somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেট দ্যা শীট আউটা হেয়ার

২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গিয়েছিল। কোনোমতে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম। সকালে সব কাজ ঠিকভাবে করতে পারলেও একটি কাজ কখনই সময় মতো হয়না আর সেটা হলো রিক্সা পাওয়া। চোখের সামনে দিয়ে কতো রিক্সা চলে গেলো কেউ যাবেনা। যাকেই বলি 'মামা যাবা?' সেই বলে 'না, অন্য খেপ আছে' বা 'নাস্তা খাই নাই নাস্তা খাইতে যাবো', ইত্যাদি। রিক্সা পেতে অসুবিধা হয় দেখে এখন অনেকেই নির্দিষ্ট রিক্সাওয়ালা ঠিক করে রাখে যাতে ঠিক সময়ে সেই রিক্সা বাসার সামনে গিয়ে হাজির হয়। আমিও বেশ কয়েকবার রিক্সা ঠিক করে রেখেছিলাম কিন্তু কেনো যে কিছুদিন পর পর তারা আসা বন্ধ করতো বুঝতাম না।

রিক্সা না পেয়ে হাটাই শুরু করলাম। চিন্তা নাই, অফিসের সময় আছে। হেটে হেটেই বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসলাম। ওভারব্রীজ ক্রস করে যখন রাস্তার আরেক সাইডে আসলাম ততক্ষণে বাস চলে এসছে। যাক ভালই হলো বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। ঐ যে বলছিলাম তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে রেডি হয়ে বের হলাম তাড়াতাড়ি কাজ করতে গিয়ে টয়লেটের কাজটাই সারা হয়নি। তড়িঘড়ি করে ব্রাশ করলাম, নাস্তা খেলাম কাপড় পরলাম কিন্তু আসল কাজটি করতে ভুলে গেলাম---আসলে ভুলে যাইনি, পেট যদি একটু হলেও মোচর দিত তাহলেই কিন্তু হতো। সেরে ফেলতাম কাজটি। পেট মোচর দেবার আর সময় পেলোনা। বাসে উঠার কিছুক্ষণ পরেই পেট মোচর দেওয়া শুরু করলো। বাসে করে অফিসে যেতে লাগে ১৪--১৫ মিনিট কিন্তু ঐ যে স্বনামধন্য যানজট আমাদের জীবন ঘিরে রেখেছে তার জন্য ১৫ মিনিটের পথ যেতে লাগে ১ ঘন্টা।

পেট মোচর দেওয়ার সাথে সাথে রাস্তার দিকে তাকালাম। দেখি বিশাল বড় একটা জ্যাম। এদিকে পেট ব্যথাও বাড়তে থাকলো। করুণ দৃষ্টিতে আশপাশে শুধু তাকাচ্ছি। চোখ দিয়ে এক সময় পানি পরা শুরু করলো। মনে হচ্ছিলো ঐ সময় কেউ যদি একটা কমোড উপহার দিত তাহলে তার কাছে আমি সারাটা জীবন কৃতজ্ঞ থাকতাম।

আর সহ্য করতে না পেরে গ্যাস ছেড়ে দিলাম। কি আর আছে জীবনে! বেশ জোড়ে আওয়াজ হলো। সামনের দিকে কয়েকজন স্কুল ছাত্র ছিল তারা হেসে ফেললো। কয়েকজনকে আবার মুচকি হাসতে দেখলাম। আমি বেশ জোড়েই বললাম 'কি ভাই পাদ মনে হয় জীবনে মারিননি' কথাটা বলেই আবার পাদ মারলাম। আমি শেষ! আর পারছি না! বাস থেকে যে নেমে পরবো নেমে পরে করবোটা কি? রাস্তায় হাগবো?

এই পেট ব্যথার মধ্যে বাস কন্ডাক্টর ভাড়া চাইতে আসলো। ৮টাকার ভাড়া চেয়ে বসলো ১২টাকা। আমি বললামসব সময়েএই বাসে ভাড়া দেই ৮টাকা আজ এতো কেনো। সোজামুখের ওপর উত্তর দিলো আপনি পাদ মারসেন, পাদ মেরে বাস গন্ধ করসেন তাই আপনাকে বেশি ভাড়া দিতে হবে। আরে! কি আশ্চর্য! আমি কি ইচ্ছে করে গ্যস বের করেছি! মানুষ কি এসব কাজ ইচ্ছে করে করে! কি মুশকিল!

আমি তখন ইচ্ছে করে ১০০০ টাকার নোট বের করে দিয়ে বললাম আমার কাছে ভাংটি টাকা নাই, ১২ টাকাই রাখো তবে ১০০০ টাকা ভাঙায় দাও। ছেলেটা কিছুক্ষণ ফেলফেল করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কি বলবে আমাকে। আমি বললাম তাড়াতাড়ি করো। আমি বললাম আমার কাছে এই ১০০০ টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নাই। আসলে ডাহা মিথ্যা কথা বললাম। টাকা ঠিকই ছিল কিন্তু মেজাজ গরম হলো দেখে এমনটা করলাম। কথাটা বলেই আবার চুপ হয়ে দাড়িয়ে গেলাম। আবারো পেট মোচর দিল। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছিলাম, ওটা ঐ রকম কান্না যে কান্না অন্যরা দেখতে পায় না। ভীতর দিয়ে শুধু যন্ত্রণা পেতে থাকার মতো কান্না। মনে মনে বলতে থাকলাম আর পারছিনা, প্লিজ ব্যথাটা তুমি সেরে যাও। আমাকে রেহাই দাও। কি এমন অন্যায় করেছি তোমার সাথে যে সাত-সকালে আমার সাথে এমনটা করছো?

মনের অজান্তেই কি যেন হয়ে গেলো! ও মাই গড! প্যান্টে করে ফেললাম নাকি? হায় হায়! আস্তে করে পিছনে হাত দিলাম, বুঝা যাচ্ছে না। বাস কিছুদূর গিয়ে আবারো জ্যামে পড়লো। তখন আর না পেরে বাস থেকে নেমে পড়লাম। ভাড়া না দিয়েই দৌড় মারলাম। পাশেই রেললাইন সেখানে ঝোপটাইপের ছিল। ওখানে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার মতো আরো কাস্টমার লাইন দিয়ে বসে টয়লেট সারছে। আমি বেশ দূরে গিয়ে রেললাইনের ধারে বসলাম। আশপাশে তাকালাম। যেই বসে করতে যাবো ঐ সময়ে একটা ট্রেন আসলো। আবার উঠে দাড়ালাম।

ট্রেন চলে গেলো ঠিকই, এরপর আরো দুইটা ট্রেন আসলো কিন্তু আমারতো কিছুই হলোনা! ব্যথা আর করছে না। তাই টয়লেটও হলো না। আবার হেটেহেটে মেইন রোডে আসলাম। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ২০ মিনিট পর আরেকটা বাসে উঠে পড়লাম। এই বাসে ভীড় অনেক। ওমা! এই বাসে বেশ কয়েকজনের চেহারা একেবারে দেখি মলিন। ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে আর চোখ থেকে ছলছল করে পানি পরছে। আমার বুঝতে বাকি থাকলো না যে এগুলার আমার মতো কেস।

বাস এগুতে থাকলো। অফিসের কাছাকাছি নেমে পরলাম। লিফট দিয়ে উঠার সময়ে হালকাভাবে পেট ব্যথা হওয়া শুরু করলো। আমি যে ফ্লোরে কাজ করি সেই ফ্লোরে যেতে যেতেই ব্যথা বাড়া শুরু করলো। সেই রকম ব্যথা। তাড়াহুড়ো করে টয়লেটে গেলাম। শীট! টয়লেটের সামনে লেখা: আউট অফ সার্ভিস। আমাদের অফিসের দুইটা টয়লেট, দুইটারই একই অবস্থা! মেরামতের কাজ করা হবে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। ঠিক ঐ সময়েই একজন এসে একটা কাজের কথা বললো। সহ্য করতে না পেরে মুখের ওপর বলে ফেললাম "গেট দ্যা শীট আউটা হেয়ার।"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×