নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমার উম্মতদের মধ্যে যারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী তারা নিকৃষ্টেরও নিকৃষ্ট।’
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, সাবধান! নিশ্চয়ই নিকৃষ্টেরও নিকৃষ্ট লোক হলো- উলামায়ে ‘সূ’ অর্থাৎ দুনিয়ালোভী ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারা। আর নিশ্চয়ই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনারা। (দারিমী শরীফ)
বর্তমানে তাই দেখা যাচ্ছে, কিছু সংখ্যক তথাকথিত আলিম অর্থাৎ উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদের কারণে মুসলমান উনাদের পবিত্র ঈমান ও আমল হুমকির সম্মুখীন। তাদের কারণে সাধারণ লোক মনে করে গণতন্ত্র ইসলামেরই অংশ, ছবি তোলা শরীয়তে জায়িয, হরতাল করা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়, টেলিভিশন দেখা ও টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করা জায়িয, খেলাধুলা করা ও টেলিভিশনে দেখা জায়িয, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা ইত্যাদি জায়িয।’ নাউযুবিল্লাহ! কারণ উলামায়ে ‘সূ’রা অহরহ পেপার-পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপাচ্ছে এবং পবিত্র ইসলাম উনার নামে হারাম টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করছে। পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করছে, হরতাল করছে, নারী নেতৃত্ব মানছে, বেপর্দা হচ্ছে, খেলাধুলা করছে ও দেখছে। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ এগুলো সবই পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার নির্দেশ মুতাবিক কাট্টা হারাম। কিন্তু তারা বিনা দ্বিধায় এ হারাম কাজগুলো করে যাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গুমরাহ বা বিভ্রান্ত করছে। মূলত এরাই হলো উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী অর্থাৎ নাহক্ব আলিম। এদের প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত যিয়াদ ইবনে হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাকে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনি বলতে পারেন কি, কোন জিনিস পবিত্র ইসলাম উনাকে ক্ষতি করবে? আমি বললাম না (আমি জানি না)। তখন তিনি বলেন, আলিমদের পদস্খলন (উলামায়ে ‘সূ’দের মনগড়া ফতওয়া ও আমল), উলামায়ে ‘সূ’ বা মুনাফিকদের মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব নিয়ে তর্ক-বাহাছে লিপ্ত হওয়া এবং গুমরাহ শাসকদের গুমরাহীমূলক হুকুম বা আদেশ-নিষেধ। (পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে ক্ষতি করবে)।” (দারিমী শরীফ)
অথচ পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার ফায়সালা হলো- হারামকে হালাল জানা আর হালালকে হারাম জানা কুফরী। অনুরূপ বিজাতীয় ও বেদ্বীনি মতবাদকে পবিত্র ইসলাম উনার অংশ মনে করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তবে কি প্রমাণিত হয় না যে, তাদের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ উনারা কুফরী করে পবিত্র ঈমান উনাকে ক্ষতি করছে? আর তাই তো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমার উম্মত উনাদের দুই সম্প্রদায়, তারা যখন ইছলাহ বা সংশোধন হবে, তখন সকল মানুষ (মুসলমান উনারা) সংশোধন হবে। আর তারা যখন পথভ্রষ্ট হবে, তখন সকল মানুষ (মুসলমান তারা) পথভ্রষ্ট হবে, তারা হলো- ১. রাজা-বাদশাহ, ২. আলিম-উলামা।
আর এদের প্রসঙ্গেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতদের মধ্যে যারা উলামায়ে ‘সূ’ তাদের জন্য আফ্সুস অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে। তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসকল উলামায়ে ‘সূ’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদদোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল শরীফ)
, এ সকল উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার তথা ধর্মব্যবাসায়ী মৌলবীদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাজ্জালে কাযযাব বা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে এদের থেকে উম্মত উনাদেরকে দূরে থাকার নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইরশাদ মুবারক হয়েছে- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)
মূলকথা হলো- যারা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলে, অহরহ হারাম কাজে মশগুল থাকে এবং দুনিয়ার লোভে হক্বকে নাহক্বের সাথে মিশ্রিত করে তারাই হচ্ছে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক দাজ্জালে কাযযাব তথা উলাময়ে ‘সূ’। এদের ওয়ায শোনা ও এদেরকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা ওই ব্যক্তিকে অনুসরণ করো না যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল। এবং যে ব্যক্তি নফসের অনুসরণ করে এবং যে ব্যক্তির কাজগুলো পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ।’ (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-২৮) অর্থাৎ যাদের আমল পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম। কাজেই, পবিত্র ঈমান ও আমল হিফাযত করতে হলে উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।