আর ওই ব্যাগের কূলকিনারা করতে পারে নাই । নৌকায় উঠতে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কিছুদিন আগে এক মহিলা এই কালো পানিতে পড়ে গেছিল, পরে নৌকার পাইলট তাকে টেনে হিঁচড়ে উদ্ধার করে সাথে কিছু গালি ফ্রিতে গিফট হিসেবে দিয়ে দেয়। যাই হোক, আসল ঘটনায় আসি ।
কালকে বিকেলে আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড গেলাম বাতাস খাইতে। ভালই বাতাস খাইতেছিলাম, একটু দূরে দেখলাম, দুই পুলিশ ( মানে পুলিশের পোশাকে দুই লোক) খালের পাড়ে এক জুটিরে ধরছে। চরম তর্ক হইতেছে। ছেলেটা আবার মোটর সাইকেল নিয়ে আসছে । পুলিশের ও দেখি মোটর সাইকেল আছে! পুলিশ ছেলেটার লাইসেন্স চেক করতেছে। আমরা কাছে গেলাম এতো হইচই দেখে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কোন সমস্যা ? পুলিশ বলল, দিনকাল কি আসছে দেখেন, এই পোলা মুসলমান হইয়া হিন্দু এক মাইয়ারে লইয়া ফষ্টিনষ্টি করতাছে , তাও আবার ম্যারেড মাইয়া। দেখলাম, মেয়েটার বয়স প্রায় ৩০-৩২ হবে আর ছেলেটার ২৫-২৬ হবে। ইতিমধ্যে এক পুলিশ ছেলেটারে এলোপাথাড়ি কিলঘুসি মারা শুরু করল। আর আরেকজন বলল, আরেক লোকের বউরে ভাগাইয়া নিয়া আসছস আর এখন বলস তোরা বন্ধু! পুলিশরে কি গরু পাইছস?! চল থানায় ! এর মধ্যে কিছু লোকজন জড়ো হয়ে গেছে । মেয়েটা তখন আমাদের সাপোর্ট পাওয়ার জন্য বলতেছে, ভাই দেখেন, বিয়ে করলে কি কারো বন্ধু থাকতে পারে না, আমার মনটা আজকে খুব খারাপ তাই ওর সাথে একটু ঘুরতে বাইর হইছি । তখন একজন বলল, আপনে বিয়া কইরা জামাইরে নিয়া সারাদিন ঘুরেন কোন সমস্যা নাই, কিন্তু এরকম ( ছেলেটারে দেখিয়ে) অল্পবয়স্ক পোলাপানের লগে ঘুরতে শরম লাগে না ? আবার কইতে আইছেন! আমিতো পুরাই অবাক কথাবার্তা শুইনা ! হিন্দি সিরিয়ালের কুপ্রভাব ত দেখি ঢাকার লোকজনের উপর বৃষ্টির মত পড়া শুরু করছে।
এই সেই কপোত – কপোতী !!
এর মধ্যে আশেপাশে ঘুরতে আসা কিছু মেয়েও এসে পড়ল । দুই পুলিশের চারপাশে এখন আমরা মোটামুটি ১৫-২০ জন তরুণতরুণী+ছেলেমেয়ে ঘটনা কোন দিকে যায় বুঝার চেষ্টা করছি। পুলিশ এর মধ্যে ছেলেটাকে অনেকটা “রিমান্ডে নিয়ে জেরা করার স্টাইলে” প্রশ্ন করা শুরু করছে , আর মেয়েটা বারবার বলছে, ভাই ছাইড়া দেন, আমরা এ এলাকা ঠিকমতো চিনিনা আর আসমু না, ওরে আর মাইরেন না, আপনের পায়ে পড়ি । পুলিশ বলতেছে, তোর লাইসেন্স ত ভুয়া মনে হয়, চল BRTA তে সব ঘটনা বাইর হইয়া যাইব । আমি তখন ছেলেটাকে বললাম, আপনার কাগজপত্র ঠিক আছে না? তখন ছেলেটার আগে মেয়েটাই সাহস করে জবাব দিল, “ওর সবই ঠিক আছে, কিন্তু ওনারা আমাদের একা পাইয়া নানা টালবাহানা শুরু করছে, কইছে ১০০০ টাকা দিলে ছাইড়া দিব, আমাদের কাছে ত এতো টাকা নাই, ৫০ টাকা দিতে চাইছি তারা নিতে চায় না, বলে, ১০০০ টাকা দিয়া আপনেরা লেকের পাড়ে শুইয়া থাকেন নাইলে বইসা থাকেন আমরা কিছু কমু না !!!” ঠিক তখনই এক পুলিশ চিৎকার করে উঠে, “অই আপনে মিথ্যা কথা বইলা দল ভারী করতে চান?! আমরা কখন টাকা চাইলাম? পাবলিক প্লেসে পরকীয়া করতে আইছেন আবার এখন ধরা পইড়া শিবের গীত গাওয়া শুরু করছেন?” তখন সেখানে জড়ো হওয়া এক চরম সাহসী মেয়ে (বয়স ১৭-১৮ হবে) চিতকার করে বলল, একা মাইয়া মাননুষ পাইয়া ধমক দেন? সব পুলিশরে চিনি! তখন এক পুলিশ সদস্য বলল, অই মাইয়া! এত কম বয়সেই এত লাফাও ! দেইখো হাত পা না ভাইঙ্গা যায় ! সেই মেয়ে তখন বলতেছে, আপনেরা পুলিশ দেইখা কি ডরাই নাকি? এটা আমাদের এলাকা, কোন মাইয়ার লগে ফাইযলামি করলে ছাইড়া কথা কমু না । ঘুষ চাইয়া না পাইয়া এখন ভোল পালটাইতেছেন। বুঝি না মনে করছেন? তখন পুলিশের একজন ধমক দিয়ে বলতেছে, বেশি কথা বললে থানায় নিয়া যামু কইলাম । শেখ হাসিনা আমরারে কি ক্ষমতা দিছে এখনও বুঝো নাই, থানায় গেলে বুঝবা ! সেই মেয়ে চিৎকার করে বলল, শেখ হাসিনারে কি ডরাই নাকি? এইখানে হাসিনা টাসিনার কোন বেইল নাই, দেশ আমগো টাকায় চলে, আপনেরা যে বেতন পান তাও আমগো টাকা থেইকা , কোন হাসিনা কইছে আপনারে ঘুষ খাইতে?!!
দূর থেকে তোলা ছবি ( ভাল আসে নাই জানি! ) পুলিশের সাথে তর্কাতর্কি।
এই অপূর্ব সাহসী মেয়ের কথা শুনে বুঝতে পারছিলাম, পুলিশের অবস্থা বেগতিক । ঝগড়া এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। আমি তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশদের অনুরধ এর ভঙ্গিতে বললাম, আজকের মত এদের ছাইড়া দেন, সাথে সাথে ছেলেটা বলল, আমরা আর এদিকে আসমু না। পুলিশ বুঝতে পারল লোকজন আস্তে আস্তে বারতেছে, অবস্থা সুবিধার না, কখন যে পাবলিক পুলিশরে ধইরা মাইর দেয় তার নাই ঠিক । তারা মাত্র দুই জন আর আমরা প্রায় ২০ জন ! মাইর একটাও মাটিতে পড়ব না ! পুলিশ পরিস্থিতি বুইঝা গেছে। তখন তাদের একজন বলল, ঠিক আছে এবারের মত ছাইড়া দিলাম, লাইসেন্স টা মনে হইতেছে ঠিক আছে। পুলিশ ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল, সোজা ঘরে যাইবি, যার বউ তার কাছে দিয়া যাবি , আর কোনওসময় যাতে তোদের একসাথে না দেখি! এই বলেই পুলিশ তাদের মোটরসাইকেলে চড়ে অতি দ্রুত বিদায় নিল।
দেখেন পুলিশ পালাইতেছে !
পুলিশ যাওয়ার পর অই ছেলের সাথের মেয়েটা আমাকে বলল, আপনারা আসছিলেন বইলাই আজকে বড় বিপদ থেইকা বাইচা গেলাম । তারপর মেয়েটা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে রাখা ৫০ টাকার নোটটি দেখাল যেটা সে পুলিশকে ঘুষ হিসেবে দিতে চেয়েছিল । বলল, ১০০০ টাকা দিতে পারিনাই দেইখা ই পুলিশ এতক্ষন ডিস্টার্ব করছে। তারপর অই আগুন সাহসী মেয়েটির দিকে দেখে বলল, বইন তোমারে যে কেমনে ধইন্নবাদ দেমু বুঝতেছিনা। তুমি থাকায় পুলিশগুলা বেশি বান্দ্রামি করতে পারে নাই। মেয়েটা বলল, নিরিবিলি এলাকায় একটু সাবধানে থাকবেন আর কেউ ঝামেলা করলে চিৎকার কইরা লোক জড়ো করবেন তখন দেখবেন, পুলিশ তুলিশ সব ইন্দুরের গর্তে পালাইব ।
আমি মনে মনে বললাম, পরিস্থিতিই মানুষকে প্রতিবাদী করে তোলে । আমরা সবাই ঠিক সময়ে প্রতিবাদ করতে পারলে আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর হত।
আর পরকীয়ার কথা কি বলব ! ধিক্কার ! তারা যখন মোটরসাইকেলে উঠলো পাশ থেকে এক মেয়ে বলল, আপনারা ভাইবোন হলে কেউ কিছু বলতে পারত না, আপনারাও যে খুব ভাল কাজ করছেন তা কিন্তু না, নিজে ভাল থাকলেই সব ভাল। খেয়াল রাইখেন।
ছেলেটা ততক্ষণে মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়েছে...
[[[[উফ ব্যাপক বড় আর্টিকেল লিখে ফেলছি, – সবাইরে টা টা !! ]]]]
এই ঘটনার কিছু ছবি মোবাইলে তোলার চেষ্টা করছি, আফসোস ! পুলিশের চেহারাগুলা ঠিকমতো আসলো না।
বানী চিরন্তনীঃ সবাই পুলিশ থেকে সাবধান থাকবেন !!
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক
আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।
“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন