somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়া নিয়ে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ধান্দাবাজি

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিরিয়া নিয়ে এই লেখাটি ২০১৭ সালে এমনেস্টির রিপোর্ট প্রকাশের পরের।এখনো তাদের প্রোপাগান্ডার ধরন পরিবর্তন হয়নি।
সিরিয়া নিয়ে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ধান্দাবাজি।যার শিরোনাম হলঃ
Syria: Human Slaughterhouse: Mass Hangings and Extermination at Saydnaya Prison
রিপোর্টটি পুরু সিরিয়ার মানবধিকার পরিস্থিতি নিয়ে করা হলেও মুলত আলোচনা করা হয়েছে সাদনায়া কারগারে তথাকথিত ১৩,০০০ মানুষকে বিনবিচারে ফাঁসিতে ঝুলানো নিয়ে।
সিরিয়া নিয়ে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টটা লিখেছেন Nicolette Waldman।রিপোর্ট নিয়ে বলার আগে তার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নেওয়া জরুরী।এই মহিলা এমনেস্টিতে আসার আগে কাজ করতেন Center for Civilians in Conflict,যেটা পরিচালিত হয় জর্জ সরোসের Open Society দ্বারা।সরোসের Open Society এর অধিনে প্রতিষ্ঠান সরাসরি তিনটা।১)Human Rights Watch, ২)Blackrock Solutions ৩) the Center for a New American Security (CNAS).আর CNAS সহ এই সব প্রতিষ্ঠানের পুরু দায়ীত্ব ন্যাস্ত হচ্ছে Michele Flournoy এর উপর।হিলারি প্রেসিডেন্সী জিতলে এই Michele Flournoy হতেন ডিফেন্স সেক্রেটারি।বাইডেন ক্যাবিনেট গঠনের সময় পুরু যুদ্ধবাজ মিডিয়া তাকে ডিফেন্স সেক্রেটারি বানানোর জন্য ম্যাসিভ ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল।
এই CNAS হল সিরিয়া যুদ্ধের পিছনের মুল কারিগর।
সিরিয়া এবং লিবিয়া নিয়ে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যে ভুমিকা পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষের অধিকার নিয়ে তাদের এত মাথাব্যাথা নেই।লিবিয়া নিয়ে তাদের ফেক নিউজের জন্য অনেকবার ধরা পরার পরেও তারা সেটার জন্য কোনদিন দুঃখ প্রকাশ করেনি।লিবিয়া আপ্রাইজিং শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে তারা রিপোর্ট প্রকাশ করল যে,গাদ্দাফি আফ্রিকার সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে সাধারন মানুষ এবং তার বিরুধিদের হত্যা করছেন।অথচ বাস্তবে দেখা গেল সেই আফ্রিকান সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল ফ্রান্স এবং সিআইএ।যেটা পরে এমনেস্টি স্বীকার করে নেয়।
https://www.youtube.com/watch?v=6RnxJ6TvFZ0
সিরিয়া নিয়ে এমনেস্টির এর আগের অনেক ফেক রিপোর্ট প্রমানের পরেও তারা সেই রিপোর্ট তাদের পেজ থেকে সরিয়ে নেয়নি বা সেটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি।এরকম একটা রিপোর্ট ছিল আসাদ বাহিনী এক মহিলাকে ধর্ষণের পর হাত,পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করেছে কিন্তু তার পরের দিনই ঐ মহিলা টিভি ইন্টারভিউয়ে দাবী করেন এমনেস্টির রিপোর্ট মিথ্যা।
https://www.youtube.com/watch?v=bN0uNAstEuA
সাদনায়া কারাগারে হত্যা নিয়ে এমনেস্টি তাদের রিপোর্টে কোন ধরনের প্রমান দিতে পারেনি এবং তাদের হাতে কোন প্রমানও ছিল না।তাদের এই রিপোর্টটা হল ফেব্রিকেটেড।তাদের মতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে থ্রিডি এনিমেশান ল্যাবে।যেটাকে তারা বলে ফরেনসিক আর্কিটেকচার।যেখানে ছিল না কোন ছবি,ভিডিও বা অন্য প্রমান।তাই এর সব কিছুই করা হয়েছে একটা ল্যাবে বসে। এই ফরেনসিক আর্কিটেকচার এর মালিক হল Eyal Weizman যে এমনেস্টির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে।কে এই Eyal Weizman?
Eyal Weizman হল জন্ম ইজরায়েলের হাইফা শহরে।জায়নিজমে বিশ্বাসী এই আর্কিটেকচার লন্ডনের Goldsmiths, University’র শিক্ষক।তার প্রতিষ্ঠান ফরেনসিক আর্কিটেকচার এর অর্থের যোগান দাতা সরোস ফাউন্ডেশন এবং European Research Council, যাদের মুল এজেন্ডা হচ্ছে সিরিয়াকে ধংস্তুপে পরিনত করা।
এবার মুল রিপোর্টে আসি যেখানে এমনেস্টি দাবী করেছে যে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী পরিচালিত সাদনায়া জেল খানায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি অবধি ১৩,০০০ মানুষকে বিচার ছাড়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে।
রিপোর্টের এক্সিকিউটিভ সামারিতে তার লিখেছেঃ
‘’ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত এমনেস্টি সাদনায়া কারাগারে অত্যাচারের ধরন,স্কেল এবং প্যাটার্ন নিয়ে গবেষণা করেছে।গবেষণাকালে আমরা মোট ৩১ জন সাবেক বন্দি,কারাগারের সাবেক ৩ জন দারোয়ান,সাবেক ৩ বিচারপতি,এবং সাবেক তিন ডাক্তারের সাক্ষাৎকার গ্রহন করা করেছি।এই সব সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে আমরা এই উপসংহারে উপনীত হয়েছি যে,সাদনায়া কারাগারে সেপ্টেম্বর,২০১১ থেকে ডিসেম্বর,২০১৫ পর্যন্ত মোট ১৩,০০০ বন্দিকে হত্যা করা হয়েছে।‘’
প্রথমত এইসব সোর্স কখন এই কারাগারে চাকরি করতেন তা সতর্কতার সাথে রিপোর্টে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।এবং যাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে তারা কেউ সিরিয়াতে বসবাস করে না।তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে তুর্কি,লেবানন,জর্ডান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।রেফারেন্স- রিপোর্টের পৃষ্ঠা নং-৯।এবং এদের সবাই সিরিয়ার বিদ্রুহি গ্রুপের সমর্থক।
এই ১৩,০০০ বন্দিকে হত্যার বিষয়ে এমনেস্টি নির্ভর করেছে দুইজন বন্ধির সাক্ষাৎকারের উপর।তাদের একজনের ভাষ্য হল প্রতি ১০- ১৫ দিনে ৭-২০ জন লোককে হত্যা করা হত এবং দ্বিতীয় জনের ভাষ্য হল প্রতি সপ্তাহে একবার ২০-৫০ জন লোককে হত্যা করা হত।
এখানে কোনটা বিশ্বাস যোগ্য?এমনেস্টি শেষের বড় ফিগারটা ধরে ঐকিক নিয়মের অংক করে বলে দিল ১৩,০০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে।তাদের হিসাবটা সোজা-সপ্তাহে-৫০জন,এক বছরে ৫২ সপ্তাহ আর হত্যাকাণ্ড চলেছে ৫ বছর।ঐকিক নিয়মে ফেলে হিসেব করুন- (৫০X৫২= 2600X৫=১৩,০০০)।এটা হল এমনেস্টির বিশ্বাস যোগ্যতা।
একজন বন্দি যার নাম হামিদ তিনি এমনেস্টিকে সাক্ষাতকারে বলেনঃ
কারাগারে মাঝে মাঝে কিছু শব্দ শুনতাম যাতে মনে হত উপর থেকে কিছু ছিঁড়ে নিচে পরে যাচ্ছে।এবং সো অন........................ পাতা- ২৫
"There was a sound of something being pulled out – like a piece of wood, I’m not sure – and then you would hear the sound of them being strangled… If you put your ears on the floor, you could hear the sound of a kind of gurgling. This would last around 10 minutes… We were sleeping on top of the sound of people choking to death. This was normal for me then.
এই বন্দির এই কথার উপর ভিত্তি করে কি এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে,ঐ কারাগারে বিনা বিচারে মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে?
তাদের রিপোর্টের অন্য জায়গায়(পাতা-৩০) বলা হয়েছে যে,
Former detainees from the red building at Saydnaya provided Amnesty International with the names of 59 individuals who they witnessed being taken from their cells in the afternoon, being told that they were being transferred to civilian prisons in Syria. The evidence contained in this report strongly suggests that in fact, these individuals were extrajudicially executed.
and
Former prison guards and a former prison official from Saydnaya also provided Amnesty International with the names of 36 detainees who had been extrajudicially executed in Saydnaya since 2011.
এই একটা জায়গায় তারা কিছু বন্দির নাম বলতে পেরেছে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা মনে করছেন যদিও তাদের কোন পরিবার পরিজন থেকে তথ্যটা যাচায় করা হয়নি।এটা যদি সত্য ধরে নিই তাহলে সেটা ১৩,০০০ এর কত পার্সেন্ট?১-২%?
তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা বলল ১৩,০০০ বন্দিকে হত্যা করা হয়েছে?
ঠিক রিপোর্টের পরের পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,এটা নিশ্চিত করা অসম্ভব যে কত লোককে সাদনায়া কারাগারে হত্যা করা হয়েছে।কিন্তু সিরিয়ান হিউম্যান রাইটস গ্রুপ নিশ্চিত করেছে এই সংখ্যাটা ৩৭৫ জন।
অর্থাৎ এমনেস্টির সোর্স হল ঐ সকল সিরিয়ান ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠান যারা শুরু থেকে সিরিয়াতে সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত।সিরিয়ান হিউম্যান রাইটস প্রতিষ্ঠান ব্রিটেন ভিত্তিক একটা প্রতিষ্ঠান।যার প্রতিষ্ঠাতা রামি আব্দুল কারিম।যার অর্থের যোগানদাতা ব্রিটিশ সরকার।
https://www.youtube.com/watch?v=YxIZNscLHnc
রিপোর্ট প্রকাশের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডঃ
সিরিয়ান কনফ্লিক্ট শুরু হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত যতবার শান্তি আলোচনা শুরু করার চেস্টা করা হয়েছে ঠিক ততবার এমনেস্টি এইরকম অপকর্ম করেছে।আলোচনা শুরু ঠিক পূর্বে তারা এই ধরনের বায়াস রিপোর্ট প্রকাশ করে।কারন এটা পরিষ্কার এমনেস্টিকে যারা অর্থের যোগান দেয় তারা হল এই যুদ্ধের মুল হোতা।আমেরিকার যুদ্ধবাজ লবি,জর্জ সরোস ফাউন্ডেশনের ইশারায় তারা সিরিয়া এবং লিবিয়া নিয়ে এই ধরনের বায়াস রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×