somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে

২০ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে বিস্তারিত ) Click This Link
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা আবার শুরু হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করছেন, সুপ্রিমকোর্টের নিরপেক্ষ ও সাহসী সিদ্ধান্তগুলো দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ রচনায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে সহায়তা দেবে। তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করতে মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা জরুরি হলেও এ দেশের সরকারগুলো বিভিন্ন সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের এ ঐতিহাসিক রায় এটাই তুলে ধরেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের দায় সুপ্রিমকোর্ট নিতে রাজি নন এবং সরকারের ইচ্ছাই শেষ কথা নয়। তবে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরও সরকার আমার দেশ-এর প্রেস তালাবদ্ধ রেখেছে। এটা বন্ধ রাখার আইনি ও নৈতিক অধিকার সরকারের নেই। তারা অবিলম্বে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়া বলেন, আমি মনে করি আপিল বিভাগের অভিনন্দনযোগ্য ও সাহসী এ রায়ের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সংগ্রাম জয়ী হয়েছে এবং এ রায়ের মাধ্যমে পত্রিকা শঙ্কামুক্ত হয়েছে। কারণ দেশবাসীর কাছে এ রায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিরোধী দলের অবস্থান সরকার সহজভাবে মেনে নেয়ার মতো উদারতা ও সহিষ্ণুতা দেখাতে পারে না বলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আঘাত আসে।
শিক্ষাবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আপিল বিভাগের রায় মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষত এ ধরনের একটি সাহসী রায় ভবিষ্যতে সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণ করার ব্যাপারে সরকারের স্বৈরাচারী চিন্তাকে রুখে দিতে পারে। তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে দেশের বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজ উপকৃত হলো বলে আমি মনে করি। তারা বেশখানিকটা নির্ভয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনুপ্রেরণা পাবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ হচ্ছে গণতন্ত্রেরই কণ্ঠরোধ। এ দেশে একাধিকবার সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এসেছে এবং সাংবাদিকদের ভয়ভীতি ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু যুগে যুগে শেষ পর্যন্ত সংবাদপত্রের স্বাধীনতাই বিজয়ী হয়েছে। তাই এ রায় অভিনন্দনযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, দেশে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তা রক্ষার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর বর্তায়। বিচার বিভাগ সরকারের অন্যায্য পদক্ষেপ সংযতকরণে ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমি মনে করি, এ রায়ের মাধ্যমে আমার দেশ একেবারে শঙ্কামুক্ত হয়ে গেছে, তা বলার সময় এখনও আসেনি। আমি সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করছি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে পা রেখেই আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের খবর পেয়ে বেশ আনন্দিত হয়েছি। আমি মনে করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবাদপত্র, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। এ যুগান্তকারী রায় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এ রায়ের কারণে বিচার বিভাগের প্রতি এ দেশের গণমানুষের আস্থা বেড়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো দেশেই গণতন্ত্র নিশ্চিত হতে পারে না। আমরা দেখতে পেলাম, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার রক্ষায় অনুকরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দাবি আরও দৃঢ় হয়েছে। তিনি সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে বলেন, আইনের কাছে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও ন্যায়বিচার পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, এ রায়ে আমি খুশি। কারণ এ রায় গণতন্ত্রের পক্ষে হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ আপিল বিভাগের রায়কে মাইলস্টোন আখ্যা দিয়ে বলেন, এ রায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকারের পক্ষে গেছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের কথা বা ইচ্ছাই যে শেষ কথা নয়, তাও প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যদি এ রায়কে সহজভাবে নেয়, তাহলে তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে আরও সমুন্নত করবে। কিন্তু সংকীর্ণতাবশত এবং অযৌক্তিকভাবে যদি এ রায়কে নিজেদের পরাজয় ভেবে বসে, তাহলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সংগ্রাম আরও লম্বা হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী মনে করেন, আপিল বিভাগের এ রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি শুভ লক্ষণ এবং এ রায় নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, আইনের শাসন ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আদালত যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে, তা আগামীতেও অব্যাহত থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা তাই বিশ্বাস করি, আপিল বিভাগের এ রায়ের মাধ্যমে অন্যরাও এখন থেকে সুবিচার পাবেন। তিনি আমার দেশ সম্পাদক মাহুমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে বলেন, মাহমুদুর রহমান মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার দেশ পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, সরকারই আপিল করেছে। অথচ আপিল বিভাগের রায়ের পরও আমার দেশ-এর প্রেস সরকার খুলে দিচ্ছে না। এটা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নয়।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলকভাবে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করেছিল, তা প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী আচরণের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি আশা করি, উচ্চ আদালতের এ রায় থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেবে এবং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে গণমাধ্যমের ওপর সরকার আর হস্তক্ষেপ করবে না। তারা অবিলম্বে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেবে। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×