(পাঁচটা বেড রুম, দক্ষিনমুখী জানালা, সামনে লন, ছাঁদে সুইমিং পুল - আর কি কি যোগ করা যায়? স্বপ্নের পোলাও! ঘি ঢালতে কার্পণ্য কি?)
নাঃ আসলে চেষ্টা করছি মনের গহীনে ডুব দিয়ে গোপন ভালোবাসাগুলোকে ধরতে। ভালো তো লাগে অনেক কিছুই, কিন্তু সময়ের বেড়াজাল ঠেঙ্গিয়ে টিকে থাকতে পারে ক'টি? ভালোলাগার ঠুনকো মোহ গুলি সময়ের আগুনে ঝলসাতে ঝলসাতে ভালোবাসার নিঃখাদ সোনায় পরিনত হতে পারে আর ক'টা!
একদম ছোটবেলায় ভিউকার্ড জমাতাম - রাজ্জাক, শাবানা, কবরী আর ব্রুস লীর পারিবারিক ছবি। কি যে ভালো লাগতো কার্ডগুলিকে বিভিন্ন ভাবে সাজাতে আর বার বার নেড়ে চেড়ে দেখতে সে আর বলার নয় ! কিন্তু, ক'দিন? একটা সময় পরে, কার্ডগুলিতে জমতে শুরু করলো ধুলো - তারপর হারিয়ে গেলো এক এক করে সবগুলিই - এখন একটাও নেই। জন্মালো, নতুন ভালোবাসা - স্ট্যাম্প জমানো। এর কাছ থেকে, ওর কাছ থেকে, রাস্তায় পড়ে থাকা চিঠির খাম আর পকেটের সব টাকা (পরিমানে তা খুব অল্পই) উজাড় করে শুরু হলো স্ট্যাম্প জমানো। বলতে নেই, সেই ছোটবেলায় চুরিও করেছি কয়েকটা স্ট্যাম্প। বিভিন্ন দেশের গাছ, পাখি, মানুষ কতরকমভাবে যে সাজিয়েছি, তার ইয়ত্বা নেই। ছিলো আরও কতো ভালোলাগা! সিনেমা হলে বাংলা ছবির অ্যাকশন ভালো লাগতো - টিভি পর্দায় রেসলিং'র মিথ্যা মারামারি তো দেখতেই হতো। কতোদিন রাস্তায় দাড়িয়ে, ক্যানভাসারের কানের মলম আর যৌন সন্ধি তেল বিক্রি করতে দেখেছি, তার ইয়ত্বা নেই - ভালোইতো লাগতো তখন। লাটিম ঘুরাতাম, ঘুড়ি উড়াতাম; সাতার না জানলেও পুকুর দাপাতাম। এভাবেই চলছিলো হরেক রকম ভালোলাগা নিয়ে জীবনের জয়যাত্রা।
এর ফাঁকেই, হঠাৎ করে কখন যেনো ঢুকে পড়েছিলো জীবনের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত প্রধানতম ভালোবাসা - একেবারে সংগোপনে যেমন সকালের প্রথম আলো। সম্ভবত, তখন দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ি। কোন এক পরীক্ষার পর, মা কিনে দিলো "ঠাকুরমা'র ঝুলি ও রূপকথার একশো গল্প"। সেই থেকে গল্পের গল্প হলো শুরু। বই এলো - ঝেটিয়ে বিদায় করলো ভিউকার্ড, স্ট্যাম্প আর যত্র তত্র ঘুরাঘুরি। সারাদিন বসে থাকি বই নিয়ে - রূপকথা আর দেশ বিদেশের কল্প কাহিনি। মা-বাবা আর কতো কিনে দিবে - পড়াশোনা আছে না? আমি আর আমার ছোটো ভাই, টাকা জমাতাম। স্কুলে যাবার টাকা, টিফিনের টাকা। এভাবে সপ্তাহ না ঘুরতেই নতুন কিশোর থ্রিলার, কিশোর ক্লাসিক কিংবা অনুবাদ সিরিজের একটা বই কেনার মতো টাকা জমে যেতো। কিনে নিয়ে এসে শুরু হতো পড়া। কে আগে পড়বে, এই সমস্যার সমাধানে আমরা দু'জন একসাথে পড়েছি ক'তো বই। এখনো কানে বাজে, 'কি শেষ'? কারন, শেষ হলেই পাতা উল্টে পরের পৃষ্ঠায় যাওয়া হবে। মাঝখানে বই রেখে, সর্বোচ্চ পাঁচজন পর্যন্ত একসাথে পড়েছি আমরা - আমরা তিন ভাই বোন আর দু'জন কাজিন। (ওঃ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে জানিয়ে রাখি, 'বউ' এবং 'বই' এদুটির মধ্যে স্বরবর্ণের ক্রমানুসারেই বই আগে আসে। তাই আমার জীবনে যখনই এই দুটি একসাথে কোন দাবী জানাবে, বর্ণের ক্রমানুসারেই তারা সর্বদা গুরুত্ব পাবে।)
আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে বয়স। ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে থাকে বই যদিও স্বাভাবিকভাবেই বদলে যার তাদের চরিত্র ও ধাঁচ। একই সাথে চারপাশের খোলসে জমতে থাকে হরেক রকম ভালোলাগা। শরীরের ভিতর আস্তে আস্তে জেগে উঠে নতুন সত্ত্বা। অনেকটা সময় কেটে যেতে থাকে নগ্ন নারী দেহের কল্পনায়। সময় এবং সুযোগ পাওয়া মাত্রই ছুটে যেতাম ভিডিও ক্লাবে - লজ্জার মাথা খেয়ে অধবোদন হয়ে ভাড়া নিয়ে আসতাম দুই কিংবা তিন মাত্রার ছবি। মোহের স্বাভাবিক নিয়মেই তারপর একসময় কেটে যেতে থাকে এই ঘোর। আঠার মাসের মধ্যে প্রায় শতাধিক তিন মাত্রার ছবি দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন আমার ভাবতেও অসহ্য লাগে এরকম কোন কিছু আবাব দেখার। একসময়ের ভালোলাগার কি লজ্জাকর পরিনতি।
আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে পরিধি, একই সাথে ঝড়ে যেতে থাকে অনাকাঙ্খিত মেদ - আমার ভালোবাসার শরীর থেকে। ক্লাস সিঙ্ েউঠে, প্রথম আমি মেয়ে সহপাঠীর দেখা পেলাম। তার আগে, মেয়ে বলতে, মা এবং বোনকেই চিনতাম। শুরু হলো, মানব সমাজের আদিম তম রহস্যের মুখোমুখী হওয়া - কেন একটা মেয়েকে হঠাৎ করে ভালো লেগে যায়?
পরবর্তী কিস্তিতে সমাপ্য
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




