(পাঠক লেখা পড়তে শুরু করার আগেই ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি।দীর্ঘ লেখা পড়া যদি আপনার অভ্যাসে না থাকে এড়িয়ে যান।পড়ার কথা যদি মনস্থির করে ফেলতে পারেন কথা দিচ্ছি কিছু সময়ের জন্য ভাবনা ওলট পালট হবে।ছোটগল্প বা উপন্যাস না।ইতিহাস নিয়ে সাময়িক কপচাকপচি।
সাইন্স ফিকশন লেখার চেষ্টা করেছি।লাভ হয় না।লেখা শেষে দেখতে পাই এলিয়েনদের সাথে আমার প্রেম হচ্ছে।ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে আমার সে কারনেই ভয়।লেখা শেষে দেখা যাবে কোন এক বাদশাহ কন্যার সাথে আমার গভীর প্রণয়।তাই বাড়তি সতর্কতা।একে একে দুই মেলানোর চেষ্টা করবো।মিললে তো ভালো,না মিললেও ক্ষতি নাই।
এই লেখাটার অনুপ্রেরণা পেয়েছি হুমায়ন আহমদের "বাদশাহ নামদার" থেকে।লেখাটা তাকে সহ আরও দুজনকে উৎসর্গ করলাম।তাঁরা হলেন মোঘল সেনাপতি বৈরাম খা এবং এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ।)
**********************************
পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদিকে পরাজিত করে বাবর তার পুত্র হুমায়ুনকে আগ্রা পাঠালেন লোদির রাষ্টিয় কোষাগার জব্দ করতে।হুমায়ুন সেই কাজ সম্পূর্ণ করে ফিরে এসে পিতাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী হীরকখন্ড কোহিনূর উপহার দেন।বাবর সেই উপহার পুত্রর কাছেই জমা রাখেন।ইতিহার বলে তার চব্বিশ ঘন্টার ভেতর হুমায়ুন তার পিতার দিল্লীর কোষাগার লুট করে পালিয়ে যান বাদাখশানের দিকে।ইতিহাস এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক ছোট একটি সমাধান দাঁড় করিয়েছে। বাদশাহ হুমায়ুন অলস প্রকৃতির হলেও জীবনের বড় একটা সময় সে বই পড়ে কাটিয়েছে এই সময়টায় সে পরিচিত হয় তার জন্মের ১২০০বছর আগে গত হওয়া আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেটের ইতিহাসের সাথে।আলেকজেন্ডারকে নিয়ে তার কৌতূহল ইতিহাস জানে।নিজেকে সে একসময় আলেকজেন্ডারের জায়গায় দেখতে চায়।তখন তার মাথায় আসে নতুন সম্রাজ্য গঠনের।নাহয় এতো জায়গা থাকতে সে বাদাখশানের দিকে যেত না।এই বাদাখশানেই আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেট নিহত হন।
এটা লেখার বিষয়বস্তু না।এড়িয়ে যাই।
১৫০৮ সাল পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমাপরায়ন এবং আবেগি বাদশাহ "নাসিরুদ্দিন হুমায়ুন" যে পরিচিত বাদশাহ হুমায়ুন নামে।এর ৪১২বছর পর এই গ্রহেই আরেক ক্ষমাপরায়ন এবং আবেগি বাদশাহর জন্ম হয়।তাঁর নাম "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান"।পাঠক এই দুজনের একজনও লেখার বিষয়বস্তু না।আমি বলবো তাদের পাদপ্রদীপের আলোয় ঢাকা পরা দুই সেনাপতির কথা।মোঘল সেনাপতি এবং উপশাসক বৈরাম খা এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ।মিল খুঁজে পাচ্ছেন না?এবার পাবেন।
মোঘল শত্রু শের শাহঃ "আমার সমস্যা বাদশাহ হুমায়ুন না।সে আবেগি,দিল্লী ক্ষমতা চলে গেলে দ্বিতীয়বার সে ক্ষমতার আশা করবে না যদি না সেনাপতি বৈরাম খা বেঁচে থাকে।বৈরাম খা মরলে বাদশাহ হূমায়ুনের আশা শেষ।
পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজিঃ "আমি শেখ মুজিবকে ভয় পাই না।সে সমস্যা না,আবেগী কথা বার্তায় তাকে ঘায়েল করা যাবে।আমার ভয় খাতা কলম হাতে তাঁর পাশে বসে থাকা তাজউদ্দীন আহমেদ।সেই আমাদের প্রধান সমস্যা হবে।"
মিল পেয়েছেন?আরও পাবেন।
পরাজিত বাদশাহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজ্য থেকে রাজ্যে।বিশেষ এক মুহূর্তে একজন আমীরকে লক্ষ্য করে সেনাপতি বৈরাম খাঁ জিজ্ঞেস করেন গাছের ছায়ায় বসা ঐ মানুষটাকে আপনি চেনেন?আমির বলল "সেনাপতির কি মতিভ্রম হয়েছে?সে বাদশাহ হূমায়ুন।" বৈরাম খাঁ বলল "না সে আমার হৃদয়ের স্পন্দন।তাঁর হাতের ইশারায় আমি পৃথিবীটাকে কারবালা বানিয়ে দিতে দ্বিতীয়বার ভাববো না"।আমির বললেন "সেনাপতি আসলেই আপনার মতিভ্রম হয়েছে,৯০০সৈন্য নিয়ে আপনি পৃথিবীকে কারবাল বানানোর স্বপ্ন দেখেন কি করে"?বৈরাম খাঁ প্রতিউত্তরে মৃদু হেসে বলল "বাদশাহ হুমায়ুন আর তাঁর এই অধম সেনাপতি বৈরাম খাঁ সম্পর্কে আপনার ধারণা নাই,আপনার বিন্দুমাত্র ধারণা নাই"। (তাঁর ১৫বছর পর বাদশাহ হুমায়ুন দ্বিতীয়বারের মত দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।তাঁর পাশে সেনাপতি বৈরাম খাঁ এবং বৈরাম খাঁয়ের পেছনে ২৬০০০ মোঘল সৈন্য।সেই আমির বেঁচে ছিলো নাকি তা আমার জানা নেই।)
৪০০বছর পরে জন্ম নেওয়া আরেক সেনাপতি বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ।মুজিব নগরে জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন "আমার মুজিব এবং স্বাধীনতা দুটোই চাই।" তাঁর আশেপাশে শ-খানেক মুক্তিযোদ্ধা।কিন্তু তাঁর হৃদয়ে লক্ষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
কোন এক বিশেষ কারনে আমার হৃদয়ের সমুদ্রে গর্জন হচ্ছে।বাদশাহ হুমায়ূনের স্ত্রী হামিদা বানু বেঁচে নেই।থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করতাম;
"আপনি যখন সন্তান সম্ভাবা,আপনার স্বামী বাদশাহ হূমায়ুন যখন শুধুই পরাজিত একজন বাদশাহ,তখন গাছের নিচে শারীরিক অবসাদ নিয়ে বাদশাহর হাত ধরে,কাধে মাথা রেখে আপনি রাত পার করতেন।গাছের পেছনে থেকে যে লোকটা দীর্ঘ ১৫বছর আপনাদের সুরক্ষা দিয়ে গেছে তাঁর নাম বৈরাম খাঁ।আর জীবনের শেষ সময়ে এসে আপনি তাকে রাজ্য ছাড়া করলেন।আপনার পুত্র আকবর দ্যা গ্রেট এই মানুষটাকে হত্যা করলো।ভালোবাসার প্রতিদানে ভালোবাসা না দিয়ে মৃত্যু দিলেন।কেন?"
ইতিহাস হামিদা বানুকে রত্নগর্ভা সম্মান দিতেই পারেই,আকবর দ্যা গ্রেট হতেই পারে তবে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এই যুবক তাদের ঘৃণা ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না বলে দুঃখিত।
লেখা শেষ।আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি।ঘুমের ভেতরই আমি দেখতে পেলাম ওপারের পৃথিবীতে জলসা বসেছে।রাজকীয় বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে বাদশাহ হুমায়ুন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।হুমায়ুনের পাশে সেনাপতি বৈরাম খাঁ আর মুজিবের পাশে বঙ্গতাজ।বৈরাম খাঁ আর বঙ্গতাজ একসাথে বলে উঠলো "আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন,আমাদের কলিজার টুকরা আপনারা জানেন না আপনাদের মুখে চিন্তার রেখা দেখলে আমাদের পৃথিবী ঠিক থাকে না"?
বাদশাহ হুমায়ুন আর বঙ্গবন্ধু একসাথে বলে উঠলো "আমাদের জীবনকালে যেই ভালোবাসা দিয়ে তোমরা আমাদের আগলে রেখেছো তাঁর ঋণ শোধ করতে না পেরে আমরা লজ্জিত এবং ব্যাথিত"। বৈরাম খাঁ আর বঙ্গতাজের চোখে অশ্রু।
এমন সময় জলসাঘরে প্রবেশ করেন আরেক বাদশাহ।সুরের জগতের বাদশাহ।তাঁর নাম কাজী নজরুল ইসলাম।যেই জলসায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তিন বাদশাহ আর দুই সেনাপতি উপবিষ্ট আছে সেই জলসা থামাবে এমন শক্তি পৃথিবীতে কোথায়?সুরের বাদশাহ সুর তোলে,জলসা ঘর সে সুরে ডুবে যায়।
"হে মদিনাবাসি প্রেমিক ধর হাত মম"
সুরের মূর্ছনায় ডুবে যায় দুই বাদশাহ।তাঁদের কোন ভয় নেই,তাঁদের টেনে তোলার জন্য পৃথিবীশ্রেষ্ঠ দুই সেনাপতি তো আছেই।