somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ স্বর্ণকেশী!-১৯

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পায়ের লোমগুলো যেন ঘাড় উঁচিয়ে তাকাচ্ছে আর বলছে, ফিরে যা, ফিরে যা। আসলেই, দৌড়ের শর্টস আর হুডি পরে এ বাড়িতে উদয় হওয়াটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে পায়ের লোম কোনো বড় সমস্যা নয়। ঘাপলা অন্যখানে। লতা আর ফ্রাউ কেলনারের আচার আচরণ অদ্ভুত ঠেকছে। সোফায় বসা লতা বাতাসে এলোপাতাড়ি ক্রাচ ঘুরিয়ে কী যেন বিড়বিড় করছে। নাগালের ভেতর দাঁড়ানো আমার মাথায় ক্রাচের একটা বাড়ি মাথায় পড়লে ভবলীলা সাঙ্গ আর পায়ে লাগলে তো নিশ্চিত পঙ্গু। ওদিকে, ফ্রাউ কেলনার ভোজালি আকৃতির ঢাউস এক ছুড়ি দিয়ে সশব্দে টমেটো কাটছেন। ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে আমাকেও কেটে ফেলতে পারেন টমেটোর সঙ্গে। ভুল সময়ে চলে আসলাম মনে হচ্ছে।

ক্রাচ আর ভোজালি নামিয়ে দুজন মিলে এবার মাথা-মুণ্ডুহীন সব প্রশ্ন ছোড়া শুরু করল। কবে ফিরেছি, ঘটনা কবে ঘটল, সে কখন আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ধাঁধায় পড়ে গেলাম। শেষটায় অধৈর্য হয়ে বলতে হলো, ‘মাফ চাই, কিচ্ছু বুঝছি না। কোথাও তো যাই-ই–নি যে ফিরতে হবে। এর ভেতর আর কী এমন ঘটে গেল যার কারণে “তাকে” আসতে হবে? এই “সে” টাই বা কে?’

ফ্রাউ কেলনার শীতল গলায় বললেন, ‘সব জানি। ব্যাঙ খাটাশ নামের যে ভারতীয় ছাত্রটা লতার আগে থাকত এখানে, তারও একই কেস ছিল।’ লতা আবার পাশ থেকে ধুয়ো তুলছে ‘সব শিয়ালের এক রা। লেজকাটা শিয়াল সব।’ আমি শিয়াল? তাও লেজকাটা? ভেতরের রয়্যাল বেঙ্গলটা ঠুস করে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল। আর ব্যাঙ খাটাশই বা কোন চিড়িয়া? পরক্ষণেই অবশ্য বুঝে নিয়ে এক চোট হাসলাম মনে মনে। হাল না ছেড়ে জানতে চাইলাম, ‘তা, ভেঙ্কটেশের কেসটা কী ছিল?’ উত্তরে দুজন একসঙ্গে কিচমিচ করে যা বলল তা হলো, ভেঙ্কটেশ একদিন বলা কওয়া ছাড়া দেশে চলে যায়। দিন দশেক পর ফিরে এসে ঘোষণা দেয়, সামনের মাস থেকে সে ঘর ছেড়ে বড় ফ্ল্যাটে উঠে যাবে। কারণ সে বিয়ে করে এসেছে। সামনের মাসে বউ চলে আসবে উড়ে। শুনে কলিজা ঠান্ডা মেরে গেল। শুনতে পেলাম, পায়ের লোমগুলো আবার কথা বলা উঠছে, ‘লেও ঠেলা, অনীক মিয়া! এক সপ্তাহ গা ঢাকা দেওয়ার মাশুল গোনো এবার।’

এরপর পাক্কা আধ ঘণ্টা লেগে গেল এই দুই ভদ্রমহিলাকে বোঝাতে যে, আমাকে বিনা দোষে দোষী করা হচ্ছে। মাঝে অতি উৎসাহী ফ্রাউ কেলনার উঠে এসে আমার আঙুল উল্টে পাল্টে আংটি জাতীয় কাল্পনিক কিছু একটা খুঁজে দেখার চেষ্টা করে আবার টমেটোগুলোর কাছে ফিরে গেছেন। ‘যা হোক, অনেক রাত, আজকে উঠি, আরেকদিন আসব। আর তোমাদের ভেঙ্কটেশ অনেক সাহসী ছেলে। এত দুঃসাহস আমার নেই। তা ছাড়া, আমি তো আর...’ বেফাঁস একটা কিছু বলতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে সামলে নিলাম।

উঠে আসতে যাব আর লতা ক্রাচ বাগিয়ে কবজিতে বিঁধিয়ে হিড়হিড় করে টেনে আনল তার সামনে। খিটমিটিয়ে হাসছে সে ঠোঁট টিপে। ‘কিছু বলবে?’ কথাটা বললাম দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে। চোখাচোখি হতে দেওয়া যাবে না। তাহলেই সিঁধেল চোর বমাল ধরা পড়ে যাবে। কোনো কথা না বলে লতা হাত বাড়িয়ে এক টুকরো কাগজ গুঁজে দিল হাতের মুঠোয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড শক খেলাম। ঘর্ষ বিদ্যুৎ! প্রায়ই হয় এমন। দরজার হাতলে। আজকে যোগ হলো লতার হাত। কাণ্ড দেখে লতা খিকখিক করে হাসছে। পিত্তি জ্বলে গেল। ঠিক করলাম, এই মেয়েকে একদিন এমন শক দেব! খিকখিক তখন হাউমাউ হয়ে যাবে।

বেরিয়ে এসে নোট খুলে দেখি লেখা, ‘এই মঙ্গলবার সেই কফিশপটায়? সকাল এগারোটায়।’ নিচে ফোন নম্বর দেওয়া। তারও নিচে আবার একটা হুমকিও আছে, ‘না আসলে কিন্তু...’, পাশে ছবি কঙ্কালের খুলির ওপর আড়াআড়ি দুটি ক্রাচ। মনটা ভরে গেল আশ্চর্য উষ্ণতায়। নোটটা সযত্নে বুক পকেটে রাখলাম। কিন্তু চেরি গাছের বেআক্কেল কাক দুটোর আর সহ্য হলো না। কাঁধ বরাবর কালো হুডিটার ওপর সাদা একটা অস্ট্রেলিয়ার ম্যাপ এঁকে দিল। অন্য সময় হলে মনে হয় ইট ছুড়তাম। কিন্তু আজকে কাক বাবা-মার দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে বাউ করে একটা অভিনন্দন ছুড়ে দৌড় শুরু করলাম ফিরতি পথে। (চলবে)

ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার: মিউনিখ, জার্মানি।
আগের পর্ব এখানে
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৩৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×