আমার বড় ভাইয়ের নাম ছিল খোকন। সেই নামের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রাখা হয়েছিল রোকন। আমার বড় ভাই আমার থেকে ২ বছরের বড় ছিল। তাই আমরা ছিলাম ডানপিটে। সারাদিন ঝগড়া ঝাটি এটা ওটা নিয়ে মেতে থাকতাম আমরা। মাঝে মাঝে মারামারিও লেগে যেত। কিন্তু আমি পারতাম না ভাইয়ার সাথে যখন ভাইয়া একটু জোরে মার দিত তখন আমার খুব জিদ হতো আমিও তাকে জোরে মারতে চেষ্টা করতাম।ভাইয়া তখন দৌড় দিত আমিও তার পিছনে পিছনে দৌড় দিতাম কিন্তু ধরতে পারতাম না। এক পর্যায়ে আমি ব্যর্থ হয়ে কান্না করতে করতে মায়ের কাছে বিচার দিতাম ভাইয়া আমাকে মারছে। মা ভাইয়া কে শাসন করে আমাকে শান্তনা দিত। তখন আমি খুশি অনুভব করতাম। ভাইয়া আমার সাথে অভিমান করতো কিছু ক্ষন পরেই আবার অভিমান চলে যেত। এভাবেই আমরা বড় হতে থাকলাম
একটা সময় আমাদের সুন্নতে খতনা/মুসলানির সময় চলে আসলো। যেহেতু আমরা প্রায় একই সমান ছিলাম তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আমাকে এবং ভাইয়া কে একই দিনে একই সাথে মুসমানি করানো হবে। যেই কথা সেই কাজ,হাজাম ডাকা হলো। আমাদের দুই ভাইকে গোসল করানো হলো। আমি খুব ভয় পেতে শুরু করলাম। তাই ভাইয়াকে আগে করানো হলো।আমি এই সুযোগে ভয়ে পালিয়ে গেলাম এবং আমাকে ধরে আনা হলো। এসে দেখি ভাইয়ারটা কাটা হয়ে গেছে এবং ভাইয়া কাতরাচ্ছে। এবং সেই সময়ে আমাকেও করানো হলো। আমাদের দুই ভাইকে একই বিছানায় শোয়ানো হলো। আমরা শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন গল্প করতাম।
পারা পরশী সবাই আমাদের দেখতে আসতে আমরা খুব লজ্জা পেতাম আর সবাই বলতো আমাদের দুই ভাইকে একই দিনে বিবাহ করানো হবে। আমরা এই কথা শুনে মনে মনে মজা পেতাম। ভাইয়া দেখতে খুব ফর্সা ছিল এবং আমি কালো ছিলাম। কালো হওয়া সত্বেও সবাই বলতো আমি নাকি সুন্দর বউ পাবো। আমি এগুলা শুনলে খুব লজ্জা পেতাম সে সময়। ভাইয়া ক্লাস সেভেনেই প্রেমে পড়ে গেল সেসময় ।কিন্ত আমাকে বুঝতে দিত না। লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠি পড়তো। কিন্তু আমাকে কখনোই দেখতে দিত না কারণ ছিল আমি যদি মায়ের কাছে বলে দেই সেজন্য। আমার খুব খারাপ লাগতো ভাইয়া আমার থেকে দূরে দূরে থাকতো। কাছে গেলে আগের মতো সেই ভাব টা আর থাকতো না।তারপর একদিন চিঠি লিখতে গিয়ে ভাইয়া আমার কাছে ধরা খেয়ে গেল এবং সব খুলে বললো এবং কাউকে যাতে না বলি সেই বিষয়ে বারণ করে দিল।
ক্লাস টেনের টেষ্ট পরিক্ষার আগের রাতে ভাইয়া কে আর খুজে পাওয়া গেল না । অনেক কেই কল করা হলো কিন্তু কেউ খোজ দিতে পারলো না। আব্বার খুব রাগ হয়েছিল সেসময় তার চিন্তা ছিল পরিক্ষা নিয়ে সেইবার পরিক্ষা না দিলে ১ বছর পিছিয়ে যাবে ভেবে। তিন দিন পর ভাইয়া বিয়ে করে ভাবীকে নিয়ে বাড়িতে আসলো। সবাই অবাক হয়ে গেলে এত ভদ্র ছেলেটার কৃত কর্ম দেখে। এখন ভাইয়ার এক ছেলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমাদের দুই ভাইয়ের এখনো অনেক মিল এবং ভাব।
সবাই দোয়া করবেন আমরা দুই ভাই সারাজীবন এভাবেই মিলে মিশে থাকতে পারি।
@ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৫