somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকানো- ০৩ ( কবে হলো বাংলাদেশ )

০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১০ মার্চ, ১৯৬৯, বঙ্গবন্ধু আয়ুব খানের রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে যোগদেন, সেখানে ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবী উত্থাপন করে বলেন,
'গণ অসন্তোষ নিরসনে, ৬ ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান ছাড়া কোন বিকল্প নেই।'
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী, এই দাবী অগ্রাহ্য করলে, ১৩ মার্চ তিনি বৈঠক ত্যাগ করে ১৪ তারিখ ঢাকায় ফিরে আসেন।
জেনারেল ইয়াহিয়া খান, ২৫ মার্চ আয়ুব খানকে হটিয়ে সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতাসীন হন। আবার সামরিকতন্ত্র। দেশে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করে দেন।

বঙ্গবন্ধু ২৫ অক্টোবর ৩ সপ্তাহের সাংগঠনিক সফরে চলে যান লন্ডন, ফিরে এসে ৫ নভেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে, আলোচনা সভায়, বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নাম করন করেন 'বাংলাদেশ'।
তিনি বলেন,
'একসময় এ'দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে 'বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে।... একমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সাঙ্গে বাংলা কথটির অস্তিত্ব খুজিয়া পাওয়া যায় নাই.... জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষনা করিতেছি... আজ হইতে পকিস্তানের পূর্ব অঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ' পূর্র পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু মাত্র 'বাংলাদেশ'।
সেই থেকেই আমাদের দেশের নাম 'বাংলাদেশ'।

একজন রূপকার

শিব নারায়ন দাশ 'ছাত্র শক্তি' সংগঠনের সাথে সম্পর্ক চুকে দিয়ে ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদেন। কুমিল্লার সবার প্রিয় শিবুদা। কবিতা লিখেন, ছবি আঁকেন, পোষ্টার লিখেন, রাজ পথে সোচ্চার সেই স্কুল জীবন থেকে, রাজনীতিকে নিয়তি করে নিয়েছেন এটাই নেশা।
ঢাকা থেকে নিয়ে এলেন একগুচ্ছ মার্কার পেন।
কলেজ নির্বাচনের প্রচার ও প্রকাশনা দায় নিয়ে নিলেন, ছাত্রলীগ অফিস তখন বাদুরতলা চৌধুরী ম্যানশনে। নিখাদ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন, দারুণ বক্তা, আমাদের এ্যসেট হয়ে গেলো শিবুদা, সিগ্রেট টানেন ২২ পয়সা প্যাকেটের, King Stork, একটা পর আর একটা। চোখে ভারী লেন্সের চশমা, রঙিন কাগজে বিভিন্ন রঙ দিয়ে, গভীর রাত পুর্যন্ত চলে পোষ্টারের কাজ, আমি দীদার, মঞ্জুরুল কাদের, গোলাম মোস্তফা, সাইফুল ইসলাম সাফু, হেদায়েতউল্লা হেদু, মহিউদ্দিন, কাজী বাসার অনেকেই হয়ে গেলাম রাতের সঙ্গী, শিবুদার চেলা। রাজনীতির অনেক কথাই শিবুদার কাছ থেকে জানি, নিজ হাতে ভিক্টোরিয়া কলেজ ও কুমিল্লা মহিলা কলেজের সব প্রার্থীদের জন্য, অত্যান্ত নিপুন হাতে তৈরি করেন প্রায় ৩০০ পোস্টার। নির্বাচনের দুইদিন আগে, রাত জেগে নিজেরাই সেটে দেই, রঙ বেরঙ পোস্টার। সবার মন জয় করে নিলো শিবুুদার সেই পোষ্টার প্রদর্শনী। এমন আর কোনদিন হয়নি। একজন দারুণ শিল্পী ও রূপকার, ছাত্রলীগের জয় হয়েছিলো সেই নির্বাচনে, ছাত্র ইউনিয়নকে হারিয়ে।

গেরিলা শব্দের প্রতিশব্দ চে

চে গুয়েভরার মৃত্যু মনকে নাড়া দিয়েছিলো পুরো নাম রাফায়েল এনেস্তা চে গুয়েভরা, সময়টা ছিলো '৬৭ সালের অক্টোবরের ৯ তারিখ, আমি ক্লাশ নাইনে পড়ি।
CIA, হাতে ৭ অক্টোবর, ধরা পড়েন বলিভিয়ার হুয়েয়ানায়, ৯ অক্টোবর দুপুরে ৯ টি গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। নিউজ হয়, এক মদ্যপ সৈনিক, মাতাল অবস্তায় এক আর্জেন্টাইন সন্ত্রাসীকে নয়টি গুলি করে হত্যা করে। তখন চের বয়স ৩৯, আর্জেন্টিনায় জন্ম পেশায় একজন চিকিৎসক, লেখক, চিন্তাবিদ, কুটনীতিবিদ, যোদ্ধা, গেরিলা ও কবি। তরুন বয়সে ডাক্তারি পড়ার সময় নিজ দেশ আর্জেন্টিনা ঘুরেঘুরে নিপীড়িত জনগোষ্টির অবস্তা তাঁহার মনে বিপ্লবের রেখাপাত করে। গুয়েতমালার আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন, নিজে ছিলেন এ্যাজমায় রোগী, পরবর্তীত মেক্সিকো তে চলে আসেন। সেখনেই রাউল কাস্ত্রো চেকে ফিদেল কাস্ত্রো সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, মূল ধাঁরায় এসে মিলেছ। কিউবা আন্দোলনে যোগদেন, সেই আন্দোলনে চে ছিলো মূল নায়ক, দুই বৎসর গেরিলা যুদ্ধ করে মার্কিন মদদ পুষ্টু বস্তিতা সরকার কে উৎখাত করেন।
চে কিউবার মন্ত্রী সভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাইকেল চালিয়ে ঘুরেছেন সারা আর্ফিকা, মাক্সিয় দর্শনে দিক্ষীত, বিশ্বের মুক্তিকামী জনগনের জন্য নিজের জীবন বাজী ধরলেন, এতটকুই জেনেছি তখন।

কলেজে যখন রাজনীতিতে সক্রিয় হই চে হয়ে গেলো বিপ্লবের প্রেরণা। চের লেখা, 'ডাক দিয়ে যাই' বইটি পড়ে জানি কতো অজানা। আফ্রিকার কঙ্গোতে '৬৫ সালের এপ্রিলে তাহার সেকেন্ড ইন কমান্ড ভিক্টর বার্ক ও ১২ জন সহযোপী নিয়ে, কঙ্গোর গৃহ যুদ্ধ পরিচালনা করেন, লুলুম্বা ব্যাটিলিয়নের দায়িত্ব পালন করেন। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের মুক্তি তার নেশা। '৬৫ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নির্দেশে বলিভিয়ায় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতে চলে আসেন। চের কয়েকটা কথা, বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের হৃদয়ে বানী হয়ে গেলো।

'আমি কখনো মুক্তিযোদ্ধা নই, মুক্তিযোদ্ধা বাস্তবে কখনো হয়না যতক্ষণ মানুষ নিজে মুক্তি কামী না হয়',
'নতজানু হয়ে বাঁচার চেয়ে আমি এখনই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত'
কি সব সত্য কথা আমদের প্রেরণা, নুতন রাজনীতিতে এসে, যৌবনের প্রারম্ভে, এসব পড়ে নিজকে মুক্তিকামী ভাবতে বেশ লাগছে,
'বিপ্লবী হতে চাও শিক্ষিত হও, বিপ্লবের প্রথম শর্ত শিক্ষা'
সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের একটাই ভাষা হয় স্বদেশ অথবা মৃত্যু, ভাবনা গুলি পাল্টে গেলো। সেই সময় নিউইয়র্ক টাইম লিখেছিলো,
'একজন মানুষের সাথে একটা রূপকথা চিরতরে চলে গেলো'। এই রূপকথার মানুষটা হয়ে গেলো বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের চেতনা। গেরিলাযুদ্ধ বলতে আমরা বুঝি চে গুয়েভরা।
পাবলো নেরুদা লিখেন তার মর্মস্পর্শী কবিতা,

এক বীরের মৃত্যুতে দুঃখের অনুভুতি
আমরা যারা দেখেছি
আজকের জীবনের ইতিহাস
আমাদের শোকাহত আসায় এই মৃত্যু তার
পুনরুত্থান ---
বুনো হরিণ ফিরে আসে বিস্ফোরণ হীন শ্যামল অরণ্যে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেন,
চে তোমার মৃত্যু আমাকে আপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে
বুকের ভেতরটা ফাঁকা ---
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে চে
তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।

হয় মৃত্যু না হয় স্বদেশ, সারা বিশ্বই ছিলো চে গুয়েভারা নিজের দেশ। একজন চে ভাবতে শেখায় মৃত্যুর মহিমা, পরাধীনতা আর ভালো লাগে না
#যে_স্মৃতি_ধূসর_হয়নি
#শওকত
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:১৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×