somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অটো-কাহিনী (অখন্ড)

১১ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অটো-কাহিনী

কাঁচের দেয়াল ঘেরা মিউনিখ শহরটা দূরে অধোবদনে দাঁড়িয়ে। নিশ্ছিদ্র ফোঁকর গলে লোকগুলো চম্পট দিচ্ছে, ব্যাপারটা তার ঠিক ভাল লাগছে না। তাই বোধহয় আস্ত এক খন্ড কালো মেঘ পাঠিয়ে দিয়েছে। যেটা কিনা পিছু নিয়েছে বেশ কিছুক্ষন হল। কিন্তু হাইওয়েতে উঠে আমাদের আর পায় কে। প্যাডেল চেপে প্রায় ধনুক ছেড়া তীরের গতিতে ধূলো উড়িয়ে, গাড়ি হাঁকিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি।

শুক্রবারটা ছুটি নিয়ে দু’দিনের শনি-রবিকে টেনেটুনে তিন দিনের মামলা বানিয়ে ছুটে চলছি ষ্টুটগার্ট বরাবর। মিউনিখের কালো মেঘকে কচু দেখাতে তাই বাঁধছে না কোথাও। তাছাড়া উঁচু-নিচু পাহাড়ি শহর স্টুটগার্টের আবেদনটা বেশ গাঢ়। সেখানে এক বন্ধু দম্পতি খিচুড়ি আর গরুর মাংস চুলায় চাপিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে। ধোঁয়া ওঠা খাবারের ঘ্রান আমাদের ‘আয় খুকু, আয়‘ সুরে ডাকছে। সে ডাক উপেক্ষা করে সাধ্যি কার। তাই চার ঘন্টা ঠেঙ্গিয়ে মিউনিখ-টু-ষ্টুটগার্ট যাত্রাটা অত মন্দ লাগছে না। যাত্রা শেষে প্রাপ্তির পুরোটা পেটে চালান করে দেবো।

খাদ্য চিন্তায় মগ্ন হয়ে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়েছি। খিচুড়ির সাথে বোনাস হিসেবে বেগুন ভাজা থাকবে, কি থাকবে না-এই তরল চিন্তার বায়বীয় বুদ্বুদ থেকে বের হতে পারছি না। সাথে যদি টকটকে লাল টমেটোর ভেতর থেকে সবুজ কাঁচামরিচ আর হালকা গোলাপি পেঁয়াজকুঁচিরা উঁকিঝুঁকি মারে, তাহলে তো আর কথাই নেই। সরিষার তেলের ঝাঁজ নাকে এসে সপাটে আঘাত হেনে গেল যেন। হাতে স্টিয়ারিং থাকলে এতক্ষনে বে-লাইনে গাড়ি চালিয়ে দিতাম নির্ঘাৎ।

বাঙ্গালির হেঁসেল থেকে লোভাতুর মনটা বাঁকিয়ে চুরিয়ে বের করে এবার জার্মান অটোবানে এনে ছুড়ে ফেললাম। যাহাই জার্মান ‘অটোবান’, তাহাই ইংরেজি হাইওয়ে আর সেটাই বাংলায় মহাসড়ক। তবে অটোবানের একটা আলাদা রোমাঞ্চ আছে। আর সেটা হল বেপরোয়া গতি। অটোবানের অনেক পথেই গতিসীমার মাত্রা নেই। হাঁকাও গাড়ি যত খুশি হেঁইয়ো। আর ডানে-বামে ঘটছেও তাই। পাগলাটে খুনে গাড়িগুলো শাঁই শাঁই প্রায় উড়ে যাচ্ছে যেন। ঘন্টায় দু’শো কিলোমিটার বেগে আমরাও চলছি। কিন্তু তৃপ্তি মেলার আগেই পাশ ঘেষে লাল ফেরারিটা ধূমকেতুর মত মিলিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিল গতির খেলার তার কাছে আমাদের সেকেন্ডহ্যান্ড কালো ভক্সওয়াগন এক বুড়ো কচ্ছপ বিশেষ।

বুড়ো কাছিমের পিঠেই না হয় পাড়ি দিলাম পথ। পেছনের সিটে ছয় বছরের ছেলেটা ঘুমে ঢুলুঢুলু। স্বছ লালার একটা স্রোত একবার গড়িয়ে নামছে তো আবার সুড়ুৎ করে ঠোঁটের ফাঁকে উল্টোরথ ধরছে। ছেলের বাবার সেই আয়েশের জো নেই। তাকে তীক্ষ্ণ চোখে, শক্ত হাতে গাড়ির হাল ধরে বসে থাকতে হচ্ছে। একমাত্র আমারই কাজ নেই। নিজেকে বিরাট কাছিমের পেটের অলস ডিম বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য আলসেমিতে আগ্রহ ষোলআনা। সাথে করে ব্যবস্থাপাতিও কম আনি নি। সিটের নিচ থেকে কোল্ড কফির ক্যান বের করলাম ব্যাগ হাতড়ে। ঠান্ডা চুমুকে চারপাশটা দেখছি তাড়িয়ে তাড়িয়ে। শীতল আবেশের আয়েশী আবেগে চোখ বুজে আসছে প্রায়।

জানালার বাইরে ভুট্টা ক্ষেতের সারি। তার যেন বাধ্য সেনাদলের মত মাথা নুইয়ে আছে। গাড়ির কুচকাওয়াজ সরে গেলে আবার আরামে দাঁড়াবে সটান। আকাশটাও আজ দেখার মতন। এখানে ওখানে মেঘদল। কিছুটা হতবিহ্বল। বৃষ্টি হয়ে নামবে, নাকি নীরবে সরে গিয়ে এক আকাশ রোদকে জায়গা করে দিবে-এই নিয়ে যেন বিরাট দ্বিধায় আছে। সেই সুযোগে দুষ্টু সূর্যটা মিষ্টি হাসছে ফাঁক পেলেই। দূরের শুভ্র উইন্ডমিলগুলো আস্তে আস্তে ঘুরে চলছে আপন মনে। তাদেরকে স্পিনিং দরবেশ বলে ভুল হতে চায়। উইন্ডমিল নয়, যেন সাদা আলখেল্লা জড়িয়ে তুর্কি সুফীর দল চক্রাকারে ঘুরছে উদ্বাহু। আকাশের মেঘ-রোদের লুকোচুরি, অটোবানের গাড়িঘোড়ার উন্মাদনা, কোনো কিছুই স্পর্শ করছে না তাদের। দশ দিগন্তের মাঝে দাঁড়িয়ে ঘূর্ণি ধ্যানে মগ্ন নির্বিকার, নির্নিমেষ।

মোক্ষলাভের নেশাটা পেয়ে বসেছিল। যদি না অতর্কিতে গাড়ির গতি কমে এসে ঝাঁকুনি না লাগাতো। হালকা-পাতলা একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে মনে হচ্ছে। গাড়ির সারিগুলো হ্যাজার্ড বাতি জানিয়ে আগাম জানা দিচ্ছে, ‘সামনে সাবধান’। অটোবানের দুর্ঘটনা অবশ্য হালকা-পাতলা হয় না। মোটাসোটা কিসিমেরই হয়। তীব্র গতির দু’টো ধাতব যন্ত্র একে অন্যকে সামান্য ছুঁয়ে গেলেও ‘ফাস্ট এ্যান্ড ফিউরিয়াস’ কায়দায় উল্টে গিয়ে পাকের পর পাক খেয়ে কোন দূরে পড়বে গোত্তা লেগে কে জানে। তেমন হলে ভেতরে আটক যাত্রী যন্ত্রযান থেকে এক লাফে স্বর্গযানে উঠে পড়েন আর কি। অটোবানের অভিধানে মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। ‘হেল অর হাইওয়ে’।

কপাল ভাল। দোমড়ানো গাড়ি, ভাঙ্গাচোরা যাত্রী আর প্যাঁ-পোঁ অ্যাম্বুলেন্স দেখতে হল না। বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা নিরীহ চেহারার পোর্শে কনভার্টিবলকে তুলতে বিশালাকার রেস্কিউ ট্রাক এসেছে। টেনে তোলার তোড়জোড় চলছে। আর তাতেই শ’খানেক গাড়ির স্রোত থমকে গিয়েছে হঠাৎ।


লাল-নীল-সাদা রেস্কিউ ট্রাকের চেহারা যেমন বলিহারি, আকারও তেমনি দশাসই। এই বুঝি প্রকান্ড ধাতব দেহটা ধড়মড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে। ট্রান্সফর্মার সিনেমার অটোবট অপ্টিমাস প্রাইমের মত মাথা নুইয়ে বলবে, ‘এই যে ছোট্ট বন্ধু, কি করতে পারি তোমার জন্যে?’ তারপর জবাবের পরোয়া না করেই কনভার্টিবল আর তার মালিক-দু’টোকেই ঘাড়ে তুলে কাছেপিঠের কোনো গাড়ি সারাইয়ের গ্যারেজ বরাবর রওনা দেবে লম্বা লম্বা পা ফেলে। দেখার মত হতো দৃশ্যটা।

ভিড় সরে গেলে অচল গাড়ির বহর সচল হচ্ছে ধীরেসুস্থে। পাশের ক্যারাভ্যানটা ইঞ্জিন চালু করলে ঝমঝম শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। ক্যারাভ্যানের ছাদে ছোট একটা ডিঙ্গি নৌকা বাঁধা। আর ভ্যানের পেছনে আরো আটকানো গোটা দুই সাইকেল। জলে-স্থলে সবপথেই ভ্রমন চলবে অবিরাম। ইচ্ছে হল তো দুই চাকায় ভর দিয়ে খোলা প্রান্তরে চক্কর দিয়ে আসা যাবে। আবার এই মন বদলে গেল তো সাইকেল ফেলে বইঠা কাঁধে ছোট্ট ডিঙ্গি জলে ভাসিয়ে দিলেই হল। সন্ধ্যে নাগাদ ফিরে এসে কাঠকুটো জ্বেলে দু’টো ভুট্টা পুড়িয়ে খেতে খেতে খোলা আকাশে তারা গুনলেই বা ক্ষতি কি। আর রাত ঘনিয়ে ঝিমুনি ধরে এলে হামাগুড়ি দিয়ে ক্যারাভ্যানের কামরায় সেঁধিয়ে গেলেই ওম ওম উষ্ণতায় শান্তির ঘুম।

কেন যে লোকে বাড়ি-গাড়ি কেনে। এমন একটা ক্যারাভ্যানের পেছনে পয়সা না ফেলে। মনে মনে ফন্দি এঁটে নিলাম, এই বাহন আমার চাই-ই চাই। বড়লোকী বাড়ি-গাড়ির টু-ইন-ওয়ান মধ্যবিত্ত সমাধান।

রাস্তা সামান্য ফাঁকা পেয়ে ভক্ করে কুন্ডুলী পাঁকানো ধোঁয়া ছেড়ে ক্যারাভ্যানটা চম্পট দিল। উড়ু উড়ু মনটাও তার সাথে পালিয়ে যাচ্ছিল। কোনোমতে তাকে ফিরিয়ে আনলাম জায়গামত।

সমান্তরালে এবার প্রমান সাইজের মাইক্রোবাস এসে হাজির। হ্যান্ড পেইন্ট করা চিত্তির বিত্তির তার চেসিস। রং চড়ানোতে তাতে দারুন ভিন্টেজ লুক এসেছে। তবে সব ডিঙ্গিয়ে পেছনের সিটে বসা ফ্রক পরা মেয়েটাকে চোখ পড়লো।

বয়স দশ কি বারো হবে। জানালার কাঁচে মুখ লেপটে দিয়ে এদিকে তাকিয়ে দেদারসে ভেংচি কাটছে কানের পেছনে হাত দুটো মেলে। মুচকি হেসে হাত নাড়তে গিয়ে খেয়াল হল অস্বাভাবিকতাটা। গোলগাল চাঁপা মুখে ছোট্ট পুঁতির মত বসানো চোখ আর সামান্য ঠেলে বেরোনো জিভ। এই চেহারা বইয়ের পাতায় অনেক দেখেছি। পড়াশোনাটা জিন প্রকৌশল নিয়ে। তাই বলতে পারি মেয়েটার একুশ নম্বর ক্রোমোজোমের দুইটা কপির পাশে আরেকটা বাড়তি কপি আছে খুব সম্ভবত। একধরনের জেনেটিক ত্রুটি আর কি। এর নাম ডাউন সিন্ড্রোম। আর সে সংজ্ঞা মানলে তাকে শারীরিক আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর কাতারে ফেলতে হয়। কিন্তু ছোটবড় ত্রুটি এ জগতে কার নেই। বুদ্ধিশুদ্ধি কি নিজের ঘটেও খুব বেশি আছে। আর এত বুদ্ধি দিয়ে হবেও বা কি। মনের সুখই যে আসল।

ভাবনাটা প্রমান করতেই যেন মেয়েটা তার প্রতি কোষের সাতচল্লিশটা ক্রোমোজোম কাঁপিয়ে খিলখিল হেসে উঠলো। গাড়ির কাঁচটা জিভ দিয়ে একটু চেটেও দিল হালকা। সে হাসিতে আমিও আমার ছেচল্লিশটা ক্রোমোজোম ঝাঁকিয়ে যোগ দিলাম প্রানখুলে। মাত্র একটা ক্রোমোজোমের হেরফেরে আমাদের আন্ত-গাড়ি আনন্দ বিনিময় কোথায় আটকালো না। পৃথিবীর সব শিশুরা স্বর্গীয়। আজকে থেকে গোমড়ামুখো বিজ্ঞানীদের দেয়া ডাউন সিন্ড্রোমের নাম পাল্টে রাখলাম, ‘আপ সিন্ড্রোম‘।


নব ঘুরিয়ে রেডিও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। না ছাড়লেই ভাল হত রেডিও। কারণ, শুরতেই আতংকের খবর। এই হাইওয়ের উল্টো পথে উল্কার বেগে ছুটে আসছে এক ‘গাইস্টারফারার’। ভুল করে কি ইচ্ছে করেই সে ওয়ান-ওয়ে রাস্তার রং-ওয়ে দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে দিলে তাকে গাইস্টারফারার বা গোস্টরাইডার বলে। এখন মাননীয় ভুতুড়ে চালকের জন্যে বামের লেন খালি করে সব গাড়িঘোড়াকে ডান আর মাঝের লেনে সরে যেতে বলা হচ্ছে। আর সাথে সাথেই ইন্ডিকেটরের বাতি জ্বেলে গাড়িগুলোর ভেতর লেন বদলের হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। গোস্টরাইডারের গুঁতোয় বেঘোরে প্রান খুঁইয়ে নিজেরাই গোস্ট বনে যাবার কোনো মানে হয় না।

গাইস্টারফারার আর তার হঠাৎ আগমন দেখতে হল না। তার আগেই পাশের হাইওয়েতে উঠে দম ছাড়লাম। তবে রেডিও শোনার আর মানে নেই। ইচ্ছে করে ভয়ের সংবাদ কে শোনে, ধুর! তার চেয়ে গান শোনা যাক। নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত আর অনুপম রায়ের ভিড় ঠেলে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ তুলে নিলাম ড্যাশবোর্ডের দেরাজ থেকে। সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ির পুরানো প্লেয়ার বারদুয়েক আপত্তি তুলে বাধ্য ছেলের মত ঢোক গিলে নিল সিডিটা। দেরাজের আস্তাবল থেকে মুক্তি পেয়ে মহীনের ঘোড়াগুলিও সপাটে চাবুক ছুটিয়ে দিয়েছে। অদ্ভূত মাদকতা নিয়ে শুনছি,
‘ভেবে দেখেছো কি,
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে...‘।

আমরাও যে ক্রমে ক্রমে সরে কখন যে গন্তব্যে পৌঁছে গেছি, খেয়ালই হয় নি। পাহাড়ের সমান্তরালে খন্ড খন্ড মেঘ ভেসে যেতে দেখে সম্বিত হল এতক্ষনে। ষ্টুটগার্ট উঁচুনিচু ঢালু শহর। মনে হয় যেন রোলার কোস্টারে চেপেছি। তবে পাহাড়ের সবুজ স্নিগ্ধতায় পথের শ্রান্তিতে ক্লান্ত হয়ে আসা মনটা আবার শান্ত হয়ে বসে।

বড় শহরের মতন এখানে কলকারখানা আছে বটে, তবে দঙ্গল বেঁধে নেই। আর কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইমারতের জঙ্গলও চোখে পড়ে না। বাড়িঘর সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা টিকিয়ে রেখেছে। ওপর থেকে নিচে তাকালে লাল টালির বাড়িগুলোকে কোনো বিরাট শিশুর খেলনা লেগো বলে ভুল হয়।

পোস্টকার্ডের মত নিঁখুত সাজানো শহর দেখে তার অতীত বোঝার উপায় নেই। এই শহর বোমার আঘাতে গুঁড়িয়ে চুরচুর হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে জার্মানদের জুড়ি মেলা ভার। শহরে ঢোকার পথে পোর্শে, মার্সিডিজের ঝকঝকে হেডকোয়ার্টারগুলো দেখলে লক্ষীর খবর বেশ টের পাওয়া যায়। ওদিকে সরস্বতীর পাল্লাটাও বেশ ভারী। ষ্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি দেশজোড়া। বছরখানেক আগে এসেছিলাম একটা ওয়ার্কশপে। প্রমান দেখে গেছি কাছ থেকে।

ঢেউ তোলা ঢালু পথ পেরিয়ে শহরের প্রানকেন্দ্রে পৌঁছালাম বটে, তবে খিদেয় প্রানভোমরা বেরিয়ে যাবার যোগাড়। ওদিকে গাড়ির নেভিগেশন এই শেষকালে বিগড়ে গেছে। ঠিকানায় না গিয়ে ভুলভাল এদিক সেদিক নিয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো পথ হাতড়ে অবশেষে ঝকঝকে এক দালানের নিচে দাঁড়ালাম। তিনতলার খোলা বারান্দা পেরিয়ে গরম খিচুড়ি আর ঝাল করে রাঁধা মাংসের ঘ্রান জোরসে নাকে ঝাপটা মেরে গেল। পুরো জার্মান মহল্লা বাঙালি হেঁসেলের ঝাঁঝালো ঘ্রানে মাতোয়ারা। মাতাল মাতাল লাগছে আমাদেরও।

মাতাল উদ্ধারে এগিয়ে এল বন্ধু দম্পতি মৌরি আপু-হাদি ভাই আর তাদের ছোট্ট ছানা নূর। আর দেরি না করে ধুপধাপ সিড়ি ভেঙ্গে উঠতে লাগলাম রান্নার সুবাস বরাবর। তিন তলার খোলা দরজায় হুড়মুড়িয়ে হানা দিলাম পাঁচ দিনের অভুক্ত সৈনিকের মত। টেবিলের লাল টমেটো আর সবুজ কাঁচামরিচের হাতছানিতে মন আবেগে দ্রবীভূত। আর তো দেরি সয় না।

কিসের অটোকাহিনী, আর কিসের ভ্রমন। ভোজন হল বাঙ্গালির ওয়ান অ্যান্ড ওনলি বিনোদন। সালাদের বাটি বাগিয়ে, বেগুন ভাজির থালা উড়িয়ে চিকন চালের খিচুড়ি আর গরুর মাংসের যুগলবন্দীতে স্বেচ্ছায় বন্দী হতে সময় লাগলো না। চার ঘন্টা ঠেঙ্গিয়ে ‘জার্নি বাই কার’ আজকে পুরোটাই সার্থক। (সমাপ্ত)








**প্রথম ও শেষ ছবি পেক্সেল ডটকম থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×