somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি-২২-২৩

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ক্রমশঃ শেষে দিকে। আর পাঁচদিন পরেই এই প্রাণের মিলনমেলা ভাঙবে। প্রতিদিন নতুন বইয়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে। নতুন অনেকে বন্ধু হচ্ছেন। সবার সাথে আড্ডা দিয়ে বেশ সুন্দর সময় কাটছে। ফেব্রুয়ারি মাসের এই স্মৃতিটুকু আমরা আগামী বছর পর্যন্ত অন্তরে লালন করবো।

বইমেলায় শেষের দিকে এসে প্রকাশ পাচ্ছে অনেক ভালো ভালো বই। বাতিঘর থেকে প্রকাশ পেলো জি এইচ হাবীব-এর অনুবাদে উমবের্তো একো'র ''গোলাপের নাম''। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সোমনাথ ঘোষ। বইটির অলংকরণ করেছেন নীল প্যাকার। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৩৩৪ টাকা। কিন্তু বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ পেয়েছে কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবেরের ''উপন্যাস ত্রয়ী''। 'মানুষ যেখানে যায় না', 'আবদুল জলিল যে কারণে মারা গেল' এবং 'এই দেখা যায় বাংলাদেশ' এই তিনটি উপন্যাস পাওয়া যাচ্ছে একমলাটে। বইটির মূল্য ৫৫০ টাকা। একই প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে শিশুদের জন্য একটি চমৎকার গল্পের বই। কামরুল হাসান শায়কের গল্পের বইটির নাম 'মৎস্যকুমারী ও এক আশ্চর্য নগরী'। বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন শিল্পী গৌতম ঘোষ। বইটির মূল্য ১৫০ টাকা।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ পেয়েছে কথাশিল্পী মোজাফফর হোসেনের প্রথম উপন্যাস ‘তিমিরযাত্রা’। এই বইটিরও প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী গৌতম ঘোষ। এছাড়া একই প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে কথাশিল্পী স্বকৃত নোমানের চতুর্থ গল্পের বই '‘বানিয়াশান্তার মেয়ে’। মঙ্গোলিয়ান কবি হাদা সেন্দো’র অনুবাদ কবিতার বই “চাঁদের আলোয় যাযাবর গান” প্রকাশ করেছে স্বদেশ শৈলী। বইটি ভাষান্তর করেছেন অনন্ত উজ্জ্বল। বইটি পা্ওয়া যাবে বাতিঘরে ৪৪৩-৪৪৫ নং স্টলে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মামুন হোসাইন।

বইমেলায় বাথরুম গুলো কয়েকদিন ধরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না। বাথরুমের কাছাকাছি যাদের স্টল, তারা অসহ্য দুর্গন্ধের ভেতরেই স্টলে বসতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের দেখলে তারা নালিশ করছেন। এমনিতে উদ্যানের একেবারে শেষ মাথায় যাদের স্টল পরেছে, তাদের বইমেলায় থাকা না থাকা প্রায় একই কথা। তাদের ওদিকে মানুষজন খুব একটা যায় না। তার মধ্যে বাথরুমের গন্ধে তারা বোনাস ভুক্তভুগী। আশা করি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বইমেলার বাকি দিনগুলো বাথরুম পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজরদারি করবে।

আগে মিডিয়া বইয়ের লেখককে খুঁজে বের করতো। তখন লেখকদের একটা পার্সোনালিটি ছিল। আর এখন দেখি উল্টো কারবার। স্বয়ং লেখকরা মিডিয়া খুঁজে খুঁজে ইন্টারভিউ দেয়। এ কোন জামানায় আমরা বসত করছি। তাছাড়া মিডিয়ার যারা বইমেলা কভার করছেন, তারা কেউ প্রকৃত লেখকদের খুব একটা চেনেন না। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো- এবছর যিনি টেলিভিশনে বইমেলা কভার করছেন আগামী বছর তিনিই লেখক হিসেবে বইমেলায় ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াবেন।

ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা অনেক প্রকাশনা থেকে এরকম হাজার হাজার বই প্রকাশ পাচ্ছে। এরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে নিজেদের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব করছেন। মিষ্টি বিতরণ করছেন। এলাহি সব ব্যাপার স্যাপার। বইয়ের কনটেন্ট খুঁজতে গেলে দেখবেন সব অখাদ্য দিয়ে ভরপুর। কোনটা যে গল্প, কোনটা যে উপন্যাস আর কোনটা যে প্রবন্ধ, তা আবিস্কার করতে রীতিমত গবেষণা করতে হবে।

মৌসুমী এসব লেখকদের ভিড়ে বইমেলা এখন উত্তাল। আবার লেখক যদি সুন্দরী কোনো ললনা হন, তাহলে তাদের পেছনে দেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের রয়েছে বিশাল লাইন। এরাই এদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন নানান কিসুর বিনিময়ে। লেখা হোক বা না হোক, এরা প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন। তাই নিয়ে এসব মৌসুমী লেখকদের গর্ব বেশ দেখার মতই!

একুশে ফ্রেব্রুয়ারিতে এবছর বইমেলার মাঠে 'লেখক বলছি' মঞ্চের সামনের খোলা অংশে নামাজ পড়েছেন একদল অতিউৎসাহী নামাজি। বইমেলা মাঠে নামাজ পড়ার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গায় মসজিদ থাকার পরেও এই যে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে খোলা মাঠে নামাজ পড়া হচ্ছে, এটা অনেকটা বইমেলা দখলের মত একটা ব্যাপার। বাংলা একাডেমি এসব বিষয় এলাউ করছে, কারণ একাডেমি এদের কাছে জিম্মি। আগামীতে এটি আরো চরম আকার ধারণ করলে কারো কিচ্ছু করার নাই।

এমনিতে অমর একুশে বইমেলায় এখন আলোচিত কোনো বই প্রকাশ পেলেই সেটিতে পুলিশ এবং হুজুরদের ছাড়পত্র না থাকলে বাংলা একাডেমি সেই বইটি বাতিল করছে। পাশাপাশি সেই প্রকাশনাকে দিচ্ছে শাস্তি। সেখানে বইমেলার মাঠে নামাজ পড়ার ব্যাপারটি বাংলা একাডেমি কীভাবে নিয়েছে আমরা জানি না। তবে এটি বইমেলার সৌন্দর্যকে রীতিমত নষ্ট করছে।

বইমেলায় আসুন। ভালো বইয়ের খবর আমাদের জানান। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।

----------------------
বইমেলা থেকে ফিরে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×