তথ্যবহুল উপকারী লেখা ঠিক আসে না আমার। তারপরও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে তেমন একটা লেখা দাঁড় করানোর অনুরোধ আসলে ঢেঁকি গিলে ফাঁপরে পড়লাম। যথেষ্ট তাগাদা আর হুমকি খাবার পর যা লেখা হল, দেখা গেল সেটা হয়ে গেছে একটা ভ্রমন কাহিনী। নাম তার 'ভোঁওও...ইন্টারভিউ'।
এই গল্পে কাউকে স্কলারশীপ বাগানোর হদিস দেই নি। শুধু বলেছি কিভাবে এক রাতে বিয়েবাড়িতে জবরদস্ত রকমের মোরগ-পোলাও নামিয়ে দিয়ে এসে গায়েবী মোটিভেশনের জোরে পিএইচডির অ্যাপ্লিকেশন করতে লেগে গেলাম-সেই কাহিনী।
দরখাস্তটা মোরগ-পোলাওয়ের মত জবরদস্ত হয়েছিল কি না কে জানে, কিন্তু সুদূর জার্মানী থেকে তিন দিন লম্বা এক ইন্টারভিউয়ের ডাক এসে আরামদায়ক বেকার জীবনে একটা মস্ত গোল পাকিয়ে দিল।
সেই ইন্টারভিউ থেকে শুরু ভ্রমনটা এখনো চলছে। বিচিত্র কেচ্ছাটা পড়তে হলে 'স্বপ্নের সীমানা পেরিয়ে' বইটা উল্টে পাল্টে দেখতে হবে। আর বইমেলার মাতৃভাষা প্রকাশে ২০১-২০২ স্টলে যেতে হবে।
খালি ছোট্ট একটু মুশকিল। 'ভোঁওও...ইন্টারভিউ' যে লিখেছে, সে 'কিম্ভূত স্বদেশির অদ্ভূত বিদেশ' নামের একদম বেদরকারী ধরনের একটা বইও বের করেছে একই প্রকাশনী থেকে। সুতরাং, এমন খাপছাড়া লোক উচ্চ শিক্ষার মতন গম্ভীর ব্যাপার নিয়ে বলতে আসলে সন্দেহ জাগে বই কি।
তবে গাঁটের পয়সা দিয়ে বইটা কিনে পাঠকের স্বপ্নভঙ্গ হবে না। ‘উড়ছে হাইজেনবার্গ’ খ্যাত শামীর মোন্তাজিদ, তরুন বিজ্ঞান লেখক মুশতাক ইবনে আয়্যূব, বিজ্ঞান বক্তা আদনান মান্নানরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা হয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। আরো সব তরুন তুর্কিরা মিলে তাদের উচ্চ শিক্ষার যে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতাগুলো লিখেছেন, তা কোনো দুঃসাহসিক অভিযাত্রার চেয়ে কম কিছু নয়। বরং কোনো নবীন নবীশের জন্যে এটা হতে পারে নতুন এক অ্যাডভেঞ্চারের নীল নকশা।
আমার মতে, জিআরই-আইএলটিএসের বেশুমার বই কিনে নীলক্ষেত খালি করে ফেলার আগে এই বইটা এক টানে পড়ে ফেলা উচিত। তারপর, নীল নকশা ধরে নিখুঁত একটা ছক এঁকে গুঁটি ফেলে মই বেয়ে বেয়ে এগোলেই চলবে। ভিনদেশে পড়াশোনার ধরন আর তার চ্যালেঞ্জগুলো হাতের তালুর মত জানা থাকলে দারুন একটা স্কলারশীপ জুটিয়ে ফেলা আসলে সাপ-লুডু খেলার মতই সহজ। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ধোঁয়াশার প্রাচীর ডিঙ্গাতে তাই ‘স্বপ্নের সীমানা পেরিয়ে’ যাবার আমন্ত্রন রইল।
-ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার,
ইন্সটিটিউট অব প্যাথোলজি,
টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি মিউনিখ,
জার্মানি
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪৯