মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী (১১ নভেম্বর ১৯৩৬ -- ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭) জানতেন এই আপ্তবাক্য। বিশ্বাস করেছিলেন হৃদয়ের বিশুদ্ধতম ভালোবাসার আবরণে। বাংলাদেশের বহু কিংবদন্তী সাংবাদিকদের চাইতেও বড় কিংবদন্তী হয়ে থাকবেন একাধিক কারণে। মুক্তিযুদ্ধে সমুখ সমরে ছিলেন অকুতোভয়। সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুরসহ ভাটি অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন।
১৯৩৬ সালের ১১ নভেম্বর সুনামগঞ্জের গচিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সম্পাদিত ‘আওয়াজ’ পত্রিকায়। পরে দৈনিক পাকিস্তানের (স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলা) সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন। পত্রিকাটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক। দৈনিক পাকিস্তানে কর্মরত অবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী, তাঁকে আমরা হারিয়েছি অন্যান্য আরও অনেক স্বজনের মতো গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। ভাটি অঞ্চলে পাকি হার্মাদ বাহিনীর ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি,যুদ্ধকালীন সময়ে চষে বেড়িয়েছেন পুরো এলাকা।
একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারে ১৯৯২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে গণআদালত বসেছিল, তার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায়ও তিনি সাক্ষ্য দেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালেদ নির্মিত ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’র নামকরণ করেছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি মহাকালের স্রোতে পরমের সাথে মিশেছেন ৮১ বছর বয়সে। জানি, এমনি করেই সবাই যাবে, যেতে হবে। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধকে যারা হৃদয়ে ধারণ করেন, কর্মে বিমূর্ত করেন তাঁরা কি আসলেই তাঁকে বিদায় জানিয়েছি?
তাঁর বীরত্ব ও কর্ম অনাগত ভবিষ্যৎকে আলোড়িত করবে, করবে আলোকিত।গেরিলা ১৯৭১ পরিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী'র প্রতি হৃদয় গহীনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।
ছবিঃ একাত্তরে যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৫