মাত্রই কয়েক মাস আগে পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং শ্রমজীবি শিশুদের নিয়ে একটা স্কুলের স্বপ্ন দেখেছিলো গুটিকয়েক তরুণ। সেই মুহুর্তে পুজি বলতে ছিলো স্রেফ ইচ্ছাশক্তিটা। সেই ছিলো শুরু। তারপর কিছু আলোচনা, পরিকল্পনা, অনলাইনে স্বপ্নটা সমমনা আর বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া আর একত্র হওয়া। শেষমেশ বাংলাদেশের একটা শহরতলীতে অনলাইনের মাধ্যমে 'ঘাসফুল শিশু নিকেতন' নামে একটা স্বপ্ন পূরণের অধ্যায় লেখা হলো। এবং জানামতে এটাই ঢাকার বাইরে কোনোরকম পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত এবং শ্রমজীবি শিশুদের জন্যে একমাত্র স্কুল।
হ্যা, সদ্যই পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং শ্রমজীবি শিশুদের নিয়ে একটা স্কুল চালু হয়েছে। চায়ের দোকানের কাজ রেখে, রেল লাইনের ছোটাছুটি বাদ রেখে বা প্লাস্টিকের কৌটা না কুড়িয়ে ২৪ জন শিশু শুক্রবার বাদে নিয়মিত সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত পড়াশুনার মাঝে থাকছে। তাদেরকে বই-খাতা-পেন্সিল সহ যাবতীয় শিক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। একটা শিক্ষিত কিন্তু অভাবী মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যাতে তারও অর্থাভাব কাটে এবং সেও তার পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারে। খেলতে-খেলতে, গাইতে-গাইতে ওরা শিকছে বর্ণমালা, বানান করে শিখছে ফুল-ফলের নাম। গল্প শুনে জানছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সাথে রাস্তায় ফেলে যাওয়া দুটো শিশু, জয় এবং মাসুদের যাবতীয় সবকিছুর ভার নেওয়া হয়েছে। এই ছেলেগুলোকে সম্ভবপর শিক্ষাদান করে তাদের প্রাইমারী-হাই স্কুল পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার পরিকল্পনাও তো রয়েছেই।
আমরা মাত্রই তো ক'জন। ক'জনের প্রচেষ্টায় একটা কিছু দাঁড় করানো যায়, শুরু করাও যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সেটা পরিচালনা করাটা ঠিক এতটা সহজ না। ব্যাপারটা অনেকটা 'স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন' কথাটার ন্যায়। প্রতি মাসে ন্যূনতম পনেরো-বিশ হাজার টাকার প্রয়োজন। স্কুলটা যেহেতু কোনো সংঘ বা রাজনৈতিক দল চালায় না, কোনো কোম্পানির স্পনসরশিপও নেই, কোনো হাজী মুহম্মদ মুহসীন বিরাট কোনো দান-দরবারও করেননি এবং এটা যেহেতু চলে শুধুমাত্র কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর মাস শেষে দেওয়া স্বল্প কিছু টাকায় তাই মাস শেষে আমাদের আবার শূন্য থেকেই শুরু করতে হয়। কোনো মাসে কয়েকজন টাকা বন্ধ রাখলেই আমাদের স্কুল ঘরটার ভাড়া দেওয়া হবেনা। শিক্ষিকার বেতন দিতে পারবো না। নতুন খাতা-পেন্সিলও তুলে দিতে পারবো না শিশুগুলোর হাতে। হয়তো তখন ওরা আবার সেই টি-স্টল, সিএনজির হেলপারি বা রেললাইনের পাশে মার্বেল খেলতে অথবা প্লাস্টিকের বোতল কুড়াতে লেগে যাবে। সত্য ঘটনাটা এটাই। তাই বলে এই না, আমরা এটা থামিয়ে দেবো। হয়তো ২৪ জনের জায়গায় ১২ জনে নেমে আসতে হবে। তবে নিশ্চিত, সেটা ৪ জন হলেও থেমে থাকবে না।
এবার যে কথাটা লিখবো, তাতে পোষ্টের এই পর্যায়ে এসে আপনি এড়িয়ে যাবেন বাকিটা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় সেটা আমি ভালোই জানি। এটাও জানি, আমার ছোটখাটো স্যাটায়ার-ব্লগ যে ক'জন পড়ে এটা তার কয়েক ভাগের এক ভাগও পড়বে না পরবর্তী কথাটুকুর পর। তাতে অবশ্য খুব বেশি কিছু যাবে আসবে না। একজনকেও যদি পাশে পাই, সেটাই পাওয়া। বাই দ্যা ওয়ে, স্কুলটা চালাতে প্রতি মাসে ন্যূনতম পনেরো হাজার টাকার মত খরচ হয় সেটা আগেই লিখেছি। খানিকটা ক্যালকুলেশনে আসি। ১০০ টাকা করে কন্ট্রিবিউট করলেও নিবেদনপক্ষে ১৫০ জনের দরকার হয়। ৫০ টাকা করে করলে ৩০০ জনের। নিয়মিত কন্ট্রিবিউট করার মত সেই সংখ্যাটা আমাদের নেই। আমার ফেসবুক বন্ধু তালিকায় হাজার দুয়েকের বেশি বন্ধু আছে, ব্লগে লক্ষের উপর ব্লগার। একটা মহৎ কাজে কত শত সহস্র মানুষ লাগে। আমাদের লাগবে মাত্র শ' খানেক। জানতে চাচ্ছি একটা কোল্ড ড্রিংকস্ִ বা দু'ট বার্গারের টাকা ২৪ জন শিশুর ভবিষ্যতের জন্যে দিতে আপনি প্রস্তুত তো? প্রস্তুত একঝাক স্বপ্নবোনা তরুণ-তরুণীর একজন হতে?
যেহেতু পুরো প্রক্রিয়াটাই অনলাইন ভিত্তিক তাই স্কুলটার জন্যে একটা ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। লিংক: @[1419582101588361: পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং শ্রমজীবি শিশুদের জন্য ঘাসফুল শিশু নিকেতন]। আছে একটা গ্রুপও। গ্রুপটাতে নিয়মিত স্কুলের কার্যক্রম, কে কত অনুদান দিচ্ছেন তা পাবলিশ করা হয়। গ্রুপের লিংক: Click This Link একটা ওয়েবসাইটও আছে। আপনি কিছু ডোনেট করার আগে কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নিতে ঘুরে আসতে পারেন এসব থেকেও। নির্মলেন্দু গুনের মত করে বলি, আমি বলছি না অনুদান দিতেই হবে, আমি চাই সবাই আমাদের কার্যক্রমের সাথে একাত্ম হোক; আমাদের একটু প্রেরণা যোগাক।
পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং শ্রমজীবি শিশুদের জন্যে প্রতিষ্ঠা হলো 'ঘাসফুল শিশু নিকেতন'।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।