১৯৯৪। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরেছে ইয়োইয়ো, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সবাই আক্তান্ত। খেলার মাঠ, স্কুল, রাস্তাঘাট, বাজার, সকাল থেকে রাত, সব কিছুতেই ইয়োইয়ো। বিভিন্ন ধরনের কসরত। কে কত ভাল করতে পারে তার প্রতিযোগিতা। সে সময়ে ৪০ টাকা দিয়ে পাওয়া যেত অরিজিনাল ইয়োইয়ো, সেই সাথে ১০ টাকায় পাওয়া যেত ২ নম্বর গুলো।
কেশবপুর আলিয়া মাদ্রাসার উর্দু বিভাগের শিক্ষক (পাইকগাছার হুজুর নামে পরিচিত) এর ছেলে, বয়স আনুমানিক ৭/৮ বছর। ছেলেটির মায়াকাড়া চোখ। কোন এক কারনে ওকে আমার ভাল লেগে যায়। ওর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। (পাইকগাছা হুজুর ছিলেন মনে প্রানে একজন ভাল মানুষ। একজন ধর্মীয় আদর্শ পূরুষ। ছেলেদেরকে ধর্মীয় অনুশাষনে বেধে রখতেন। আমরা যখন মাঠময় ফুটবল/ক্রিকেট/দাবা/ কেরাম নিয়ে ব্যস্ত সে সময় তার সন্তানকে দেখতাম মাথায় টুপি পরে মাঠের পাশে দাড়িয়ে আমাদের বা তার সমবয়সীদের খেলা দেখতে। মাগরিবের আল্লাহআকবর ধ্বনি শুনে আমরা যখন খেলায় মত্ত থাকতাম তখন হুজুরের সাথে তার ছেলে মসজিদে বসে বলতো, আল্লাহু আকবর - আল্লাহু তুমি মহান।
যা হোক মুল কথায় আসি। আমার হাতে/পকেটে সবসময় ইয়োইয়ো। ক্লাসের ফাকে ইয়োইয়ো। প্রাইভেটে গেলে পকেটে ইয়োইয়ো্। ঘুমোতে, শোয়াতে সব সময় ইয়োইয়ো। হুজুরের ছেলে আমার কাছে আসতো, ভাইয়া বলে ডাকতো। সে সময় অসময় অসময় প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমার কাছে আসত। উদ্দেশ্য আমার ইয়োইয়োটা নিয়ে একটু খেলা করা। আমিও তাকে সে সুযোগ দিতাম।
ঈদের কাছাকাছি সময়। ভাললাগার কারনে হোক বা যে কোন কারনে হোক তাকে আমি ১০ টাকা দামের একটি ইয়োইয়ো উপহার দেই।
উপহার পেয়ে তার যে আনন্দ, যে উল্লাস, যে খুশি তার চোখে আমি দেখেছি আজও আমি তা ভুলতে পারিনি।
তার ভিতরে যে শিশুটি মনটি বাস করতো, ধর্মীয় অনুশাসনের কারনে তাকে অবদমিত রাখার যে মানসিকতা তার বাবার ভিতরে ছিল তা কতটুকু যৌ্ক্তিক ছিল? এ রকম ধর্মীয় অনুশাষন আমাদের শিশুদের মানসিক বিকাশে কতটুকু সহায়ক হতে পারে?