somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটপাতে একদিন

০৯ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি হাঁটছে সোজা,চলছে শহর তার পাশে,
মেয়েটি ফুটপাতে হাটছে মায়াময় তালে!
একবুক যানজট বাজে আক্রান্ত রোগীর ঢঙে,
হাড় বের করা এই শহরের কষ্টের নিঃশ্বাসে।
মেট্রো রেলের দাঁত ভাঙ্গা পিলারের ফাঁকে,
তুলতুলে লাল কেডস উড়াচ্ছে বেহিসাবে ধুলা,
মেয়েটির হাতে লাল নীল ফুলময় ছাতা সোজা,
টানটান ছায়ায় ঢেকেছে ছেলেটার মাথা!
রঙিন ছায়া দেয়া বনস্পতির মতো সামলায়,
ছেলেটাকে এই ভরদুপুরের ঝাঁজে!
মেয়েটির হাতে রাখা প্রিয় আদুরে ছাতাটা,
দুলছে বাতাসে মেয়েলী মনের মতো খেয়ালে।
দুজনে হাঁটছে দিবানিদ্রার আয়েশী মেজাজে,
ছেলেটার মুখ পাথরের মতো ভাবলেশহীন,
মেয়েটার ঠোঁটে হাসি ছুঁয়ে আছে এককোণ!
মিউজিয়ামের কোন দুর্লভ পোর্ট্রেট,
হঠাত মুক্তি পেলে হাটবে যেমন খেয়ালে,
তেমনি হাঁটছে তারা খুব দুর্বোধ্য ভঙ্গিতে।
পার হলো দুজন শপলা চত্বর, ওভারব্রিজ আর,
পার্কের মোড়!
গোলচত্বরের কেউই জানেনা কি খেলে গোপনে,
বদ্ধ ড্রয়ারে রাখা তাদের মনের ভিতর!

নীরব রাস্তায় কৃষ্ণচূড়ার গাছ বসেছে পাহারায়,
পোস্টারে লালে লাল রাস্তার দেওয়াল।
একজোড়া শালিক বসে আছে, ভিজে একসাড়া,
দেওয়ালে কালিতে আঁকা কাস্তের জোড়া।
ভেঙ্গেই গিয়েছে তারা ব্যর্থ বিপ্লবে!
ছেলে আর মেয়েটি হাঁটছেই ফুটপাতে,
মেঘেরা মেতেছে তাই হালকা বৃষ্টিতে!
বাঁচাতে পানির আঁচ মেয়েটির হাতে ছাতা,
পাখা মেলে ঢেকেছে ছেলেটির মাইনাস চশমাটা,
আদুরে হাতের মতো!

ছাত্রাবাসের ধারে সিগারেটের দোকানে,
জনতা সামলে চলা চাওয়ালা মালেক,
জীবনে এরকম দেখেছে অনেক!
কতোজন হেটে যায় বেশরম এই রাস্তায়,
দেখে দেখে নাকি চোখ তার এখন গিয়েছে পেকে,
তবুও সে চোখদুটো পারেনা সামলাতে।
চোখের পর্দা খুলে ছড়ায় অভদ্র হাসি বিরতিবিহীন,
তাদের দিকে! একটানা মেয়েটার দিকে!
ভাবে এ কেমন জামানা এলো এ বুড়ো বয়সে,
মেয়েরাও ধরে ছাতা অক্কর্মা ছেলেদের মাথাতে!
মেয়েটা শক্ত করে উড়ায় ছাতাটা,
না তাকিয়ে কোনদিকে ভাবলেশহীন,
পার হয়ে আসে বিশ্রী হাসির চায়ের আড্ডাটা!

ফুটপাথ ঘেঁষে পেশির টানে ছুটে রিকশার চাকা,
ঘাম চুয়ে ভিজে পিচের রাস্তাটা।
খুব জোরে বেল দেয় মোটামুটি অকারণে,
এলে কাছাকাছি! উড়ে যায় ফড়িঙেরা বুকভরা ভয়ে।
ছেলেটি পাশেই তার, ইচ্ছা করেই এড়াতে শিখেছে,
রিকশয়ালার বারবার ফিরে দেখা, পানখাওয়া হাসি!
মেয়েটি নির্বিকার! পাথরের মতো হাঁটে,
নড়েনা এতেও তার চোখের পলক।
মনটাকে সম্ভবত স্থির রাখে জায়গামতো,
কঠিন অভ্যাসে!
শুধু দু একটা কৃষ্ণচূড়া ঝরা বাতাসের টানে,
নেমে আসে তাদের ছাতাটার আশেপাশে!

জীবন্ত কেঁচোর মতো একটা মিছিল এলো মাটি ফুড়ে,
গড়িয়ে রাস্তায় নামলো তারা স্লোগানের ঝড়ে-
রক্তের বন্যায় ভাসাবে অন্যায়!
কতগুলো মুখ, উষ্কখুষ্ক চুল, ছেঁড়া জিন্স-
ময়লা শার্ট ছিঁড়ে পাহাড়ের মত ভুঁড়ি সামনে বেড়িয়ে,
আদর্শ রাষ্ট্র জন্ম নেবে তাদের হাতেই!
এই ভেবে দাঁত চেপে হচ্ছিলো পার ধুলা ছড়িয়ে,
নিশ্বাসে চাপ লেগে রাজপথ করে হাঁসফাঁস।
অবচেতনে জমা ক্ষোভ নাকি হায়েনার চোখ,
কি জানি কি খেলে গেলো মিছিলের মাঝে,
স্লোগানের মুখস্থ বাণী ভুলে অকস্মাৎ,
জনা পঞ্চাশেক লোক তাকালো সেদিকে সোজা।
চোখের সামনেই এক অন্যায়ের সংজ্ঞা তাজা।
বলে তারা বিড়বিড়- “এ কেমন অনাচার!”,
“মধ্যদুপুরে কেন ছেলে মেয়ে হাঁটে একসাথে?”,
“ফুলের দোকানে বাড়ছেই কেন প্রেমিকের ভীড়?”
শক্ত মুষ্ঠিতে তারা কন্ঠ বাড়ায়- “শেষ হোক অন্যায়।“
“শেষ হয়ে যাক এই দেশে প্রেমিকের কাল!”
“চাই নতুন সকাল!”
মেয়েটি শুনেছে সবই, তবু নির্বিকার হাঁটে কিছুক্ষণ,
তারপর বদলায় তার হাঁটার রেখাকে বিনা নোটিশে!
ছাতাটা সরিয়ে ফেলে এক লহমার ঝটকায়,
দৃড় বাঘিনীর মতো হাতে নিয়ে ছেলেটির হাত,
আড়াআড়ি পার হয়ে যায় মিছিলের সম্মুখ ভাগ!
থমকায় জনস্রোত, থেমে যায় রোদ!
ঝরা পলাশেরা বলে- তবু প্রেম জয়ী হোক!


৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×