আমরা আজকে এক তথাকথিত মহা সভ্য জগতে বাস করছি।আজ চারিদিকে সভ্যতার জয়গান চলছে।আমরা অনেক সভ্য হয়েছি।আমাদের রুচি বদলেছে ।আর আমরা সেই সভ্যতার ঘাঁড়ে চরে পিছনের দিকে সামনে আগাচ্ছি ।আমি যখন ধাণমন্ডি,শান্তিনগর এলাকা দিয়ে চলাফেরা করি তখন মনে হয় আমরা আজ কত উন্নত আর আধুনিক । আমাদের সভ্যতার কিছু নমুনা নিচে পেশ করলাম ।
১.সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমানীত হয়েছে ।উক্ত শিক্ষক বিয়ের কথা বলে ছাত্রীটিকে হয়রানি করে অন্যত্র বিয়ে করে আবার বিয়ের পর ও ছাত্রীটিকে উত্যক্ত করতে থাকে।
দৈনিক যুগান্তর ৩১ জানুয়ারী
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সর্বোচ্চ বিদ্যা পীঠ আর সেখানে প্রতিনিয়ত হচ্ছে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ।যেখানে মা-বাবার পর শিক্ষকের স্থান আজ তার হাতেই একজন শিক্ষার্থীর সম্ভ্রম লুট হচ্ছে ।
২.বর্তমানে আমাদের মধ্যে অসুস্থ বিনোদনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে । বিউটি কন্টেস্ট আর ফ্যাশন শো র নামে আজ মেয়েরা স্বল্প বসন এমনকি চরম অশ্লীল ভাবে পোশাক পরে পোজ দিচ্ছে । খোলামেলা পোশাক না পরলে আজকে নারী স্বাধীনতা নাকি প্রকাশ পায় না ।পশ্চিমা ছবির বদৌলতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকেই বলা হচ্ছে প্রেম। আসলে সেটা তো প্রেম নয়, বরং অশ্লীলতা। সমাজে অনাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হিন্দি এবং পশ্চিমা ছবির রগরগে ওই সব দৃশ্যই যথেষ্ট। এক শ্রেণীর লোক রয়েছে, তারা পর্দা পালন করাকে খারাপ মনে করে থাকে। পাশাপাশি তারা বেপর্দা-বেশরম হওয়া, সিনেমা-টিভি তথা তথাকথিত সংস্কৃতিতে মেতে উঠাকে ভাল মনে করে থাকে। আর মিডিয়া জগতের মানুষদের বেহায়া জীবন–যাপন আজ সমস্ত সমাজে ঘাতক ব্যাধির মত ছরিয়ে পরেছে ।সম্প্রতি একজন অভিনেত্রীর সেক্স স্ক্যান্ডাল সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পরে যা তরুণ সমাজকে মারাত্মক পুলকিত করে ।সেই অভিনেত্রীর সেক্স স্ক্যান্ডালের কাহিনী পত্রিকায় ব্যাপক রমরমা ভাবে ছাপাঁ হয় ।এই ধরনের চরিত্রহীন মানুষ তো শিক্ষিত কিন্তু তারা যে কতটুকু সভ্য তা বোঝা কঠিন ।
৩. কিছুদিন আগে শাহরুখ খান এদেশে আসে ।শাহরুখ প্রকাশ্যে যে নগ্ন নাচ-গানের পারফর্ম করিয়াছে, ইহার পরে আর নগ্নতার কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।কিন্তু শুধু সে নগ্নতাই নয় বরং নগ্নবেশে উদ্বাহু নৃত্য-গানের প্রায় ৬ ঘণ্টা অনুষ্ঠান হইয়াছে-রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এইদেশের রাজধানী মসজিদের শহর ঢাকায়। এবং তাহাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ছিলো ১২০০ পুলিশ, ছিলো তিনশত র্যা ব।,সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকিতে ছিলো ৩টি মনিটরিং সেল। এবং যাহা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎ খুব কমই হইয়াছে: শাহরুখের নিরাপত্তায় ছিলো ১০ স্তরের নিরাপত্তা বলয় ।এই নিয়ে দেশের সুধীজনদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না । ১০০০- ২৫০০০/= টাকার টিকিট কেটে দেশের সুধীজনদরা এই উদোম নৃত্য দেখল মসজিদের খু্ৎবা ১০ মি: বেশী হলে যারা উত্তেজিত বোধ করেন তাদের অনেকে হয়ত ভাবছিলেন আর একটু পরে এই উদোম নৃত্য শেষ হলে ভালই হত । আমরা নাকি মুসলমান……অথচ ইসলাম বর্হিভূত কাজ করতে আমাদের ভালই লাগে । সুধীজনদের বলছি আমরা কি শিখলাম ? অশ্লীলতা আর স্বল্পবসনা মেয়েদের নানাবিধ শারীরিক কসরত উপস্থিত সুধীজনদের মারাত্মক পুলকিত করে । উনাদের কাছে অশ্লীলতা আর নগ্নতা হচ্ছে সংষ্কৃতি চর্চা আর ধর্ম অথবা ইসলামিক কথাবার্তা বললে তারা জঙ্গীবাদের/মৌলবাদের গন্ধ পান । এইসব সুধীজনরা সংষ্কৃতির জোয়ারে দেশকে ভাসিয়ে দিতে চায় আর দাড়িঁ-টুপিওয়াদের দেখলে মৌলবাদী বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেণা বের করে ফেলে । জাকির নায়েক বাংলাদেশে আসা অজানা কারণে বাতিল হয়ে যায় আর হারাম কাজ আযোজন করার জন্য সরকার অন্তর শোবিজের সাথে চুক্তি করে । কুরআনে বলা হয়েছে :“…………পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। ” সূরা আল বাক্বারাহ (২:২১৬)
লালমনিরহাটের চরেভুখা-নাঙ্গা মানুষদের খ্রিষ্টানরা স্কুলে পড়াচ্ছে, দু’টো খেতে দিচ্ছে আর প্রশ্ন করছে - ‘ঈসা তো জীবিত নবী আল্লাহর কাছে থাকে, আর মুহাম্মদ তো মরা নবী - এখন কোন নবীকে মানবা কও?’ দীনহীন এই সব মানুষদের খ্রিষ্টান বানিয়ে এরা ভারত থেকে আমদানী করা গরুর মত সিল মেরে দিচ্ছে পুরুষদের রানে আর মেয়েদের বুকে। মরার পর মুসলিমের কবর থেকে তুলে খ্রীষ্টানদের গোরস্থানে কবর দিচ্ছে। আর আপনি ভাই খালেদা-হাসিনা-জামাতকে গালি দিতে ব্যস্ত। কপট আতেঁল আস্তিকদের ইন্টেলেকচুয়ালি মোকাবেলা করতে করতে আপনি অস্থির হয়ে গেলেন। আর এদিকে লালমনিরহাট শহরে মুসলিমের বাচ্চাকে অংক করিয়ে, এবিসি পড়িয়ে খ্রীষ্টানরা ব্রেন ওয়াশ করছে।উত্তরবঙ্গে মানুষ শীতে কাঁপছে, কী পরিমাণ শীত আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা ভাই। অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এরা মানুষকে ধোঁকা দেয়। যেমন - এরা জিজ্ঞেস করে - ‘ঈসা(আঃ) কি জীবিত না মৃত?’ সাধারণ লোক বলে জীবিত, তিনি আল্লাহর কাছে আছেন। এরপর বলে - ‘মুহাম্মদ(সাঃ) কি জীবিত না মৃত?’ উত্তর মৃত। এবার ওরা বলে - এখন তোমরাই বল যে নবী বেঁচে আছেন তার কথা শোনা কি উচিত না? ১০০০- ২৫০০০/= টাকার টিকিট যারা নাচ-গান দেখেন তারা তো কেউ এসব গরীবদের জন্য তো কিছু করলেন না ।একদিকে অপব্যয় হচ্ছে আর অন্যদিকে দারিদ্র্যের কারণে মানুষ খ্রীষ্টান হচ্ছে । সভ্যতা কি আমাদের এটাই শেখায় ? ওয়েস্ট ইন্ডজে ও তো বিশ্বকাপ হয় সেখানে তো রাতে কোন খেলা হয় নাই আর যেখানে আমাদের কারেন্ট নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সেখানে ডে-নাইট খেলা অপব্যয় আর মানুষের দূর্দশা বাড়ানো ছাড়া কিছুই না ।আমরা যে কত সভ্য এই তার প্রমান ।
৪. আমাদের যে কি পরিমাণ সভ্য তা ৩১স্ট নাইটে নতুন করে প্রমান করতে হয় ।দৈনিক যুগান্তরের ২ জানুয়ারী থেকে আসেন সেটা দেখি ।
“হ্যাপি নিউ ইয়ার উপলক্ষে মধ্য্রাতে নগরীর রাজপথে তরুণ-তরুণীর ঢল”
“১২ টা বাজতেই ফেণায়িত পানীয় খুলে ছড়িয়ে দেয়া হয় রেডিসনের বলরুমে।বিভিন্ন হোটেল আর নাইট ক্লাব গুলোতে তরুণ-তরুণীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে ।নানা আতশবাজি পোড়ালো হয়। উচ্চ শব্দ বাজানো হয় হট-রক মিউজিক। ক্লাবগুলোতে আলোকসজ্জা ছিল চোখ ধাঁধানো।”
একদিকে শীতে মানুষের জীবন ওস্ঠাগত আর সভ্যতা প্রমানের চেষ্টা সত্যি ই অনন্য ।
“নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর গুওলশান –২ এর হোটেল সারিনাতে হাজির হয়েছিল অনেক তরুণ-তরুণী। বেশিরভাগ তরুনী পাশ্চাত্য ধারার খোলামেলা পোশাক পরে হাজির হয়। ডিজে নাঁচের সাথে তারা সঙ্গীদের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নাঁচতে থাকে ।সারারাত দেদারসে পানীয় বিক্রি চলে উচ্চমূল্যে ।বারগুলোতে আগত্ রা যে যার খুশি মত পানীয় কিনতে পেরেছেন“
মদকে পানীয় বললেই তা পুত–পবিত্র হয়ে যায় না। আমাদের মত ইসলাম প্রধান দেশে কিভাবে এ ধরণের হারাম কাজ চলে তা বোধগম্য না । আর এসব অতিথিরা আবার দেশের সভ্য-সুধীজন। উনাদের কাছে আবার সভ্য সমাজে একটু পান না করলে স্ট্যাটাস বজায় হয় না ।
“গুলশান-২ এ নাইত ক্লাব রয়েল রি-গেল এ রাত ৮ তা থেকে তরুনীরা আসতে থাকে শর্টস আর টি-শার্ট পড়ে ।পৌষের শীত যেন তাদের ছুঁয়তেই পারেনি ।প্রথমে শুরু হয় হট ফ্যাশন শো । দেশী-বিদেশী মডেল রা খোলামেলা পোশাকে ক্যাট-ওয়াক করে আর সাথে চলে হট-রক মিউজিক।“
অসাধরণ ,রিপোর্টার কে পুরস্কার দেয়া দরকার উনি যেভাবে দৃস্যগুলো কে বর্ণিত করেছেন।
কত সভ্য হয়েছি আমরা যে অর্ধনগ্ন অবস্থা কে খোলামেলা বলে চালিয়ে দিচ্ছি।আর তাদের এই খোলামেলা অবস্থা চলে ২ ঘন্টা যাবত ।
“রাত ২ টায় রেড-ওয়াইনের সাথে দেয়া হয় ফ্রাইড চিকেন ।ওয়াইনে চুমুক দিয়ে সবাই আত্মহারা হয়ে পড়ে ।রেডিসনে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী নেচে –গেঁয়ে টালমাতাল হয়ে পরে ।অনেকেই ঝাউ গাছের আড়ালে –আবডালে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেস্টা করে ।সবই হয় আবার প্রকাশ্যে ।“
রিপোর্টার কে আরেক টা পুরস্কার দেয়া দরকার ।আড়ালে আবডালে যা হয় তা এতদিন যানতাম অশ্লীল আর কুকর্ম আর সেটা নাকি ঘনিস্ট হওয়া আহা ,সুধীজনদের ভার্সিটি,ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সভ্য সন্তানেরা যেভাবে আত্মহারা হয়েছে তাতে তো এখন নিজেকে অসভ্য মনে হচ্ছে। এই যুগে আড়ালে-আবডালে যাওয়ার কি দরকার তাদের গুরুরা তো সিনেমায় ত সব সামনা সামনি করে। এত সভ্য মানুষদের কি লজ্জা পেলে চলে।
পরিশেষে বলা যায় আমরা বর্তমানে যা করছি তাতে সভ্যতা আবর্জনার বাক্সের ময়লায় পরিনত হয়েছে ।এটাই কী সভ্যতা। আর জন্য ই কি আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি ।আমাদের কি বিবেক জাগ্রত হবে না ,নাকি হিন্দি সিরিয়ালের নেশায় ঘরে বসে থাকব আর সভ্যতা কে বইয়ের পাতায় চর্চার জন্য সাজিয়ে রাখব ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




