১.
১৭.০৯.২০২০
সকাল ১১টা।
সকালের রোদটা তেঁতে উঠেছে মোটে।
একটা ট্যাক্সি এসে থামলো গলির মুখে। নামলো মেয়েটি। দিয়া। দিয়া আহমেদ। বয়স ১৯/২০। সবে অনার্সে। পেশায় কিন্ডার গার্টেন টিচার এবং অনলাইন উদ্যোক্তা। পরিপাটি বেশবাস। তার দু'চোখ খুঁজলো কাউকে একটুক্ষণ। ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
গলির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ছেলেটি। ইয়াফী। ইয়াফী আহমেদ। বয়স ২৪/২৫। নিজেকে স্বশিক্ষিত বলতেই পছন্দ করে। পেশায় মেস বাণিজ্য। আজ সেও পরিপাটি...। সপ্তাহের এই একটা দিন সে এটা করে বেশ যত্ন নিয়ে। সে জানে কিছুটা কাট-ছাট হয়ে আজকের দিনের পুরো গল্পটাই শুনবে তার আম্মা এই মেয়েটির মুখে।
আম্মাও আজ সারাদিন ধরে অদ্ভুত এক অপেক্ষায় থাকবে উত্তরার বাসায়। কখন মেয়ে ফিরবে! কখন শুনবে ছেলের কথা! ছেলেটি আম্মার বায়োলজিক্যাল সন্তান হলেও মেয়েটি তার পালিত।
ছেলেটি এক কাপড়ে ঘর ছেড়েছিল কলেজে ভর্তি হয়েই ঘুষখোর বাবার অনৈতিকতার প্রতিবাদে।
মেয়েটি একটি তোয়ালে মোড়ানো হয়ে রাস্তা থেকে এই ঘরে এসেছিলো হয়তোবা এক দিন বয়সে কোন এক মায়ের অসহায়ত্বের স্বাক্ষী হয়ে।
ছেলে ঘর ছাড়ার দু'দিন পরে আম্মাও মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে এসেছিলো। আর ফিরে যাওয়া হয়নি। আব্বা আরেকটি বিয়ে করেছিলো এক অল্প বয়সী তরুণীকে। প্রতিবাদে কিংবা প্রয়োজনে আম্মাও আবার বিয়ে করেছিলো এক বিপত্নীক মধ্যবয়সী ব্যাংক কর্মকর্তাকে ঘরজামাই রূপে। মেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মা, ২য় জামাই আর দুটো ভাড়াটিয়া পরিবার নিয়ে আম্মার বসবাস উত্তরার ৭ নং সেক্টরের এই তিনতলা বাপের বাড়িতে।
মেয়েটি এগিয়ে গেলো ছেলেটির দিকে।
-তুমি কী বলোতো! এবারো লেট।
ছেলেটি হা করে তাকিয়ে রইলো। বড়বেলায় দিয়াকে শাড়ি পরতে প্রথমবার দেখছে।
মেয়েটি ছেলেটির নাকে একটা টোকা দিলো।
-কী, কিছু বলছো না কেন?!...কী দেখছো ওমন করে!?
-আম্মা সাজিয়েছে তোমাকে, তাই না?
-কেন! আমি সাজতে পারি না!!
-পারো; তবে এটা তোমার একলার সাজ না!
-তুমি ঠিক ধরেছো, মা সাজিয়েছে।
-সাজতে যে তোমার বেশ অনীহা তোমাকে দেখলেই বোঝা যেতো।...শাড়িটা নিশ্চয়ই আম্মার?
-হ্যাঁ! তুমি একটা কিনে দিবে?
-বাজেট নেই এখন। করতে হবে।
-তুমি বারবার আমার কপালে কী দেখছো?
-তোমার টিঁপটা একটু সরে আছে। ঠিক মাঝে নেই।
-ঠিক করে দাও!
ছেলেটি ঠিক করতে যেয়েও থমকে গেলো।
-পরে ঠিক করে দেবো।
-কেনো?
-এটাতো রাস্তা। সবাই দেখবে। ভাববে আদিখ্যেতা।
-ভাবুক! আমার মানুষ আমাকে কেয়ার করছে।
ছেলেটি আবারও এক নয়নে তাকিয়ে থাকলো।
মেয়েটি আবারও নাক টেনে দিলো।
-কী দেখছো!?
-
-'কিছুই না', প্রিয়!
-সবসময়, সবকিছুতেই প্রিয় বলবে না!
-
-আচ্ছা, বলবো না প্রিয়!
-কী হলো এটা!
-কেন, এবার তো ঠিকভাবে বলেছি!
-শুধু বললে হয় না! আবেগ ছাড়া শব্দটার কোনো মানে হয় না।
-তাহলে কাছ ঘেঁষে হাঁটি? হাতে হাত ধরি?
-কেনো?! এই খোলা রাস্তায়?!
-আমার মানুষটিকে আমি কেয়ার করছি। যে যাই ভাবুক!
-আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিলে!
ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে ফেললো।
-না তো! আমি চাইছি, আবেগটা তৈরি হোক। আবেগ তৈরি হতে তো নিরিবিলি লাগে না! নিরিবিলিতে তো অন্য কিছু তৈরী হয়।
-কী সেটা?
-জৈবিক চাহিদা।
মেয়েটি হাত ছাড়িয়ে নিলো।
-তোমাদের বহুত সমস্যা! মাথার ভিতর শুধু একটা জিনিসই কিলবিল করে। সুযোগ পেলেই ফায়দা লোটো। চলো খাই কিছু...
-খাবো না। টাকা যা আছে লাগবে।
_______________________________________
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৩৯