somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ দু’ফোটা জল

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৃশ্যপটঃ ০১
সময়ঃ রাত ৯.৩৫

বেশ কিছুক্ষন ধরে ঐশীর ফোনটা বেজে যাচ্ছে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঐশীর মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেল, সেখানে নাঈমের নাম। ঐশীর ফোন ধরতে ইচ্ছা করতেছে না। কিন্তু নাঈম নাছোড়বান্দা, সে কলের পর কল দিয়েই যাবে। অগত্যা বিরক্ত হয়েই ঐশী ফোন রিসিভ করলো...

- হ্যালো

- হ্যা, কি করতেছো তুমি? ফোন ধরো না কেন??

- কিছু না, শুয়ে ছিলাম একটু।

- আজ এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লা যে? শরীর খারাপ নাকি??

- হ্যা, সন্ধ্যা থেকে প্রচন্ড মাথাব্যথা করতেছে

- ওহ, মাথাব্যথা কি খুব বেশি?

- হ্যা, কথা বলতে বিরক্ত লাগতেছে তুমি এখন রাখো পরে কথা বলবো নে।

- তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো...

- প্লিজ নাঈম, ভাল্লাগতেছে না এখন। তোমার কথা পরে বইলো।

- আ-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি একটু ঔষধ খেয়ে তারপর ঘুমিয়ো?

- ঠিক আছে...বাই !!

- আচ্ছা। বাই...







দৃশ্যপটঃ ০২
সময়ঃ রাত ৯.৪৫

আবার ঐশীর ফোন বাজছে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঐশীর ঠোটে কিঞ্চিৎ হাসি দেখা গেল। রাফি ফোন দিয়েছে। রাফির সাথে ঐশীর বেশ কয়েকদিন ধরে কথা হয়। দারুন একটা ছেলে। যেমন কথাবার্তা তেমন ব্যক্তিত্ববোধ। রাফি যখন কথা বলে ঐশী এক মনে ওর কথা শোনে আর অবাক হয়ে ভাবে একটা ছেলে এতো সুন্দর করে কিভাবে কথা বলে? রাফির সাথে এখনো ঐশীর দেখা হয় নি। তবে ঐশী তার ভাবনা চিন্তায় নিজের মত করে রাফিকে সাজিয়ে নিয়েছে। আজ সন্ধ্যা থেকেই ঐশী রাফির ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলো। রাফি নাকি ওকে কি জরুরী কথা বলবে...

- হ্যালো

- হ্যা, কি করো??

- কি আবার করি, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এতো দেরি করলা কেন ফোন দিতে?

- আর বইলো না। একটু বিজি ছিলাম।

- তুমি না বলছিলা কি জরুরী কথা বলবা?

- হ্যা, আসলে আমরা তো অনেকদিন ধরেই কথা বলতেছি। চলো কালকে দেখা করি...

ঐশীর বুকের ভেতরটা ধুকধুক করতেছে। ও নিজেও তো এটাই চায়। ওর কল্পনার সাথে রাফিকে মিলিয়ে দেখতে চায়...

- কা-কালকেই দেখা করবে? আচ্ছা কোথায় বলো??

- তোমার বাসা তো ধানমন্ডীতে তাই না? তুমি কালকে বিকাল ৩টায় ২৭ নাম্বারে চলে এসো।

- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি সময় মতো চলে আসবো।

- আচ্ছা এখন রাখি তাহলে?

- আচ্ছা...টাটা...

- হ্যা, টাটা...





দৃশ্যপটঃ ০৩
সময়ঃ বিকাল ৩.৩২
চয়ন'স ক্যাফে, ধানমন্ডী #২৭


ঐশী চতুর্থ বারের মত ঘড়ি দেখলো। প্রায় আধঘন্টা হয়ে এসেছে ঐশী এখানে বসে আছে রাফির কোন খবর নাই। রাফিকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি। ঐশীর খুব মন খারাপ হচ্ছে। গুনে গুনে আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করবে তারপরেই বাসায় চলে যাবে, মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে ঐশী। ঠিক তখনই কালো টি-শার্ট আর ব্লু জিন্স পড়া একটা ছেলে দরজা ঠেলে ক্যাফেতে ঢুকলো। সানগ্লাসটা খুলে এদিক-সেদিক তাকিয়ে ঐশীর টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো ছেলেটি।

- তুমি ঐশী তাই না?

- কি দেখে চিনলে?

- টেলিপ্যাথি দিয়ে চিনেছি। দুইজনেরই তরংগ দৈর্ঘ্য সমান তো তাই সমস্যা হয় নি...

- ও আচ্ছা। সবার তরংগ দৈর্ঘ্যই মাপতে পারো তুমি?

- না, সবারটা পারি না। তোমারটা কেন যেন পারলাম।

- এজন্যই আধঘন্টা দেরি করে এসেছো?

- উত্তরা থেকে এই পর্যন্ত আসতে কতবার ট্রাফিক সিগনালে আটকাতে হয় তুমি জানো? যেই জ্যামে ছিলাম আমার তো মনে হচ্ছে আমি অনেক তাড়াতাড়িই চলে এসেছি।

- ও আচ্ছা, তাই না??

- হ্যা তাই। তোমাকে আসতে বলছি একটা কথা বলার জন্য...

- কি কথা?

- কথাটা যদিও ফোনেই বলা যেত। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে কথাটা আমার তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলা উচিৎ।

- কি বলবে? বলো...

রাফি টেবিলের উপরে রাখা ঐশীর হাতের উপর আলতো করে হাত রাখলো,

- প্রথম যেদিন তোমার সাথে কথা বলেছিলাম সেদিন তোমার কথা আমাকে পাগল করে ফেলেছিলো। আর আজ তোমার সামনে বসে মনে হচ্ছে আমি এই গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটির সামনে বসে আছি। তুমি কি আমাকে এভাবে করে সারা জীবন তোমার হাতটা ধরে থাকার সুযোগ দিবে?

ঐশী এই ছেলেটাকে যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। রাফি ওর ভাবনাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। শুধু পোষাকে নয়, কথাবার্তা আর অঙ্গভঙ্গিতেও রাফি প্রচন্ড স্মার্ট। ঐশীর হঠাৎ নাঈমের কথা মনে পড়লো। নাঈমের সাথে ওর রিলেশন আজ প্রায় চার বছর। সেই স্কুল থেকে ওদের পরিচয়। কিন্তু ঐশীর বরাবরই মনে হয়েছে নাঈম ওকে মোটেও বোঝে না। বরং সব বিষয়েই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। তাছাড়া নাঈম অনেকটা সেকেলে, ফ্রেন্ডদের সামনে ঐশী কখনোই নাঈমকে নিয়ে যেতে পারে না। ঐশী আর ভাবতে পারছে না ও চোখ তুলে রাফির দিকে তাকালো। রাফি এক দৃষ্টে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ঐশী ভাবছে, যে এতো সুন্দর করে ভালোবাসার আহবান করতে পারে তার ভালোবাসা নিশ্চই আরো সুন্দর।

ঐশী ওর অন্য হাতটা রাফির হাতের উপরে রাখলো। মুখে ঈষৎ হাসি টেনে রাফির কথার জবাব দিলো...

- এতোগুলো ভালোবাসা নিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হাত ঐশী কিভাবে ফিরিয়ে দেবে? :)





....তিনদিন পর





দৃশ্যপটঃ ০৪
সময়ঃ দুপুর ২.১৬
ধানমন্ডী, লেকের পাড়...


ঐশী আর রাফি বসে আছে একটা শিমুল গাছের নিচে। আজ রাফিই আগে এসেছে। গত তিনদিনের প্রতিদিনই ওদের দেখা হয়েছে। প্রতিদিনই ওরা কোথাও না কোথাও বসেছে গল্প করেছে। ঐশী ইতিমধ্যেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করে দিয়েছে রাফিকে নিয়ে। রাফি ওর যথেষ্ট কেয়ার নেয়, সব সময় ওকে সময় দেয়, ওর সব কথা মেনে নেয়। ঐশী নিজেকে বোঝায়, 'নাহ, ও কোন ভুল করে নি। রাফিই ওর যোগ্য।'

নিরব হয়ে থাকা পরিবেশটায় রাফিই প্রথম কথা বলে ইউঠলো,

- কি ব্যাপার চুপ করে আছো যে?

- না, কিছু না। এমনিই... আজকে এত তাড়াতাড়ি আসতে বললা কেন?

- ও আচ্ছা, আমার একটা ফ্রেন্ড অসুস্থ্য। ওকে দেখতে যেতে হবে। তাই ভাবলাম তোমাকেও সাথে করে নিয়ে যাই। এ জন্যই তাড়াতাড়ি আসতে বলছি।

- তোমার ফ্রেন্ড, আমি গিয়ে কি করবো শুধুশুধু?

- আহা, আমি আমার সব ফ্রেন্ডকে তোমার কথা বলছি আর ও অনেক খুশি হবে তোমাকে দেখলে।

- কোথায় তোমার ফ্রেন্ডের বাসা?

- এইতো ঝিকাতলায়...চলো তাহলে দেরি না করে এখনই যাই?

- আচ্ছা চলো...




দৃশ্যপটঃ ০৫


নাঈমের আজ দুইদিন ধরে প্রচন্ড জ্বর। গতরাতে সে জ্বরের ঘোরে আজেবাজে প্রলাপ বকেছে। নাঈমের পড়ার টেবিলে বইয়ের স্থান দখল করে নিয়েছে একগাদা ঔষধ আর পানির বোতল। নাঈম মফস্বলের ছেলে ঢাকায় মেসে থেকে পড়াশুনা করে। প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র হিসেবে পাড়াতে নাঈমের বেশ নামডাক ছিলো। তবে ওর ভাগ্যটা বরাবরই খারাপ। মেধাবী ছাত্র হয়েও কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স হয় নি। তাই অগত্যা ভর্তি হতে হয়েছে ঢাকার একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে।

আজ নাঈমের অনেক মন খারাপ।

মন খারাপ হলে নাঈম হয় ওর মায়ের সাথে নয়তো ঐশীর সাথে কথা বলে। পৃথিবীতে এই দুইজন মানুষই আছে যারা ওর মনটাকে বোঝে। তবে ইদানিং নাঈম ঐশীকে বুঝতে পারে না। গত তিনদিনে ঐশী ওকে একবারও ফোন দেয় নি। ও ফোন দিলেও ঐশী রিসিভ করে না। আর যদিও করে তাহলে মাথাব্যাথা, ঘুম আসতেছে, পড়া আছে ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে ফোন রেখে দেয়। প্রায় রাতেই ঐশীর ফোন বিজি থাকে। তবে নাঈম এগুলো নিয়ে ভাবে না। ঐশীর অনেক ফ্রেন্ড, ও প্রায়ই ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ফোনে আড্ডা দেয়। তাছাড়া নাঈম-ঐশী একে অপরকে অনেক ভালোবাসে আর অনেক বেশি বিশ্বাস করে। ঐশীকে নিয়ে কোন সন্দেহকে নাঈম কখনোই ওর মনে স্থান দেয় না।

নাঈম মনে মনে ভেবে রাখে, একটু সুস্থ্য হলেই ঐশীর সাথে দেখা করতে যাবে।




দৃশ্যপটঃ ০৬
সময়ঃ বিকালঃ ৩.০৫
২৭/৩ ঝিকাতলা


চতুর্থ তলায় উঠেই দরজায় নক করলো রাফি। প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো রাফির বন্ধু রাহাত।

ওদের দুইজনকে নিজের বেডরুমে নিয়ে বসালো রাহাত। বসেই এদিক সেদিক তাকিয়ে রাহাতের উদ্দেশ্যে ঐশীর প্রশ্ন,

- আপনি না অসুস্থ্য?

- 'হ্যা, ছিলাম একটু অসুস্থ্য। দুপুর থেকে অনেকটা সুস্থ্য।' হেসে উত্তর দিলো রাহাত।

ঐশী চকিতে একবার রাফির দিকে তাকালো। এরপর রাফির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো,

- আর কাউকে দেখছি না যে...??

- 'রাহাত এখানে একাই থাকে। ওর বাবা-মা সাভারে থাকে ওখানে ওদের আরেকটা বাড়ি আছে।'

হঠাৎ রাহাত উঠে দাঁড়িয়ে রাফির উদ্দেশ্যে বললো,

- দোস্ত, তোরা আসছিস ভালোই হইছে। আমার একটু বাইরে যেতে হবে। তোরা গল্প কর আমি একঘন্টার মধ্যেই আসতেছি...

- এখনই যাবি?

- হ্যা দোস্ত, এখনই যেতে হবে।

- আচ্ছা যা। তবে একঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসবি কিন্তু...

- ঠিক আছে দোস্ত, আমি বের হচ্ছি তুই একটু দরজাটা লাগিয়ে দে



রাফি দরজা লাগিয়ে এসে ঐশীর পাশে বসলো।

ঐশীর একটু ভয় ভয় করছে কিন্তু রাফির চোখের দিকে তাকালেই ও সেখানে ভরসা খুঁজে পায়। রাফি ওর কিছুটা কাছে সরে আসে। ও কিছু বলতে যায় কিন্তু রাফি তার একটা আঙ্গুল ঐশীর ঠোঁটে উপর রেখে ওকে থামিয়ে দেয়। ঐশী ওর কোমরের কাছে রাফির একটা হাত আবিষ্কার করে। আরও আবিষ্কার করে ঐশী নিজেকে আটকাতে পারছে না, বরং মনে হচ্ছে রাফির কাছেই ও নিরাপদ।

...তবে আবিষ্কার করার আরো অনেক কিছুই ছিলো যা ঐশী আবিষ্কার করতে পারে নি।



দৃশ্যপটঃ ০৭
সকালঃ ১০.২৫


ভার্সিটিতে আসতে আসতে আজ অনেক দেরি করে ফেলেছে নাঈম। অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই ক্লাসরুমে ঢুকলো ও। ঢুকেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো, এখনো ক্লাস শুরু হয় নি। পেছনের দিকে কয়েকটা ছেলে গোল করে বসে হৈ-হুল্লোড় করে যাচ্ছে। সেখান থেকেই কেউ একজন হাত তুলে নাঈমকে ডাকলো,

- নাঈম, এদিকে আয়। রাফির কান্ড দেখে যা।

নাঈম এগিয়ে যায়। আড্ডার কেন্দ্র আলোকিত করে রেখেছে রাফি। রাফি ওর ব্যাচের সবচেয়ে মজার ছেলে। সহপাঠি থেকে শুরু করে টিচার পর্যন্ত সবার সাথেই ও অনেক মজা করে কথা বলে। যেকোন আড্ডাকে জমিয়ে ফেলতে রাফির কোন জুড়ি নেই।

আজ রাফির হাতে একটা মোবাইল ফোন। সবাই গোল হয়ে ফোনটার দিকে ঝুঁকে আছে। একটু পর পর তারাই উল্লাস-ধ্বনি করে উঠছে। নাঈমও ঘটনা কি দেখার জন্য এগিয়ে যায়। পাশের একজন একটু সরে নাঈমকে দেখার সুযোগ করে দেয়। নাঈম দেখে, দেখে এবং দেখে…

নাঈম দেখতেই থাকে, ওর কাছে সবকিছু কেমন যেন ঘোরের মত লাগে। নাঈম ওর পায়ের নিচের মাটির অস্তিত্বকে অনুভব করতে চায় কিন্তু ও পারে না। তবুও ও দেখতেই থাকে। আবছাভাবে কিছু উল্লাস-ধ্বনি ওর কানকে স্পর্শ করে। তবুও ওর তাকিয়ে থাকা থামে না। জাগতিক সব অনুভুতি যেন ওকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।




দৃশ্যপটঃ ০৮



ঐশীর কপালের ভাঁজগুলা অনেকটা স্থায়ী হয়ে গেছে। আজ ছয়দিন ধরে রাফির ফোন বন্ধ। কোন রকম যোগাযোগ করে নি রাফি এ কয়দিন। গতকাল ঐশী ঝিকাতলায় রাহাতের বাসায় গিয়েছিলো কিন্তু সেখানে রাহাতকেও পায় নি।

‘হঠাৎ কি হলো রাফির?’ ঐশীর মনে অজানা আশংকা।

ঐশী বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের দিকে তাকিয়ে অনেকটা আঁতকে ওঠে ঐশী। সেখানে রাফির ম্যাসেজ। রাফি ওকে ওর মেইল চেক করতে বলেছে।

ঐশী ম্যাসেজ দেখেই রাফির নাম্বারে ফোন দিয়েছে। কিন্তু নাম্বার বন্ধ।

ঐশী ল্যাপটপটা নিজের কাছে টেনে নেয়। ইনবক্সের শুরুতেই দেখে এ্যাটাচমেন্ট সহ একটা মেইল। ঐশী ভয়ে ভয়ে মেইলটা ওপেন করে। সেখানে একটা ভিডিও ক্লিপ।

ঐশী ক্লিপটা প্লে করে। অবাক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনের দিকে। ওর চোখের পলক পড়ে না। ঐশী মুহূর্তের জন্য বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে। ও অবাক হবে না ভীত হবে ভেবে উঠতে পারে না।

হঠাৎ ও সৎবিৎ ফিরে পায়। ল্যাপটপটা দূরে ছুড়ে ফেলে। নিজের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় ওর শরীর রি রি করে ওঠে।



দৃশ্যপটঃ ০৯



নাঈমের মাথার ভেতর আগুন জ্বলছে। ওর ইচ্ছে করছে পুরো শহরটাই আগুনে জ্বালিয়ে দিতে। সন্ধ্যা থেকে নাঈম একের পর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছে। তবুও ওর মাথা থেকে কিছুতেই ব্যাপারটা সরাতে পারছে না। পুরো দৃশ্যটা ওর চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে।

ঐশী কিভাবে পারলো?

ও তো কোনদিন ওর ভালোবাসায় কোন কার্পণ্য করে নি। তাহলে ঐশী কেন ওকে এমন ধোঁকা দিলো? কি অপরাধ ছিলো ওর? কেন ওর বিশ্বাসের সাথে এমন বেঈমানি করলো ঐশী? ওর আবেগগুলোর কি কোনই মূল্য ছিলো না ওর কাছে?


নাঈমের কিছু একটা করতে হবে। কিছু না করলে ওর কিছুতেই শান্তি হবে না। কি করবে ও…??


নাহ, নিজের ক্ষতি করবে না ও। ওকে ঘিরে ওর বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্ট নাঈম জানে। সে কিছুতেই নিজের বাবা-মাকে এ শাস্তি দিবে না। বরং মানুষের স্বপ্ন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে শাস্তি তাদের প্রাপ্য। এ শাস্তি তাদেরই পেতে হবে।

কিন্তু কাকে শাস্তি দেবে নাঈম?

যাকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছে তাকে? যার কাছ থেকে ভালোবাসার আবেগগুলো বুঝতে শিখেছে তাকে? ঐশী না হয় সামান্য ভুল করেছে। কিন্তু ঐশীর ভুল তো কখনোই ওদের ভালোবাসার চাইতে বড় নয়। ওদের ভালোবাসার চাইতে বড় এই পৃথিবীতে আর কিছুই হতে পারে না।


নাঈম তার সীদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। ও ঐশীর পাশে থাকবে। ঐশীর হাত ধরে ওকে এই ঘৃণ্য শহর থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে নাঈম। কোনকিছুই যেন আর কোনদিন ঐশীকে স্পর্শ করতে না পারে।




দৃশ্যপটঃ ১০



ক্রিং ক্রিং

- হ্যালো দোস্ত…
- দোস্ত বলিস না আমাকে। আমার ঘৃনা হয় যে তুই আমার ফ্রেন্ড ছিলি।



ক্রিং ক্রিং

- হ্যালো
- ঐশী তুই কি করতেছিস এইগুলা? তোর জন্য আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না… সবাই শুধু বলে ‘তুই ঐশীর ফ্রেন্ড না’?



ক্রিং ক্রিং

- হ্যালো
- দোস্ত, তুই কিছু ভাবিস না দেখিস কিচ্ছু হবে না…



ক্রিং ক্রিং

- হ্যালো
- দোস্ত যা দেখাইলি না মাইরি… চরম সেক্সি লাগতাছিলো তোরে… বাইরের মানুষ আইসা মজা নিয়া যায় আর আমরা ফ্রেন্ড হইয়া কিছুই পাই না… আমাগোরেও মাঝে মইদ্ধ্যে দিস একটু…


ঐশী ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে মারে। ওর ভাবতেই অবাক লাগে এরা সবাই ওর ফ্রেন্ড। অথচ আজ সবাই ওকে ঘৃনা করছে। ওরা সবাই আজ ওর জন্য লজ্জিত হচ্ছে, সবাই ওকে নিয়ে উপহাস করছে। অথচ ওরা সবাই ঐশীর খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলো।

আজ জানে নি তবে কাল অবশ্যই ওর বাসার সবাই জানবে। খারাপ বিষয়গুলো বাতাসের আগে ছড়ায়। ঐশীর বাবা যখন জানবে সেই দৃশ্যটা কল্পনা করেই ওর মেরুদন্ডের ভেতর দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়। কিভাবে সহ্য করবে ওর বাবা? নিজের এতো আদরের মেয়ের এমন দৃশ্য কি সহ্য করা যায়?

আর নাঈম??

নাঈমের কথা মনে পড়তেই ঐশীর চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কাল রাত থেকে নাঈমের কথা ভেবে এমন অনেক অশ্রু গড়িয়েছে। ছেলেটা ওকে সত্যিই ভালোবাসতো। ও ধোঁকা দিয়েছে ওকে। বেঈমানি করেছে ওর ভালোবাসার সাথে…

নাহ, ঐশী এই মুখ কাউকে দেখাবে না। বাবা, মা, নাঈম কাউকে না।

ও কালকের সকাল দেখতে চায় না, দেখতে চায় না ওর বাবা-মার সজল চোখ, চায় না ওর আর কোন বন্ধু ওর কথায় লজ্জিত হোক। বরং ও নিজেই চলে যাবে। পুরো পৃথিবী ওর জন্য কলুষিত হোক ও তা চায় না।





দৃশ্যপটঃ ১১



ঐশী ওর টেবিলের উপরে রাখা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। টিক টিক করে সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরেই যাচ্ছে। ঘড়িটার পাশেই পটাশিয়াম সায়ানাইডের একটা শিশি। ঐশী চোখ ফিরিয়ে সেদিকে তাকায়। ওর চোখ দুটি ভিজে আসতে চায় কিন্তু ও আর কাঁদবে না। চোখ মুছে শিশিটা হাতে নেয় ঐশী। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে গাড়ো রঙের তরলটুকুর দিকে। তারপর চোখ বন্ধ করে তরলটুকু গলায় ঢেলে দেয়।

ওর ফোনটা বাজছে, বেশ অনেক্ষন ধরেই বাজছে। ঐশীর এখন আর কারো ফোন ধরতে ইচ্ছা করছে না। ফোনটা বন্ধ করার জন্য ও উঠে দাঁড়ায়। বন্ধ করতে গিয়েও একটু থমকে দাঁড়ায় ঐশী, নাঈমের কল। কি মনে করে কলটা রিসিভ করে ও…

- হ্যালো, ঐশী…

- হ্যা

- ঐশী, আমি তোমাকে ভালোবাসি, সবসময় অনেক ভালোবাসি। চলো আমরা দু’জন অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো।


ঐশীর মনে হচ্ছে শব্দগুলো অনেক দূর থেকে আসছে। ও ফোনটা ধরে রাখতে পারে না। বিছানার উপর বসে পরে। আবছাভাবে এখনো শুনছে নাঈম হ্যালো, হ্যালো, বলে যাচ্ছে। নাঈমের ভালোবাসায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা ঐশীর নেই। ওর চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।
সম্ভবত শেষ দু’ফোটা জল।




-- আইভান
৫ই ডিসেম্বর ২০১৪ইং
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×