somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস (২য় পর্ব - যুদ্ধের সূচনা)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস (১ম পর্ব - পটভূমি)

ফার্ডিনান্ডের হত্যাকান্ডের সংবাদ যখন জোসেফের কাছে পৌঁছে তখন তিনি শিকারে ব্যস্ত। ফার্ডিনান্ড জোসেফের ভাতিজা এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকার। জোসেফ আগে থেকেই দুর্ভাগ্যের শিকার, তার একমাত্র ছেলে আত্মহত্যা করে আর স্ত্রী হত্যাকান্ডের শিকার হন। ফার্ডিনান্ডের হত্যাকান্ডের সংবাদ তার জন্য ছিল আরও কষ্টকর কারণ তার সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারই আর কেউ থাকলো না। ফার্ডিনান্ড যে সারায়েভোতে হত্যাকান্ডের শিকার হন তা ছিলো বসনিয়ার একটি শহর আর বসনিয়া তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অধিভূক্ত। বসনিয়ার জাতিগতভাবে স্লাভ গোষ্ঠীর অর্ন্তগত এবং তারা তখন জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ব হয়ে স্বাধীনতার জন্য গুপ্ত চেষ্টায় লিপ্ত। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী সার্বিয়া যারা আবার জাতিগতভাবে স্লাভিক বিভিন্ন ভাবে বিদ্রোহীদের সহায়তা করছিলো। এরকম অবস্থায ফার্ডিনান্ডের সারায়েভো সফরের সময় সার্বিয়ার সহায়তায় বসনিয়ান গ্রাব্রিয়েলো প্রিন্সিপ গুলি করে ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রীকে হত্যা করে।

জুলাই ৩, ১৯১৪ ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর কয়েকদিন পরই ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট রেমন্ড পইন্কের পূর্বনির্ধারিত সফরে রাশিয়া যান। এসময় রাশিয়ার জার ছিলেন নিকোলাস ২ ও পইন্কের যৌথ বিবৃতিতে বলেন ফার্ডিনান্ডের হত্যাকান্ড অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়া ও সার্বিয়া এই দুইদেশের ব্যাপার। এর জের ধরে ইউরোপের বাকি দেশগুলির উচিত হবে না বিবাদে জড়ানো। কিন্তু জার্মানী তার রণসজ্জার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে এবং ফ্রান্স তার সকল সৈনিক ও অফিসারের ছুটি বাতিল করে স্ব-স্ব রেজিমেন্টে রিপোর্ট করতে বলে। জুলাই ২৩, ১৯১৪ অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়া সার্বিয়াকে আল্টিমেটাম দেয় হত্যাকান্ডের তদন্ত করতে তাদের পুলিশ বাহিনীকে সার্বিয়াতে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য। কিন্তু সার্বিয়া জানিয়ে দেয় তারা অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ার কোনো প্রদেশ নয় এবং এ হত্যাকান্ডে তাদের কোন সংযোগ নেই। এঅবস্থায় ২৮ জুলাই, ১৯১৪ অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রেক্ষিতে সার্বিয়ার মিত্র রাশিয়া অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সীমান্তে তার সৈন্য মোতায়েন করে। জার্মানীও ৩০ জুলাই অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়াকে সহায়তার ঘোষণা দেয় এবং ১ আগস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে ফ্রান্স ২ আগস্ট জার্মানীর দিকে সৈন্য মোতায়েন শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে জার্মানী ৩ আগস্ট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। জার্মানী ফ্রান্স দখলের জন্য পূর্বে বাফার জোন হিসেবে ঘোষিত বেলজিয়াম আক্রমণ করে ৪ আগস্ট। এর প্রেক্ষিতে বৃটেন তার বিশাল নৌ বাহিনীকে মিত্রদেশ ফ্রান্স অভিমুখে প্রেরণ করে যার মধ্যে দিয়ে বৃটেনও জড়িয়ে যায় এই যুদ্ধে। পরাক্রমশালী এই নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন উনস্টন চার্চিল যিনি পরবর্তীতে ২য় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

উনস্টন চার্চিল

৪ আগস্ট, ১৯১৪ এর মধ্যে রাশিয়া ৫ মিলিয়ন, জার্মানী ৪ মিলিয়ন, ফ্রান্স ৩ মিলিয়ন, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়া ২ মিলিয়ন সৈন্য নিয়ে জড়িয়ে পরে যুদ্ধে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়া দুই সপ্তাহ ধরে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও বেলগ্রেড দখল করতে না পারায় সার্বিয়ানরা প্রাথমিক বিজয়ের আনন্দে নেচে ওঠে যদিও এই আনন্দ ভবিষ্যতে ধূলায় লুটাবে। বেলগ্রেড দখলের দুই সপ্তাহর যুদ্ধে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ার ২৫০০০ সৈন্য প্রাণ হারায়। অন্যদিকে জার্মানী প্রবল বেগে ব্রাসেলস দখলে অগ্রসর হয়। কিন্তু বেলজিয়ানরা তাদের রাজা আলবার্ট ১ এর নেতৃত্বে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

আলবার্ট ১

এরপরও জার্মানী ২০ আগস্টের মধ্যে ব্রাসেলস দখল করে এগুতে থাকে ফ্রান্সের দিকে। অন্যদিকে ফ্রান্স জার্মানীর মুলুস শহর দখল করে বার্লিনের দিকে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু ২২ আগস্টে জার্মানী মুলুস পুর্নদখল করে। এই দিনটি ফ্রান্সের সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন, একদিনে তাদের ২৭০০০ সৈনিক নিহত হয়। অপরদিকে রাশিয়া পূর্বে জার্মানীর ইস্ট প্রুশিয়া আক্রমণ করে এবং সেখানে শুরু হয় জার্মানীর প্রতিরোধ। আগস্ট,১৯১৪ শেষ হবার আগেই জার্মানী প্যারিসের মাত্র ৩০ মাইল দূরে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীও তীরের কাছাকাছি চলে আসে। সুতরাং পুরো ইউরোপ তখন রণক্ষেত্র। অামেরিকা তখন নিরপেক্ষতার ঘোষণা দেয় এবং ইউরোপকে আলোচনা করে শান্তির উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানায়। কিন্তু ইউরোপ তখন খুনের নেশায় উন্মত্ত আর ঘটনার পরিক্রমায় শুধু ইউরোপ নয় আমেরিকা, জাপানও ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়বে এযুদ্ধে। সামনের পর্ব গুলিতে থাকবে তার বয়ান। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×