ইদানিং গুগোল ঘাটলেই খালি প্রাচীন প্রেমের গল্প সার্চ দিতেছি। গুগোলও এই কারণে একবার মেজাজ খারাপ কইরা সার্চ দেওয়ার পরে 'খুইজ্জা দিতাম না' বইলা জানায়া দিছে। তারপরেও কয়েকটা পাইছি।
জুকারবার্গের মত আমিও চীনের প্রেমে পইড়া গেছি।
১। Butterfly Lovers
কথিত আছে, পুবের জিন রাজবংশের সময়কালে ঝু ইয়ংতাই নামে এক অপরূপ বুদ্ধিমতী মেয়ে ছিল। সে থাকতো পুবচীনের ঝেইজিয়াং রাজ্যের শেংয়ুতে। তার পরিবার বেশ সম্পদশালী ছিল। সে ছিল তার বাবা-মায়ের নবম সন্তান এবং তাদের একমাত্র মেয়ে।
ঐসময়টায়, মেয়েদের পাঠশালায় পড়তে যাওয়া অনুমোদিত ছিল না। ঝু তরুন যুবকের ছদ্মবেশ ধরে তার বাবা-মাকে কোনভাবে রাজি করিয়ে ফেলে। যাতে সে হ্যাংঝউতে পড়তে যেতে পারে।
হ্যাংঝউতে যাওয়ার সময় তার পরিচয় হয় লিয়াং শানবোর সাথে। লিয়াং, একই রাজ্যের কুয়াইজি থেকে এসেছিল। কথা বলে তাদের মনে হল - তারা অনন্তকালের বন্ধু। তাই তারা ভ্রাতৃত্বের শপথ নেয়।
তিন বছর একসাথে পড়ার সময়টাতে তারা একই রুমে থাকতো। একই বিছানায় দুই তোষক ভাগ করে থাকতো।
লিয়াং ছিল বইয়ের পোকা। সে কখনো খেয়াল করেনি যে, ঝু একটা মেয়ে।
তিন বছর শেষে তারা তাদের অধ্যয়ন করা শিক্ষকদেরকে বিদায় জানালো। একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেল।
কিন্তু ঝু এবং লিয়াং দুইজনই একে অপরকে মনে করতো।
কয়েকমাস পর, লিয়াং ঝুকে দেখতে যায়। গিয়ে অবাক হয়ে যায় যখন জানতে পারে ঝু একটা মেয়ে। অবাক ভাবটা কাটার পরই তারা বুঝতে পারে একে-অপরকে ভালবাসে তারা। বুঝতে পেরে একে-অপরের আরো ঘনিষ্ঠ হয় এবং শপথ নেয় - যদি তারা কখনো একত্রিত হয়ে জীবন কাঁটাতে না পারে, তাহলে তারা একসাথেই মরবে।
আরো কয়েকদিন পর, লিয়াং ঝু এর বাড়িতে ঘটক পাঠায় ও ঝু এর বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের অনুমতি চায়।
কিন্তু ঝুয়ের বাবা-মা তাদের ধনী প্রতিবেশীর ছেলে মা অয়েঞ্চাই এর প্রস্তাবটাতেই রাজি হয় এবং বিয়ের প্রস্তুতি নেয়।
খবরটা লিয়াংকে আঘাত করে। হৃদয়ভগ্ন লিয়াং এটা সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যায় - এবং মারা যায়।
ঐদিকে, ঝুয়ের মা ওয়েঞ্চাইয়ের সাথে বিয়ের দিন প্রচন্ড ঝড় বিয়েটা হওয়া থেকে আঁটকিয়ে রাখে। এবং সবার মাঝ থেকে ঝু কে উঠিয়ে নিয়ে যায় লিয়াং-এর সমাধির কাছে।
ঝু সমাধির সামনে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
তখন হঠাৎই - বিজলীর চমক আঘাত হানলো কবরটায় এবং কবরটা খুলে গেল। কোন দ্বিধা না করে তরুণী ঝু কবরটায় ঝাঁপ দিল।
এরপর, বৃষ্টি থামলো, আকাশ পরিষ্কার হল। আকাশে দেখা গেল ঝু ও লিয়াং-এর আত্না দুটো চমৎকার প্রজাপতিতে পরিণত হয়েছে।
এরপর থেকে তারা একত্রেই ছিল, ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াতো। কখনোই আলাদা করা যায়নি তাদেরকে আর।
২। Swan Song of Beauty
মিং রাজবংশের সম্রাট ওয়ানলির শাসনামলে চীনের রাজধানী বেইজিং ছিল উন্নয়নশীল ও শান্তির একটি জায়গা।
যদিও পতিতালয়গুলো বেশি ব্যস্ত সময় কাঁটাতো। ইয়ুচুইউয়ান পতিতালয় ছিল বেশি বিখ্যাত। তাদের স্বনামধন্য বেশ্যা ডু শিইনজাং-এর জন্য তাদের নাম বেড়েছে।
ডু অভিজাত পরিবারেই জন্ম গ্রহণ করে। তার বাবা ছিল কাউন্টি ম্যাজিস্ট্রেট। তার বয়স যখন নয়, তখন তার বাবা এক অপরাধীর কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে ধরা পড়ে। জেলেই মারা যায় তার বাবা।
বাবার মৃত্যুর পর, ডু কে বিক্রয় করা হয় ইয়ুচুইউয়ানে।
সে রূপবতী ছিল, ভাল গাইতে পারতো এবং মনমুগ্ধকর ভাবে নাঁচতে পারতো। যার ফলে তাকে বেইজিং জনপ্রিয় বেশ্যায় পরিণত বেশি দেরি লাগেনি।
যদিও, সে কখনো কারো প্রতি তার আগ্রহ দেখায়নি - যতদিন না তরুন এক পন্ডিত লি ঝিয়ার সাথে তার দেখা হল।
লি ঝিয়া এসেছিল ঝেইংঝাং থেকে। লি তার পড়ালেখা ও গবেষণাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য বেইজিং-এ এসেছিল।
একদিন হাঁটতে হাঁটতে সে ইয়ুচুইউয়ানে এসে পড়ে এবং ডু এর দেখা পায়। ডু তার প্রশংসা করে ও তাকে একজন নির্ভরযোগ্য পুরুষ বলে অভিহিত করে। ঐদিকে লি ডুয়ের রূপের মোহে পড়ে যায়।
তারা পতিতালয়ের ভিতরেই স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বাস করা শুরু করে।
এক বেশ্যার সাথে সংসারি হয়েছে শুনে লি-এর বাবা-মা তাকে বাসায় ফিরার আদেশ দেয়। লি মানা করে দেয়। তাই, তার বাবা-মা তাকে ত্যায্য করে ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে।
ইয়ুচুইউয়ানের সর্দারনীর সাথে ইয়ে চা-এর সাথে ডু তার স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার কথা বলে। এবং ৩০০ টেইলস রূপার বিনিময়ে সে তার স্বাধীনতা ফিরিয়েও আনে।
ডু ও লি পতিতালয় থেকে বেরিয়ে আসে, এবং একটি নৌকা ভাড়া করে। তারা লিয়ের শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। তারা ঘোষণা করলো তাদের প্রেম অমর। আনন্দে ডু নৌকার উপরই গাইতে শুরু করলো।
তাদের নৌকার কাছেই আরেক বিত্তবান ফূর্তিবাজ সুন ফু ছিল। ডু-এর গানের সুর তার মনোযোগ কাড়ে। তার রূপ দেখে মোহাগ্রস্ত হয়ে যায়। সে কখনোই এমন সুন্দরী রূপবতী কোন মেয়েকে দেখেনি।
সে ডুকে চাইছিল। লি-কেও রাজি করায় ডু-কে তার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য।
ডু এই লেনদেনের কথা জানতে পেরে মনে মনে বিধ্বস্ত হয়ে গেল।
পরদিন সকালে, ডু তার চুল ও শরীরে সাজসজ্জা করে তৈরি ছিল। লি তাকে ১০০০ টেইলস স্বর্ণের বিনিময়ে সুনের কাছে হস্তান্তর করে দেওয়ার পরও চুপই ছিল।
আস্তে ধীরে সে একটা থলে বের করে আনে, যেটার ভিতরে আনুমানিক প্রায় ১,০০,০০০ টেইলস স্বর্ণ ছিল।
ডু এর পর লি কে বলে, "আমি আমার সমস্ত সম্পদ এই থলেটায় লুকিয়ে রেখেছিলাম, আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে সত্যিই ভালবাসো কিনা। আমি এটা ব্যবহার করতে চাইছিলাম আমাদের পরিবার শুরু করার পর। তুমি আমাকে হতাশ করলে। কয়েকটা কথা শুনেই লোভে তুমি আমাকে বিক্রি করে দিলে এমন একজনের কাছে যাকে তুমি চিনোও না। তোমার কি এখনো আমাদের অঙ্গীকারটার কথা মনে আছে? এইখানের সবাই সাক্ষী রইলো। তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো।'
কথাগুলো বলার পর থলেটা নদীতে ফেলে দেয়। এরপর নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুবে মরে।
৩। The Legend of Lady Meng Jiang
কীন রাজবংশের শাসনামলের সময়কার কথা।
মেং জিয়াং নামে এক দয়ালু ও রূপবতী যুবতী ছিল।
একদিন গৃহস্থালীর কাজ করার সময় - হঠাৎই সে এক যুবককে তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেখতে পায়। এবং আঙ্গুরের তাকের নীচে লুকাতে দেখে।
মেং জিয়াং প্রচণ্ড ভয় পায় এবং চিৎকার করতে চায় কিন্তু সেই যুবকটি তাকে হাত নাড়িয়ে মানা করে, "চিৎকার করো না! আমাকে বাঁচাও। আমি ফেন জিলিয়াং। আমি একটু আশ্রয় চাই।'
ঐ সময়টাতে সম্রাট কীনশিহুয়াং গ্রেট ওয়ালটা বানাচ্ছিল। এটার জন্য সে গ্রামে গ্রামে থেকে তরুন ছেলেদের ধরে নিয়ে যেত আর তার দৈত্যাকার দেয়াল তৈরির কাজে লাগিয়ে দিত।
অনেক কর্মীই ক্লান্ত হয়ে নয়তো না খেয়ে মরেছে।
মেং জিয়াং তাকে বাঁচাতে রাজি হল। তার চোখে ফেনকে সুদর্শণ ও জ্ঞানী মনে হচ্ছিল। তার প্রতি একটা শ্রদ্ধা হচ্ছিল মেংয়ের। আর ফেনও মেয়েটা ভালবেসে ফেলে।
তাদের এই ভালবাসার কথা মেং-এর বাবা-মাকে জানায় ও বিয়ে করতে চায়। মেং-এর বাবা-মাও রাজি হয়।
বিয়ের দিন বাড়িটাকে তারা লাল হারিকেন ও সুন্দর সাজসজ্জা দিয়ে সাজায়। অনেক অতিথি আসে তাদের বিয়েতে। অন্ধকার নামতেও মেহমানরাও চলে যায়।
ফেন জিলিয়াং ও মেং জিয়াং তাদের বাসর ঘরে যেতে উদ্যত হয়। তখনই তারা শুনতে পায় মুরগীর ডানা ঝাপটানোর ও কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ।
হিংস্র সৈনিকরা বাড়িতে আসে এবং কোন কিছু না বলে ফেনকে ধরে নিয়ে যায়।
তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রেট ওয়াল তৈরির অমানবিক কাজে।
হৃদয়বিদারক এই ঘটনার পরে দুঃখে কাতর হয়ে পড়ে মেং জিয়াং। সে তার স্বামীকে অনুভব করছিল।
সে ভাবলো, এইভাবে ঘরে বসে তার স্বামীর সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় না থেকে নির্মাণাধীন জায়গাটায় গিয়ে খোঁজ করতে।
সে ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে গ্রেট ওয়ালের দিকে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো।
যাত্রা পথে, অনেক কঠিন ও বিপদজ্জনক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে খারাপ আবহাওয়ার কারণে। সে কাঁদেনি, কোন ব্যথাও অনুভব করেনি।
ভালবাসার শক্তিটাই তাকে সাহায্য করছিল মানসিক ও শারিরীক ভাবে।
সে জায়গাটায় পৌছায়। কিন্তু তাকে তখনও বিশাল জায়গাটার প্রতিটা অংশে খুঁজে দেখার কাজটা বাকী ছিল।
অনেকসময় ধরে খুঁজেও সে পেল না ফেনকে।
শেষে, এক যাযাবর কর্মীকে জিজ্ঞেস করলো, "এইখানে কি কোন ফেন জিলিয়াং আছে?'
"হ্যা! এইখানেই আছে সে। সে কিছুদিন আগেই এসেছে।' উত্তর করলো।
"কোথায় পাওয়া যাবে তাকে এখন?'
"সে তো মারা গেছে। তার লাশটা ওয়ালের নিচে পুঁতে রাখা আছে।' এইটাই ছিল ঐ লোকটার উত্তর।
আকাশে তখন অনেক বড় ঝড়।
মেং জিয়াং চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখছিল না।
হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলে।
চিৎকার করে কাঁদলো টানা তিনদিন তিনরাত।
তার কান্না দেখে স্বর্গ টলে গেল। আকাশটা কালো হয়ে এক দমকা বাতাস বইয়ে দিল।
গ্রেট ওয়ালটার একটা অংশ ভেঙ্গে পড়ল এবং ফেন জিলিয়াং মৃতদেহটা ভেসে উঠলো।
মেং জিয়াং অশ্রুর ফোঁটাগুলো তার প্রিয়তম স্বামীর ক্ষত-বিক্ষত মুখটার উপর পড়ছিল।
মেং শেষমেশ ফেনকে দেখতে পেরেছিল। কিন্তু কীনশিহুয়াং-এর দ্বারা হত্যা হওয়ায় ফেন দেখতে পারেনি।
.
.
.
.
.
.
আজকে এই তিনটাই। চাইনিজ নাম পড়তে মুখের ভাষাও চেং চুং চিং ঢিং ঢুং ঢ্যাং হয়ে গেছে।
প্রাচীন চীনের চারটি Love Story বেশি জনপ্রিয়।
Butterfly Lovers আর Legend of Lady Meng Jiang Nu তো এইখানেই দিলাম।
Legend of White Snake মুভিটাতো অনেকেই দেখেছে। তাই আর লিখিনি এইটা নিয়ে।
আর The Cowherd and The Weaving Girl এর গল্পটা তো আগেই লিখেছিলাম। সেইটা পাবেন এইখানে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:১৫