somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি-২৬-২৭

০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ হলো ভাষার মাস, বাঙালির চিরন্তন প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০। এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মোট ৪৯১৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি'র মতে এর মধ্যে বইমেলায় মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি। এবার মোট প্রায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা বেশি।

২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় ব্যাপক আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর বইকেনা হয়েছে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে, শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। এবছর কেবল ২৬ ফেব্রুয়ারি ছাড়া অবশিষ্ট ২৭ দিন আমার বইমেলায় থাকার সুযোগ হয়েছে। বইমেলার সার্বিক পর্যবেক্ষণ এবং আমার পরামর্শ অথবা আমি কেমন বইমেলা চাই, তা নিয়ে পরবর্তী সময় নিস্তারিত লিখব।


তবে এবছর শান্তিপূর্ণ এবং কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই অমর একুশে বইমেলা শেষ করতে পারার জন্য বাংলা একাডেমি এবং আইন শৃঙ্খলা কৃর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই সকল প্রকাশক, প্রেস-মালিক, বাইন্ডার, প্রুভরিডার, এডিটর, কবি-সাহিত্যিক-লেখক, লিটলম্যাগ সম্পাদক এবং বইমেলায় আগত সকল বইপ্রেমীকে। প্রাণের বইমেলার এই অমূল্য স্মৃতিটুকু আমার সারা বছরের খোড়াক হয়ে থাকবে।


এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত 'আমার দেখা নয়াচীন'। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে সবাই অন্তর থেকে ভালবেসেই এই বইটির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়েছেন। পাশাপাশি অতিভক্তি, তোষামোদি এবং কাটপিছ বা চুরি করে হলেও আদিখ্যেতা দেখাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু'র নামে অসংখ্য অখাদ্য-কুখাদ্য বইও ছাপা হয়েছে এবছর। আমার মতে বঙ্গবন্ধু'র উপরে লিখিত বইগুলো একটি সম্পাদকমণ্ডলী কর্তৃক যাচাই বাছাই হয়ে প্রকাশ হলে বিষয়টি অনেক সুন্দর হতো। খোদ বাংলা একাডেমি অনেক লেখক-পণ্ডিতদের দিয়ে এই কাজটি করাতে পারতো।

ব্যাঙ্গের ছাতার মত নতুন প্রকাশনা সংস্থা গজিয়ে উঠলেও মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। এমনকি বড় বড় প্রকাশনা থেকেও মানসম্পন্ন বইয়ের তুলনায় অখাদ্য-কুখাদ্য বইয়ের প্রকাশনা ছিল ভুরি ভুরি। লেখালেখিতে চর্চা না করেই যার যেমন যখন খুশি বইমেলার সময় বই প্রকাশ করার একটা হিরিক এবারও লেগেছিল। তবে ব্যতিক্রমী দু'একটা নতুন প্রকাশনা সংস্থা এবং দু'-একজন লেখক চোখে পড়েছে সবার।


ছোটকাগজের সংখ্যা বাড়লেও এবছর ছোটকাগজের নতুন সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। লিটলম্যাগ তুর্কিরা যুদ্ধে দিনদিন যেমন পিছু হটছে, তেমনি বাংলা একাডেমি'র তাদের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ছিল নজর কাড়ার মত। ছোটকাগজ যেন তার যৌবন হারিয়েছে। আবার ছোটকাগজের নামে অসংখ্য অখাদ্য-কুখাদ্য ছোটকাগজের উদয় হয়েছে। যাদের লেখা বা প্রকাশিত কাগজ বইমেলায় কেন জায়গা পাবে, তা নিয়েই অনেকের প্রশ্ন উঠেছে।

টয়লেট ব্যবস্থাপনায় বাংলা একাডেমি এবারও ফেল করেছে। বইমেলায় পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের নজরদারি ছিল গোঁদের উপর বিষফোড়ার মত। বইমেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক মানুষের পক্ষে একদিনে পুরো বইমেলা ঘোরা সম্ভব হয়নি। বইমেলায় বাংলা একাডেমি চত্বর ছিল ঢাল নাই তলোয়াড় নাই নিধি রাম সর্দারের মত।


'লেখক বলছি' মঞ্চে এবার জমজমাট আলোচনা ছিল। কিন্তু এই আলোচনায় কেবল বাংলা একাডেমি'র কর্মকর্তাদের দিয়ে সঞ্চালনা করিয়ে এক ধরনের একঘেয়েমি এবং জবরদস্তি করানোর মত ব্যাপার ছিল। একাডেমি'র বাইরের কবি-লেখকদের দিয়ে সঞ্চালনের এই কাজটি করালে সেটি যে আরো উপভোগ্য হতে পারতো, সেই বুদ্ধি বা কৌশল বাংলা একাডেমির নজরে আসেনি অথবা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

সবমিলিয়ে বাংলা একাডেমিকে একটা বড় ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী ও বইমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।

---------------------
বইমেলা থেকে ফিরে
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×