দেশের অন্যতম দামী প্রাইভেট ভার্সিটি।
ক্লাসে বসে আছি,ক্লাস শুরু হতে ঢের দেড়ি।পাশে বসা ভার্সিটির নতুন এক বন্ধু।পাশে বসেই টের পাচ্ছি তার ফোনে তুমিল ভাবে ভাইব্রেশন হচ্ছে কিন্তু সে ফোন ধরছে না।একটিবার ফোনের অর্ধেকটা বের করে আবার পকেটেই ফোনটা ঢুকিয়ে রাখল সে।
ক্লাস শেষে আমরা সিঁড়ি দিয়ে নামছি ঠিক সে সময় তার ফোনে আবার ভাইব্রেশন,সে হাত দিয়ে পকেট চেপে ধরেছে।কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে আমি জিজ্ঞেস করে বসলাম "তুমি ফোন ধরছ না কেন,কে ফোন করেছে"?সে বললো "মা,বাহিরে গিয়ে ফোন ধরব"।আমি বললাম "কেন বাহিরে গিয়ে কেন?এখানে ধরলে কি হবে"?
আমি জানি না আমি কি এমন কথা বলেছি যার জন্য সে ইতস্তত বোধ করা শুরু করল।এদিক ওদিক তাকিয়ে সে ফিসফিস করে বলা শুরু করলো।
".আমার ফোনটা খুব কমদামী,এখানে সবার ফোনই তো দামী তাই আমার ফোন বের করতে লজ্জা লাগে,আব্বুকে অনেকদিন ধরেই বলছি একটা ফোন কিনে দিতে কিন্তু আব্বু কিনে দিচ্ছে না"
আমি আর কথা বাড়ালাম না,পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে তার সামনে ধরলাম।
-তোমার ফোনটা কি আমার থেকেও কমদামী?
-নাহ
-আমার তো লজ্জা লাগছে না ফোনটা বের করতে,আমি তো আমার কমদামী ফোন নিয়ে ইতস্তত বোধকরছি না।তুমি কেন করছ?তোমার মা ফোন করছে,মার ফোন ছাপিয়ে তোমার কাছে কম দামী ফোনের লজ্জাটা বড় হয়ে গেল?আমাকে কি তুমি বলবা ঠিক কতটাকা দামের ফোন হলে তুমি বিনা সংকোচে তোমার মার ফোন ধরতে পারবা?
আমার নতুন বন্ধুটা চুপ,তার ফোনটা আবার কেঁপে উঠছে।সে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম সে পকেটে হাত দিয়েছে।তার হাতে তার কমদামী ফোনটা।আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম কেউ একজন বললো "হ্যালো মা"!!!
আমার চোখে পানি,আমি খুব দ্রুত পায়ে হাঁটছি।কোনভাবেই আমার চোখের পানি এই ঠান্ডা বাতাস যুক্ত দামী ভার্সিটির মেঝেতে পরতে দেওয়া যাবে না।আমার চোখের পানি সাধারন কোন রাস্তায় পরবে যেখানে দামী সন্তানদের কমদামী বাবা-মাদের পদচারণা।আমার চোখের পানিতে সব বাবা-মাদের প্রতি সন্তানদের সকল অভিযোগ ধুয়ে যাক,মুছে যাক।
পৃথিবীর সকল বাবা মা আপনারা দামী বাবা-মার এই কমদামী সন্তানের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা গ্রহন করুন...
রাব্বির হামহুমাকামা,রাব্বায়ানী সাগিরা।
-কাজী রিফাত