"তুমি আমি পাশাপাশি বসে
`
তোমার হাতে এক প্যাকেট সিগারেট
`
আমি লাইটার টা তোমার দিকে বাড়িয়ে দিব
`
তুমি ওইটা নিবে আমার হাত থেকে
`
তারপর সিগারেট টা তে আগুন জ্বালাবে
`
আমি অপলক চোখে তাকিয়ে থাকব
`
তুমি সিগারেট টা খেতে চাইবে
`
আমি খেতে দিব না
`
তোমাকে থাপ্পড় দিব
`
তুমি সেই থাপ্পড় খাওয়া গালে হাত
দিয়ে আমার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকবে
`
চাহনি টা অনেকটা বোকার মত হবে
`
আমি সেই চাহনি দেখে হাসব
`
তুমি আবার আমার দিকে সেই একই
চাহনি দিয়ে বলবে যে হাত
দিয়ে থাপড়াইছো ওই হাত দাও
`
আমি দিব না
`
তুমি জোর করবে
`
আমার ওপর রাগ করবে
`
আমার দিকে অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকাবে
`
আমি ভয় পাব
`
হাতটা দিব
`
তুমি অনেক যত্নে সেই হাতটা ধরবে
`
তারপর তোমার পকেটে রাখা নীল চুড়ি বের
করে আমাকে পড়িয়ে দিবে
`
আমি বলব ওহে প্রিয়তম ভালোবাসো??
`
তুমি বলবে হুমম অনেক
`
তারপর খুব যত্ন করে কপালে একটা চুমু
দিয়ে বলবে ছেড়ে যাবে না তো
`
আমি বলব না কক্ষনোই না"
.
.
চিঠিটা লিখে পড়তে গিয়ে মুমু নিজেই হাসছে।
তারপর সেই হাসিমুখ নিয়ে চিঠিটা ভাজ
করে খামের ভেতর ঢুকাল।তারপর ব্যাগের
মধ্যে পাচার করে দিল
.
ভার্সিটির শেষ দিন আজ।নীল শাড়ী তার
সাথে নীল চুড়ি পরে বাসা থেকে বের হল।
চিঠিটা সাদাফ নামের কোন এক বাউন্ডুলের
জন্য লিখা।বাউন্ডুলে টা বলি বলি করেও
ভালবাসি টা বলছেনা।চারটা বছর কাটিয়ে দিল
শুধু মুমু আমি মুমু আমি করেই।এর পরের
কথাটা আর বলতে পারল না
.
সাদাফ ও নীল
পাঞ্জাবী পরে এসেছে হাতে নীল ঘড়ি।আর
মনে মনে প্রতীজ্ঞা করেছে আর যাই হোক
মুমুকে আজ বলতেই হবে।আজকের পরে আর
মুমুকে পাওয়া যাবে না।ভালবাসা টা মনের
ভেতর অব্যক্তই থেকে যাবে
.
-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে
~তোমাকেও
-একটা কথা বলার ছিলো
~এই নিয়ে কয়বার হল??
-২০৫বার
তবে এইবারই শেষ বার
~প্রত্যেকবারই শেষ বার হয়
-মুমু আমি
~২০৬
-মুমু আমি
~২০৭
-না থাক অন্য কোনদিন বলব।এখন যাই চল
~ওই দাঁড়াও এইটা নাও
বলেই মুমু খামটা সাদাফের দিকে বাড়িয়ে দিল
তারপর সাদাফের পাশ দিয়ে হেটে গেল
.
সাদাফ মনে মনে ভাবছে এ মুমুর বিয়ের কার্ড
নয়ত??
ভয় ভয় মন নিয়ে খামটা খুলল
ভেতরে একটা চিঠি দেখতে পেল সে।
চিঠিটা পড়ে সে তার গালে হাত
দিয়ে অনেকটা বোকার মত চাহনি করে মুমুর
কাছে গেল
.
মুমু দূর থেকেই সাদাফ কে দেখে হাসছে।সাদাফ
কাছে আসতেই বলল
এখনও তো থাপ্পড় দেই নি তাহলে গালে হাত
দিয়েছ কেন??
.
সাদাফ দুই হাত দিয়ে তার গাল ঢেকে বলে
তোমার উপর বিশ্বাস নেই।কখন
যে কি করো
.
-নীল চুড়ি কি আরো লাগবে??
~কেন তুমি দিবা??
-হুমম দিব।গ্লিটার বসানো নীল চুড়ি দিব
তোমায়
~কই পাবে এখন??
-সাথে আসো,,হাত ধরো তারপর
দুজনে মিলে খুঁজব
.
মুমু তার হাত সাদাফের কাছে সমর্পণ করল।
সাদাফ হাতটাকে শক্ত করে ধরল তারপর
বলল চল
.
ভার্সিটিতে মেলা চলছে।
দুজনে মিলে ভার্সিটির স্টল গুলোতে গেল
এবং গ্লিটার বসানো নীল চুড়ি খুঁজে বের
করল
.
তারপর সাদাফ মুমুর হাতে নীল
চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বলল
.
"ওহে প্রিয়তমা
তোমায় ভালোবাসি অনেক।
বলতে পারিনি কখনোই।আসলে সাহস হয় নি।
ভেবেছি যদি তুমি মানা করে দাও।যদি আমার
সাথে আর কথা না বল।তবে আজ আমার আর
কোন ভয় নেই
.
মুমু আমি তোমাকে ভালোবাসি
অনেক অনেক ভালোবাসি"
.
অনেকটা চিৎকার করেই বলল সাদাফ
.
আর সাদাফের এই কান্ড দেখে মুমু
মুচকি মুচকি হাসছে।সাদাফ মুমুর
হাতে একটা চুমু দিল।
.
সেদিন সাদাফ মুমুকে সবার সাথে পরিচয়
করিয়ে দিচ্ছিল ওর বউ বলে আর মুমুর
গোলাপি গাল লজ্জায় লাল হচ্ছিল।
.
ফেরার সময় সাদাফ মুমুর বাসা পর্যন্ত
এগিয়ে দিল।
.
.
দুইদিন পর আজ ওদের দেখা হচ্ছে।মুমু
অনেক সেজেগুজে এসেছে
.
-ওয়াও পরী
~যাও
-কই যাব??
~জানিনা
-আচ্ছা তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেই??
~কেন??
-না মানে বিশ্বাস হচ্ছে না
~কি??
-তুমি কি সত্যিই পরী নাকি মানবী
~যাও খালি ঢং
-সত্যি বলছি
.
সাদাফ মুমুর হাতটা ধরল।তারপর সেই হাত
তার বুকের মধ্যে রাখল
.
-এই তুমি তো মানবী।তাহলে তোমার ভেতর
এত সৌন্দর্য এল কোত্থেকে??
~যাও তো
বলে মুমু হাসল
-ওয়াও দাঁত তো আরো সুন্দর।কি টুথপেস্ট
ব্যবহার কর গো???
~তোমার মাথার টুথপেস্ট
মুমু হাসছে
.
প্রেম চলতে থাকল প্রেমের গতিতে।তবে ঝড়
যে আসে নি তা না।এসেছিল অনেকবার।বাঁধন
টা শক্ত ছিল তাই কোন
ক্ষতি করতে পারে নি।একজন ভুল
করলে অন্যজন শুধরে নিয়েছে।
দোষটা নিজের ওপর চাপিয়ে নিয়েছে।
.
-এই শুনো
~হুমম বল
-আমি কিন্তু একটা ফুটবল টীম বানাব
~তো???
-বি প্রিপেয়ার
~মানে??
-সময় হলেই বুঝবে শুধু প্রিপারেশন
নিয়ে থেকো
.
সাদাফ কলটা কেটে দিল
.
ছেলেটা বড্ড পাগল।খালি পাগলামি করে মুমু
মনে মনে বলছে আর হাসছে
.
সাদাফের সাথে মুমুর ঝগড়া হয়েছে তাও বড়
ধরনের।মুমু সাদাফের
পাশে একটা মেয়েকে দেখেছে।সাদাফ যতই
বুঝানোর চেষ্টা করছে ততই ঝগড়া বাড়ছে।
রাতে ঝগড়া মিটমাট না করেই ঘুমাতে গেল
.
মুমু ঘুমাচ্ছে
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল
.
~হ্যালো
_মুমু???
~হ্যা।কে বলছেন??
_মুমু আমি তারেক সাদাফের বন্ধু
~ওহ তারেক!!!হ্যা বল
_তুমি একটু সিটি হসপিটালে আসতে পারবা???
~কেন??কি হয়েছে??
_তুমি আসো তারপর বলছি
.
মুমু
কোনমতে মুখে পানি দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে হাসপাতালের
দিকে রওনা দিল
.
হাসপাতালের গেটে তারেককে দেখতে পেল।
মুখটা বিমর্ষ
~কি হয়েছে???
_আসো ভেতরে আসো
~তারেক তুমি সত্যি করে বল সাদাফের কিছু
হয় নি তো???
_মুমু সাদাফ মারা গেছে
~মানে??
_কাল রাত তোমাদের ঝগড়ার পর সাদাফ
তোমার সাথে দেখা করার জন্য ছটফট
করছিল।অনেক
কষ্টে রাতটা আটকে রেখেছিলাম।তাই খুব
ভোরেই সে তোমার সাথে দেখা করার জন্য
চলে গিয়েছিল।রাস্তায় অন্যমনস্ক
হয়ে হাটার দরুন পিছন থেকে একটা বাস
এসে ধাক্কা দেয়।প্রচুর রক্তক্ষরণ
হওয়াও ডাক্তার ওকে বাঁচাতে পারেনি
.
এতটুকু বলে তারেক মুমুর দিকে তাকাল।
কিন্তু ততক্ষণে মুমু সেন্সলেস
হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে
.
মুমুকে ভেতরে নেওয়া হল।কিছুক্ষণ পর মুমুর
জ্ঞান ফিরে আসল।মুমু
সাদাফকে দেখতে চাইল।তাকে সাদাফের
কাছে নেওয়া হল
.
মুমু সাদাফকে দেখেই আবার সেন্সলেস
হয়ে গেল
.
তারেক তার আরেক
বন্ধুকে দিয়ে মুমুকে বাসায় পাঠাল
.
তারপর থেকেই মুমু মানসিক ভারসাম্যহীন
হয়ে গেছে।মাঝেমধ্যে জ্ঞান আসে।তারপর
সাদাফ বলে চিৎকার করে আবার অজ্ঞান
হয়ে যায়
.
সাদাফকে দেওয়া সব গিফট তারেক
মুমুকে ফেরত দিয়েছে।চিঠিটাও ফেরত দিয়েছে
.
মুমুর মা সেইগুলো ফেলে দিতে চাইলেন।
ফেলেও দিলেন।
তবে কি মনে করে চিঠিটা রেখে দিলেন
.
এখনও যখন মাঝেমধ্যে মুমুর জ্ঞান
ফেরে তখন সে চিঠিটা পড়ে কাঁদে আর সাদাফ
বলে চিৎকার করে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়
.
.
.
একটা অনুরোধ
রাস্তায় চলাচলের সময় একটু খেয়াল
করে হাটবেন।মনে রাখবেন নিজের একটু
বেখেয়ালিপনার জন্য আপনার প্রিয় মানুষটির
অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে ।