somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবিত ভাষার মরণযাত্র। বহু ভাষার বাংলাদেশ ।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলো

বাংলাদেশে বাংলা ছাড়াও আরও বেশকিছু ভাষা এখনো সচল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যায় কম হলেও এখনো প্রায় ৪১টি ভাষায় কথা বলে অনেকে। কিন্তু কি হাল সেসব ভাষার? পৃথিবীর অনেক ভাষার মতো ওসব ভাষাও কি হারিয়ে যাওয়ার পথে?

পৃথিবীতে জীবিত ভাষা ছয় হাজার ৯১২; বাংলাদেশে বাংলাসহ ৪২। এর অধিকাংশই বিপদাপন্ন ভাষা। ভাষা পরিসংখ্যান এথনোলোগ থেকে উদ্ধৃত। গত বছরও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইউনেসকো নতুন করে সতর্ক করে দিয়েছে, প্রতি ১৪ দিনে একটি বিপন্ন ভাষার মৃত্যু ঘটছে। ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলেই ভাষা বিপন্ন হয়ে পড়ে। আবার সংখ্যাটি আরও বড় হলেও ব্যবহারকারীদের মধ্যে যদি শিশু-কিশোরের সংখ্যা আনুপাতিকভাবে কম হয়, তাহলে সে ভাষা বাঁচিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়ে।
পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা বাংলাকে এথনোলোগ কিংবা ভাষা গবেষকদের কোনো ফর্মুলাতেই বিপন্ন বলা যাবে না। কিন্তু যাঁরা খুব নিবিড়ভাবে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে সমাজের পরিবর্তন ও বিকাশের ধারাটি পর্যবেক্ষণ করছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না যে চার দশকেরও বেশি সময়ে বাংলা ভাষার ব্যবহারিক মূল্য বাড়েনি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে কমেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যায়। শহুরে কিছু মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অন্যতম বিনোদন, এমনকি গত শতকের অষ্টম দশকেও ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাংলা অনুষ্ঠান দেখা। ভাষাশহীদের মাসে বাংলার জন্য যত আবেগ ঝরানো উচ্ছ্বাসই প্রকাশিত হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে, সেই স্থানটির উল্লেখযোগ্য অংশই ভারতীয় হিন্দি চ্যানেলগুলো দখল করে নিয়েছে।
বাংলা ভাষার দুর্ভাগ্য, এ ভাষা নিয়ে যাঁদের এত অহংকার, তাঁরা ভাষাটিতে কোনো মূল্য সংযোজন করতে পারেননি—এ মূল্য স্থূল শোনালেও তা হচ্ছে আর্থিক মূল্য। যদি মূল্য সংযোজিত হতো, বাংলায় পারদর্শী প্রার্থীর চাকরি ও পদোন্নতিতে অগ্রাধিকারের কথা শোনা যেত। ইংরেজি জানা প্রার্থীর অগ্রাধিকার হামেশাই কর্মখালির বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, এমনকি হিন্দি জানা প্রার্থীর অগ্রাধিকার পাওয়ার বিজ্ঞাপন বাংলাদেশে সংবাদপত্রে মুদ্রিত হয়েছে।
আরবি ভাষার পারদর্শী প্রার্থী বাংলাদেশে আরবি শিক্ষকতায় যেমন অগ্রাধিকার পান; খতিব, মোয়াজ্জিনের পদেও তার বিকল্প কোনো ভালো প্রার্থী থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু শিক্ষকতা ছাড়া বাংলার ‘ভালো’ প্রার্থীটির দ্বিতীয় কোনো পরিচিতির চাকরি নেই।
চলমান শিক্ষাব্যবস্থাই শিশু-শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট তিন ভাগ করে ফেলছে। একসময় অবস্থাপন্ন ঘরের শিশুটির জন্য ইংরেজি মাধ্যম পছন্দ করা হলেও এখন আর সব খরচ কমিয়ে নিম্ন্নমধ্যবিত্তের সন্তানকেও ইংরেজি মাধ্যম পড়াশোনায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে—এই শিশুর বাংলা ভাষার দিকে ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। একটি ধারা মাদ্রাসাশিক্ষা—দু-একটি বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া এ ধারার কেউ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সেবক হতে পেরেছেন মনে করার কারণ নেই। বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে এসে ইংরেজি মাধ্যমের বন্ধুটির কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে। ফলে যাদের বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনার সূচনা, তারা যেন অগত্যা বাংলাকেই ধারণ করছে।
সব মিলিয়ে মোটা দাগে এই মন্তব্য অসমীচীন হবে না যে চাকরির বাজারে বাংলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় বাংলা ভাষা তার মেধাবী শিশুদের হারাতে থাকবে এবং কালক্রমে বাংলাও প্রকৃত অর্থেই বিপদাপন্ন হয়ে পড়বে।
তবে যত বিপন্নতার কথাই বলা হোক, বাংলার অবস্থা পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষার চেয়ে ভালো, অন্তত আদিবাসী ভাষাগুলোর চেয়ে তো বটেই, নতুবা আদিবাসী কবি তাঁর মাতৃভাষা ছেড়ে বাংলায় কবিতার চর্চা করতেন না। প্রশান্ত ত্রিপুরা নির্বাসিত শব্দমালার জন্য আর্তনাদ করছেন বাংলাতেই।
‘হে আমার নির্বাসিত শব্দমালা
মিছিলের শত শত আলোড়িত জনকে
তোমাদের ডাক এসেছে
শতাব্দীর বঞ্চনার বিস্ফোরণোন্মুখ
ক্ষোভে তোমরা শামিল হও
গিটারের স্মৃতিকাতর মূর্ছনায় তোমাদের
আরাধনা শুনেছি।’
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:২৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×