ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সে স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিলেন নাজমুল-তামিম-সাকিবরা। ক্রিকেটের বড় কোনো আসরে এটাই প্রথম সাফল্য বাংলাদেশের। স্বাগতিকদের এ জয়ে কপাল পুড়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে ফাইনালের সম্ভাবনা জাগানো ভারতকে চোখের জল নিয়েই ফিরতে হচ্ছে নিজ দেশে। অঘোষিত এ ফাইনালে টস জিতে আগে ব্যাট করার জন্য মাহেলা জয়াবর্ধনেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের দারুণ জবাবও দিয়েছেন বোলাররা। পেসার নাজমুল ও মাশরাফির বিধ্বংসী বোলিংয়ের কল্যাণে ৪৯.৫ ওভারে মাত্র ২৩২ রানে লঙ্কানদের বেঁধে ফেলেন তারা। তখন থেকেই বৃষ্টি শুরু। বৃষ্টির কারণে ‘ডাকওয়ার্থ লুইস’ পদ্ধতিতে ১০ ওভার কেটে নেয়ায় বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১২ রান; কিন্তু বৃষ্টিও কাল দমাতে পারেনি বাংলার দামাল ছেলেদের। দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে এশিয়া কাপের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে এবং চারবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে শূন্যহাতে ফিরিয়ে দেয় টাইগাররা। জন্মদিনে তামিমের খেলা (৫৯) ও সাকিবের (৫৬) রানের ওপর ভর করে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগারদের তরী। নেচে ওঠে ১৫ কোটি ক্রিকেটপ্রাণ। বিজয় উত্সব শুরু হয়ে যায়। রাতেই ঢাকঢোল নিয়ে রাস্তায় নেমে উল্লাসে মত্ত হয়ে ওঠেন টাইগারভক্তরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কাল মিরপুরে হাজির হয়ে সাক্ষী হয়ে রইলেন এ জয়ের। উত্সাহ দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। আগামীকাল দুপুর ২টায় একই ভেন্যুতে ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
গতকাল টস জিতেই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাট করার জন্য মাঠে আমন্ত্রণ জানান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতে মাঠে নেমেই স্বাগতিক পেসার নাজমুল হোসেনের তোপের মুখে পড়েন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে জয়াবর্ধনেকে সরাসরি বোল্ড করে উইকেট উত্সব শুরু করেছিলেন নাজমুল। এরপর লঙ্কানদের স্কোর ৩২ রানে যেতেই টপঅর্ডারের আরও দুই ব্যাটসম্যানকে সাঙ্গাকারা (৬) ও দিলশানকে (১৯) সাজঘরে ফিরিয়ে দেন তিনি। শুরুতেই ৩ উইকেট হারানোর ধকলটা ম্যাচের শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেননি সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে টপঅর্ডারদের আসা-যাওয়ার মিছিল কিছুটা হলেও রোধ করেছিলেন কাপুগেদেরা ও থিরিমান্নে জুটি। তারা ৮৮ রানের পার্টনারশিপ উপহার দেন দলকে। থিরিমান্নে ৪৮ রানে ফিরে গেলেও কাপুগেদেরা দুই বছর পর তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফসেঞ্চুরি (৬২)। এ দু’জনই স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের শিকার। মিডল অর্ডারের আরেক ব্যাটসম্যান উপল থারাঙ্গার ৪৮ রানের কল্যাণে শেষপর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ৪৯.৫ ওভারে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান সংগ্রহ করে। নাজমুল ৮ ওভার বল করে ৩২ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। রাজ্জাক ও সাকিব পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। তবে লঙ্কানদের রানের লাগাম টেনে ধরা মাশরাফি ৯.৫ ওভার বল করে পেয়েছেন এক উইকেট। খালি হাতে ফিরতে হয়নি আরেক পেসার শাহাদাতকেও। তিনিও তুলে নিয়েছেন এক উইকেট।
২১২ রানের টার্গেটে মাঠে নামা বাংলাদেশের শুরুটাও ভালো হয়নি। দলীয় ৪০ রানে নাজিমুদ্দিন (৬), জহুরুল ইসলাম (২) ও মুশফিকের (১) বিদায়ে চাপে পড়ে স্বাগতিক শিবির। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলকে সামনের দিকে নিয়ে যান চলতি আসরে দুর্দান্ত খেলা তামিম ও সাকিব আল হাসান। তাদের ৭৬ রানের জুটিতে দল প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে ওঠে। তামিম সাজঘরে ফিরে যাওয়ার আগে তুলে নেন ২২তম হাফসেঞ্চুরি (৫৯)। ২৪ বছরে পা রাখার দিনে এমন ইনিংস সত্যিই দারুণ আনন্দের। ৫৭ বলে ৯টি বাউন্ডারি দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান তামিম। চলতি আসরে টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি করলেন এই ওপেনার। আর সাকিব করেন (৫৬) রান। ক্যারিয়ারে এটা তার ২৪তম অর্ধশত রানের দেখা। দলীয় ১৩৫ রানে সাকিবের বিদায়ের পর আবারও স্নায়ুচাপে ভুগতে শুরু করেছিলেন সমর্থকরা। তবে নাসির ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটকে আর দমাতে পারেনি মালিঙ্গা-কুলাসেকেরাদের বল। সব অস্বস্তি দূর করে ৫ উইকেটে নিশ্চিত করেন দলের জয়।
গতকালের ম্যাচ জেতার পর আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন আপনি?