বারাক ওবামা জিতে গেলে তিনিই হবেন আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তবে হলিউডের ছবিতে তার চেয়েও বেশি যোগ্যতা নিয়ে দেশকে দারুণ সব বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন ‘কালো’ রাষ্ট্রনায়করা। এবার সেই কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্টদের গল্প...
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখন চলছে সেকেন্ডের যুদ্ধ। বারাক ওবামা আর জন ম্যাককেইনের মধ্যে এখন শেষ মুহূর্তের লড়াই পুরো দেশটিকেই ফেলে দিয়েছে দারুণ প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতা ডেমক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের চিরন্তন যুদ্ধ। দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ওবামা যদি জিতেই যান তাহলে তিনি ইতিহাস গড়বেন নিশ্চিত! তবে রূপালি পর্দায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনি এরই মধ্যে আমেরিকা শাসন করেছেন। দেশটি এখন যেমন অর্থনৈতিক মন্দা আর ইরাক যুদ্ধ নিয়ে সংকটের ঘুর্ণাবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, তারচেয়েও বেশি সংকট থেকে এই কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন অবলীলায়।
একাধিক মার্কিন সংবাদপত্রের ভাষ্য মতে, আমেরিকার জনগনের মাথায় একজন কৃষ্ণাঙ্গকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখার প্রবণতাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে আসলে টেলিভিশন সিরিয়াল এবং সিনেমাগুলো। ‘দি আমেরিকান প্রেসিডেন্টস ইন পপ কালচার’ বইয়ের লেখক জন ম্যাটভিকো বলেছেন, তরুনদের মধ্যে ওবামার যে বিপুল জনপ্রিয়তা তার পেছনে রূপালী পর্দার প্রভাব রয়েছে।
সেই ১৯৩৩ সালে ৭ বছর বয়সী সেমি ডেভিস জুনিয়রের হাত ধরে ‘রুফুস জোন্স ফর প্রেসিডেন্ট’ টিভি সিরিয়াল দিয়ে যে শুরু কালো মানুষের ওভাল অফিসে পদযাত্রা, তার পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ সম্ভবত খ্যাতনামা অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের ১৯৯৮ সালে বের হওয়া দারুণ ছবি ‘ডিপ ইমপ্যাক্ট’ -এ।
কালো তারকাদের পর্দায় দারুণ সাফল্যই তুখোড় বক্তা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ওবামাকে ভোটারদের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রেসিডেন্ট হিসেবে যারাই হোয়াইট হাউসে গিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত থেকেছেন। আর এই সমস্যাগুলোর বেশিরভাগই ছিল বহিঃজাগতিক শত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখার।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম পর্দায় আমরা যে ছবিকে দেখি, সেটি হলো জোসেফ সার্জেন্টের ‘দি ম্যান’। আরভিং ওয়ালেসের উপন্যাস অবলম্বনে রচিত এই পলিটিক্যাল ড্রামাটি ১৯৭২ সালে প্রথম হাজির হয় দর্শকদের সামনে। এই ছবির কাহিনীতে দেখা যায়, পশ্চিম জামার্নিতে পার্লামেন্ট ভবন ভেঙে পরায় সেখানে অবস্থানরত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও স্পিকার অফ দি হাউজ নিহত হয়েছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট অসুস্থ থাকায় দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে শেষ পর্যন্ত আইন অনুসারে প্রেসিডেন্ট প্রো টেম্পোর অফ দি সিনেট পদের ডগলাস ডিলম্যান এই দায়িত্ব লাভ করেন। প্রথমে ইতসত্মত বোধ করলেও পরে জেমস আর্ল জোন্স আমেরিকার প্রথম আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাদের সামনে হাজির হন। অসাধারণ কন্ঠস্বর, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে জোনস রাষ্ট্রনেতা হিসেবে দারুণভাবে মানিয়ে যান।
দারুণ জনপ্রিয় থ্রিলার ‘২৪’-এ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেনিস হেজবার্ট-এর দুর্দান্ত উপস্থিতি বহুকাল মনে থাকবেদর্শকদের। এখানে ডেভিড পামার চরিত্রে এই দেশটি শাসন করেছিলেন। নিজের অনন্যসাধারণ গায়ের রঙ এবং তাকানোর ধরণ তাকে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
সাত মাইল দৈর্ঘের একটি গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে দারুণ গতিতে। সংঘর্ষ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র! কিন্তু এই গ্রহবাসীরাও প্রস্তুত। ৮ লক্ষ মানুষ এবং ২ লক্ষ বিজ্ঞানী দিনরাত এই সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত- এই কাহিনী নিয়ে এগিয়ে চলা ‘ডিপ ইমপ্যাক্ট’ ছবিটির কাহিনীতে মর্গান ফ্রিম্যানকে প্রেসিডেন্ট টম ব্যাকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
সাইফাই ছবি ‘দ্য ফিফথ এলিমেন্ট’ বের হয় ১৯৯৭ সালে। একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং সাবেক এফবিআই কর্মচারী ব্রুস উইলসের হাতে এসে পড়ে ফিফথ এলিমেন্ট। তার কাজ বাকি চারটি এলিমেন্ট খুঁজে বের করা এবং আসন্ন বিপদের হাত থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করা- এমন এক কাহিনী নিয়ে গড়ে ওঠা এই ছবিতে প্রেসিডেন্ট লিন্ডবার্গের চরিত্রে অভিনয় করেছেন টম লিস্টার জুনিয়র। একসময় তিনি একজন পেশাদার কুস্তিগির ছিলেন।
হেড অফ দ্য স্টেট’ ছবিতে কমেডিয়ান ‘ক্রিস রক’ অভিনয় করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মায়াস গিলিয়ামের চরিত্রে।ChrisRock03 সাবেক সমাজ সংস্কারক এই প্রেসিডেন্ট তার হিপ হপ আচরণ, ব্যাগি জিন্স নানা মজাদার কাণ্ডর্কীতিতে একবারে নাজুক করে দেন হোয়াইট হাউসের পরিবেশ। এটিই অন্যতম ছবি যেখানে আমেরিকার কালো প্রেসিডেন্ট শত্রুর হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষার প্রাণপন চেষ্টায় লিপ্ত নেই।
২৬ শতকে আমেরিকার জনগন পুরোপুরি হিপহপ কালচারে আবিষ্ট হয়ে গেছে। ভিডিও গেমসে আবিষ্ট, ফার্ষ্টফুডে মাতোয়ারা এদেশের জনগনকে বাঁচাতে প্রেসিডেন্ট ডোয়াইন কামাচো হাজির হন নতুন যুদ্ধে। এখানে প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টেরি ক্রুজ।
হলিউডের রূপালী পর্দায় এযাবৎ যে ক’জন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এসেছেন তাদের প্রায় সবাই সাই-ফাই দুনিয়ার বাসিন্দা। স্বাভাবিক অবস্থায় যেন তাদেরকে মেনে নিতে এখনো প্রস'ত নন মার্কিন দর্শক। তবুও মরগ্যান ফ্রিম্যানের মতো দাপুটে অভিনেতাদের দৌলতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দর্শকচিত্তে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের। এবারের নির্বাচনে যার প্রভাব কিছুটা হলেও পরেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সংগৃীহীত
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




