বাংলাদেশের কিছু স্বঘোষিত জ্ঞানী লোক আছে, যেখানে সেখানে মাদ্রাসা নিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করেন। তারা অপব্যাখ্যা করেন বেশি । তারা মনে করেন মাদ্রাসা মানে শুধুই ইসলামি শিক্ষা দেওয়া হয় আর হাদিস কুরআনের শিক্ষা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান। মানে এখানে কোন কালে অন্য কিছু শিক্ষা দেয়া হয়নি। জ্ঞান বিজ্ঞান, অর্থনীতি, চিকিৎসা বিজ্ঞান মাদ্রাসাতে শিক্ষা দেয়া হয়নি কোনকালেই। এটা ওই সকল জ্ঞানীদের ভাবনা ।
মাদ্রাসা (আরবি: مدرسة, madrasa বহুবচনে مدارس, madāris) আরবি শব্দ দারসুন থেকে উদ্ভূত যার অর্থ ‘পাঠ’। পাঠদান করা, শিক্ষা দেয়া, এই বিষয়টি যখন সামনে আসে, তখন বলাই যায় যে মাদ্রাসা যখন শুরু হয়েছিল, তখন এই মাদ্রাসাতেই ধর্ম ছাড়াও আরো অনেক বিষয় পাঠ দেওয়া হতো ।
আমরা মাদ্রাসার যে ধরন সম্পর্কে জানি সেটা শুধুই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত মাদ্রাসার প্রকরণগুলোর একটি প্রকরণ মাত্র। ১)ইবতেদায়ী মাদ্রাসা,(২) দাখিল মাদ্রাসা, (৩)আলিম মাদ্রাসা,(৪)ফাজিল মাদ্রাসা, (৫)কামিল মাদ্রাসা, (৬)হাফিজিয়া মাদ্রাসা, (৭) কওমি মাদ্রাসা ।
মাদ্রাসার ইতিহাস কিন্তু এই কথা বলেনা , মাদ্রাসার ইতিহাস বলে মাদ্রাসায় চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে কুস্তী, শরীর চর্চা, এমন কি রাষ্ট্রবিজ্ঞান পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া হতো । সেকালের মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল, কোরআন, হাদিস, ফারায়েজ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বংশ শাস্ত্র, তাজবিদ ইত্যাদি। এছাড়া অশ্ব চালনা, যুদ্ধবিদ্যা, হস্তলিপি বিদ্যা, শরীর চর্চা ইত্যাদিও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
একাদশ শতাব্দিতে, পারস্যের বিখ্যাত ইসলামী দার্শনিক ও পণ্ডিত ইবনে সিনা (যিনি পাশ্চাত্যে Avicenna নামে পরিচিত ), তিনি লিখেছেন ছোট কালে বাচ্চা শিশুদের মক্তবে শিখানো হবে, ভাষা, সাহিত্য, আচরণ, ইসলামি শিক্ষা৷ ও সামাজিক ভদ্রতা, ইসলামিক আচার ব্যবহার, ইসলামিক দর্শন
ইবনে সিনা মকতবভিত্তিক শিক্ষার দ্বিতীয় স্তরকে এমন ভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যাতে তারা, এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা আগ্রহ দেখায়, আর পড়তে আনন্দ বোধ করে, সেগুলো হল, ব্যবহারিক দক্ষতা, সাহিত্য,
দ্বীনের দাওয়াত, জ্যামিতি, ব্যবসা-বানিজ্য, কারূকর্ম অথবা অন্য যেকোন এমন বিষয় বা বৃত্তি যা অনুযায়ী সে ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে তুলতে চায়। পাশাপাশি তাদের মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা, তাদের নির্বাচিত বিষয় সমূহকে গুরুত্ব দেওয়া। মানে এইটা যে মাদ্রাসায় একজন ছাত্র কি পড়বে সে নির্বাচন করতে পারতো। ঠিক যেমন আমরা ক্লাস নাইনে, নির্বাচন করি, । এইস এস সি তে বিষয় নির্বাচন করতে পারি তেমন ।
সুলতানী আমলে মাদ্রাসার পাঠক্রমে ছিল আরবি, নাহু (বাগবিধি), সরফ (রূপতত্ব), বালাগাত (অলঙ্কারশাস্ত্র), মানতিক (যুক্তিবিদ্যা), কালাম (জ্ঞানতত্ব), তাসাউফ (অতীন্দ্রিয়বাদ), সাহিত্য, ফিকহ (আইনশাস্ত্র), এবং দর্শন।
ইতিহাসের যেই মাদ্রাসার কথা না বললেই নয়, সেটা হল নিজামুল মূলকের প্রতিষ্ঠান, নিজামিয়া (তুর্কী: Nizamiye Medresesi, ফার্সি: نظامیه, আরবি: النظامیة)
সবচেয়ে বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা যা ১০৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজামুল মুলক দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক ইমাম আল-গাজ্জালিকে এর অধ্যাপক নিযুক্ত করেন। পারস্যের কবি শেখ সাদি বাগদাদ নিজামিয়ার ছাত্র ছিলেন। অন্যান্য নিজামিয়া বিদ্যালয়গুলো নিশাপুর, আমুল, বাল্খ, হেরাত ও ইসফাহানে অবস্থিত ছিল।( উইকিপিডিয়া)
তখন মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগ। আব্বাসীয় খেলাফতে বাগদাদ ছিল মুসলিম বিশ্বের রাজধানী। দজলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বাগদাদ ছিল শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার কেন্দ্রস্থল। গোটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, কবি ও গবেষকরা ছুটে আসতেন এখানে। বাগদাদেই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ জ্ঞানগর্ভ বইয়ের লাইব্রেরি আল হিকমাহ (হাউস অব উইজডম)।
( ছবি গুলো হাউজ অফ উইজডম এর ইন্টারনেট থেকে))
শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল বাগদাদ মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। মুসলিম স্থাপত্যের অবিশ্বাস্য নিদর্শন এই শহরটি ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের প্রতীক ছিল।
ওমর খৈয়াম
ইরানের কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ।
। নিযামুল মুলক
আবু আলী আল-হাসান আল তুসি নিযাম উল-মুলক (১০১৮-১০৯২), খাজা নিযামুল মুলক নামে অধিক পরিচিত (ফার্সি - خواجه نظامالملک طوسی - খাজা নিযামুল মুলক আল-তুসী) ছিলেন পারস্যের পন্ডিত এবং সেলজুক সাম্রাজ্যের উজির। অল্পকালের জন্য তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবেও অধিষ্ঠিত ছিলেন।
মাদ্রাসা শিক্ষার কথা বলতে গেলে যে জ্ঞানী গুণীদের কথা না বললেই নয় তারা উপরের দুইজন ।
আগামী পর্বে না হয় লেখা যাবে। সংগ্রহ করলাম আরকি। ( তথ্য গুগল, উইকিপিডিয়া, পেপার, সয়তানের বেহেশত নামক ইতিহাস নির্ভর বই )
।
অনেকে ভাবতেছেন যে আমি শুধু ব্লগে লেখা দিচ্ছি, কারো ব্লগে মন্তব্য করিনা। আমি মনে হয় লেখা দিয়েই ব্লগ থেকে চলে যাই। না প্রিয় ব্লগার সাথিরা। আপনি উপরের ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন ৩, মাস ধরে আমাকে এই ম্যাসেজ দেখিয়ে আসছে সামু। মানে কারো লেখায় মন্তব্য করতে গেলেই নোটিফিকেশন আসে । কি সমস্যা আমার জানা নাই। আমি কি কাউকে গালি দিয়েছিলাম? কোন ব্লগারের ব্লগে অশ্লীল মন্তব্য করেছিলাম? উত্তর না
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৯