0বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিকমানের উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ00
0জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতা ও বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকতে হবে00
0মৃত্যুদন্ড সমর্থন করে না ইইউ00
0 ভিকটিমদের পূর্ণাঙ্গ আইনী সহায়তা ও আপিলের সুযোগ থাকতে হবে00
0ওয়ান ইলেভেনের সাথে আমরা ১৬ কূটনীতিকের কেউই জড়িত ছিলাম না00
কূটনৈতিক রিপোর্টার : ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত স্টিফেন ফ্রোয়েন বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিকমানের। আন্তর্জাতিকমান ছাড়া অন্য কোন প্রক্রিয়ায় যেনতেন বিচার ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন করে না। এই বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিচার করতে যেয়ে যেন মানবাধিকার এবং সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বর্তমান বিচার প্রক্রিয়ার সাথে ইইউ পুরোপুরি একমত নয়। ইইউ রাষ্ট্রদূত গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত কথা বলেন। রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শামীম আহম্মেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ফ্রোয়েন বলেন, প্রকৃতপক্ষে কেউ যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে থাকলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। তবে বাংলাদেশে মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে যা ইইউ সমর্থন করে না। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার হতে হবে উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ। বাংলাদেশের সংবিধান যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে সেটা সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিকমান বজায় রাখতে হবে। যেমন করে নাজীদের বিচার বা অন্যান্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়েছে সেরূপ হতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকতে হবে।
ওয়ান ইলেভেনের সাথে তিনিসহ পশ্চিমা কূটনীতিকদের জড়িত থাকা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ফ্রোয়েন বলেন, যারা সরাসরি এই অভিযোগ করেন তারা ননসেন্স। বাংলাদেশের জরুরি অবস্থা জারিতে আমরাও বিস্মিত হয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমি, আনোয়ার চৌধুরী বা জার্মানি, ইউকে, ভারতসহ যে ১৬ জন কূটনীতিকে ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়, আসলে তারা কেউই এর সাথে জড়িত ছিলেন না। দেশের রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার এক পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় যাতে জড়িত ছিল সেনাবাহিনী। তিনি আরো বলেন, জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা জড়িত। তারা যদি রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারতেন তাহলে হয়তো ঘটনা হতো অন্য রকম। এছাড়াও আমরা জরুরি অবস্থাকে নীতিগতভাবে সমর্থন করি না। কারণ, এটা মানুষের অনেক মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা ঠিকমত হলে ভবিষ্যতে হয়তো এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর নাও ঘটতে পারে।
ওয়ান ইলেভেনের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও ইইউ রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক সংকট কাটাতে উদ্যোগ গ্রহণের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা চারদলীয় জোট এবং ১৪ দলীয় জোটের সাথে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কথা বলেছি। তবে তাতে কোন কাজ হয়নি। তিনি আরো স্বীকার করেন যে, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির ঘোষিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইইউ। কারণ ঐ নির্বাচন একটি বড় রাজনৈতিক জোট বয়কট করেছিল। ইইউ সদর দফতর থেকে ঐ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানানো হয়েছিল। ২০০৭ সালে মোট ভোটার ছিল ৯ কোটি ৩০ লাখ। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ কোটি ১০ লাখ। এতে প্রমাণ হয় যে, বিপুল ভুয়া ভোটার ছিল এবং ঐ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত আমাদের সঠিক ছিল।
ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশংসা করে ফ্রোয়েন বলেন, তারা ভাল কিছুই করেনি ঢালাওভাবে এ মন্তব্য সঠিক নয়। তারা বিশ্বের রেকর্ডতম স্বল্প সময়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত হয়ে আসেন জার্মান নাগরিক স্টিফেন ফ্রোয়েন। পাঁচবছর পূর্ণ করে আগামী মাসে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। বিদায় নেয়ার একমাস আগে আয়োজিত এই মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান এই রাষ্ট্রদূত তার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের জন্য তিনটি সমস্যাকে বড় হিসেবে তুলে ধরেন। সমস্যা তিনটি হলো জনসংখ্যা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং পানি ব্যবস্থাপনা। হিমালয়ের বরফগলা পানি বাংলাদেশে আসছে নেপাল ও ভারতের ওপর দিয়ে। বাংলাদেশকে তাই পানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থ বিনিয়োগ। বাংলাদেশ চাইলে ইইউসহ অনেক দেশই এগিয়ে আসবে। তিনি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানির পরামর্শ দেন। অন্যদিকে আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তিনি ভারত ও চীন উভয়ের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডিআরইউ মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূত যুদ্ধাপরাধ বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমত নয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।