somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুষ্টু চক্র কী?

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. শ্রমিক যদি বেশি শিক্ষিত হয়, তার শ্রমের মূল্য অটোমেটিক বেড়ে যাবে। এটাই চিরায়ত নিয়ম। শ্রমের মূল্য বাড়লে লস কার? মালিকপক্ষের তাই তো। তো মালিকপক্ষ যাতে কম দামে শ্রম কিনতে পারে, তার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো- শ্রমিককে যতটুকু পারো অশিক্ষিত রাখো। দেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক পরিবহণ সেক্টরে। আর এদের বেশিরভাগ অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত। এই যে কৌশলে আপনাদের অশিক্ষিত রেখে সেই মধু কিন্তু খাচ্ছে মালিকপক্ষ। এই বোধটা বা সচেতনতাটা আমাদের পরিবহণ সেক্টরের শ্রমিকদের হচ্ছে না। মালিকপক্ষের বাংলা ভাষায় ব্যাপারটা হবে এরকম- তুই যত কম শিক্ষিত থাকবি তোরে চালাইতে আমাগো ততো সুবিধারে কালার বাপ!

২. কম শিক্ষিত হবার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে বহু বিবাহ বিদ্যমান। সন্তান উৎপাদনও বেশি। সংসার ভাঙার হারও বেশি। গরীব শ্রমিকদের মধ্যে এই সূত্রটা যত বেশি দিন টিকিয়ে রাখা যাবে, তত বেশি এদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা সম্ভব। পরিবহণ শ্রমিকদের সন্তানকে কম শিক্ষিত রেখেই আবার পরিবহণ সেক্টরে কাজে লাগানো যাচ্ছে খুব সহজে। এই যে সহজে সন্তান উৎপাদন, সহজে কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত শ্রম সাপ্লাই, এটা ওদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে আর সম্ভব না। তাই এই খেলাএই দুষ্টু চক্র ছলে বলে কলে কৌশলে বাঁচিয়ে রাখে আমাদের মালিকপক্ষরাই।

৩. দেখবেন অধিকাংশ বাড়িতে যারা কাজের বুয়া হিসাবে কাজ করেন, তাদের স্বামী একজন শ্রমিক। পরিবহণ শ্রমিক হলে শুনবেন বেডায় তিন বিয়া করছে। বড় দুই বউ ছেড়ে দিছে। বা ভরন-পোষণ দেয় না। তখন বাধ্য হয়ে সেই লোকের স্ত্রী বাসা বাড়িতে কাজের বুয়া হিসাবে কাজ নিচ্ছে। এখন শ্রমিক যদি ভালো আয়-রোজগার করে, একটা মাত্র বিয়ে করে, একটা বা দুইটা সন্তান জন্ম দেয়, তাহলে আখেরে লোকসান কার? মালিকপক্ষের তা্ই তো! সুতরাং ওদের সচেতনতার অভাবের সুযোগ নিয়ে এই মালিকপক্ষরাই ওদের এই দুষ্টু চক্রে বেঁধে রাখে। তাহলে কাজের বুয়া পাইতেও সুবিধা। আবার সস্তায় শ্রমিকও পাওয়া যাবে। এক ঢিলে দুই পাখি।

৪. অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত শ্রেণিদের মধ্যে কম বয়সে বিয়ে করার হিরিক। এতে লাভ কার? লাভ ওই মালিকপক্ষের। কীভাবে? কারণ কম বয়সে বিয়ে করলে ওরা খুব দ্রুত সন্তান জন্ম দেবে। অভাবের কারণে খুব দ্রুত সময়ে এরা কাজে নেমে পড়বে। সেক্ষেত্রে কাজের বুয়া পাওয়া যেমন সহজ, শিশু শ্রমিক পাওয়াও সহজ। আবার এই জায়গাগুলোকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে এনজিও। এরা এদের নিয়ে ব্যবসা করছে। দিনশেষে এনজিও আসলে ওই মালিকপক্ষ। দুষ্টু চক্রের এই যে খেলা এখানে আমাদের সরকার কখনো গবেষণা করে না। সে অনুযায়ী কল্যাণমূলক কোনো নীতিও নাই। বরং বিয়ার বয়স কমিয়ে এই মালিকপক্ষকে খুশি রেখে আনন্দের ঢেকুর তোলে সরকার!

৫. গরীব মানুষ নিয়ে ব্যবসা করা খুব সহজ। অভাবের তাড়নায় এরা আপনার কূটচাল বুঝতে চাইবে না। ওরা চাইবে নগদ নারায়ন। ওদের কাজে লাগানো খুব সহজ। তাই দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও একটা মহল খুব সচেতনভাবেই একটা শ্রেণিকে অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত রাখার কৌশল করে। আর আমাদের সরকারগুলো তাদের সেই আবদার নানান কৌশলে পূরণ করে। এই দুষ্টু চক্রদের রয়েছে লাঠিয়াল বাহিনী। এই শ্রমিক শ্রেণিদের পুঁজি করেই এরা সেই লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলে। দিনশেষে সকল মুনাফা ঘরে তোলে ওই মালিকপক্ষ।

৬. এদেশে এই মালিকপক্ষরাই আবার মন্ত্রী-এমপি। তারা তাদের স্বার্থকে বাঁচাতে এরকম কৌশলে দেশের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণিকে অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত রাখতে চায়। নতুবা এদের শ্রমের যোগানে টান পড়বে। এখন আপনি যত শিক্ষিত হবেন, দেখবেন আপনাকে এরা সহজে আর পোষ মানাতে পারছে না। পোষ সেই মানবে যার বুদ্ধি কম, হাবাগোবা। এরা কৌশলে দেশে একটি হাবাগোবা শ্রেণিকে লালন করতে চায়। সেই দুষ্টু চক্রের খেলায় আপনি আমি স্রেফ দর্শক।

৭. বলুন তো দেশে রেল সার্ভিসের উন্নয়ন কেন ঘটলো না? নৌ সার্ভিসের উন্নয়ন কেন ঘটনলো না। অথচ দেশটা নদীমার্তৃক। পরিবহণ মালিকদের কারণে দেশে এখনো সেই ব্রিটিশ আমলের রেল ব্যবস্থা দিয়েই চলছে। এতে লাভ কার? লাভ ওই মালিকপক্ষের। এরা পরিবহণ মালিক। দেশে যদি সরকারি উদ্যোগে রেল ও নৌ সার্ভিসের উন্নয়ন হতো, তাহলে এই পরিবহণ মালিকরা এত দাপট দেখাতে পারতো না। জনগণকে যখন তখন গিনিপিগ বানাতে পারতো না। এখানে সরকারি সদিচ্ছার পুরোটাই ওই মালিকপক্ষের দখলে। তারাই এদের এমপি-মন্ত্রী। তাদের স্বার্থ সরকারের কাছে সবসময় অগ্রাধিকার পায়। তাই রেল ও নৌ সার্ভিস সরকারিভাবে উন্নয়ন ঘটে না। প্রাইভেট পরিবহণ সেক্টরেই সরকারের আস্থা। কারণ এই মালিকপক্ষই আসলে সরকারের লাঠিয়াল।

এরকম দুষ্টু চক্র যে দেশে যত বেশি, সেই দেশে কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন ঠিকই হবে, কিন্তু জন-দুর্ভোগ কখনোই কমবে না। দিনশেষে মালিকপক্ষরাই মধু খাবে। আর জনগণ হিসাবে আপনি আমি ভিকটিম। কী বোঝা গেল ব্যাপারটা!

--------------------------
২৯ অক্টোবর ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:১৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×