somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচনী ইশতেহার!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাধারণত ভোটের আগে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের ভোটের সংস্কৃতিতে নির্বাচনী ইশতেহারকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কৌশলে একটু আড়ালে আবডালে রেখে দেয়। রাজনৈতিক দলগুলো এই সুযোগটি নেয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত আমাদের মাস-মিডিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে খুব একটা আলোচনা-সমালোচনা হয় না। দ্বিতীয়ত আমাদের ভোটাররা নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে মোটেও সচেতন নয়।

নির্বাচনী ইশতেহার হলো একটি রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। এতে সেই রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন, অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের প্রতিফলন থাকবে। পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় গিয়ে একটি রাজনৈতিক দল কী কী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে, তার একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা থাকে এই নির্বাচনী ইশতেহারে।


রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রচার-প্রোপাগাণ্ডায় নির্বাচনী ইশতেহারের বাইরে অন্য কোনো অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দেবার সুযোগ নাই। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনী ইশতেহার অনেকটা দায়সারা গোছের একটা তালিকা মাত্র। ক্ষমতায় গিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার টাইম-টু-টাইম বাস্তবায়নের সংস্কৃতি এখনো দেশে চালু হয়নি।

নির্বাচনী ইশতেহার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এমনকি খুব একটা গবেষণা বা সময় দিতেও দেখা যায় না। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার হবার কথা ছিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি। এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু ক্ষমতায় যাবার পর আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহারকে ব্যাক ডোরে ড্রপ করেন।

জনগণকে আর মনে করিয়ে দিতে চান না যে, এই সময়ের মধ্যে আমাদের এই লক্ষ্য পূরণ করার কথা ছিল। এই সুযোগটি নেওয়া হয় জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাবার পর জনগণের কাছে জবাবদিহিতার প্রসঙ্গটি বেমালুম ভুলে যায়। তখন তারা সত্যিকারের শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারগুলোকে আমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করব। আর দেখতে চাইব তারা নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো কীভাবে কত দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নে মনযোগী হয়। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আর নির্বাচনী ইশতেহারকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা গুলিয়ে ফেলে। জনগণের সচেতনতার অভাবে তারা এই সুযোগটি কাজে লাগায়।

এক্ষেত্রে আমাদের মিডিয়ার সত্যিকার অর্থে যে ভূমিকা পালন করার কথা, তারা সেটি জনগণের সামনে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হাজির করতে অনেকটাই ব্যর্থ। আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে হাজার বিষয়ে টকশো হয়, কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে টেলিভিশনেরও তেমন আগ্রহ চোখে পড়ে না। ফলে আম-জনতা সেই অসচেতনই থেকে যায়। আমাদের দৈনিক পত্রিকাগুলো এখন অনেকটা দলীয় পারপাস সার্ভ করে। তাদের সম্পাদকীয় বা উপসম্পাদকীয়তে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ খুব একটা চোখে পড়ে না।

রাজনৈতিক দলগুলো দায়সারা গোছের নির্বাচনী ইশতেহার দিলেও মিডিয়ার দায়িত্ব সেই ইশতেহার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা। কিন্তু আমাদের মিডিয়া এখন অনেকটা দলীয় লেজেগোবরে অবস্থা। কার আগে কে কোন দলকে সমর্থন দেবে সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত মিডিয়াগুলো। ফলে মিডিয়ার যে ভূমিকা থাকার কথা, স্পষ্টত মিডিয়া সেই দায়িত্ব পালন করছে না।

আমাদের মিডিয়াগুলো অনেকটা মালিকপক্ষের রাজনৈতিক পক্ষপাতকে গুরুত্ব দিয়ে চলে। মালিক যে রাজনৈতিক দলের সমর্থক দৈনিক পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও সেই দলের রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডায় উচ্চকণ্ঠ। মিডিয়ার যে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকার কথা, সেটি এখন বাংলাদেশে প্রায় উধাও। ফলে মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সচেতন হবারও খুব একটা সুযোগ নাই।

মাস-মিডিয়ার এই ব্যর্থতার কারণেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশ একটি চামচা সর্বস্ব জাতিতে পরিনত হচ্ছে। এটাই সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার।

--------------------
১৫ ডিসেম্বর ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×