somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃহত্তর ইজরায়েল-মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ইনন এর কুখ্যাত পরিকল্পনা।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃহত্তর ইজরায়েল-মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ওদের ইনন এর কুখ্যাত পরিকল্পনা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোন অনিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছেনে যে মার্কিন সরকার দখলকৃত পশ্চিমতীরে স্থাপিত অবৈধ বসতির প্রতি পুর্ন সমর্থন দিবেন বা দিচ্ছেন যার কারনে মার্কিন সরকার জাতিপুঞ্জের সিকিউরিটি কাউন্সিলের ২৩৩৪ নাম্বার প্রস্তাবের বিরুধীতা করেছেন।উল্লেখ্য ইজরায়েলের অপকর্ম নিয়ে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দুই দলের অবস্থান একই।পার্থক্য শুধু এখানেই যে ডেমোক্র্যাটরা গোপনে এসব কর্মে সমর্থন দিলেও ট্র্যাম্প এবার প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন প্রাকৃতিক সম্পদে পুর্ন দখলকৃত গোলান মালভুমিতেও ইজরায়েলের আধিপত্য স্বীকার করে নিয়েছে।
২০২০ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির মুল স্লোগান হচ্ছে ‘’বৃহত্তর ইজরায়েল’’
যেখানে নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পশ্চিমের অধিকাংশ এলাকা দখল করে ইজরায়েলের সাথে একিভুত করার। চলতি বছর সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের আগেই নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন যে,তার পরবর্তী সরকারের মুল উদ্ধেশ্য হবে জর্দান ভ্যালি এবং মৃত সাগরকে(the northern Dead Sea) ইজরায়েলের সার্বভৌমত্বের আওতাই নিয়ে আসা।তার বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নিতীর অভিযোগের পরেও শুধুমাত্র এই কারনে লিকুদ পার্টির ভিতরে চরম মুসলিম বিরুধী মনোভাব গড়ে উঠে। যার কারনে নির্বাচনের দুই দুই বার হারের পরেও নেতানিয়াহু লিকুদ পার্টির প্রধান নির্বাচিত হয়।
ট্রাম্পের “Deal of the Century”হল "বৃহত্তর ইজরায়েল" প্রকল্পের সমর্থক, যা ফিলিস্তিনিদের "প্রত্যাবর্তনের অধিকারকে হরন করে তাদের লেবানন, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক এবং অন্য কোথাও যেখানে তারা রিফুজি হিসেবে বসবাস করে সেখানকার নাগরিক হিসাবে তাদের প্রাকৃতিকায়িত করা।মনে রাখতে হবে যে, গ্রেটার ইজরায়েল নকশাটি কঠোরভাবে মধ্য প্রাচ্যের জন্য একটি জায়নিস্ট প্রকল্প নয়, এটি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এর কৌশলগত উদ্দেশ্য হল মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি মধ্য প্রাচ্যের ভাঙ্গন ও বাল্কানাইজ করা।জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করার পাশপাশি তাদের উদ্ধেশ্য বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়া।
জায়নিজমের প্রতিষ্ঠাতা থিওডোর হার্জলের মতে গ্রেটার ইজরায়েল হল মিশরের ব্রুক থেকে ইউপ্রেতিস পর্যন্ত বিস্তৃত।রাব্বি ফিশম্যানের মতে, প্রতিশ্রুত ভূমি মিশর নদী থেকে ফোরাত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এর মধ্যে সিরিয়া এবং লেবাননের কিছু অংশ রয়েছে ”আর সিরিয়ার গৃহ যুদ্ধের মুল সুত্র কিন্তু এখানেই গ্রথিত।(ম্যাপ-১)
যখন আমরা বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই তখন দেখবো যে গাজা অবরোধ,২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধ,২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধ,২০০১ সালে লিবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ,সিরিয়া ও ইরাকের উপর চলমান যুদ্ধ এই গ্রেটার ইজরায়েলের অংশ।ইয়েমেনে সৌদি গনহত্যা এখানে নাইবা বললাম। "গ্রেটার ইস্রায়েল" প্রকল্পটি ন্যাটো এবং সৌদি আরবের সমর্থন নিয়ে মার্কিন-ইজরায়েলি সম্প্রসারণবাদী প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রতিবেশী আরব দেশগুলিকে দুর্বল করা এবং অবশেষে ভাঙ্গনের পরিকল্পনা নিয়ে গঠিত। এক্ষেত্রে সৌদি-ইস্রায়েলি পরস্পরবিরোধী নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইস্রায়েলের প্রভাবের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি ইরানের মোকাবেলা করার একটি উপায়। আজকের দিনের দরকার নেই, "গ্রেটার ইস্রায়েল" প্রকল্প আমেরিকার রাজকীয় নকশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।সৌদি-ইজরায়েল সম্পর্কের মুল ভিত্তি হল প্রতিবেশী আরব দেশগুলুকে দুর্বল করে অথবা ভেঙে টুকরো টুকরো করে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা।কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনার মুল বাধা হল হল তাই আপাতদৃষ্টিতে সৌদি-ইজরায়েল জোটের উদ্ধেশ্য হল ইরানকে মোকাবিলা করা।
"বৃহত্তর ইস্রায়েল" নীল উপত্যকা থেকে ফোরাত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত। স্টিফেন লেন্ডম্যানের মতে,
প্রায় এক শতাব্দী আগে, বিশ্ব জায়নবাদি সংগঠনের ইহুদি রাষ্ট্রের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিলঃ
ঐতিহাসিক প্যালেসটাইন;
সিডন এবং লিটানি নদী পর্যন্ত দক্ষিণ লেবানন;
সিরিয়ার গোলান হাইটস, হাউরান সমতলভুমি এবং দেরা
দেরা থেকে আম্মান পর্যন্ত হিজাজ রেলওয়ের নিয়ন্ত্রন,পাশাপাশি আকাবা উপসাগরের নিয়ন্ত্রণ।
কিছু জায়নিস্ট আরও চেয়েছিলেন - পশ্চিমের নীল নদ থেকে শুরু করে পূর্বের ইউফ্রেটিস পর্যন্ত জমি, প্যালেস্টাইন, লেবানন, পশ্চিম সিরিয়া এবং দক্ষিণ তুরস্ক।(ম্যাপ-২)
জায়নিস্ট প্রকল্পটি ইহুদি বন্দোবস্ত আন্দোলনকে সমর্থন করে। আরও বিস্তৃতভাবে এটিতে ফিলিস্তিনিদের ফিলিস্তিন থেকে বাদ দেওয়ার নীতি জড়িত যা পশ্চিম তীর এবং গাজা উভয়কে ইস্রায়েল রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করে।
গ্রেটার ইস্রায়েল অনেকগুলি প্রক্সি স্টেট তৈরি করবে। এর মধ্যে লেবানন, জর্দান, সিরিয়া, সিনাই এবং ইরাক এবং সৌদি আরবের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। (ম্যাপ দেখুন)।
ইনন পরিকল্পনা হল ইস্রায়েলি আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করার জন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনা।এই পরিকল্পনার শর্ত হল ইস্রায়েলকে অবশ্যই তার ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করতে হবে।আর এটা করতে হলে আশেপাশের আরব রাষ্ট্রগুলিকে ছোট এবং দুর্বল রাস্ট্রে পরিণত করতে হবে।
ইজরায়েলি কৌশলবিদরা আরব রাষ্ট্রগুলুর মধ্যে ইরাককে তাদের বৃহত্তম কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখেছে। এ কারণেই ইরাককে মধ্য প্রাচ্য এবং আরব বিশ্বের বল্কানাইজেশনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ইরাকে ইনন পরিকল্পনার ধারণার ভিত্তিতে ইজরায়েলি কৌশলবিদরা ইরাককে কুর্দি রাষ্ট্র এবং দুটি আরব রাজ্যে বিভক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল, একটি শিয়া মুসলমানদের এবং অন্যটি সুন্নি মুসলমানদের জন্য। এটি প্রতিষ্ঠার দিকে প্রথম পদক্ষেপ ছিল ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ, যা ইনন পরিকল্পনার অংশ কিন্তু ইরানের দৃড়তার কারনে সে যাতায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।২০০৮ সালে আটলান্টিক এবং ২০০৬ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র বাহিনী জার্নাল উভয়ই ইরাক নিয়ে তাদের বহুল প্রচারিত মানচিত্র প্রকাশ করেছিল যা ইনন পরিকল্পনার রূপরেখাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছিল। ২০২০ সালের শক্ত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এই ইনন পরিকল্পনা অনুসরন করেই মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছিল।বাইডেনেরে পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধু ইরাককে ভাঙ্গা উদ্ধেশ্য ছিল না।তার মানচিত্রের উদ্ধেশ্য ছিল লেবানন,সিরিয়া এবং মিশরকেও ভেঙে ফেলা।বাইডেনের এই উদ্ধেশ্যে আরো অন্তর্ভুক্ত ছিল তুর্কি,ইরান,সোমালিয়া এবং পাকিস্থানকে ভেঙে ফেলা।ইনন পরিকল্পনার শেসভাগে ছিল উত্তর আফ্রিকার বিলুপ্তি যেটা শুরু হবে মিশর,সুদান এবং লিবিয়া দিয়ে আর শেষ হবে এই অঞ্চলের অন্য রাষ্ট্রগুলুর ভাঙ্গনের মাধ্যমে।
গ্রেটার ইজরায়েল নির্ভর করছে কত দ্রুত প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলুকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা যায়।আর এই ভাঙ্গা হবে এথনিক পরিচয়ের ভিত্তিতে।যার ফলে এই ছোট রাষ্ট্রগুলু ইজরালের স্যাটেলাইট স্ট্যাট হয়ে উঠবে।ইজরায়েল-আমেরিকা-সৌদির এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সত্যিকার অর্থেই বড় ধাক্কা খেলে রাশিয়া-ইরান জোটের কাছে সিরিয়ার মাটিতে।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×