somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ক্যাফে বোহেমিয়ান' । বই রিভিউ/ ডঃ মুহাম্মদ ইব্রাহীম

০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"রিম,

ছাপা বই হাতে আসার পর সুযোগ বুঝেই 'ক্যাফে বোহেমিয়ান' পড়ে ফেললাম। সত্যিকারের কিছু অবকাশ- আনন্দ পেলাম তোমার সাথে জড়িয়ে পড়া নানা দলের ভেতরে নিঃশব্দে ঢুকে গিয়ে, তাদের কাণ্ডকারখানা দেখে। দারুণ আনন্দ, ছন্দপতন, রসনা স্বাদ, লেজেগোবরে অবস্থা, কিছুই বাদ যায়নি। এভাবে লেখা দিয়ে আটকিয়ে ফেলতে পারাটাই তো বাহাদুরি।

এর মধ্যে যে কজন বিশেষ চরিত্রের মানুষ হঠৎ হঠাৎ এসে চমকে দিয়েছে বা ভাবনায় ফেলেছে তারাতো এদিকেও একই কাজ করছে। যেমন মাফিয়া প্রফেসর- ডক্টরাল ছাত্রীর আতঙ্ক , লিসবনের গাইড পেদ্রো লিসবনের স্বর্ণ যুগের থেকে আজকের সেখানকার সুশ্রী সুবেশী পকেটমারের মতিগতি পর্যন্ত যার নখদর্পনে। আর কিছুতেই মন থেকে ফেলতে পারছিনা পান্না সবুজ ইভনিং গাউন পরা শান্ত সমাহিত ফ্রাউ ব্রাউনআইসকে - গবেষণা হাসপাতালে প্রিয়জনের মুখটা শেষবার দেখানোটাই যাঁর দৈনন্দিন কাজ।

করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করলো লেখিকা সাইকেল চালককে আনাড়িপনার জন্য অনেকের গালি খেতে খেতেও যে মিউনিখের পুরো রাস্তা অতিক্রম থেকে বিরত হয়নি। আর স্ট্যান্ডিং করতালি একই জনকে নারী বিজ্ঞানী হিসেবে খাড়া পর্বতটি আরোহন আর সে অবস্থায় একই সঙ্গে দুরন্ত শিশু পুত্রের সঙ্গে চিরন্তন ম্যাজিক সম্পর্ক স্থাপনের আরেকটি পর্বতারোহন করে , কোনোটার কোনো কম্প্রোমাইজ না করে যেই শেরপা গভীর তৃপ্তি পেয়েছে।

বইটি আমাকে স্মৃতির মধ্যে মেলা দৌড়াদৌড়ি করিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে , আমার বিশ্বাস নানা ভাবে সব পাঠককেই করাবে। টেনেরিফের ডলফিন আর তিমির নিপুন কসরতের খেলা আমাকে মুহূর্তে চৌদ্দ বছর বয়সে জাপান গিয়ে দ্বিতীয় দিনেই একেবারে নতুন রকম মানুষের দঙ্গলে ও নতুন ভাষার ধারা বিবরণীর মধ্যে হুবহু ডলফিনের একই খেলায় নিয়ে গেলো।বাহাদুর ডলফিনকে বার বার মাছ খাওয়ানো সহ প্রত্যেকটি ধাপ একেবারে একই, স্মৃতিতে এখনো জ্বলজ্বল করছে।

ফ্লেমেনকো নাচের নিপুণা সুদর্শনা ও সুপুরুষদেরকে কিছুক্ষণ পরেই নকল দাঁত ,পরচুলা, কন্টাক্ট লেন্স ইত্যাদি খুলে ক্লান্ত ,ঘর্মাক্ত , মোটা চশমার আটপৌরে মানুষ বেশে দেখে যে মজা তুমি পেয়েছো সেটি মাল্টায় সমুদ্র তীরে বন্দরে জাহাজ থেকে নেমে দুর্ধর্ষ চেহারার আর বেশের গত যুগের এক দল জলদস্যুর মহড়া দেবার কথা মনে করালো , যাদের কয়েকজনকে দেখলাম নিরীহ নিপাট চশমাপরা ভদ্রলোক হয়ে হোটেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমাদের সঙ্গে গল্প করতে ।

পেদ্রোর সাবধান বাণীর কারণেই হোক তুমি লিসবনে সুবেশী পকেটমারকে ঠিক সময়ে ধরে ফেললে , অথচ সুইজারল্যান্ডের ছোট্ট শহর ইন্টারলোখেনের স্টেশনে ভদ্রবেশী পকেটমার আমাকে বোকা বানাতে পারলো এই আক্ষেপ এতো দিন পর আবার নতুন ভাবে জাগলো । তোমার পর্তুগালে সমুদ্র তীরে ধরে চলা বাসে ঝিমিয়ে ভাস্কো দা গামা লোকটিকে স্বপ্ন দেখার কথায় আমিও এক রকম ঘোরের মধ্যে পড়লাম , কারণ দুবছর আগে লোকটি আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে যখন আমার শিকড় বইটিতে পালতোলা জাহাজের ইতিহাস লেখার জন্য তাকেও রিসার্চ করছিলাম ।

তবে স্মৃতিতে একেবারে বিষণ্ণ থ' করে এসেছে আঠারো নম্বর টেগোর স্ট্রিটে তোমাদের রুমে যা ঘটেছে তা - রুমমেট অফিস সহকারী পেত্রা যখন সারা ঘর তছনছ করে খুঁজছিলো আত্মহত্যা করা মানুষটির লাশের সঙ্গে দেবার ডকুমেন্টটি যেটি কোথায় কোন কাপড়ের ভাঁজে আটকে চোখের আড়াল হয়েছে, তোমার তখন নির্বাক চিন্তা লোকটি মরতে গেলো কেন ? আর এটি আমাকে নিয়ে গেলো আমার ছাত্রজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে আবার একই প্রশ্নে , যে সুইডেনে এই কাজ করেছে, সে এটি কেন করতে গেলো , কী ভেবে? বইটি মিউনিখে সব কিছু টাটকা সামনে রাখা তোমার চিন্তা, ঢাকায় আমার চিন্তা এবং আরো কত পাঠকের একই চিন্তাকে হয়তো জীবনানন্দের সেই চিরন্তন প্রশ্নে শামিল করবে :

...শোনা গেছে লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে,
কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার স্বাদ...।


পাঠকের চিন্তা ধরে রাখার সব উপাদান তুমি ব্যবহার করতে পেরেছো, অভিনন্দন। তোমার বিজ্ঞান গবেষণা অভিজ্ঞতাকে আরো সরাসরি এ রকম উপাদান করা যায় কিনা ভেবে দেখো।

অনেক শুভেচ্ছায়,
ইব্রাহীম "
(অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইব্রাহীম,
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ২:২০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×