somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাল বাসা ২

০১ লা মে, ২০২১ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভাল বাসা ১



অনেকগুলো ঘর। প্রতিটাই ছাত্রদের কাছে ভাড়া দেয়া। “আর এই যে দেখো, কমন কিচেনটা কত বড়। তোমার কোনো অসুবিধা হবে না“। বাড়িওয়ালী ফ্রাউ রিটার সবকিছু দেখাতে দেখাতে বললেন। রান্নাঘরে ডিম ভাজতে থাকা জুলিয়ান নামের ছেলেটা বেমক্কা বলে বসলো, “রান্নার আরো একটা জায়গা আছে। চলো দেখাই তোমাকে“। বিনা বাক্যব্যয়ে তার পিছু নিলাম।

বিকল্প রান্নাঘর কোথায়। এ যে দেখছি গোসলখানা। কিন্তু দরজা যে হাট করে খোলা। বাথটাবের পাশে ওয়াশিং মেশিনটা কাপড় সমেত সশব্দে ঘুরছে। তারই ওপর ছোট্ট একটা স্টোভ জ্বালানো। মেশিনের মৃদু কাঁপুনিতে সেটা ক্রমেই ডান দিকে সরে যাচ্ছে। সসপ্যানে চাপানো ইনস্ট্যান্ট নুডুলস যেকোনো মুহূর্তে উল্টে পড়ে ইনস্ট্যান্ট অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। থ মেরে গেলাম যখন অর্ধ স্বচ্ছ প্লাস্টিকের পর্দার ওপাশ থেকে নুডুলসের মালিক তাড়া লাগালো, ‘এ্যাই এ্যাই, চুলাটা নিভিয়ে দাও না, আমার লাঞ্চটা পুড়ে গেলো তো...”। জুলিয়ান ছেলেটা স্টোভ নিভিয়ে দিয়ে তাক থেকে একটা ধোয়া তোয়ালে ছুড়ে মারলো বাথটাব বরাবর। আর গাঁক গাঁক করে খিঁচিয়ে উঠলো, “দিয়েছি নিভিয়ে। সেদিনের মত আবার তোয়ালে ছাড়া বেরিয়ে এসো না“।

আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই জুলিয়ান জানালো, ‘এই কাজ সে প্রায়ই করে। সেদিন তো ইন্ডিয়ান মেয়ে পার্বতী ভয়ে চিৎকার জুড়ে দিয়েছিল। কি এক কান্ড...”। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। তোয়ালেবিহীন দেবদাসকে নুডুলসের সসপ্যান হাতে দৌড়াতে দেখলে পার্বতীর তো ভয় পাবারই কথা।

কখন যে ফ্রাউ রিটার পিছে এসে দাঁড়িয়েছে। “চলো, তোমাকে তোমার ঘর দেখিয়ে দেই। একদম সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছি“। ভেজানো পাল্লা ঠেলে উঁকি দিতেই তাজ্জব বনে গেলাম। শ্বেতশুভ্র সফেদ বিছানাটায় রাজপুত্রের মত ফুটফুটে চেহারার কে যেন জুতা-মোজা, স্যুট-টাই শুদ্ধু অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ফ্রাউ রিটারের হাঁক ডাকে সে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো। তারপর অত্যন্ত অ-রাজপুত্রীয় ভঙ্গীতে ঘ্যাষঘ্যাষ করে পিঠ চুলকাতে চুলকাতে বিরাট এক হাই তুলে ফেললো। ফ্রাউ রিটার কপট রাগ দেখিয়ে বললো, “ক্রিস, আবার যদি কারো রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছো, তো দেখবে মজা”। তারপর খুব স্বাভাবিক গলায় আমাকে বললো, “আসলে এখানে আমরা সবাই মিলে ঝুলে থাকি। কার কোন ঘর, এত ভাগযোগে কি লাভ”। বুঝলাম, এ বাড়িতে ‘প্রাইভেসি’ শব্দটা একেবারে অচল পয়সার মতই অচল। হতাশ হয়ে ক্ষান্ত দিলাম। ভাল বাসার এত খড়া এ দেশে, কে জানতো।

৩.
ওবারশ্লাইসহাইম। পুরোপুরি ভূতের জায়গা। বাড়িঘর বড্ড কম। মাঠ আর জঙ্গল বেজায় বেশি। এমনি এক অদ্ভুতুড়ে এলাকায় ভাড়া বাড়ির খোঁজ পেলাম। বার দুই বাস বদলে আর অনেকখানি পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল এক পোড়ো বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে অতি কষ্টে। উঠানে এক হাঁটু জঙ্গল। কোন এক কালে সেটা বাগান ছিল বোধহয়। তার মাঝখানে ভয় ধরানো বদখত দেখতে এক কাকতাড়ুয়া হাত ছড়িয়ে ভেংচি কাটছে। সুড়ুৎ করে গিরগিটি না কি যেন একটা কোন গর্তে সেঁধিয়ে গেল হঠাৎ। সব মিলিয়ে হরর ছবির ছমছমে শ্যুটিং বাড়ি বলে ভুল হতে চায়।

দোতলাটা ভাড়া দেয়া হবে। কাঠের টেবিলে কাটা চামচ আর প্লেট সাজানো দেখে মনে হবে যেন এই বুঝি ডিনার খেতে বাড়ির লোকের টেবিলে চলে আসবে। কিন্তু ঘটনা হল, এ বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা নব্বই বছরের ভদ্রমহিলা গত সপ্তাহে মারা গিয়েছেন। তার নাতিরা বাড়ি খালি না রেখে নতুন ভাড়াটে খুঁজছে।

“কি, পছন্দ হয়েছে তোমার? পারবে না একা থাকতে? আমরা কাছেই থাকি। ভয় পেলেই ফোন দেবে। দশ মিনিটে চলে আসবো”। কোনো মতে ঢোক গিলে দ্রুত হিসাব করতে লাগলাম। কোনো কারনে ভয় পেলে কিংবা ভূতে ধরলে দশ মিনিট টিকবো তো, নাকি তার আগেই মরে শক্ত হয়ে থাকবো।

ভূতের কাছে ভবিষ্যত সঁপে দিতে পারলাম না। চলে এলাম। আগের দু’টো দেখে আসা বাসা নাকচ করে দিয়ে বিরাট বোকামি হয়ে গেছে। হাতে আর মাত্র দিন পনেরো আছে। তারপরই পথে নামতে হবে। ভয়ে-আতঙ্কে ঘুম হারাম অবস্থা দাঁড়ালো। চোখের সামনে একটুকরো খড়কুটোও মিললো না যেটা আঁকড়ে এই অকূল পাথারে ভেসে থাকা যায়।

৪.
এমনি সময়ে মুশকিল আসান হয়ে এল রিসার্চ সেন্টারের ক্যাফেটারিয়ার দেয়ালে সাঁটানো ছোট্ট একটা টু-লেট নোটিশ। “ছাত্র বা ছাত্রীকে ঘর ভাড়া দেয়া হবে। যোগাযোগের ঠিকানাঃ মারিয়ন বিটনার, ফোন ০১৭৬...”। পড়িমরি করে মুঠোফোনটা বের করে বোতাম চাপতে লাগলাম। যেইখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই। সুতরাং, প্রবল বেগে ছাই ওড়াতে লাগলাম।

শনিবার সকাল। শীতের মেঘ সরিয়ে এপ্রিলের কাঁচা রোদ উঁকি দিচ্ছে। বিপ্ বিপ্ শব্দে গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো। ফ্রাউ বিটনার চলে এসেছেন। পঁচাত্তরেও বেশ ঝরঝরে ফিট শরীর। আমার পেল্লায় দুটো স্যুটকেস একটার পর একটা অনায়াসে ব্যাক ডালায় পুরে ঝাঁপি ফেলে দিলেন। সাথে আমাকেও সামনের সিটে পুরে এক গাল ওগাল চওড়া হাসিতে বললেন, “আর চিন্তা নেই, বিদেশী মেয়ে। চলো, যাওয়া যাক“।

আধ ঘন্টা পর। নিখুঁত ছিমছাম ছোট্ট ঘরটায় বসে চিমটি কাটছি হাতে। আসবাবপত্র দেয়াল জোড়া। কিছুই কিনতে হবে না। ভাড়াটাও চলনসই। সবচেয়ে বড় কথা, জ্যান্ত কি ভূত, আর কোনো বাসিন্দা নেই এখানে। বিচিত্র সব আপদ ডিঙ্গিয়ে নিরাপদ একটা ঠাঁই। ফ্রাউ বিটনার হাতে এক কাপ গরম কফি ধরিয়ে দিয়েছেন। উষ্ণতায় মন ভাল হয়ে যাচ্ছে। নাহ্, ভাল বাসা তাহলে মিললো অবশেষে। (সমাপ্ত)

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২১ রাত ২:২৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×