somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউটর

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলমের কালি ফুরিয়ে যাচ্ছে।চোখের সামনের সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে।আবিদ এখন উভয় সংকটে পড়েছে।আগামিকাল তার ছাত্রীর পরীক্ষা।তার জন্য প্রশ্ন তৈরী করতে হবে। এই মুহুর্তে গ্রামে যাওয়া আবিদের পক্ষে সম্ভব নয়।কিন্তু তার সমস্যাটাও যে ঘোরতর।হোম টিউটর আবিদ এখন তার সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছে।

আবিদ খান, এই শহরে পা রাখার আগে চট্টগ্রামের এক ছোট্ট গাঁয়ে থাকত।ঢাকার একটি বিখ্যাত কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আবিদ।বাড্ডার এক ঘুপচি গলির ভেতরে তিন তলা বাড়িটিতে শুধু ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হয়।মেস ভাড়া,টিউশন ফি আর হাত খরচের একমাত্র উপায় "টিউশনি"।তাই আবিদ আজ একজন হোম টিউটর।

দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পড়ায় আবিদ।তারই জন্য প্রশ্ন তৈরী করছে।কলমের কালি ফুরিয়ে যাওয়ায় আবিদ হাল ছাড়ে।না,সে গ্রামেই যাবে।ছোট বোন টা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছে।এই মুহুর্তে বোনের পাশে তাকে থাকতেই হবে।

-কিরে কটা বাজে,রিশমি?
-মা,ছয় টা বাজে।
-তোর স্যার তো আজ এলো না।
-কোন কাজ আছে হয়তো।
-ছাই আছে।এরকম ফাকিবাজ টিউটর আর রাখা যাবে না।সামনে পরীক্ষা।আর এখনই সে আসে না।
এই রিশমিকেই আবিদ পড়ায়।আবিদ না আসায় তারা খুবই বিরক্ত।
এই শহরে টিউশনি পাওয়াটাই দুষ্কর।তার ওপর যদি কাজে অবহেলা করা হয়,তাহলে তো কথাই নেই।দেওয়া নেওয়ায় সবাই ব্যাস্ত।চার হাজার টাকার মাস্টার যদি একদিন না পড়ায়,তাহলে তো বিশাল ক্ষতি।
কিন্তু হায়!চুক্তিবদ্ধ মাস্টারের ও যে কোন সমস্যা থাকতে পারে তা কেউ ভাবে না।তাদেরও যে মাঝে সাঝে ছুটি নিতে হয়।

আবিদের মরার উপর খাড়ার ঘা পড়েছে।গ্রামে যাওয়ার সময় ফোন চুরি হয়ে গেছে।তার অযাচিত,অনধিকার ছুটির কথা সে রিশমির মা কে জানাতে পারেনি।তাও একদিন দুইদিন নয়।সাত সাত টি দিন তাকে গ্রামে থাকতে হয়েছে।ওদিকে পকেটে টাকাও নেই।কোন মতে ধার দেনা করে আবিদ ঢাকায় ফিরেছে।

সারাদিন ভ্রমনের পথে আবিদ কিছুই খায় নি।সেই সকালে ভাত খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।বিকেলেই যে তাকে টিউশন ধরতে হবে।আবিদ ভাবে যে,কিছুদিন আগেই তাকে মাইনেটা চেয়ে নিতে হবে।

কাঠের চেয়ারে চুপচাপ আবিদ বসে আছে।রিশমিকে পদার্থবিজ্ঞানের গতি সংক্রান্ত কয়েকটি অংক কষতে দিয়ে নিরিবিলি ঝিমুচ্ছে।
সামনে এক কাপ চা আর কয়েকটি কাঠ সদৃশ শক্ত টোস্ট।সশব্দে একটি টোস্টে কামড় বসাল সারাদিন অভুক্ত আবিদ।এতে কি খিদে মিটে?
আবিদ যতদিন রিশমিকে পড়ায়,সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই এই চা-টোস্ট দিয়ে শিক্ষক আপ্যায়ন চলে আসছে এ বাসায়।তাও প্রতিদিন নয়।মাঝে দু একদিন খালি মুখেই দেড় ঘন্টা বসে থাকতে হয়।তার পর দিন হয়তো এই চা-বিস্কুট সমাদর।

চা শেষ করে পিরিচে রাখতেই ও ঘর থেকে রিশমির মা এর আগমন।
-আবিদ,এতদিন আস নি যে?
-আন্টি,জরুরী কাজে গ্রামে গিয়েছিলাম।
-ও।শোন, রিশমিকে যে এখন ছুটি দিতে হবে।একটি বিয়ের দাওয়াত আছে।
-আচ্ছা।
-ওকে ছুটি দিয়ে একটু বোসো।কথা আছে।

হঠাৎ যেন দুর্বল হয়ে গেছে আবিদ।শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে তার।চারতলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামবার সময় মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকায় রেলিং শক্ত করে ধরে সে।

চার হাজার টাকার এই টিউশনিতে আবিদের অনেক কষ্টে শিষ্টে চলে যাচ্ছিল।কিন্তু এই টিউশনিটাও এখন নিপাত গেলে বেশ ভালোই ভালোই বিপদে পড়তে হবে তাকে।সামনের মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাইনে নিয়ে যেতে বলেছেন রিশমির মা।আর পড়াতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি।সাতদিনের অঘোষিত ছুটিই যে আবিদের রুজি খোয়ানোর কারণ, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আবিদ।উলটো দিকে সদ্য ভাজা গরম সিঙাড়া কড়াই থেকে তোলা হচ্ছে।প্যান্টের শূণ্য পকেট একবার হাতড়িয়ে নেয় সে।আশ্বস্ত হওয়ার মত কিছু পেলো না।হঠাৎ করে তার পেটে মোচড় দিল।কে যেন পাকস্থলিটা মুঠোয় চেপে নিংড়ে দিতে চাইছে।আবিদের যে বড্ড খিদে।

সমস্তদিন অভুক্ত আবিদ শুকনো মুখে শুধু চেয়ে থাকে দোকানের "সদ্য ভাজা গরম সিঙাড়া"র পানে.....................
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×