দখল হয়ে যাচ্ছে খাল, বিল, ঝিল, হাওর, জলাশয়। আর এতে বেচে থাকা অনেক প্রাণী, মাছ, উদ্ভিদ আজ বিলুপ্ত । ভরাট হয়ে যাছে নদী মাতৃক দেশের সব নদী। আগ আমাদের বাড়ির সামনের বিলেই পাওয়া যেতো লালা শাপলা ফুল। গত ৫বছর ধরে এইখানে আর তা দেখিনা। সাদা শাপলা কম হলেও চার প্রকারের ছিলো। যদিও নাম জানিনা। এখানে অনেক জেলে নিজের মতো মাছ মারতো। ছোট ছোট মাছ আর এখন আর খাল বিলে পাওয়া যায় না। সব চাষ করা হাইব্রিড। , আসুন দেখি আমরা কি কি হাড়িয়ে ফেলেছি।
১) শাপলা শালুক, ভেট, ==আগের নিচু জমিতে, খালে, বিলে শাপলা পাওয়া যেতো। আর এই শাপলা ফুলের যেই ফলের আকারে জন্মায় তাকে স্থানীয় ভাষায় ভেট বলে। ভেটের বিজ দিয়ে খৈ হয়। আর এটি অত্যন্ত সুস্বাদু খাদ্য। এখন সব খাল বিল ভরাট করে ইটের ভাটা, বিভিন্ন মিল কারখানা হয়ে যাওয়ায় পানি হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত। আর এই পানিতে জলজ উদ্ভিদ নষ্ট হয়ে মরে যাচ্ছে।
২)বিলীন হয়ে যাওয়া দেশী মাছ, = বাজারে এখন অনেক প্রজাতির মাছ খোঁজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা আর দেশি নাই। চাষ করা। আর নদীর অনেক মাছ ই এখন বিলুপ্ত প্রায়।
এক সময়ের অতি পরিচিত দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজি আইড়, , কৈ, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশীয় মাছগুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না। ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, পুতুল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, চেলা, মলা, কালোবাউশ, শোল, মহাশোল, গোঙসা, রায়াক, রয়না, বাতাসি, বাজারি, বেলে প্রভৃতির প্রায় ৬৫ প্রজাতির মাছ নদ-নদীতে পাওয়া যেত। এর মধ্যে কিছু মাছ পাওয়াই যায় না।
বিলুপ্ত হওয়া প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে নান্দিনা মাছ, মহাশোল, পাঙ্গাশ, রাণী, পান, রিটা, খলিসা, বৈচা, ফলি, পাবদা, চেং মাছ, বাঘাইর, সিলন, লাচু, এলগনা, গলদা চিংড়ি, টাকামাছ, কুচিয়া, নাপিত, তেলো টাকি,, তারাবাইম, দারকিনা , ভেটকি মাছ, রাঘা বা ঘাওরা মাছ, , কাকিলা বা কাইক্কা মাছ ইত্যাদি।
কাইক্কা বা কাকিলা মাছ
৩)নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে বিলুপ্ত হচ্ছে পানিতে থাকা অনেক প্রাণি। গুই শাপ, সহ ব্যাঙ, আর নানান প্রজাতির সাপ, ।
৪স্বাধীন জেলে পেশা আগের দিনে যারা একেবারে গরীব ছিল। তারা নদীতে, খালে বিলে।মাছ ধরে জীবন নির্বাহ করতো। কারন সেখানে মাছ ধরলে কারো অনুমতি লাগে না। টাকা দেয়া লাগে না। জলাশয় থাকে মুক্ত। আর মাছ থাকে সব দেশী। তাই তারা মাছ মারতো আর বাজারে বিক্রি করতো। খাল বিল দখল হয়ে যাওয়ার পর এসব আর নাই। মাছে ভাতে বাঙ্গালি হলেও, হলেই দেশী মাছ কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে আমাদের খাল বিলের সাথে বেচে থাকা অনেক পেশা।
৫( অনেক পাখি ওআজ বিলুপ্ত , বক, পানকৌড়ি, বালি হাস, আরো অনেক পাখি যারা খাল বিলে বাস করতো আজ আমরা আর তা দেখতে পাইনা। আমাদের কি করা দরকার ছিলো?
৬শহর গুলোতে বন্যা হয় দেখুন আপনার শহরে যে লেক গুলো ছিলো। খাল গুলো ছিলো। অনেক গুলো দখল হয়ে গেছে। আপনি কি মনে করেন না। যে পানি এই খাল, লেক ধরে রাখতো। সেই জল।কোথায় যাবে যখন সেই খাল বিল দখল হয়ে যাচ্ছে।
আপনি গ্লাসে তাকান এক গ্লাসে দুই মগ পানি ঢালুন। কি হবে? পানি উপচে যাবে। তো আপনার টেবিলে গ্লাস থাকলে পানি ঝড়বে টেবিলে পরে ঘরে। তেমনি আপনার শহরে লেক, খাল গুলো দখল হয়ে গেলে সেই পানি তো আপনার বাসার সামনেই আসবে। বন্যা হবে রাস্তায়।
কিছু ছবি দেখুন গুগল হতে
কৃষি জমিতে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে,
অন্যদিকে গ্রাম বাংলার খাল হারিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সেচ ব্যবস্থায় দেখা দিচ্ছে সংকট। সেচের অভাবে সঠিক সময়ে সঠিক ফসল ফলাতে পারছে না তারা। তাই খাল ধ্বংস হয়ে গেলে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি-অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। যদিও এখন বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে। পানি তোলার পাম্প আছে। তবে পাম্প দিয়ে কি সব সময় পানির চাহিদা পূরন হয়। অনেক এলাকা আছে পাম্প ৩,৪মাস পানি তুলতেই পারেনা। অনেক নিচে থাকার পরেও। আত সবাই কি পাম্প ক্রয়ের সামর্থ রাখে?
৭)ময়মনসিংহ তে নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে
মনপুরা নয়, মরাপুরা। বিলাইজুড়ি অথবা লাউতি। দারুণ সুন্দর সুন্দর নাম। মরাপুর খালের পানি মৃত। শুধু কী তাই? এ পানির রং রক্ত লাল, সবুজ।
ময়মনসিংহ: মনপুরা নয়, মরাপুরা। বিলাইজুড়ি অথবা লাউতি। দারুণ সুন্দর সুন্দর নাম। মরাপুর খালের পানি মৃত। শুধু কী তাই? এ পানির রং রক্ত লাল, সবুজ। লাউতির রং বেগুনি। এসবই ভালুকার খাল পানির বৈশিষ্ট্য।
ভালুকার নদীর নাম ক্ষীরু। এক সময় যার পানি ছিল মিষ্টি। সুপেয়। এখন বিস্তীর্ণ এ শিল্প বেল্টের পানির অপর নাম বিষের নহর। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের আগ্রাসনে ভালুকা এখন রীতিমতো বিপর্যস্ত।
ময়মনসিংহের ভালুকায় শিল্পায়নের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় চলছে পরিবেশ দূষণ। শিল্পবর্জ্য ফেলে এখানে পরিবেশ দূষণ অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত শিল্পবর্জ্য স্থানীয় প্রকৃতি ও জীবন যাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
ভালুকার ক্ষীরু নদীর পানির রং বদলে গেছে। বলতে গেলে ক্ষীরু এখন আলকাতরার নদী। ঘন জেলির মতো পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
সূত্র মতে, গ্যাস ফ্যাক্টরি নিট ফেব্রিজ ফ্যাশন, টেক্সটাইল কটন, স্পিনিং ইত্যাদি নামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের ৩৫টি কারখানাই অপরিশোধিত বর্জ্যরে উৎস। পাইপ লাইন, খাল, কৃষিজমি থেকে জলাশয়গুলোতে প্রবাহিত হচ্ছে দূষিত পানি। হবিরবাড়ির লাউতি খাল এখন বর্জ্য অপসারণের পাইপ লাইন।(বাংলা নিউজ ডট কম)
প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে পাওয়া যে নদীর এত দান, সেই নদীর প্রাণ কেড়ে নিতে চলছে যেন প্রতিযোগিতা। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে নদ নদীর সংখ্যা ছিল সাত শরও বেশি, এখন তা ৪০৫টিতে নেমেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যে নদীর সংখ্যা আরো কমে ২৩০ টিতে নেমেছে। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসক প্রত্রিকা’র নদীসংখ্যায় বাংলাদেশ নদীর সংখ্যা ২৬০ থেকে ২৭০ টি বলে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে চার দশকে প্রায় পাঁচ শ’ নদী মরে গেছে, নদীপথের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ উভয়ই কমেছে। নদীর সঙ্গে কমছে নৌপথও
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৩