somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখী প্রকল্প এবং আমার অবস্থান

১৯ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিপাইমুখী প্রকল্প এখন এই দেশে একটা হট টপিক। নিউজপেপারগুলোতে নিয়মিতই এ বিষয় নিয়ে ফিচার আসছে। আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই ব্লগেও টিপাইমুখী নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চলছে। আমি একজন নতুন ব্লগার হওয়াতে এবং ৭ দিনের পর্যবেক্ষনের মধ্যে থাকবার কারনে সেই সব আলোচনায় অংশ নিতে পারছি না। তাই নিজের ব্লগেই এ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। সেই বলাটা হয়ত খুব জোরালো হবে না, কারন প্রথম পাতায় এক্সেস না থাকাতে এই লেখা তেমন কারো চোখে পড়বে না। তারপরেও নিজের অবস্থান নিয়ে কথা বলতে পিছপা হতে চাচ্ছি না।

প্রথমে আমার অবস্থানটির কথাই বলি। আমি সম্পূর্নভাবে টিপাইমুখী প্রকল্পের বিপক্ষে। এই প্রকল্প দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। ফলন কমে যাবে, আবহাওয়া হয়ে যাবে বিরূপ, ভূমিকম্প প্রবনতা অনেক বেড়ে যাবে। ইতিপূর্বে ফারাক্কা বাধ দেশের এক তৃতীয়াংশ ভূমির উর্বরতা হ্রাস করেছে, রাজশাহী অঞ্চলে মরুকরনের সূচনা করেছে। টিপাইমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের পূর্বাঞ্চলে আরো ভয়াবহতা দেখা দিবে। রংপুরের মঙ্গা আর রংপুরে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে। এই দেশ পরিনত হবে আরেক সোমালিয়াতে।

ভারত ইতিমধ্যে টিপাইমুখী প্রকল্পে বাংলাদেশের অনেক স্বার্থ আবিষ্কারের চেষ্টায় রত। বলাই বাহুল্য যে ওরা ওদের এই অপরাধমূলক প্রকল্পের পক্ষে সাফাই গাইছে। ভারত কোনদিনও নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু দেখেনি আর দেখবেও না। ফারাক্কা প্রকল্প শুরুর আগেও ওরা অনেক গুনগান গাইছিল। ফারাক্কা প্রকল্প হলে নাকি বাংলাদেশের বন্যার সমস্যা থাকবে না, শীতকালে অনেক পানি পাওয়া যাবে - এমন অনেক খোড়া যুক্তি দেখাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিনতি কি হল, তা তো আর কারো অজানা নয়।

টিপাইমুখী আরো ভয়ংকর এই কারনে যে, এটা শুধুমাত্র একটা বাধ নয়, এটা একটা বহুমুখী প্রকল্প। এর মধ্যে প্রধান উল্লেখযোগ্য অংশ হল জলবিদ্যুত প্রকল্প আর ব্যারেজ। যেখানে ফারাক্কা কেবলি একটা ব্যারেজ। ভারত এখন আগের মতই গান গাইছে যে, টিপাইমুখী প্রকল্প হলে বাংলাদেশে বর্ষায় বন্যা থাকবে না আর শীতকালে পানি প্রবাহ বাড়বে, যার কারনে নদীর নাব্যতা বাড়বে। উপরন্তু এই প্রকল্পের বিদ্যুত দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হবে।

ভারতে যুক্তি আসলে উড়োযুক্তি। বর্ষার বাড়তি পানি ওরা কোন দুঃখে আটকে রাখবে? আটকে রাখার কোন যুক্তি নেই। আর শীতকালে পানি প্রবাহ বাড়লে তো আসলে কোন লাভ নেই। সিলেট অঞ্চল হল হাওড়-বাওড়ের এলাকা, যা বর্ষায় ডুবে থাকে আর শীতকালে জেগে উঠে। বর্ষার পলিবাহিত মাটিতে শীতকালে ফলন ভাল হয়। ভারতে যুক্তি অনুযায়ী তাহলে বর্ষায় আমরা পলি পাচ্ছি না। আর শীতকালে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে হাওড়-বাওড় তলিয়ে যাবে এবং শীতকালের ফলন থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বাকি থাকল বিদ্যুত। ভারত বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যার সমধানের জন্য টিপাইমুখী প্রকল্প করছে, এটা কি খুব হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে না? নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সামান্য যা বাকি থাকবে সেটাই ভারত বাংলাদেশকে দিবে। এবং সেটা অনেক চড়া দামে। ঐটুকু বিদ্যুত বাংলাদেশকে দিলেই ওদের লাভ। কারন বাড়তি বিদ্যুত তো আর স্টক করে রাখা যায় না। সেটা বাংলাদেশের কাছে বিক্রি না করলে অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হত।

ভারত নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করে না, তার সবচেয়ে বড় প্রমান হল, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে চাল সংকটের সময় শুধুমাত্র নিজেদের বিপদকালীন রিজার্ভ তৈরি করবার জন্য বাংলাদেশে চাল আমদানী করতে না দেয়া। এমন না যে, ভারতের মানুষ চাল খেতে পারছিল না। পরে সামান্য কিছু চাল তারা বাংলাদেশকে আমদানী করতে দেয়। তাও সেটা অনেক চড়া দামে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তখন চালের দাম পড়ে যাচ্ছিল। এই হল ভারতের বন্ধুত্বের নিদর্শন।

একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ভারত নদী প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের সীমান্তে থাকা যৌথ নদীগুলোই বেছে নেয়। আরেক ভাটির দেশ পাকিস্তানকে তারা সমীহ করে বলে, পাকিস্তানের যৌথ নদীগুলো এড়িয়ে যায়। এমনকি মায়ানমারের সাথে যৌথ নদীগুলোতেও তারা হাত বাড়ায় না। ভারতের মধ্য দিয়ে কিন্তু অনেক নদী সাগরে গিয়ে পড়েছে। তার মধ্যে অনেক পাহাড়ী নদী আছে। সেই সব জায়গাই কিন্তু তারা প্রকল্প করছে না। কেন? কারন তাতে তাদের ভাটি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারচেয়ে এটাই কি সবচেয়ে ভাল নয় যে, উজানের সুবিধা তারা নিজেরা ভোগ করল আর ভাটির সমস্যাগুলো বাংলাদেশকে ঠেলে দিল।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত সম্পুর্নভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী এই প্রকল্পের বিষয় জাতিসংঘে পেশ করা। সেটা কেন এখনও করছে না সেটা আমার কাছে অবাক লাগছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিকভাবেও টিপাইপুখীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন।

আমার তখনই অবাক লাগে যখন দেখি বাংলাদেশের কিছু মানুষও ভারতের সাথে তাল দিয়ে টিপাইমুখী সমর্থন করে। সাধে কি আর এই দেশের রাজাকারদের জন্ম হয়? প্রথম আলো তো ইতিমধ্যেই ভারতপন্থী কিছু পানি বিশেষজ্ঞ বের করেছে, যারা নির্লজ্জভাবে টিপাইমুখীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শুধু কি তাই? টিপাইমুখীর প্রতিবাদ করা “ল্যাম্পপোস্ট” কে তারা ইতিমধ্যে চরমপন্থী প্রমানের চেষ্টায় লিপ্ত। এই সব নির্লজ্জ দেশবিরোধীদেরকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×