somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শচীন, আমিও ছিলাম।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাকিব আল হাসান প্রথম আলোতে আর কলামের শুরুতেই লিখেছেন, 'লেখাটা লেখার আগে শচীন টেন্ডুলকারের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিলো বোধ হয়। কারণ আমি মনে করি টেন্ডুলকারকে নিয়ে কোনো কিছু বলা বা মন্তব্য করার জায়গাতেও হয়তো আমরা নেই। তিনি ক্রিকেট ঈশ্বর। ক্রিকেট ঈশ্বরকে নিয়ে আপনি কী বলবেন?' বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের লেখায় এ কথা পড়ার পর থেকে তাঁকে নিয়ে একটা শব্দ লেখাও ধৃষ্টতা মনে হচ্ছে। আসলেই তো, 'ঈশ্বর'কে নিয়ে মন্তব্য কিসের?

মন্তব্য না। স্রেফ কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করি। ক্রিকেটে আমার হাতেখড়ি '৯৬ বিশ্বকাপ থেকে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অ্যারেনায় এসেছে তারও কয়েক বছর পরে। তারপরও শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলতোই কালে ভদ্রে। তাই ক্রিকেট দেখা শুরুই শচীনকে দিয়ে। ক্রিকেট বলতে বেশ কয়েক বছর শুধু শচীনকেই বুঝতাম। একটা জেনারেশনে একটা খেলা পরিচিত হয়েছে একটা প্লেয়ারের নামে! আমাদের জেনারেশনকে রেসিং বললে যেমন মাইকেল শুমাখারের কথা মনে হয়, গলফ বললেই টাইগার উডস্ִ, সাঁতার বললে মাইকেল ফেলপসের নাম চলে আসে তেমনি ক্রিকেট বললেই সেটা শচীন টেন্ডুলকার। এটাই জানি। সম্ভবত: আমার জেনারেশনটা তাইই জানে। সেদিন তো ক্রিকেটের আরেক বরপুত্র ব্রায়ান লারা রাখঢাক না রেখে সরাসরিই বলে দিলেন, ক্রিকেট মানেই শচীন। ক্রিকেট আর শচীন সমর্থক! ক্রিকেট লেখিয়ে এড স্মিথ একটা লেখায় লিখেছিলেন, 'শচীন ইজ দ্যা অ্যাম্বাসেডর অফ ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট'।

যতটুকু রেকর্ডে পাওয়া গেলো তাতে দেখলাম টেস্ট-ওয়ানডে-টি-টুয়েন্টি আর ফার্স্ট ক্লাস-লিস্ট এ ধরে শচীন টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারে রান করেছে ৫০১৯২। চার-ছক্কা বাদ দিয়ে এই রান করতে যদি দৌড়াতে হতো তাহলে টেন্ডুলকারকে অতিক্রম করতে হতো প্রায় ১০০৯ কিলোমিটার! ২০০ টেস্ট, ১১০ টা ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ, ৪৬৩ টা ওয়ানডে, ৮৮ টা লিস্ট এ আর ৯৬ টা টি-টুয়েন্টির ম্যাচ ডে গুলোও যদি হিসেব করা হয় তাহলেও শচীন ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের প্রায় ৬ বছরের সমান দিন ক্রিকেট মাঠেই কাটিয়েছেন! খেলেছেন বিশ্বের ৯০ টা মাঠে! টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারে এতো এতো রেকর্ড আর পরিসংখ্যানের ছড়াছড়ি যে তা একজায়গায় করলে কয়েক খন্ডের পরিসংখ্যান আর ইতিহাসের বই হয়ে যাবে। ওসব তাই এ লেখায় বাদ থাক।

আজকে সকালে টেন্ডুলকারের একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম স্টার স্পোর্টসে। ২৪ বছর ক্রিকেট খেলার পর একজন ক্রিকেটার বলছেন, 'ক্রিকেট ইজ লাইক অক্সিজেন টু মি। স্টিল ক্যান্ট থিংক মাই লাইফ উইদআউট ক্রিকেট!' তার মানে সে সম্ভবত: অবসর নিতে হয়, অন্যদের জায়গা করে দিতে হয় তাই অবসরে যাচ্ছে, তা না হলে আরও খেলতো! ক্রিকেটের প্রতি এতবছর পরও কী আবেগ, কী ডেডিকেশন, কী প্যাশন! আরেকটা জরিপ দেখলাম স্টারস্পোর্টসেই। শচীনের কোন জিনিসটা মিস করবেন? বেশিরভাগই তার ক্রিকেট, ড্রাইভ এসব বাদ দিয়ে যেটায় ভোট দিয়েছে তা হলো, 'পার্সোনালিটি'! এমন নিপাট ভদ্রলোক, একবিন্দু বিতর্কহীন দীর্ঘ ক্যারিয়ার কে দেখেছে? কোথায়, কবে?

ছোটকালে দেখতাম, কে সেরা? লারা, শচীন না সাঈদ আনোয়ার? তখন, একটা সময় পর্যন্ত বাকি দুজনও শচীনের সাথে পাল্লা দিয়ে সেঞ্চুরী করতো। সেটা এক সময় থেমে গেলো। বাকি দুজন থেকে ওয়ানডেতে বিশাল ব্যাবধানে এগিয়ে গেলেন টেন্ডুলকার। তার পরেও টিকে ছিলো, টেস্টে কে সেরা, লারা না টেন্ডুলকার? বহু বছর হয়ে গেলো শচীনের উইলো এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছে। এখন গত কয়েক বছর ধরে একটা প্রশ্ন ঘুরছে, ক্রিকেটের সেরা কে? ব্রাডম্যান না টেন্ডুলকার? কথাটা রাফ অ্যান্ড টাফ শোনাবে, ডনের উপর পরিপূর্ণ সম্মান রেখেই লিখছি, আমার মতে টেন্ডুলকার ব্রাডম্যান থেকে বেশ কয়েক ধাপ উপরে। একজন প্লেয়ার মাত্র ৫২ টা টেস্ট খেলেছেন আরেকজন ২০০ টেস্ট, সাথে ৪৬৩ টা ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি; টেন্ডুলকারকে মানিয়ে নিতে হয়েছে অনেক কিছুর সাথে। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের সাথে ক্রিকেট খেলতে হয়েছে শচীনকে।

ক্রিকেটের নতুন সব রুলের সাথে নিজের খেলা পরিবর্তন করতে হয়েছে সময়ের সাথে। ডনের এসব প্রতিকূলতার মাঝ দিয়ে যেতেই হয়নি। এক ধরণের ক্রিকেটে, এক ধরণের নিয়ম কানুনের মনযোগ দিতে পেরেছেন। তার থেকে বড় সব ধরণের ক্রিকেটেই শচীন সফল। ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রায় সবসময়ই সেরাদের কাতারেই থেকেছে। হ্যা, ব্রাডম্যানের সময়ে ওয়ানডে-টি টুয়েন্টি ছিলো না। থাকলেও ব্রাডম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৫ হাজারের উপরে রান করে যেতে পারতেন? এত দীর্ঘ ক্যারিয়ার? শতকের শতক? সাথে ১০০ কোটি সমর্থকের চাপ, বিশ্বকাপ প্রাপ্তি তো আছেই। ভিন্ন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মেলানো ঠিক না। সেটা সমর্থনও করি না। কিন্তু শচীনের ক্ষেত্রটা আলাদা। এবং সেখানে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, শচীনই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। ক্রিকেটের ইতিহাসেরই সেরা। আমার কথা যদি অতিরঞ্জিত মনে হয় তবে এমন একজন প্লেয়ারের মন্তব্য শেয়ার করি যিনি ইন্ডিয়ার চিরশত্রু পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়। হানিফ মোহাম্মদ। হানিফ মোহাম্মদ শচীন আর ব্রাডম্যানের তুলনায় বলেছিলেন, 'I'm one of those fortunate who have seen Bradman and Tendulkar bat in my lifetime and Tendulkar is the best batsman I've seen in my life.' চিরশত্রু যখন এভাবে বলে তখন বুঝে নিতে হবে কথাটা আসলেই সত্য।

এবং একটা ফালতু প্রসঙ্গ। অনেকেই নাকি বিরাট কোহলির মাঝে শচীনকে দেখছেন! শুধু স্টার স্পোর্টসের ভারতীয় আর পাকিস্তানিদের কমেন্ট শুনে এটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। ওরা তো কতকিছুই বলে। সেদিন দেখলাম সাকিবও সম্ভাবনা অর্থে ওর নাম এনেছে! ওয়েল, আমার মনে পড়ে ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে ব্যাটিং স্টাইল আর একই দৈহিক গড়নের কারণে শেওয়াগকেও শচীনের সাথে তুলনা করা হতো। আজকে শচীন যখন টেস্ট খেলছে তখন, প্রায় একই সময়ে শেওয়াগ খেলছে ফার্স্ট ক্লাস! দ্যা ফ্যাক্ট ইজ দ্যাট। শুধু প্রতিভা দিয়ে লিজেন্ড হওয়া গেলে আজ শচীনের উপরে থাকতো বিনোদ কাম্বলি। প্রতিভার সাথে খেলাটার প্রতি আবেগ, ভালোবাসা, মনসংযোগ, জীবনযাপন পদ্ধতি; এরকম আরও অনেক কিছুর সমন্বই শচীনের আজকের ক্যারিয়ার। ওয়েট জাস্ট থ্রি-ফোর ইয়ার, হু নোস, বিরাট মে হ্যাভ বিন লস্ট! ঠিক প্রেডিকশন না, তবে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি আর কেউই টেন্ডুলকারকে ছুঁতে পারবে না। আর বিরাটের তো কেবল শুরু। শচীনের ৫ ভাগের এক ভাগও তো অতিক্রম করতে পারেনি! এখনই? ক্রিকেটের যে ধরণের বানিজ্যকরণ হচ্ছে তাতে মনে হয়না কোনো ক্রিকেটার তার ক্রিকেটের প্রতি আবেগ শচীনের মত দুই যুগ সময় ধরে রাখতে পারবে। তাই নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, শচীন সিম্পলি আনটাচেবল।

শুরুটা করেছিলাম সাকিবের কলামের প্রথম কয়েকটা লাইন দিয়ে। শেষটাতেও সাকিবের একটা লাইন ধার করি। সাকিবের কলামের শিরোনাম ছিলো, 'টেন্ডুলকারের সঙ্গে একই ফ্রেমে আমিও আছি'। লেখাটায় সাকিব বলেছিলো, শততম সেঞ্চুরীটা ওর বলেই রান নিয়ে পূরণ করেছিলো টেন্ডুলকার। তাই যতবার ক্রিকেট ইতিহাসের ওই ঐতিহাসিক মুহূর্তটা দেখাবে, ততবার সাকিবকে দেখাতে হবে। সাকিবের মত একই ফ্রেমে না থাকতে পারলেও ওই ম্যাচটাতে মিরপুরের গ্যালারিতে আমিও ছিলাম। টেন্ডুলকারের শততম এবং শেষ সেঞ্চুরীর সাক্ষী আমিও। এই ছবিটা সেই শততম সেঞ্চুরী করে ব্যাট দেখানোর মুহূর্তের। আমার ৫ মেগাপিক্সেলের মুঠোফোন ক্যামেরায় বন্দি সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তখানি।
#ThankYouSachin
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×