ষষ্ঠতম সিদ্ধান্ত নিলো আইরিন। টেলিফোন করে জানিয়ে দিল ইভানকে । ইভান বরাবরের মত হু হা ছাড়া কিছুই বললো না। অতিতেও বলেনি। ইভান জানতো এটা আইরিনের রাগ মাখানো অভিমান। রাগের তাপমাত্রা নিচের দিকে নামার সাথে সাথে আইরিনও ভুলে যাবে এসব সম্পর্ক ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত টিদ্ধান্ত। মুলকথবা আইরিন ইভানকে খুব ভালবাসে। এটা ইভান প্রকাশ না করলেও খুব ভালকরে জানে এবং অনুভব করে।
কিছুটা মিচকা আর অন্তর্মুখী স্বভাবের ছেলে ইভান। যে কোন বিষয় নিয়ে খুব সহজেই মজা করতে পারে । নিজের ভিতরের দুখগুলো একেবারেই ভিতরে রেখে দেয়। যেখানে হাতড়ে বেড়ালেও কিছু পাবার সাধ্য থাকেনা কারো । কেও তাকে বুঝতে পারবে সে সাধ্য যেনো কারো নেই। চারপাশের মানুষ ইভানকে সুখী মানুষ হিসেবেই গণনা করে। এবং সে সুখিও বটে। ইভানের যে বয়স এই বয়সে দুখি ভাব চেহেরায় ফুটে উঠলে বড্ড বেমানান দেখায়। তাই ওর চেহেরায় কখনো দুঃখ থাকেনা। থাকে অফুরন্ত সুখের ছাপ।
ফোন রেখে অতীতের মতই কিছুটা শঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় সময় যেতে থাকলো। আইরিনের পরবর্তী ফোনের জন্য রাত পর্যন্ত ইভানকে অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত অতীতের সব অভিজ্ঞতা সে দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করে। আবার দ্রুত মন ভাল হয়ে গেলে বিকেলের মধ্যেই আসতে পারে ফোন। ইভান অপেক্ষায় থাকে কখন ফোন আসে আইরিনের।
দিন শেষ, রাত বাজে সারে দশটা । আইরিনের কোন ফোন নেই। ইভানের বুকের ভিতরটা খচ করে উঠে। কিছু হাড়ানোর ভয় তাকে ভাবিয়ে তুলে। চোখের কোনে জল এসে যায়। না, এমন হতে পারেনা। ও এ রকম করার মেয়ে না। এলো মেলো অনেক ভাবনা ভাবতে থাকে ইভান। এই বুঝি আইরিন ফোন দিচ্ছে, ওপাশ থেকে বলছ, ঘাধা! তোকে ছেড়ে যেতে পারলাম না। রাতে খেয়েছিস...? আয় কাল দেখা করি।
গতবছর এই সময়টা রায়ানের পাশেছিল ইভান। আজ ইভান কাওকেই যেনো পাশে পাচ্ছেনা। নিজের পৃথিবীটা খুব ছোট মনে হচ্ছে। রায়ানের কান্নাভরা মুখটি বারবার ভেসে ঊঠছে। প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় কি কান্নাটাই কেদেছিল সেদিন। আহ, প্রেম। আহ, চলে যাওয়া।
খুব অযৌক্তিক একোটা কারন দেখিয়ে চলে গিয়েছিল মেয়েটি। যার জন্য ইভান খুব রাগ দেখিয়েছিল রায়ানকে। যে মেয়ে এ রকম মিথ্যে অজুহাত আর কারন দেখিয়ে সম্পর্ক ভেঙ্গে দিতে পারে সে মেয়ের জন্য তুই কাদছিস, শালা হাদরাম! গল্পটা অনেকবার বলেছিল আইরিনকে। আইরিন রায়ানের জন্য অনেক দুঃখ দেখিয়ে বলেছিল মেয়েরা এমন কিভাবে পারে। খুব অবাক হয়েছিল আইরিন।
এ যুগে মেয়েদের অবাক হওয়াও অবাক হয়ে যাওয়ার মত। অল্পতেই তারা মুগ্ধ হয়ে যায়। অথবা ইমপ্রেস হয়ে যাওয়ার ভাব নিতে একটুও সময় নেয়না। পরিচিত কারো মধ্যে থেকে কেও ফোন করে তিনবেলা খাবার খেয়েছে কিনা খোজ নিল, মন খারাপ কেনো কারন জিজ্ঞেস করলো, অথবা হাসির দুটো কথা বললো তাতেই তার প্রতি গদ গদ হয়ে যাওয়া শুরু হয়ে যায়। ব্যাপক সিনেম্যাটিক ব্যাপার। নায়িকা কোন কারনে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে মানবতাবাদী কেও এসে তাকে বাধা দিলেন,দু চারটে সুন্দর কথা শুনালেন । ব্যাচ শুরু হয়ে যায় হাবুডুবু খাওয়া। নায়িকার অমনি তাকে জড়িয়ে ধরে গান।
কিন্তু পুরুষরা এতো সহজে মুগ্ধ হতে পারেনা। এর জন্য কিছু সময় লাগে এবং যৌক্তিক কারনও লাগে। অবশ্য কিছু ছেলেদের কথা ভিন্ন। তাদের দেখলেই মনে হয় এদের শরীরে হরমোনজনিত সমস্যা বিদ্যমান। আচার আচরণে আগাগুরা লুতুপুতু টাইপের। অল্পতেই চোখ মুখ উল্টিয়ে মুগ্ধ হয়ে যাবার ভান করায় এরা অত্যন্ত পটু। এ জাতিয় ছেলেপেলেদের দেখলে ইভানের খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করে কানের নিচে দু খান থাপ্পর বসিয়ে মুগ্ধ হওয়ার ভাব ছুটিয়ে দিতে।