somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিপোস্টঃ বউপ্রীতি

১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমি মাত্র মাস্টার্সের পাট চুকিয়েছি। পড়াশোনা নামের বারো-মেসে অসুখটার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তখন খাঁচাছাড়া পাখি। মুশকিল হচ্ছে, বহুদিন বন্দী থাকার পরে খাঁচা খুলে দিলেও গবেট পাখিটা ঠিকই খাঁচার চারপাশ ঘুরঘুর করতে থাকে। একই কারণে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

পড়াশোনার বাইরের এক্সট্রা কারিকুলার ব্যাপারে বরাবরই ভীষণ আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ আর টিএসসিতে বেলা-অবেলায় ঘুরে বেড়ানোর অজুহাতে আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিউক অব এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের অধীনে ক্যাম্পাসের ডে কেয়ার সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাচ্চাকাচ্চারা থাকে। নাম ছায়ানীড়। ছোটবেলায় নিজেও এই ছায়ানীড়ে ছিলাম। জীবনের আনন্দঘন সময় কেটেছে এখানে।

আজকে মজার ঘটনা ঘটেছে। নিলয়ের বয়স তিন কি সাড়ে তিন। তার বেজায় মন খারাপ। অনেক চাপাচাপি করেও কারণ উদ্‌ঘাটন করা গেল না। তখন বাঙালির ছেলের ওপর শেষ অস্ত্র হিসেবে চিরাচরিত চালাকিটা করতেই হলো।
বলা হলো ‘নিলয়, বিয়ে করবে?’
সঙ্গে সঙ্গে নিলয়ের অন্ধকার মুখ ৬০ ওয়াটের বাল্বের মতো জ্বলে উঠল। ‘হ্যাঁ।’
তখন জানতে চাওয়া হলো, ‘বিয়ে যে করবে, বউ আনবে কোত্থেকে?’

এমনিতেই তার জীবনের সবচেয়ে বড় খায়েশ আজকের এই দুর্বল মুহূর্তে ধরা পড়ে গেছে—এই লজ্জাতেই সে বাঁচে না। তার ওপর বউ জোগাড় করার গুরুদায়িত্বও ঘাড়ে এসে পড়ল। প্রায়-শোনা যায় না এমন অনুচ্চ স্বরে ভীষণ লাজুক ভঙ্গিতে সে বলল, ‘নিউমার্কেট থেকে কিনে আনব।’

যিনি প্রশ্ন করছেন, তিনি এতক্ষণে মজা পেয়ে গেছেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইলেন, ‘ওরা তো তোমাকে এমনি এমনি বউ দিয়ে দেবে না। কী করবে তাহলে?’ ‘আমি টাকা দেব তো ওদেরকে। দেড় শ টাকায় একটা বউ হবে না?’

এখানে জাহানারা আন্টি আর হেসে বাঁচেন না। আন্টি ছায়ানীড়ের একজন শিক্ষক। যা হোক, নিলয় খুব অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেড় শ টাকা দিয়ে বউ কিনতে চাওয়ার ভেতর সে কোনো অসংগতি খুঁজে পাচ্ছে না। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে দামটা সে অনেক বাড়িয়েই বলেছে। আন্টি কোনো রকমে হাসি চেপে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ‘খালি বউ কিনলেই হবে? বউয়ের জন্য গয়না কিনতে হবে না?’

উত্তরদাতা একটু ভেবে উত্তর দিল, ‘আম্মুর কাছে থেকে তাহলে তো দেড় শর চেয়ে আরেকটু বেশি নিতে হবে। আচ্ছা, আমি কালকে টাকা নিয়ে আসব। টিচার তুমি আমার সঙ্গে বউ কিনতে নিউমার্কেটে যেয়ো কিন্তু।’ এই বলে নিলয় খুব ফুরফুরে মন নিয়ে লেগো সেট দিয়ে খেলতে বসে গেল। ওদিকে আর আমরা বড়রা হেসে কুটিকুটি।

ঘটনা এখানেই শেষ না। একটু পর কয়েকজন মিলে হাঁড়িপাতিল খেলছে। নিলয়ও আছে তাদের সঙ্গে। অনেকগুলো মেয়ের ভেতর সে আর অতুল ছেলে। তাদের তাই বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হল পোলাওয়ের চাল আর মুরগি আনতে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড দেখছি। নিলয় বাজার এনেই কই যেন দৌড় দিল। আমি খপ করে হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম, কই যাও? ‘ছাড়ো, ছাড়ো, আপিসে যাই, আমাকে গয়নাগাটি কিনতে হবে তো।’ আমি হতভম্ব। এই এক ফোঁটা ছেলের অন্তরাত্মা এখন বউ নামক এক মহার্ঘ বস্তুর চিন্তায় আচ্ছন্ন। শুধু মায়ের ওপর তার বিশেষ ভরসা নাই। তার কাছে যদি টাকা না পাওয়া যায়? এই ভয় থেকে এখন সে অফিস করে কামাই রোজগার করবে বলে ঠিক করেছে। বউ কেনা কি সহজ কথা! পুরো ব্যাপারটাকে সে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে। আমি তার হাত ছেড়ে দিলাম।

এই আণুবীক্ষণিক মানবের সুগভীর বউপ্রীতিতে আমি মুগ্ধ। কিন্তু কালকে যদি সে সত্যি সত্যি বউ কিনতে নিউমার্কেটে যেতে চায়, তো মুশকিলে পড়ে যাব। তখন ভগ্নহৃদয় খুদে বরের কান্নাকাটি কি দিয়ে থামাব তাই ভাবছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:৩১
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×